#সিনিয়র_খালাতো_বোন
#part_18
#writer_srabon
সকালবেলা বিভোর ঘুমে তলিয়ে ছিলাম। তখনই ফোনের রিংটোনের আওয়াজে ঘুমটা ভেঙে গেল কিছুটা। ঘুম ঘুম চোখেই ফোনটা রিসিভ করলাম।
— হ্যালো,,,,, কে?? (আমি)
— শ্রাবন তুমি মনে হয় নাম্বারটা চেক করো নাই..!(স্যার)
ফোনের মধ্যে অফিসের বসের আওয়াজ পেয়ে এক লাফে ঘুম থেকে উঠে বিছানায় বসে পরলাম।।
— সরি স্যার..! গুড মর্নিং (আমি)
— it’s ok…কিন্তু শ্রাবন এটা কি..? তুমি এখনো ঘুমিয়ে আছ..? আজকে না তোমার অফিসে জয়েন করার কথা..? ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখেছ কয়টা বাজে..? (স্যার)
স্যারের কথায় মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখি ৯.৩০ বাজে। আর আমার অফিস সকাল ১০.০০ টায়।
— সরি স্যার..! আসলে বাসায় আমি একা থাকি তো। ঘুম থেকে তুলে দেওয়ার কেউ নেই। এরপর থেকে আর এরকম হবে না স্যার। (আমি)
— হুম,,,আমি বুঝতে পেরেছি। (স্যার)
— ধন্যবাদ স্যার। (আমি)
— আমি তোমাকে একটা কাজের জন্য ফোন দিয়েছিলাম। (স্যার)
— জি,,,স্যার বলুন.! (আমি)
— তুমি আমাকে বলেছিলে,,, অফিসে একটা স্টাফ কম আছে। (স্যার)
— জি,,স্যার একজন স্টাফ কম আছে। (আমি)
— হুম,,আমার এক বন্ধুর মেয়ে,, নাদিয়া। তাকে ওই জায়গায় জয়েন করতে বলেছি আমি। (স্যার)
— ওহহ,,এটা তো ভালো কথা..!(আমি)
— কিন্তু,,,, (স্যার)
[এইবার আমার একটু খটকা লাগল। কারন যতবারই স্যার আমার সাথে এমন করে কথা বলেছে ততবারই আমি একটা না একটা বিপদে পরেছি। কি জানি আবার আমার জন্য কি অপেক্ষা করতেছ..🙄]
— কিন্তু কি স্যার.? (আমি)
— আসলে মেয়েটা কালকেই ঢাকায় এসেছে। এর আগে ঢাকায় কখনো আসে নাই। কিছুই চিনে না ঢাকা শহরের। এমনকি আমাদের অফিসটাও চেনে না। ওর আব্বু মানে আমার বন্ধু ফোন করে এইমাত্র আমাকে বলল যে,,, নাদিয়া সকাল থেকে নাকি *** রাস্তার মোরে দাঁড়িয়ে আছে। (স্যার)
—………. (আমি চুপচাপ শুনতেছি)
— এখন শ্রাবন,, অফিসে আসার সময় তুমি যদি মেয়েটাকে একটু পিক করে নিয়ে আসতে। (স্যার)
[আল্লাহ,,,!!! আমি এমনিতেই আছি এক বিশাল প্যারার মধ্যে। তার উপরে আবার স্যারের এই….. অফিসের বস তাই কিছু বলাও যায় না। ]
— স্যার আপনি কোন চিন্তা করবেন না। আমি আসার সময় মেয়েটাকে পিক করে নিয়ে আসব। (আমি)
— আচ্ছা..! রাখি
এরপর ফোনটা রেখে দিলাম।।
বিছানা থেকে উঠে মনটা ভিষণ খারাপ হয়ে গেল।
কারন এর আগে রোজ সকালে শিমলা আমাকে ঘুম থেকে ডেকে দিত। সাথে সকালে আর বিকালে ওর হাতের এক কাপ চা।
কিন্তু আজকে…??? শিমলা নামের মেয়েটা আমাকে ঘুম থেকে তুলে দিল না। যার কারনে অফিসে দেড়ি হয়ে গেল।
নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলাম,,,
আমি কি কোন ভাবে আবার শিমলাকে ভালোবেসে ফেললাম..? নাকি এটা একটা অভ্যাস..? কিছু দিন পরে হয়তো সব কিছু ভুলে গিয়ে আবার নতুন একটা অভ্যাসে অভ্যস্ত হয়ে পরব।।
এটা ভেবে আর অপেক্ষা না করে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।
খুব তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে বাইরে চলে এলাম।
কিচেনে গিয়ে হালকা কিছু বানিয়ে খেয়ে নিলাম।
এরপরে যখন অফিসের জন্য রেডি হতে যাব তখনই আবার মনটা ভিষণ খারাপ হয়ে গেল। কারন এই কয়েকদিন বাসা থেকে কোথাও যাওয়ার আগে শিমলা আমার রুমে এসে শার্ট-প্যান্ট রেখে যেত। কিন্তু এখন আমাকে নিজেই সেগুলো করতে হচ্ছে।
আমি কিছুতেই ভাবতে পারতেছি না যে কি করে এই অল্প কয়দিন আমার লাইফের এতটা জায়গা করে নিতে পারে..?
