সিক্ত সুভানুভব’ পর্ব-৭

0
3172

‘সিক্ত সুভানুভব’
[০৭]
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

রোদ কফি হাতে নিয়ে একটা চুমুক দিয়ে একটা কাবাব হাতে নিতে যাবে,তখন মেঘ চিৎকার করে সাহেলাকে বললো,,

মেঘঃসাহেলা আন্টি এই তো গরুর মাংসের দিয়ে বানানো তাই না।

সাহেলাঃজি মেঘবাবু এটা তো গরুর মাংস দিয়ে বানানো,খেয়ে দেখো খুব করে বানিয়েছি,,।

মেঘঃহুম তা তো খাবোই,দাভাই তুই কি জানিস?এই গরুটাকে আমি একদিন কেঁচো খেতে দেখছি?আরো অনেককিছু খেতে দেখছি,,, আমি খাবার অপচয় পছন্দ করি না এজন্য খাচ্ছি তুই এগুলো খাস না কেমন।

রোদঃ আচ্ছা মেঘ তুই খাওয়ার সময় এগুলো বলিস কেন রে?তুই জানিস না আমি এগুলো বললে খেতে পারি না।আম্মু ওকে কিছু বলবে তুমি(রোদ ওর আম্মুর দিকে তাকিয়ে)

আম্মুঃমেঘঘঘ এবার আমি কিন্ত তোকে পিটুনি দিবো,এসব কি কথা বলছিস তুই?

মেঘঃদাভাই তুই যাতে খেতে না পারিস এজন্যই তো বললাম, আশা করি তুই আর কাবাব হাতে নিয়ে,আমাকে আর লজ্জা দিবি না।

রোদঃএখানে এতগুলো আছে তারপরেও তোর হচ্ছে না,,,আর এত খেলে তো পেটে ব্যাথা করবে।আর এভাবে তুই খাচ্ছিস কেন?আস্তে খা আমি খাচ্ছিনা,আমার ভাগের টাও তুই খা।

মেঘঃআরে দাভাই রাগ করছিস কেন?,দাড়া তুইও খা কেঁচো সস দিয়ে যে সস বানানো হয়েছে, আমি ওই সসটা নিয়ে আসি,,খেয়ে দেখ তোর দারুন লাগবে।

রোদ আর ওর আম্মু কপির মগটা নিয়ে যে যার রুমে চলে গেল,মেঘের সামনে বসে থাকলে রাতের ডিনারটাও আজ কেউ করতে পারবে না।রোদ ওর কফির মগটা হাতে নিয়ে ওর রুমে চলে গেল,মেঘ সোফাতে হেলান দিয়ে ইচ্ছেমত খেতে শুরু করলো,সব গুলো শেষ করে পানি খেয়ে হাত ধুয়ে রোদের রুমে গেল।রোদ কারো সাথে ফোনের কথা বলছিলো,রোদ দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে পর্দার আড়ালে দুটো ছোট ছোট পা দেখা যাচ্ছে, রোদের বুঝতে কষ্ট হলো না যে,মেঘ আবার গোয়েন্দাগিরি শুরু করছে।রোদ ম্যানেজারের সাথে কথা বলে কল কেটে দিয়ে শুধু ফোন কানে ধরে রাখলো, আর মেঘকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলতে শুরু করলো,,

রোদঃবাবু তুমি কি করো?আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি বাবু।হুমমম বিয়ে করবো তো বাবু,আসলে আমার না মাকে বিয়ের কথা বলতে লজ্জা লাগছে,তুমি তো জানো আমি কত লাজুক?

মেঘঃ(ওহ আম্মুকে তো এই খবর তো দিতে হয়,তোমার বাবু বলা আমি বের করছি দাড়াও রোদ বাচ্চু)

রোদঃহুমম তুমি একদম টেনশন করো না,আচ্ছা রাতে ডিনার করে শুয়ে পড়বে কেমন,একদম রাত জাগবে না।চোখের নিচে কালো দাগ পড়বে তো(ন্যাকামি করে),ওকে বাই গুড নাইট, উমমমমমা

মেঘঃঢং দেখে বাঁচি না,, বাবুকে কোলে বসিয়ে রাখলেই পারতে ,আর সাথে চুচু ডায়াপার আর ফিডার মুখে ধরলে তো পারো দাভাইয়ের বাবু বলে কথা(মনে মনে)

