সিনিয়র খালাতো বোনpart_03

0
1958

#সিনিয়র_খালাতো_বোন
#part_03
#writer_srabon

রাহুলকে বিদায় দিয়ে আমি বাইক নিয়ে বেরিয়ে পরলাম অফিসের উদ্দেশ্যে। অফিসে এসেই সোজা বসের রুমের দিকে এগিয়ে গেলাম।

বসের কেবিনের সামনে এসে বাইরে দাঁড়িয়ে বললাম,,,

— স্যার ভিতরে আসব..??(আমি)

— হুম,,আসুন মি. শ্রাবন…. take your sit (স্যার)

— ধন্যবাদ স্যার….(আমি)

— হুম…! আপনাকে যে ফাইলের কাজ দিয়েছিলাম সেই ফাইলটা কমপ্লিট করেছেন..?(স্যার)

— জী,,স্যার..! এই যে,, আমি ভালো করে চেক করে এনেছি। কোন সমস্যা নেই। আপনি চাইলে চেক করে দেখতে পারেন। (আমি আমার হাতে থাকা ফাইলটা স্যারের টেবিলে রেখে বললাম)

— Good very good…. অফিসে এত সিনিয়র অফিসার থাকা সত্ত্বেও আমি আপনাকে এই কাজটা করতে দিয়েছি এই কারনেই৷ কারন আমি জানি আপনি খুব মনোযোগ দিয়ে কাজটা করবেন। (স্যার)

— ধন্যবাদ স্যার…(আমি)

— আচ্ছা,,এইবার আপনি আসুন।।(স্যার)

— স্যার আপনার সাথে অন্য একটা বিষয় নিয়ে কথা ছিল।। (আমি)

— হুম,,বলে ফেলুন..(স্যার)

— স্যার আমার এক সপ্তাহ ছুটির দরকার।। (আমি)

— ওহহহ,,শিট আমার তো মনেই ছিল না। আমাকে আগে মনে করিয়ে দিবেন না। সমস্যা নেই। আপনার ছুটি আমি এপ্রুভ করে দিলাম। (স্যার)

[আমি প্রচুর অবাক হলাম। কারন স্যার অফিস মিস দেওয়া একদম পছন্দ করে না। তার উপরে আমি আবার ১ সপ্তাহের কথা বলেছি। এক সপ্তাহের কথা বলেছি এই কারনে যে,, এক সপ্তাহের কথা বললে কমপক্ষে ৩ দিন তো ছুটি দিবে। আর আমার এতেই হয়ে যাবে। কিন্তু স্যার তো ছুটির কারন না শুনেই হ্যা করে দিল। বিষয়টি ভালো বুঝতে পারলাম না। তাই স্যারকে জিজ্ঞেস করলাম,,, ]

— স্যার,,ছুটির কারন না জেনেই,,ছুটি দিয়ে দিলেন..??(আমি)

— কারন না জানার কি আছে.?? তাছাড়া আমিও আজকে অফিস শেষ করে সিলেট যাচ্ছি তো..! (স্যার)

স্যারের কথার আগাগোড়া কিছুই আমি খুজে পাচ্ছি না। কিন্তু বাড়তি কোন প্রশ্নও করলাম না। কারন এর পরে দেখা গেলো ছুটি ক্যান্সেল করে দিল। তাই শুধু মাথা নাড়িয়ে একটা হাসি দিলাম।।।

— স্যার,,আমার এখনি বাসায় যেতে হবে। কিছু কেনাকাটা করতে হবে সাথে প্যাকিংও করতে হবে। (আমি বানিয়ে বললাম)

— এটা বলা লাগে..? তাড়াতাড়ি বাসায় যান। আর সবকিছু ঠিকঠাক করে সময়মত চলে যান। (স্যার)

(কি বা* বলে কিছুই বুঝি না। সব কিছুই তো মাথার উপর দিয়ে যায়। শালার বুড়া মনে হয় পাগল হইছে। উল্টাপাল্টা বলতেছে শুধু। এরপর আমি একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে গেলাম।।)

অফিসে গিয়ে বসের সাথে ছাড়া আর কারো সাথেই দেখা করি নাই। প্রানে ভয় আছে না। মুখে মাস্ক পড়া ছিল তাই কেউ বুঝতেও পারে নাই যে আমি অফিস এসেছিলাম।।।