এটাই কি ভালোবাসা..??? আমি কিছুই ভাবতে পারতেছি না। আমি এখনো কনফিউজড।।
এই ব্যাপারে আর না ভেবে তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিলাম।।
অফিসে কয়েকটা ফাইল নিয়ে বাসার বাইরে চলে এলাম।
গ্যারাজ থেকে বাইক বের করে স্যারের বলা ঠিকানায় চলে গেলাম।
সেখানে গিয়ে বুঝতে পারতেছিলাম না যে,,কোনটা নাদিয়া না ফাদিয়া..??
কারন এখানে অনেক লোকজন আছে।অনেক গুলো মেয়েও আছে। কোনটা নাদিয়া বুঝব কি করে..?
তখন মাথায় একটা বুদ্ধি এলো,,অফিস ব্যাগ থেকে একটা কাগজ বের করে মারকারি পেন দিয়ে বড় করে ‘নাদিয়া’ নামটি লিখলাম।।।
এরপর বাইকের সামনে এক হাত দিয়ে ধরে রাখলাম আর এক হাত দিয়ে বাইক চালাতে লাগলাম আস্তে আস্তে।
তখনই আমার সামনে থেকে একটা মেয়ে আমার নাম ধরে ডাক দিল। মেয়েটার মুখে মাস্ক দেওয়া। আমার দিকেই আসতেছে। মেয়েটার কন্ঠটা পরিচিত মনে হল।
আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে স্যার কি মেয়েটিকে আমার নাম বলে দিয়েছে নাকি..? তা না হলে মেয়েটা আমার নাম জানল কিভাবে.??
এগুলো ভবতে ভাবতে মেয়েটা আমার সামনে চলে এলো।।
— আপনিই কি নাদিয়া..???(আমি)
— হুম,,, আমিই নাদিয়া…! (নাদিয়া)
— আচ্ছা আপনি কি আমাকে চিনেন..? (আমি)
— হ্যাঁ আবার না..!(নাদিয়া)
মেয়েটা এখনো মুখে মাক্স দিয়ে আছে। চেহারা দেখার কোন সুযোগ নেই। তাছাড়া মেয়েটাকে বেশি সুবিধার মনে হচ্ছে না। তাই আমি আর কথা না বারিয়ে বললাম,,,
— বাইকে উঠে বসুন। এমনিতেই অনেক লেট হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি অফিসে যেতে হবে। (আমি)
— ওরেব্বাস,, সাহেবের দেখি অনেক তারা। (নাদিয়া বাইকে উঠে পরল)
আমি বাইক স্টার্ট দিয়ে সোজা অফিসের দিকে যেতে লাগলাম। কিন্তু মেয়েটাকে আমার চেনা চেনা লাগতেছে। মেয়েটার কন্ঠ অনেক পরিচিত মনে হচ্ছে.? আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে মেয়েটা এমন ভাবে আমার সাথে কথা বলতেছে যেন মেয়েটা আমাকে অনেক দিন ধরে চিনে।
এগুলো ভবতে ভাবতে অফিসে চলে এলাম।।।
— এটাই আমাদের অফিস। আজ থেকে এখানেই আপনি চাকরি করবেন। ভালো করে দেখে চিনে রাখুন। রোজ রোজ আর আমি থাকব না আপনার সাথে। (আমি)
— দেখাই যাবে..!
