‘সিক্ত সুভানুভব’
[৩৪]
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)
রোদ আর আলো অনেক জার্নি করে তারপরে বাসায় পৌছায়, এজন্য আর কেউ কোন কথা তুলে নি। রোদের আম্মু আলোকে অনেক বোঝাই আর শক্ত থাকতে বলে, কারন যা হওয়ার হয়ে গেছে। আর এখানে আল্লাহ আমাদের জন্য ভাল কিছু রেখেছে, তাই হয়তো এরকম হয়েছে। তারপর ফ্রেশ হয়ে ডিনার করে,আলোর ওর আম্মুর খোজ নিয়ে তারপর ঘুমিয়ে পড়ে।
–
আলো এখন আস্তে আস্তে সবকিছুকে স্বাভাবিকভাবে নিতে শুরু করছে,সবাই ওকে বোঝানোর পর ও বুঝেছে,আর আলো আপাতত এটাই চিন্তা করছে যে, যখন যে পরিস্থিতি আসে তাকে সেরকম ভাবে রুখে দাঁড়াতে হয়,ভেঙ্গে পড়া বা হাল ছেড়ে দেওয়াটা বোকামি।
–
আলো ঢাকায় আসার পর ওর আম্মুর সাথে ঘন ঘন কথা বলে। আগের তুলনায় এখন আলোর আম্মু আলোর সাথে বেশি কথা বলে গল্প করে, হাসে, তবে আলো নিজের আম্মুকে পেয়ে আর দুজন আম্মুর কথা ভুলে যায়নি, 3 আম্মু কে নিয়ে একসাথে বসে তিনজন মিলে আড্ডা দেয়। আলোর আম্মু আগের তুলনায় অনেক স্বাভাবিক, তবে আলোর আম্মুর আগের কোন কথা মনে না পড়াতে আলোরও আর কোন আফসোস নেই। আগের স্মৃতি গুলো ভুলে যাওয়ায় ভালো বলে মনে করছে আলো, কারণ স্মৃতিগুলো মারাত্বক ভয়ঙ্কর স্বপ্নের মতো ছিল, আর সবথেকে বড় কথা আলো যে এখন ওর মায়ের মনে নতুন করে জায়গা করে নিতে পেরেছে এতেই আলো খুব খুশি। 3 আম্মু, আলো আর ওই আন্টি একসাথে আড্ডা দেওয়া শুরু করলে, মনে হয় না এরা আলাদা আলাদা কোন মানুষ আর একটা সময় এরা অপরিচিত কেউ ছিল ।
–
আলো ম্যাজিকের মতো করে সবার সম্পর্ক গুলো একই সুতোয় বেঁধে দিয়েছে। এখানে রোদের ভালোবাসা কমে যায়নি , ওরা এখন দুজন দুজনের প্রাণ কেউ কাউকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারেনা। রোদ এখন আলো ছাড়া কিছু বোঝেনা। ওদের দেখে মনে হয় ওদের দুজনের জুটি আল্লাহ নিজে হাতে তৈরি করেছে। আলো এখন সবাইকে নিয়ে অনেক ভালো আছে সাথে রোদের ভালোবাসা, আর মেঘের দুষ্টুমি নিয়ে সবমিলিয়ে অনেক সুখে আছে।
–
এভাবে প্রায় 6 মাস কেটে যায়,,,
আলোর আম্মু এখন নিজে থেকেই আলোর সাথে ফোন দিয়ে কথা বলে, আলোও ওর আম্মুর সাথে রাঙামাটি তে দেখা করতে যায় ,আর ওর আম্মুও ঢাকাতে আসে আলোর সাথে দেখা করতে। একদিন সবাই মিলে রোদের বাসায় একত্রিত হয়, সবার এত মিল দেখে মনে হবে সুখের হাট বসেছে,ওদের বাড়িতে। সবাই মিলে তখন আড্ডা দিচ্ছিল।রোদ, মেঘ, আলোর তিন আম্মু, রোদের বাপি, সজীব, আন্টি, সবাই সোফাতে বসে আড্ডা দিচ্ছিল আলো সবার সামনে গিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল,,,, সবাই আলোর দিকে তাকিয়ে আছে, ওর এভাবে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকার জন্য,,
–
আলো: তোমাদের সবাইকে আমার কিছু কথা বলার আছে
রোদ: জি বলুন ম্যাডাম আমরা শুনছি(হেসে হেসে)
রিদিতা: কি হয়েছে আলো তোর মুখটা শুকনো দেখাচ্ছে কেন?
রোদের আম্মু: কি ব্যাপার কিছু বলবি? সিরিয়াস কিছু?
মেঘ: বউ মনি তোমার কি হয়েছে? দাভাই কি তোমাকে আবার বকা দিয়েছে?( রাগী চোখে রোদের দিকে তাকিয়ে)
সজীব: মামনি তোর কি হয়েছে বলবি তো এবার তো টেনশন হচ্ছে?
