সিক্ত সুভানুভব’ পর্ব-২৭

0
1362

‘সিক্ত সুভানুভব’
[২৭]
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

আলো বসে বসে ওদের রান্না দেখছে, ওদের রান্না দেখে আলো চোখ ছানাবড়া কারন ওরা রান্নাতে প্রচুর ঝাল দেয়। মখাইয়ের বউটা খুব ভালো,কোথা থেকে মখাই কবুতর,বুনো হাস,বাতাবি লেবু,আমড়া,এসব এনে দেয়।আর একটা ব্যাগে অনেক গুলো মাছ, মাছ গুলো নড়ছে এখনো।আলো উঁকি মেরে দেখে রোদ ওখানে বসে নেই,মখাই আলোর তাকানো দেখে বলে,,

মখাইঃভাবিজি ভাই তো আমাদের সাথে মাছ ধরছে,আপনারা এসেছেন আপনাদের টাটকা মাছ,শাকসবজি খাওয়াবো,,যদিও গরীব মানুষ আমরা আপনাদের ভালমত অ্যাপায়ন করতে পারবো না,,,তারপরেও চেষ্টা করবো।

আলোঃ ভাইয়ের বাড়িতে কি বোন শুধু খেতেই আসে,,আপনাদের ব্যবহার আমার মন ভরে গেছে আর কিছু লাগবে না ভাইয়া। এসব গরীব বড়লোকের কথা বললে আর কিন্ত কথা নাই আপনার সাথে বলে দিলাম।

মখাইয়ের বউঃভাবি আপনারা খুব ভাল মানুষ, আমাদের সাথে এভাবে মিশেছেন, যদিও এটা আমাদের ভাগ্য।সত্যি রোদ ভাইয়া,, উনার বন্ধুরা,আপনি একটা ভুল প্রমান করে দিয়েছেন আমাদের সাথে মিশে।আমরা ভাবতাম বড়লোকরা মিশতে জানে না কিন্তু সবাই এক রকম না আপনাদের সাথে না পরিচয় হলে জানতাম না।

আলোঃএসব কথা বাদ দেন,,,,,,কে বড়লোক কে গরীব বুঝি না।আমরাও মানুষ আর আপনারও মানুষ এটাই আমাদের পরিচয়।আর আমার নাম আলো,,, আপনারা নাম ধরেই ডাকতে পারেন কারন আপনারা আমার অনেক বড়, কেমন জানি লজ্জা লাগছে ভাবি ডাকছেন এজন্য।

মখাই আর ওর বউঃ আচ্ছা তাই হবে।

মখাই এর বউয়ের নাম মধু।মধু আর আলো মিলে,,,হাস ভুনা,মাছ ভাজা,মাছ ভুনা,আমড়ার চাটনি,শুঁটকি ভর্তা,শাক পাতা ভাজি, আর শিজুইনজা এটি( এক ধরনের চাল) ঘন দুধ দিয়ে পায়েস।আলো একটা জিনিস খুব ভালো করে খেয়াল করলো সেটা হচ্ছে,, মধু হলুদ গুড়া বা মরিচের গুড়া রান্নাতে ব্যবহার না করে কাঁচা হলুদ বাটা,আর পাহাড়ি ছোট ছোট মরিচ বাটা,,,এটা শীল নোড়াতে হাতে তৈরী করে।ওদের অভ্যাস হয়ে গেছে এভাবে বেটে খাওয়াতে।আর রান্নার কালার টাও অসম্ভব ভাল হয়েছে,,,,।আলো আর মধু রান্না শেষ করলো।আলো আবার এসে উঠানো দাড়ায়,আর উঠানে শুকাতে দেওয়া বীজ গুলো দেখে জিজ্ঞেস করে,,,

আলোঃ ভাবি এগুলো কিসের বীজ আর এগুলো দিয়ে কি হবে?আর উঠানে শুকাতে দিচ্ছেন কেন?

মধুঃএগুলো সেগুন গাছের ফল এগুলো শুকিয়ে আমরা মাটিতে বপন করবো।আর গাছ হবে, সেই গাছ বাজারে বিক্রয় করবে,,,।সেগুন গাছের দামটা ভালো পাওয়া যায়, আর বাজারে এই গাছ বেশি বিক্রি করা হয়।

আলোঃ ওহহ এবার বুঝেছি,,,আসলে এই বীজ এর আগে দেখি এজন্য চিনতে পারি নি।

মধুঃ আচ্ছা তুমি বসো আমি পানি আনতে যাবো,আমি রোদ ভাইয়াকে ডেকে দিচ্ছি তোমরা গল্প করো কেমন।আমি যাবো আর আসবো।