আমি আর নাদিয়া অফিসের ভিতরে প্রবেশ করলাম।।
আমাকে এত দিন পরে অফিসে দেখে সবাই একটু বেশি বেশি কথা বলতে লাগল। অনেক দিনের কথা জমে ছিল।।
আমি মেয়েটিকে নিয়ে বসের কেবিনের দিকে যেতে লাগলাম। তখনই নাদিয়ে বলে উঠল,,,,
— অফিসের সবাই আপনাকে চিনে..?(নাদিয়া)
— হুম..!(আমি)
— সেই আগের মতোই আছেন দেখছি। (নাদিয়া)
— মানে..?(আমি)
— নাহ,,কিছু না..!
এরপর নাদিয়াকে নিয়ে আমি স্যারের কেবিনের সামনে চলে এলাম।
— স্যার আসব..?(আমি)
— শ্রাবন..! হ্যাঁ আসো (স্যার)
— স্যার এই যে মেয়েটা..!(আমি নাদিয়াকে দেখিয়ে)
— আসসালামু আলাইকুম স্যার..!(নাদিয়া)
— ওয়ালাইকুম আসসালাম..! নাদিয়া,, এই হচ্ছে শ্রাবন,,,আমাদের অফিসের ম্যানেজার। যেকোন সমস্যায় তুমি তার কাছে যেতে পারো। (স্যার)
— ওকে স্যার..!(নাদিয়া)
— শ্রাবন,,আমি তোমাকে একটা ঠিকানা মেসেজ করে দিয়েছি দেখ। এই ফাইলগুলো নিয়ে সেখানে গিয়ে ডিলটা ফাইনাল করে এসো। (স্যার)
— কিন্তু স্যার,,,আমি তো এই প্রজেক্ট + ফাইল সম্পর্কে কিছুই জানি না। কোন ধারনাই নেই। (আমি)
— আমি জানি সেটা। এই প্রজেক্টের সব কিছু কমপ্লিট। তুমি শুধু সেখানে গিয়ে ফাইলটা পৌছে দিবে আর কয়টা সাইন করে চলে আসবে ব্যাস। (স্যার)
— আচ্ছা স্যার,,,আমি আসি। (আমি)
— হুম…!!
এরপর আমি ফাইল গুলো নিয়ে আমার কেবিনে চলে এলাম।
কেবিনে এসে একটু সময় বসে রেস্ট নিয়ে বাইক নিয়ে বেরিয়ে পরলাম স্যারের দেওয়া ঠিকানায় উদ্দেশ্যে।
———————————————-
স্যারের স
দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী পৌছে বুঝতে পারলাম এটা একটা রেস্টুরেন্টে। আমি ফাইল নিয়ে ভিতরে গেলাম।
ঠিক তখনই একজন লোক আমাকে ইশারা করে তার কাছে ডাকলেন।
আমি তার কাছে চলে গেলাম।
— হ্যালো,,,আমি রফিক..! **** কোম্পানির ম্যানেজার। (রফিক)
— হ্যালো,আমি শ্রাবন *** কোম্পানির ম্যানেজার। এই যে ফাইলগুলো। সব চেক করে দেখেন। ঠিকঠাক আছে কি না। (আমি)
— আমাকে ৫ মিনিট সময় দিন..!(রফিক)
— হুম অবশ্যই…!!!
এরপর আমি একটু অপেক্ষা করতে লাগলাম।
— হুম।সব কিছুই ঠিক আছে। আপনি এখানে দুইটা সাইন করে দেন শুধু। (রফিক)
— আচ্ছা..!