[এইবার বলি আসল কথা,,যেটা শ্রাবন জানে না। যার কারনে শ্রাবনের কাছে সব কিছু উল্টাপাল্টা লাগতেছে।
স্পর্শির নিজের চাচার অফিসে শ্রাবন চাকরি করে। এটা অবশ্য শ্রাবন জানে। কিন্তু শ্রাবন এইটা জানে না যে আর মাত্র দুইদিন পরে স্পর্শির বিয়ে। শ্রাবন আর স্পর্শি যে খুব ভালো বন্ধু এটা মোটামুটি সবাই জানে। ঠিক তেমনি স্পর্শির চাচাও জানে। যেহেতু স্পর্শির বিয়ে,,তাই শ্রাবনের তো ছুটির ভিষণ দরকার। তাই শ্রাবনের অফিসের বস মানে স্পর্শির চাচা শ্রাবনকে কোন প্রশ্ন না করেই ছুটি দিয়ে দেয়। শ্রাবন বেচারা তো জানে না যে স্পর্শির বিয়ের কারনে বস ওর সাথে এমন আচরণ করেছে। তাই না জেনেই ব্যাটা বসকে পাগল বলতেছে। আশা করি বুঝাতে সক্ষম হয়েছি। চলুন গল্পে ফেরা যাক..!]

আমি অফিস থেকে বেরিয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সকাল ১০.৩০ বাজে। কি করব কিছুই বুঝতেছি না। কাছেই একটা ভালো শপিংমল আছে। তাই আর না ভেবে সেখানে চলে গেলাম।।
এরপর শপিংমলে ঢুকে কয়েকটা টি-শার্ট + কালো প্যান্ট সিলেক্ট করলাম।।

তখনই আমার চোখ একটা নীল পাঞ্জাবির দিকে গেল।
আমি সেটার কাছে গিয়ে ভালো করে ধরে দেখতে লাগলাম।
আর কিছু সময়ের জন্য অতীতে চলে গেলাম,,,

#অতীত
কোন একভাবে জানতে পেরেছিলাম নীল পাঞ্জাবি নাকি তার খুব প্রিয়। তার জামাই যখন তাকে বিয়ে করতে আসবে তখন নাকি তাকে এই নীল পাঞ্জাবি পরে আসতে হবে। না হলে নাকি সে তাকে বিয়ে করবে না।
আমি আর সে খুব হেসেছিলাম সেইদিন।

এরপর সব ভয় ভেঙে একদিন দোকান থেকে একটা নীল পাঞ্জাবি কিনে পড়ে তার সামনে যাই।
সে আমাকে নীল পাঞ্জাবিতে দেখে মারাত্মক খুশি হয়। আর বলে এটা পড়ার কারন কি..?

আমি সেই দিন মনের সব ভয় দূর করে একরাশ সাহস নিয়ে তাদের বাসার ছাদে বসেই প্রপোজ করে ফেলি। কি কি বলেছিলাম সেটা মনে নেই। তবে এইটুকু মনে আছে যে ইউটিউব থেকে কয়েকটা ভিডিও দেখে মুখস্থ করেছিলাম।

কিন্তু……..

#বর্তমানে

তখনই একটা ছেলে এসে আমালে ধাক্কা দিয়ে বলল,,

— স্যার সেই কখন থেকে আপনাকে ডাকতেছি। আপনার কি কোন সমস্যা হয়েছে স্যার.??(ছেলেটি)

— না,,না কোন সমস্যা হয় নি। (আমি)

— স্যার,,আপনার হাতের পাঞ্জাবিটা কি আপনি নিবেন.? নাকি জাস্ট দেখলেন.?(ছেলেটি)

— কেন.??(গম্ভীর ভাবে বললাম)

— মানে স্যার,,হয়েছে কি.. নীল কালারের এই একটাই পাঞ্জাবি ছিল আমাদের স্টকে। যেটা আপনি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু এই ভাইয়ের (একটা ছেলেকে দেখিয়ে) নাকি পাঞ্জাবিটা খুব পছন্দ হয়েছে। তাই আরকি জিজ্ঞেস করলাম। সমস্যা নেই স্যার আপনার পছন্দ হলে আপনি নেন। (ছেলেটি)