আলোঃ না ভাবি আমিও যাবো আপনাদের সাথে পানি আনতে,আমাকে এভাবে রেখে যাবেন না।ওহ বুঝেছি আমাকে এখনও আপন ভাবতে পারেন নি।

মধুঃনা বোন আসলে তা না,,আমি তো যাবো পাহাড়ে নিচে দিকে পানি আনতে।আমার অভ্যাস আছে এভাবে নামার বা উঠার, কিনতু তোমার তো এসব অভ্যাস নাই। তোমার কষ্ট হবে এজন্য তোমাকে যেতে না করছি।

আলোঃ না আমি যাবো!আপনারা পারলে আমিও পারবো, আমাকে নিয়ে চলেন।

মধুঃআচ্ছা

মধু আর আলো সাতটা পাতিল নিয়ে নিচে পানি আনতে গেল।মধুদের বাসাটা পাহাড়ের উপরে, ওদের কে পানি আনতে পাহাড়ের নিচে যেতে হয়।মধুরা হচ্ছে অনেক পরিশ্রমী কারন চাকমা মেয়েরা প্রতিটা কাজে খুব পারদর্শী।চাকমা মেয়েরা জুম চাষ করা থেকে শুরু করে সব কাজ পারে।আলো আর মধু গল্প করতে করতে পাহাড়ের নিচে যাই,আর মধু যে পাতিল গুলো আনে সেগুলো রান্নার কাজে ব্যবহার কারাতে কালি লেগে ছিলো,,এজন্য মধু সেগুলো আবার পরিষ্কার করলো।

আলো পাহাড়ের নিচে গিয়ে দেখলো রোদের কথায় ঠিক, পাহাড়ের গা থেকে চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে আর সেখানে পাহাড় কেটেই গোল করা একটা গর্তে পড়ছে, আর সেখানে দুইটা গর্ত করা একটার গর্তের পানি দিয়ে থালা বাসনের ধোয়ার কাজে ব্যবহার করে। আর একটা গর্তের পানি খাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়।মধু পাতিল গুলো ধুয়ে পানি নিল,,সাতটা পাতিলেই পানি ভর্তি করলো।আলো মধুকে জিজ্ঞাসা করলো,,

আলোঃ ইয়ে মানে ভাবি দুইজন এই সাতটা পাতিলে পানি কিভাবে নিয়ে যাবো।তারপরে পাহাড়ের উপরে আবার উঠতে হবে,,,পাতিল গুলো তো পড়ে যাবে।আমি কি ভাইয়া আর রোদকে ডেকে আনবো।

মধুঃনা কাউকে ডাকতে হবে না আমি একাই পারবো,,,আমার অভ্যাস আছে

আলোঃএত গুলো হাড়ি কিভাবে নিবেন?
মধুঃতুমি দেখতে থাকো।

মধু ওর মাথায় একটা কাপড় পেচিয়ে পর পর পাতিল গুলো সাজিয়ে নিয়ে নিল।আলো অবাক হয়ে মধুর দিকে তাকিয়ে আছে,মধু হেসে আবার হাটা শুরু করলো,আলো পেছনে পেছন হাঁটছিল আর মধু দিকে তাকিয়ে হঠাৎ পা পিছলে পড়ে যায়।মধুর মাথায় হাড়ি থাকায়, মধু আলোকে তুলে পারে না,আলো একটা একাই উঠে, শাড়িটা কাদা মাটি লেগে গেছে আর কোমরেও ব্যাথা পেয়েছে।মধু সামনে সামনে হাটছে আর আলো পেছন পেছন মধুকে আলো এটা ওটা দেখাচ্ছে,,,।দুজনেই খুব দুজনের সাথে মিশে গেছে।

আলোরা আবার পাহাড় বেয়ে উপরে উঠে।আলো বাসায় গিয়ে দেখে রোদ একটা টুলে উপর বসে বসে নক কামড়াচেছ,,,,আলোকে দেখে রোদ এক প্রকার দৌড়ে আসলো।আলো বের হওয়া পর রোদ এসে জানতে পারে আলো পাহাড়ে নিচে গেছে পানি আনতে,তখনই থেকেই রোদ টেনশনে ছিলো।রোদ এসে আলো সামনে দাড়ায় আর ভ্র কুচকে আলোকে বলে,,,

রোদঃশাড়িটা এমন নোংরা হলো কি করে?কাদা মাটি শাড়িতে তো লাগালে, আমাদের তো রিসোর্টে ফিরতে হবে,এখন কি হবে?

