সিক্ত সুভানুভব’ পর্ব-২৯

0
1108

‘সিক্ত সুভানুভব’
[২৯]
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

রোদ আলোকে কোলে তুলে নেয় আর সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে।রোদের গলা জড়িয়ে আছে আলো, আর রোদের দিকে আছে,আলো রোদের নাকের জমে থাকা থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম গুলো মুছে দিলো।রোদ আলোর দিকে তাকিয়ে একটা হাসি উপহার দিল।রোদ এবার চাং পাং পাহাড়ে উপরে উঠে আলোকে নামিয়ে হাঁপাতে শুরু করলো,,,।এত সিঁড়ি তার উপরে আলোকে কোলে নিয়ে কষ্ট তো হয়েছে বাট মুখে সেই কষ্টের ছাপ নেই আছে প্রশান্তির হাসি।


রোদ আলোকে একপাশে একটা ঘর দেখালো,ওটা জুম ঘর।আর এই জুম ঘরেই খাবার খেতে আসে সবাই,ঘরটা বাশের বেড়া দিয়ে ঘেরা,,, ছোট ছোট টেবিল আছে,আর মেঝেতে মাদুর বিছানো।জায়গা জায়গা এরকম জুম ঘর বানানো পর্যটকরা বেশি আসলে যাতে সমস্যা না হয়।জায়গাটা গোছগাছ আর পরিষ্কার,,,,গাছের নিচে।
রোদ আলোকে জুম ঘরের নিয়ে গেল আর একটা টেবিলের বসতে বললো।আলো রোদের দিকে তাকিয়ে বললো,,

আলোঃহাত মুখ ধুয়ে নিলে বেটার হতো।

রোদঃওকে চলো,,,তার আগের খাবারের অর্ডার দিয়ে যায়,যাতে আসতে আসতে খাবার চলে আসে,,,আর এখন কি কি খাবে বলো?

আলোঃহুমম তাও ঠিক আর আমি তো জানিনা এখানে কি কি পাওয়া যায়?তোমার পছন্দ মত অর্ডার করো।

রোদঃওকে।

রোদের সামনে একজন ওয়েটা আসলো, আর বললো কি কি মেনু আছে ওদের কাছে? রোদ খাবারের মেনু শুনে, সব পাহাড়ি আইটেম গুলো অর্ডার করলো,,,ওয়েটার অর্ডার নিয়ে ওদের ওয়াশরুম দেখিয়ে চলে গেল।আলো রোদের দিকে তাকিয়ে বললো,,,তুমি কি কি অর্ডার করলে।আবার বলো তো,,

রোদঃভাত,ডাল,সালাড,মিক্স ভেজিটেবল,আদার ফুল সহ মাছ ভর্তা,লাচিছ চিকেন ভর্তা,কাচকি ফ্রাই,ব্যাম্বো ফ্রাই, আর ব্যাম্বো চিকেন,,আর মাছ কা ব্যাঙ টা অর্ডার করি নি।

আলোঃতুমি এত গুলো খাবারের কথা বললেন,খেতে পারবে তো?আর মাছ কা ব্যাঙ এটা আবার কেমন আইটেম।

রোদঃকই এতো অর্ডার করলাম,তুমিও খেয়ে দেখো তোমারও লোভ লেগে যাবে,,তুমিও তখন আবার খেতে চাইবে, কারন পাহাড়ি খাবার অনেক টেস্টি হয়।আর মাছ কা ব্যাঙ হচ্ছে,, ব্যাঙ দিয়ে বানানো একটা আইটেম।
পাহাড়িটা ব্যাঙ খায়,,,, তুমি চাইলে খেতে পারো।

আলোঃ ছিঃ!