রাবেয়া: শরীর খারাপ করছে নাকি?বল কি হয়েছে?
আন্টি: আচ্ছা ঠিক আছে এদিকে এসো তো আমি একটু দেখে নিই তোমার শরীর খারাপ করছে কেন? কি সমস্যা আমাকে বল?
সবাই আলোকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, আলোকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এবার সবাই টেনশনে পড়ে গেছে। রোদ উঠে গিয়ে আলোর পাশে দাঁড়ায় এবং জিজ্ঞাসা করে কোন সমস্যা হয়েছে কিনা?
–
আলো: আসলে আমাদের বাসায় একজন মেহমান আসবে,(মাথা নিচু করে)
রোদ: হুম!আসবে তো আসুক সমস্যা কি? একজন মেহমান আসবে তো কি হয়েছে,এই নিয়েই কি টেনশন করছো নাকি তুমি ? রান্নার জন্য তো সার্ভেন্ট আছে ওরা করবে ।তুমি এসব নিয়ে টেনসন করো না?(হেঁসে হেঁসে)
বাকিরা সবাই বুঝে যায় যে, আলো আসলে কি মিন করছে? তবে রোদের কথা শুনে সবাই হেসে দেয়,আম্মু গুলো এত পরিমান হাসাহাসি শুরু করছে যে, কোনো কথাই বলতে পারছে না। আলোর রোদের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে হন হন করতে করতে উপরে চলে গেল।আর রোদ আহাম্মকের মতো হা করে তাকিয়ে থাকে।
–
রোদ: যা বাবা কি এমন বললাম? এভাবে রেগে চলে গেল কেন? এই মেয়েটার মতিগতি আমি কিছুই বুঝিনা( কনফিউজ হয়ে)
রোদের আম্মু: রোদ বাবা! তোমার আর কিছু বোঝা লাগবেনা বাবা।যা আকাম করার তুমি করে ফেলেছো বাবা( ঘর কাঁপানো হাসি দিয়ে)
রোদ: তুমি এত হাসছো কেন? আমি কি হাসির কিছু বলছি?( রেগে গিয়ে)
আর আকাম করছি মানে?( অবাক হয়ে)
আন্টি: আরে বোকা ছেলে! আলো বোঝাতে চেয়েছে, তোমাদের বাসায় জুনিয়র কেউ আসতে চলেছে?
রোদ: আম্মু তুমি পারোও বটে!সরাসরি বললে কি হতো শুনি? নিজের ছেলেকে কেউ এভাবে লজ্জা দেয়?(মুছকি হেসে)
রোদের আম্মু: তো নিজের ছেলেকে দিব না তো পরের ছেলেকে দিবো? আমি হচ্ছি ডিজিটাল যুগের ডিজিটাল আম্মু! আর বড় কথা তোদের আম্মুর +সাথে আমি তোদের বন্ধু।আমাদের বাসায় ছোট্ট একটা জুনিয়র আসতে চলেছে,এটাই আলো বোঝাতে চাচ্ছে রে গাধা( অনেক খুশি হয়ে)
রোদ: আম্মু তোমরা কথা বলো আমি আসছি( খুশিতে গদগদ হয়ে)
–
রোদ আর এক মুহুর্তও ওখানে না দাঁড়িয়ে দৌড়ে উপরে চলে যায়, আর আলোকে জড়িয়ে ধরে। রোদ এতটা খুশি হয়েছি যে কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলছে।রোদ আলোর কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দেয়। রোদের বাপি অলরেডি পাড়াতে মিষ্টি বানানো শুরু করে দিয়েছে,,সবাই খুব খুশি।
( ধাক্কাধাক্কি করবেন না আমার পাঠক-পাঠিকাদের জন্য মিষ্টি আছে, আর যারা মিষ্টি পাবেন না তারা নিজেদেরকে ভাগ্যবান বলে দোয়া করে চলে যাবেন,আর মিষ্টি চেয়ে লজ্জা দিবেন না)
–
বাড়ির সবাই মিলে আলোর উপরে, খাওয়ার জন্য একপ্রকার অত্যাচার শুরু করে দিয়েছে। সবাই আলোর প্রতি খুব যত্নবান, তার মধ্যে রোদ তো আছেই। আলোর আম্মু এখন আলোর কাছেই থাকার ডিসিশন নিয়েছে, কারণ এ সময় হাসিখুশি থাকাটা যেমন জরুরী, সেরকম হাসিখুশি রাখার জন্যও কাউকে দরকার,রোদ আছে তাও আলো সবাইকে ওর পাশে চাই। রিদিতা সজীব দিনে একবার করে হলেও আলোর সাথে দেখা করে যায়। আর এভাবে আলোর দিন কাটতে শুরু করে নিজের পেটের মধ্যে নতুন একটা অস্তিত্বকে নিয়ে।আর সেই নতুন অতিথিকে ফিল করার চেষ্টা করে, এ যেন এক অন্যরকম একটা অনুভূতি ।