একবার ভাবলাম দিয়ে দেই। আমি পাঞ্জাবি দিয়ে কি করব.? কিন্তু কি মনে করে যেন পাঞ্জাবিটা প্যাক করে দিতে বললাম। আমি নিজেও জানি না।।

এরপর শপিং শেষ করতে করতে দুপুর হয়ে গেল।
আসলে অনেকদিন শপিং করতে আসা হয় না। তাই অনেকে কিছু কেনাকাটা করেছি। যার কারনে একটু বেশি সময় লেগে গেছে।
যেহেতু লাঞ্চ টাইম হয়ে গেছে তাই, আমি একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাবার খেয়ে নিলাম।।
খাবার খেয়ে বাইক নিয়ে সোজা বাসায় চলে এলাম।।

আর আমার পোড়া কপাল। আজকেও নিশির সাথে দেখা। আমি জানি এই মেয়েটা ইচ্ছে করেই আমার জন্য এখানে দাঁড়িয়ে থাকে। জানি না মেয়েটা কি এমন পায় এটা করে.? যাই হোক আমি নিশিকে পাশ কাটয়ে উপরে উঠতে যাব তখনই নিশি আমাকে বলল,,,,

— একি আপনার হাতে এগুলো কি.?? ওমা আপনি শপিং করতে গিয়েছিলেন.?? দেখি তো…

নিশি হাত থেকে শপিং ব্যাগ গুলো নিয়ে সোজা আমার বাসার দিকে হাটা দিল।
আমি জানি মেয়েটা এখন কি করতে চলেছে। তাই চুপচাপ করে নিশির পিছে পিছে যেতে লাগলাম। ভাগ্যিস বাড়িওয়ালার মেয়ে। না হলে ওকে খুন করে আমি জেলে যেতাম।।

এরপর নিশি আমার রুমে ঢুকে সব কিছু খুলে দেখে বলতে লাগল,,,

— ওয়াও,,দারুন তো..! আপনার চয়েস অনেক ভালো.. অনিক সুন্দর সুন্দর শার্ট কিনেছেন।। (নিশি)

— ধন্যবাদ..! যদি কিছু মনে না করেন তাহলে একটা কথা বলি..?(আমি)

— হুম,,,বলুন।।(নিশি)

— মানে,,আমি মাত্র বাইরে থেকে এসেছি তো তাই একটু ফ্রেশ হওয়া দরকার। আপনি কাইন্ডলি যদি একটু আসতেন (আমি)

— সমস্যা নেই। আপনি সব কিছু করুন আমার সামনে। আমার কোন সমস্যা নেই। (নিশি)

আমি অবাক হয়ে বড়বড় চোখ করে নিশির দিকে তাকালাম। নিশি হেসে দিয়ে বলল,,

— আরে আমি তো শুধু মজা করতেছি। আর কিছু না। আমি গেলাম আমার রুমে। আসি বায়..!

এরপর নিশি চলে গেল। আমি হাফ ছেড়ে বাচলাম। আমি আর দেড়ি না করে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।।

এরপর রোজকার রুটিন অনুযায়ী চলতে লাগল..

এইভাবে দুই দিন কেটে গেল।
আজকে স্পর্শির বিয়ে..! কিন্তু বোকা শ্রাবন সেইটা এখনো জানে।

ঘড়িতে সকাল ৮ বাজে। হটাৎ করেই আজকে একটু তাড়াতাড়ি ঘুমটা ভেঙে গেল।
এখন চোখ বুজে থাকলেও যে আর ঘুম আসবে না সেইটা আমি জানি। তাই শুধু শুধু সময় নষ্ট করে লাভ কি.?
বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।

ফ্রেশ হয়ে এসে আমার চোখ আটকে গেল, আমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস এর উপরে। আমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস হচ্ছে মোবাইল & ক্রিকেট খেলা। তাই আর দেড়ি না করে মোবাইলটা হাতে নিয়ে অন করলাম।।

মোবাইল অন করার প্রথম ১০ মিনিট আমার ফোনের উপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেল।
মাত্র তিনদিন মোবাইল অফ,,তাতেই এতো নোটিফিকেশন,,এত এত মেসেজ,,এত কল..!
নিজেকে তো এখন সেলিব্রিটি মনে হচ্ছে।।