মেঘ ওখান থেকে সরে গেল,আর রোদ হেসে ফোন বিছানাতে রাখলো।আর মেঘ ওর আম্মুর রুমে গিয়ে দুম করে বিছানাতে উঠে পড়লো।আর আম্মু কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো আর ওর মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,মা দাভাইয়ের বিয়ে দিয়ে দাও,দাভাই তো বড় হয়ে গেছে তাই না।ওর আম্মু মেঘের মুখের দিকে ভ্রু তাকিয়ে আছে,মেঘ আর ওর আম্মু সাথে কিছু সময় বক বক করে,তারপর নিচে গেল।

রোদ ফোন হাতে নিয়ে ভাবছে আলোকে ফোন দিবে কি না?
রোদ কি মনে করে আবার ফোন রেখে দিল,বিছানা থেকে উঠে বাইরে একটু বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে গেল।রোদের বাকি সব বন্ধুদের মধ্যে ফাহাদ,সাগর,আবির এরা রোদের সব থেকে কাছের বন্ধু। রোদের ওদের সাথে একটা কফিশপে আড্ডা দিচ্ছে বাট ওর মন পড়ে আছে আলোর কাছে,রোদ একটা ঠান্ডা কিছু অর্ডার করলো,আর সেটা হাতে নিয়ে, একটু খেয়ে আবার আলোর ভাবনাতে বিভোর হয়ে গেল,,

রোদঃআজ যখন আলো ফোন করে কাঁদছিলো তখন আমার এত কষ্ট লাগছিলো কেন?আচ্ছা ওকে কাঁদলে কেমন দেখায়, আলোতো অনেক ফর্সা, আচ্ছা কাঁদলে কি ওর নাকটা লাল হয় যাই,আচ্ছা আলো কি ঠোঁট উল্টিয়ে কাঁদে, আচ্ছা ও কি ভ্য ভ্য করে কাঁদে না,নাক টেনে টেনে আস্তে আস্তে কোন শব্দ ছাড়াই কাঁদে।সেদিন তো হাউকাউ করে কাদছিলো,ওকে কাঁদলে দারুন লাগে।সব মেয়েরা কাদলে কি এত কিউট লাগে,,।

রোদ এসব ভাবছিলো আর মুছকি মুছকি হাসছিলো,আবির দুষ্টুমি করে রোদের হাত টা ওর কফির মগের সাথে চেপে ধরে এবার রোদের হুশ হয়,রোদ রাগী চোখের আবিরের দিকে তাকিয়ে উঠে আবিরকে টেনে ধরে ওকে মারতে শুরু করে,আর বাকিরা দাঁত ক্যালানের কাজে লেগে পড়ে।রোদ আবার বসে পড়ে, রোদের এমন উদাসীনতা ভাব দেখে বাকি সবাই মুখ চাওয়া -চাওয়ি করতে শুরু করলো।তারমধ্যে ফাহাদ হুট করে আলোর কথা জিজ্ঞাসা করলো,আর সাথে ফাহাদ বাকিদেরও আলোর কথা জানিয়ে দিল,আবির রোদের পাশে বসে রোদের পেটে একটা গুতো মেরে,,

আবিরঃতা রোদ মেহবুব সেই আলোই কি আপনার মন কেড়েছে, নাকি আপনার জীবনে প্রেমের আলো জালিয়েছে শুনি?
বাকিরাও হাসতে লাগল।

রোদঃধুরর তেমন কিছু না,মেয়ে আর পাঁচটা মেয়ের থেকে আলাদা,কেমন একটা বোকা টাইপের।তোরা যা ভাবছিস আসলে তা না,রোদেকে পাওয়া এত সহস না বাচ্চু,মেয়েটা খুব ভালো আর খুব সরল মনের।
সাগরঃ এজন্যই তো বলছি,আমাদের ভাবি বানিয়ে আন।আমাদের কোন সমস্যা নাই।
রোদঃতোরা চুপ করবি,,,তোরাও না সামান্য কিছু নিয়ে খুব পঁচানো শুরু করিস,,।