এরপর সব কাজ কমপ্লিট করে আমি রেস্টুরেন্টের বাইরে চলে এলাম। রফক সাহেব খাওয়ার জন্য জোর করেছিলেন। কিন্তু আমার মনটা ভালো ছিল না তাই কিছু না খেয়েই বাইরে চলে এলাম।
বাইরে এসে বাইক স্টার্ট দিব তখনই ফোনে একটা কল এলো..!
পকেটে থেকে মোবাইল বের করে দেখি অসীমের ফোন।
আমি রিসিভ করলাম,,,,
— ভাই এটা কি..? কাল থেকে ফোন দিয়েই যাচ্ছি। কোন রিপ্লাই দিচ্ছেন না কেন ভাই..? কিছু হয়েছে আপনার..?(অসীম)
— আমি ঢাকায় চলে এসেছি অসীম। (আমি)
— হুম ভাই শুনেছি..! আর এটাও শুনেছি যে ভাবির বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। (অসীম)
—…….. (চুপ)
— ভাই এগুলো কি হচ্ছে.?? আমি কিছুই বুঝতেছি না। (অসীম)
— যেটা হচ্ছে চুপচাপ হতে দে। (অসীম)
— না ভাই,,আমি এই বিয়ে হতে দিব না। আমি এখনি ছেলেটাকে গিয়ে…..(অসীম)
— আমাকে কি বলেছিলি মনে আছে..?(অসীম)
— কিন্তু ভাই…..(অসীমকে থামিয়ে)
— কোন কিন্তু না। (আমি)
— ভাই আমি তো জানি আপনি ভাবিকে কত ভালোবাসেন (অসীম)
— এই বিষয়টা বাদ দে ভাই..! আমি এমনিতেই অনেক ঝামেলায় আছি। (আমি)
— আচ্ছা ভাই..!
এরপর আর কিছু কথা বলে ফোন রেখে দিলাম।
আমি এতটা কনফিউজড জীবনে কখনো হই নি। আমি কি আসলেই শিমলাকে ভালোবাসি..? নাকি এটা কোন মোহ..? আমার জানা নেই।।
যা হবে সামনে দেখা যাবে।
মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখি দুপুর হয়ে গেছে।
তাড়াতাড়ি বাইন স্টার্ট দিয়ে অফিসে চলে এলাম।
অফিসে এসে নিজের কেবিনে বসে পরলাম।
কিছু সময় পরে পিয়নকে ডাক দিলাম।।
— স্যার ডেকেছিলেন..? (পিয়ন)
— এই কাগজটা বসকে দিয়ে আমার কথা বলো। (আমি)
— জী স্যার..!!!
এরপর আমি চোখটা বন্ধ করে নিজের কেবিনে বসে রইলাম।
তখনই আমার অফিস সেল ফোনে স্যারের কল এলো,,
— জি,,,স্যার সব ঠিক আছে..?(আমি)
— হুম..!আমি তোমার কেবিনে এইমাত্র নাদিয়াকে পাঠিয়েছি। (স্যার)
— কেন স্যার..?(আমি)
— ও তো অফিসে নতুন। তাই তুমি একটু কাজ বুঝিয়ে দাও। (স্যার)
— ওকে স্যার..!
এমনিতেই আছি কনফিউশানে তার উপরে আবার স্যার আছে আমাকে নিয়ে। অফিসে এত লোক আছে। তারপরেও আমি কেন ভাই..?
যাই হোক। চেয়ারে সোজা হয়ে বসে রইলাম। তখনই,,,
— স্যার ভিতরে আসব..?(নাদিয়া)
— হুম….!
কিন্তু এই মেয়ের মুখে এখনো মাস্ক লাগানো। আমি বুঝতেছি না এই মেয়ের সমস্যা কি.? এখনো মুখে মাস্ক দিয়ে আছে কেন।
কিন্তু মেয়েটা যখনই তার মুখ থেকে মাস্ক খুলে ফেলল তখনই আমার মুখ দিয়ে শুধু একটাই কথা বের হলো………..
.
.
.
.
.
#চলবে……???
[মেয়েটা কে হতে পারে…..??🤔]