আস্তে আস্তে সব কিছু চেক করতে থাকলাম।
এর মধ্যে আমার চোখ আটকে গেল স্পর্শির মেসেজের দিকে।
এত মেসেজ কিভাবে করল.?? সেটা আমার জানা নেই।
এই মেসেজ পরতে গেলে আজকে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। তাই আমি ওই সব কিছু খেয়াল না করে লাস্ট ভয়েস ম্যাসেজটা শুনতে লাগলাম।।
কিন্তু মেসেজটা শোনার পরে আমার কলিজা ঠান্ডা হয়ে গেল।

মেসেজটা ছিল এই রকম,,,

” কুত্তা তোকে আমি কাছে পেলে টুকরো টুকরো করে কেটে উগান্ডার নদীতে ভাসিয়ে দিতাম। ওই তোকে কত মেসেজ/ কল করেছি দেখেছিস..? তোর ফোন অফ কেন.? আর অনলাইনেই বা নেই কেন.?? শোন তোকে আমি লাস্ট একটা ওয়ার্নিং দিয়ে দিচ্ছে আমার বিয়ের দিন যদি তোকে আমি দেখতে না পাই তাহলে তো জানিস আমি কি করতে পারি…!”

মেসেজ শেষ…! কথাগুলো যে স্পর্শি খুব রেগে গিয়ে বলেছে এটা যে-কেউ বুঝবে। কিন্তু আমার মাথায় কিছুই ঢুকতেছে না। তাই সাথে সাথেই রাকিবকে ফোন দিলাম।।।

সাথে সাথেই রিসিভ করল,,,

— এ হারামি..! তোর কি কোন দিন কমনসেন্স হবে না.? তোর সমস্যা কি.?? আমাকে একটু খুলে বলবি..??(রাকিব রেগে)

— আরে ভাই,,রেগে যাচ্ছিস কেন..??(আমি)

— তো কি করব.?? তোর সাথে ভালো ভাবে প্রেমের আলাপ করব.??

— হুম,,সেটা করলেও তো পারিস..!(আমি হেসে)

— শালা,,তুই কোন দিন ভালো হবি না। তুই একাই আমাদের সকলের আনন্দ নষ্ট করে দিয়েছিস।। স্পর্শি মন খারাপ করে সবসময় গেটের দিকে তাকিয়ে থাকে। কখন তুই আসবি। কিন্তু তোর কোন খোজ নেই..! এই তুই কোথায় আছিস আমাকে একটু খুলে বলবি..?(রাকিব)

— কোথায় আবার ঢাকা..! কেন.??(আমি)

— ওরে শ্রাবনের বাচ্চা,,তুই নিশ্চিত শহিদ হতে চলেছিস..(রাকিব)

— মানে.?? খুলে বল না.?(আমি)

— এই হারামি,,তুই জানিস না আজকে স্পর্শির বিয়ে..? আর এটা জেনেও তুই ঢাকা.?(রাকিব রেগে)

রাকিবের এই কথা শুনেই আমার কাছে সবটা ক্লিয়ার হয়ে গেল। সেই দিন আমি যখন ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ছিলাম তখন স্পর্শি আমাকে ফোন করে এগুলোই বলেছিল। আর আমি তো না শুনেই শুধু হ্যা, না বলে গিয়েছিলাম।।। হে আল্লাহ..! আমি এটা কি করে ফেললাম।।
আমি তো শেষ..! আমি আজকে যদি সিলেট না যাই তাহলে তো আমারে মেরে ফেলবে। এখন কি করব..?

তখনই রাকিব ফোনে বলে উঠল…

— কিরে..? এখন কথা বলিস না কেন.??

— দোস্ত,,, সেইদিন আমি….(এরপর রাকিবকে সবটা খুলে বললাম)

রাকিব শুনে এক মিনিট চুপ থাকল। এরপর বলল,,

— আমি তোকে আগেই বলেছিলাম,,, ক্রিকেট খেলা দেখা একটু বাদ দে। কিন্তু কে শোনে কার কথা.??

— এ দোস্ত,, ফোন রাখি,, তোর সাথে কথা বলে শুধু শুধু সময় নষ্ট করে লাভ নেই। আর আমি যে তোকে ফোন দিয়েছিলাম এটা কাউকে বলিস না।।

— হুম…

এরপর ফোন কেটে দিয়েই…..
.
.
.
.
#চলবে…..???

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here