রোদ আরো কিছু সময় আড্ডা দিয়ে রাতে বাসায় ফিরলো,রোদের আম্মু কেমন করে যেন বার বার তাকাচ্ছে,রোদ কিছু মনে না করে উপরে চলে গেল,আর ফ্রেস হয়ে নিল টাওয়াল নিয়ে মুখ মুছে সামনে তাকাতেই দেখে মেঘ দাড়িয়ে আছে,মেঘ সামনের দিকে তাকিয়ে রোদের দিকে হাত বাড়িয়ে বলছে,,,

মেঘঃদাভাই ১৫ হাজার টাকা দে তো?আমার বউ জব করে সেলারি পেলে তোকে সব শোধ করে দিবে।

রোদঃএত টাকা তুই কি করবি?আর আমার কাছে এতটাকা নেই,আর তোর বউ দিবে কেন?তুই কি জব করবি না,,।

মেঘঃজানতাম তুই এমনটাই করবি,এজন্য তোর ডেভিড কার্ড টা আগে থেকেই তোর ওয়ালেট থেকে সরিয়ে দিয়েছি,আর অনেক টাকা আছে তোর কার্ডে শুধু ১৫ হাজার নিয়েছি।

রোদঃতুই এত টাকা দিয়ে কি করবি আমাকে বল?আর আম্মু জানলে কিন্ত খুব বকা দিবে আর সাথে পিটুনি ফ্রী পাবি।আমি কিন্ত তখন তোকে ধরবো না, আগেই বলে দিলাম।আমার ওয়ালেটে হাত দিয়েছিস তোর তো সাহস কম না।

মেঘ রোদের হাতে কার্ডটা ধরিয়ে দিয়ে দৌড়ে চলে গেলো,আর রোদ মেঘের চলে যাওয়া দেখছে,রোদের আম্মু ওদের খেতে ডাকছে,মেঘ লাফাতে লাফাতে এসে চেয়ারে বসলো,ওরা খাওয়া শুরু করলো।মেঘ রোদের দিকে তাকিয়ে বললো

মেঘঃজানিস দাভাই আজ একটা মেয়েকে আমি ফিদা হয়ে গেছি,আমি যদি আর ৪” বড় হলাম তাহলে ওকে তুলে নিয়ে আসতাম।

রোদঃ এই তুই চুপ করবি,?সব সময় ফালতু না বকলে হয় না, সারাদিন কানের কাছে পকপক করেই যাবো,,।

মেঘঃযা বাবা পকপক কই করলাম বকবক করলাম তো,,দাভাই ভুলভাল কথা বলিস না।

রোদ আর মেঘের একটা কথাও না শুনে তারাতারি খেয়ে চলে উঠে গেল,আজকাল মেঘের কাছে বসা মানে যেচে পড়ে গরুর লাথি খাওয়া দুটোই সমান।রোদ ওর রুমে গিয়ে কি মনে আলোকে ফোন দিলো,কল যাওয়া সাথে সাথে রোদের হার্টবিট যেন দ্রুতগতিতে বিট করতে শুরু করছে,রোদ ওর বুকের বাম পাশে হাত রেখে বোঝা চেষ্টা করছে,আসলে ওর এমন হচ্ছে কেন?,দুইবার রিং হওয়ার পর আলো ফোন রিসিভ করলো,আর রোদ আলোর কন্ঠ শোনার জন্য এতটা ব্যাকুল হয়ে ছিলো,আলো হ্যালো বলার সাথে সাথে রোদ চোখ বন্ধ করে আলোর ভয়েজ টা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছে,আর ওদিকে আলো হ্যালো হ্যালো করেই যাচ্ছে।আলো এবার জোর গলাতে হ্যালো বলাতে রোদের মনে পড়ে যে, আলো কলে আছে,,।

রোদঃহ্যা আমি রোদ বলছিলাম,কি কি করছো?রাতে ডিনার করছো?আমার উপর কি এখনো রেগে আছো?

আলোঃহুমম ডিনার করছি,আর আমি আপনার উপর রেগে নেই।আবৃতি আপুর কাছে থেকে একটা গল্পের বই নিয়ে পড়ছিলাম।শুয়ে বসে থেকে সময় কাটছে না।

রোদঃআমি তোমার কালকে তোমার আগের স্কুল থেকে সার্টিফিকেট তুলে এনে,এখানকার একটা স্কুলে ভর্তি করে দিবো,তুমি কাল দশটা রেডি থাকবে আমি তোমাকে নিতে যাবো কেমন।আর তখন রেজাল্ট খারাপ কিন্তু খুব বকবো তখন।