–
আলোর সাথে সব সময় কেউ না কেউ থাকে ,কেউ একা ছাড়ে না আগের তুলনায় আলো অনেক মোটা হয়ে গেছে, আর মুখে একটু অন্যরকম সৌন্দর্য সে জমা হয়েছে,এই সৌন্দর্য টাই প্রতিটা মেয়ের এই সময় চেহারার মধ্যে ফুটে ওঠে।আর রোদের পাগলামির তো শেষ নেই। প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার আগে একবার আলোর পেটে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে যায় ,আবার সন্ধ্যায় ফেরার সাথে সাথে ওকে জড়িয়ে ধরে ভালোবাসার পরশ একে দেয়। এভাবে আস্তে আস্তে আলোর দিন এগোতে থাকে,,,
–
আলোর প্রেগনেন্সিতে 6 মাস যাচ্ছে, আজকের রোদের সাথে আলো হসপিটালে যাবে। একবার চেকআপ করে আসাটা জুরুরি,যদিও কোন সমস্যা করছে না তারপরেও সাবধান থাকতে সমস্যা কি? এতদিন আন্টি আলোর ট্রিটমেন্ট করছিলো।বাট আজকে আল্ট্রা করে দেখবে সব ঠিক আছে কিনা? গাড়িতে বসে, রোদের+আলোর আম্মু আলোর কপালে মায়ের আদর দিয়ে দেয়, রোদ খুব সাবধানে আস্তে আস্তে ড্রাইভ করছে,আর আলোর সাথে টুকটাক কথা বলছে। রোদ আলোর দিকে তাকিয়ে বলে,,
–
রোদ: আমার একটা ছোট্ট আলোমনি হবে!দেখতে একদম তোমার মত হবে,,(মুখে হাসি নিয়ে)
আলো: তাই নাকি? তুমি কি করে জানলে যে প্রিন্সেস হবে, প্রিন্স হল সমস্যা কোথায়?
রোদ:আমি জানি আমার ঘরে প্রিন্সেস ই আসবে,,(খুশি হয়ে)
আলো: আমারও কেন জানি তাই মনে হয় ? আমাদের ঘরে ছোট্ট একটা প্রিন্সেস আসবে। ছেলে তো সবাই চাই আমরা না হয় মেয়েই চাইলাম, যদিও আমি আমার মেয়ের একটা নাম ঠিক করে রেখেছে
রোদ: তাই নাকি? তা শুনি কি নাম ঠিক করেছো আমার প্রিন্সেসের?
আলো: সাধারণত বাবার নামের সাথে মিল রেখে মেয়েদের নাম রাখা হয়, এজন্য তোমার নামের সাথে মিল রেখে আমি নাম দিয়েছি? রোদের মেয়ের *,,,,,রিদু,,,*
রোদ: অনেক সুন্দর একটা নাম ঠিক করছো? আমার খুব পছন্দ হয়েছে। তবে রিদু নামের সাথে আর কি অ্যাড করবে?
আলো: ওটা মেঘের উপরে ছেড়ে দেবো? কারণ ও আমাকে অলরেডি বলে রেখেছে যে বাবুর ফুল নেইম ঠিক করার দায়িত্ব মেঘই নিবে,,আমি শুধু নিকনেইম রাখলাম।
রোদ: ওকে নো প্রবলেম,,,( হাসি দিয়ে)
–
রোদ আলো কে নিয়ে হসপিটালে পৌঁছে গেল। তারপর ওরা ডাক্তারের চেম্বারে গেল,সাথে আল্ট্রাসনো করার জন্য।আলোর সাথে রোদ ও গেল,আলো একা যেতে ভয় পাচ্ছিলো।অাল্ট্রা করার সময় আলোর কাতকুতু লাগছিলো, আর ভয়ও পাচ্ছিলো তাই পুরো সময় আলো রোদের হাতটা শক্ত করে ধরেছিল ।রোদ আর আলোর কথায় ঠিক। ওদেরকে একটা প্রিন্সেস আসছে আর সবকিছু ঠিকও আছে, কোন সমস্যা নেই তবে সাবধানে থাকতে হবে।রোদ বাসায় ফোন দিয়ে জানালো,সবাই খুব খুশি।
–
তবে আলোর কপালে এত সুখ সইবে তো,পৃথিবীতি এমন অনেক মানুষ আছে যাদের কপালে সুখ নামক মূল্যবান জিনিসটা ধরা দিয়েও ছিটকে দুরে সরে যায়,,,
চলবে,,,
(রেসপন্স পাচ্ছি না গল্পে,তোমাদের কি ভালো লাগছে না?)