রোদ হেসে বললঃ এবার চলো হাত মুখ ধুয়ে আসি,আমার খুব খুধা লাগছে।

ওরা ফ্রেস হয়ে আসে আর খেতে বসে। এত গুলো আইটেমে টেবিলটা ভরে গেছে।রোদ অলরেডি খেতে শুরু করছে,আলোও ভাত নিয়ে মুখে দিয়ে বুঝলো ভাতটা খেতে অন্যরকম।আলো এবার তরকারি গুলো নিয়ে খেতে শুরু করলো,আসলেই খাবার অনেক টেস্ট,,, প্রতিটা অাইটেমে টেস্ট ভিন্ন সাদের।আলো রোদকে জিজ্ঞাসা করলো,,

আলোঃ এত হালুম হালুম করে খাচ্ছেন কেন?আস্তে খান।

রোদঃআমি কখন হালুম হালুম করে খেলাম।আমি মুরগির মত টিপটিপ করে খেতে পারি না।

আলোঃহুমম এত জোরে খেয়ে কি করবেন?আস্তে খান তো আর এই ভাত টা একটু অন্যরকম লাগছে কেন?তবে খেতে ভালোই।

রোদঃএটা আতপ চল এজন্য ভাতটা একটু অন্যরকম লাগছে।তোমার কি খেতে সমস্যা হচ্ছে?

আলোঃনা সমস্যা নাই,,,আচ্ছা তাহলে আমরা কি চালের ভাত খায়।বাসার চাল গুলো তো এমন না।

রোদঃআমরা সেদ্ধ চালের ভাত খায়, ,, তবে আতপ চালের ভাতটা এরকমই হয়।এটা পোলাও চালের মত স্মেইল আসে।তবে সবাই এটা খেতে পারে না।

আলোঃহুমমম তবে সত্যি খাবার গুলো সেই টেস্ট। আচ্ছা রোদ একটা কাজ করলে কেমন হয়।

রোদঃ কি কাজ বলুন মহারাণী?

আলোঃআমরা সারাজীবন এখানে থেকে যায়,পাহাড়ি এলাকা, পাহাড়ি পরিবেশ আমার খুব ভালো লাগছে,,ওই যানজট,আর ধুলোবালি ময় শহরে আর যেতে ইচ্ছে করছে না।এখানকার বিশুদ্ধ বাতাসে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে পারছি বাট আমাদের ওই যানজটের শহরে নিঃশ্বাস টুকুতেও থাকে ভেজাল,,,,তুমি আমাকে এখানে থাকার ব্যবসথা করে দাও।

রোদঃ নদীর ওপারে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস, ওপারেতে যত সুখ আমার বিশ্বাস।পাহাড়ি এলাকা দেখতে সুন্দর বাট আসলে কিন্ত এত সুখকর এদের জীবন না।এদের জীবন অনেক কষ্টের,,,তবে আমরা বুড়ো বুড়ি হয়ে গেলে এখানে একটা বাড়ি বানাবো কেমন।

আলোঃহুমমম তবে এবার আমরা বাপি,আম্মু, মেঘ,, আমার আব্বু, আম্মু সবাইকে নিয়ে আসবো ওদের খুব মিস করছি।

রোদঃহুমম এবার খাওয়াটা শেষ করুন কেমন।

আলোঃআমার পেট ভরে নি আমি আরো খাবো,আপনি আরো ভাত দিতে বলুন।

রোদঃদেখলে বললাম না,তোমারও খুব ভালো লাগে,,,ওকে আমি বলছি,, তুমি এগুলো খেতে থাকো।

আলোঃক্যালাবেন না তো?

রোদ আর আলো খেয়ে নিল তারপর আবার লেক ভ্রমনের উদেশ্যে বের হলো।আলো আজ খুব খুশি আজ কত অচেজানা কিছু জানতে পারলো,, আর খাবার কথা আর নাই বা বললো।পাহাড়ি এলাকা সত্যি সপ্নের মত একটা জায়গা।রোদ আলোর দিকে তাকিয়ে বললো,,,,

রোদঃ সামনে আরো একটা রেস্টুরেন্ট আছে ম্যাজাংগো নামে,, ওটাটাও পাহাড়ের নাম নামকরণ করা হয়েছে রেস্টুরেন্টটার।এই লেক টা দেখছো এটা হচেছ রাঙামাটির
২য় শহর।এই জায়গাতে আগে একটা শহর ছিলো মো শহর নামে,যদিও মো শহরটা ডুবে গেছে ৪০০ বছর আগে।এই লেকের পানিতে,,,

আলোঃএত বড় লেক,,,,আমি তো কখনোই দেখিনি এর আগে।আর অনেক সুন্দর।

রোদঃহুম পাহাড়ের পানি আর কর্নফুলী নদীর পানির সাথে মিশে হয়েছে এই লেক,,বতর্মানে লেকের আয়তন প্রায় ৮২ হাজার একক।এখানকার মানুষরা লেকের পানিতে মাছ ধরে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে।

আলোঃহুমম এজন্য জেলেদের জাল ফেলে রাখতে দেখা যাচ্ছে ,,আচ্ছা আমরা আর কোথায় কোথায় যাবো বেড়াতো?