আলোঃপড়ে গিয়েছিলাম অন্য দিকে তাকিয়ে হাটতে গিয়ে।

রোদঃকি??পড়ে গিয়েছিলে মানে কি?ব্যাথা পাও নি কোথায় ব্যাথা পেয়েছো বলো আমাকে।আর অন্য দিকে হাটবে কেন

আলোঃ না আমি ব্যাথা পাইনি।

রোদঃতোমাকে নিয়ে আর পারি না,,,দেখে হাঁটতে পারো না।

মধুঃভাইয়া বকবেন না,আমি মানা করছিলাম যেতে আলোকে তাও শোনে নি?যা হওয়ার হয়ে গেছে,,,,,

রোদঃহুমম ভাবি আমি রাগ করি নি। ভাল কথা ও শুনে না,যা বলা হয় তার বিপরীত কাজ করাই ওর অভ্যাস।এটাই ওর একটা বড় গুন তাই না আলো ম্যম

মধুঃআলো তুমি খদে যাও, আমি এখুনি আসছি,,,(এটা বলে চলে গেল)

আলোঃকোথায় যাবো?আমাকে কোথায় যেতে বললো?

(রোদের দিকে তাকিয়ে)
রোদঃ রুমে যেতে বললো,ওরা রুমকে খদ বলে।আলো সত্যি করে বলো তো ব্যাথা পেয়েছো কি না?

আলোঃহুমম একটু একটু কোমরে।

রোদঃদেখে হাটবে না,,,আচ্ছা রুমে যাও দেখো, ভাবি তোমাকে ডাকলো কেন?আর আমাকে না বলে কোথায় যাবে না,,,।
আলোঃহুমম যাচ্ছি।

আলো রুমে গেল রুমটা খুব ছোট, বাট পরিপাটি করে গুছানো, বেতের তৈরী বিভিন্ন জিনিস,আলো রুমটা ঘুরে ঘুরে দেখছিলো মধু এসে আলোকে একটা থামি দেয়,,, কাঁচা হলুদ কাপড়ের মাঝে গোলাপি সুতা দিয়ে টান টান দেওয়া,এটা মধু নিজের তাতে বুনেছে,,,মধুরা নিজেদের পোশাক নিজেরা বানায়।আলো থামি টা হাতে নিয়ে মাথা নিচু করে মধুকে বলে,,,,

আলোঃভাবি আমি এমন পোশাক এর আগে পড়ি নি,আমার আসলে কেমন জানি লজ্জা লাগছে। আমি এই শাড়িতেই থাকি সমস্যা নাই,,কিছু মনে করবেন না।

মধুঃআমি জানি তুমি এমন পোশাক পড়ো না,এজন্য আমাদের শট ব্লাউজের মত দেয়নি,কারন আমরা বিবাহিত এমন পড়লেও,,অবিবাহিত মেয়েরা লং ব্লাউজ মানে নাভিটা ঢাকা থাকে,,,আমি তোমাকে সেরকমই একটা থামি দিয়েছে,এটার ওড়নাও আছে,,,তুমি এটা পড়ে নাও।

আলোঃঅনেক অনেক ধন্যবাদ,,কাপড়টা দেখতে খুব সুন্দর
মধুঃ আচ্ছা তুমি বদলে নাও,,আমি রান্না ঘরে আছি
আলোঃহুমম।

রোদ ফোনে চেক করে দেখে নেটওয়ার্ক নেই,ওদিকে বার বার রুমে দিকে তাকাচ্ছে কিন্তু আলোর বের হওয়ার নাম নেই।মখাই সেই সকালে বনে গেছে বাঁশ কাটতে কেবল ফিরলো,,মখাইয়ের দুই মেয়ে মালতি আর পুষ্প কেবল স্কুল থেকে ফিরলো,,দুজনেই রুমে ঢুকে ভূত দেখার মত চমকে হা করে আলোর দিকে তাকিয়ে আছে,,,মধু আলোকে ওদের সাজে সাজিয়ে দিচ্ছে,, বাঁকা করে খোপা আর কিছু রুপার তৈরী গয়না,,,আলোকে ওরা চেনে না এজন্য ওরা প্রায় চিৎকার করে বললো,,।

মালতিঃমা এই নতুন বউটা কে?আর তুমি সাজিয়ে দিচ্ছো কেন?

পুষ্পঃএত সুন্দর মেয়েটা কোথায় থেকে আসলো?আর তুমি সাজিয়ে দিচ্ছো কেন?

মধুঃএটা তোমাদের রোদ কাকুও বউ
মালতি আর পুষ্পঃরোদ কাকু এসেছে, আর রোদ কাকুর বউ এটা?

চলবে,,,!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here