আলোঃআমার জন্য এতকিছু কেন করবেন?আমি আপনার কে?আজকে দুইজন জানে বাট কালকে যখন পাঁচজন আমার কথা জানবে,তখন তাঁদের কি উওর দিবেন? রোদ সাহেব,তবে একটা কথা মনে রাখবেন আমার শরীরে খারাপ কিছু দাগ লাগতে দিবেন না,আমি মেনে নিতে পারবো না।আপনার কাছে একটাই চাওয়া, আমি আর পড়াশোনা করতে চাই না, আমার একটা কাজ যোগাড় করে দিন,যাতে নিজের খরচ নিজে চালাতে পারি,কতদিন আপনার ভরসাতে পড়ে থাকবো বলেন।

রোদঃএই মেয়ে তুমি তো বড্ড বেশি কথা বলো,রোদ মেহবুব এতকথা শুনতে অভ্যস্ত নই,তাই আমাকে তোমার উপদেশ দেওয়া লাগবে না।আমি যদি খারাপ মাইন্ডে তোমাকে নিয়ে আসতাম তবে তুমি এই অবস্থাতে থাকতে না,আমি এতটাও খারাপ না যতটা তুমি আমাকে ভাবছো,এখন তোমার রেসপন্সিবিলিটি আমার সো তোমাকে সেইভ রাখার জন্য আমাকে যা করতে হয় আমি সেটাই করবো।আর তুমি পড়াশোনা করবে,এত বেশি পাকামি আমার সাথে করতে এসো না। মাইন্ড ইট,,।

আলোঃআমি ওভাবে বলতে চাইনি,প্লিজ আপনি কিছু মনে করবেন না।আসলে আমার মাথা ঠিক নেই,,।

রোদঃহুম এখন ঘুমিয়ে পড়ো আর কাল সকালে দেখা হচ্ছে,আর ফালতু চিন্তা মাথায় থেকে ঝেড়ে ফেলো আর নিজের ভালোর কথা চিন্তা করবো,,আচ্ছা গুড নাইট।

আলোঃহুমম গুড নাইট।

সকালবেলা রোদ যথারীতি ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে তারপর মনিং ওয়াকে যাই।তারপর সাওয়ার নিয়ে ব্রেকফাস্ট করে রেডি হয়ে, ম্যানেজারকে ফোন দিয়ে বলে ওর আজকে অফিসে যেতে একটু লেইট হবে,রোদ ওর আম্মুকে বলে বেড়িয়ে যায় বাসা থেকে,রোদ আলোর হোস্টেলের সামনে গিয়ে আলোকে ফোন করে বাট আলোর ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে।রোদ এবার গাড়ি থেকে নেমে হোস্টেলে ভিতরে গিয়ে ম্যানেজার বলে আলোকে ডেকে দেওয়া জন্য,ম্যানেজার একজনকে পাঠায় বাট সে এসে বলে আলো রুমে নেই।রোদ এবার নিজে দেখার জন্য আলোর রুমের দিকে যায়,সত্যি আলো রুমে নেই,,

রোদ আলোর ওয়াশরুম৷ বারান্দা,ছাদ সব নিজে দেখলো বাট আলোকে কোথাও খুঁজে পেলো না।রোদ মাথায় হাত দিয়ে একটা চেয়ারে বসে পড়লো,রোদের মাথা যেন আকাশ ভেঙে পড়ছে,,,,হোস্টেলের কোথাও আলোকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না,আলো নতুন তাই অনেকেই ওকে চিনে না।রোদের যেন মুখে ভাষা হারিয়ে গেছে,রোদ কিছু সময় থম মেরে বসে থেকে আলোকে আবার খোঁজা শুরু করলো বাট কোথাও পাওয়া গেলো না,রোদ আবৃতিকে জিজ্ঞাসা করলো কিন্ত সেও কিছু বলতে পারলো না।

চলবে,,
(আপনারা প্লিজ হাইপার হবেন না,গল্পটা আমাকে আমার মত করে সাজাতে দিবেন আশা করি,কোন চিল্লা পাল্লা করবেন না,একটা সুন্দর কমেন্ট করবেন যাতে এর পরের পার্ট আপনাকে মনমত করে দিতে পারি,আপনাদের উৎসাহ আমাকে লিখার প্রতি আগ্রহ বাড়তে সাহায্য করে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here