রোদঃ কালকে যাবো চাকামা বাজার আর ঝুলন্ত ব্রিজ ।আর তার পরের দিন বাসায় ফিরতে হবে আমাদের।

আলোঃআমি যাবো না,আমার তো যেতে ইচ্ছে করছে না।
রোদঃআবার আসবো তো।

ও দিকে মেঘ কান ধরে ক্লাসে সবার সামনে দাড়িয়ে আছে,যদিও দাড়িয়ে থেকে ওর লাভ হয়েছে,,কান ধরে বাইরের দিকে তাকিয়ে,কুকুরছানা গুলো ওর মায়ের দুধ খাচ্ছে ওর আর মেঘ সেটা খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে।আর কান ধরে দাড়িয়ে থাকার কারণটা হচ্ছে, (চলেন ওর ভদ্র কাজ গুলো দেখে আসি)

আজ প্রথম ক্লাসে রোল কলিং এর সময়, পাশের ছেলেটার মুখ চেপে ধরে, তাকে present বলতে দেয় নি।আর ছেলেটাকে হুমকিও দিয়েছে যদি কাউকে বলে তো,ওকে নাকি নাংগু পাংগু করে তারপর পিটুনি দিবে।ছেলেটা ভয়ে কিছু বলে নি।তারপর আবার দুষ্টুমি শুরু করে টিচারের সাথে,,,,
মেঘ সবার সামনে দাড়িয়ে টিচারকে বলছে,,

মেঘঃস্যার আপনি কি আজকে তাড়াহুড়ো করে বাসা থেকে বের হয়েছেন?

স্যারঃতুমি জানলে কি করে?আসলে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়েছিলো এজন্য,সত্যি আজ লেইট হয়ে গেছে।

মেঘঃআমি জেনেছি অন্যরকম ভাবে,যদি আমাকে আজকে পড়া না ধরেন তাহলে বলবো।

স্যারঃওহহ, তাই নাকি? ওকে পড়া ধরবো না, তাও বলো তো শুনি কিভাবে তুমি জানলে?

মেঘঃআপনার প্যান্টের চেন খোলা,আর এটা আমি ৩০ মিঃ আগে দেখছিলাম।বাট সিওর ছিলাম না,আপনি বসলেন তারপর ভালোমত দেখে সিওর হয়ে তারপর আপনাকে জানলাম।থাক ধন্যবাদ দিবেন না স্যার,আমার লজ্জা করে,,,কেউ ধন্যবাদ দিলে।

স্যারঃফাজিল ছেলে তারাতারি কান ধরে দাড়া,বসে বসে তুই চেক করছিলি আমার চেন খোলা কি না?অভদ্র ছেলে।

মেঘঃকান ধরবো কেন?আপনার ভালো জন্যই তো বলে দিলাম।তা না হলে পিংকি ডেকে দেখিয়ে বলতাম,,পিংকি দেখো স্যারের চেন খোলা।

স্যারঃতারাতারি উঠে কান ধর মেঘ,তোর এত বদরামী আর সহ্য করতে পারছি না।তোর নামে আমি হেড টিচারের কাছে অভিযোগ জানাবো,,তুই সবার সামনে আমার ইজ্জতের ফালুদা করে দিয়েছিস।

মেঘঃকই ফালুদা করলাম আপনি তো আন্ডারওয়্যার পরে আছেন।কেউ তো দেখে নি তাহলে।

স্যারঃমেঘঘঘঘ!
বাকি সবাই অট্রহাসি দিয়ে হাসতে লাগল।

তারপর থেকে মেঘ কান ধরে দাড়িয়ে আছে।

চলবে,,,,!!
(চেষ্টা তো করছি ভাল করে লিখার,তোমরা পাশে থাকলে ইনশাআল্লাহ আরো ভালো করে লিখার চেষ্টা করবো)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here