সীমাহীন ভালোবাসার নীড় পর্ব-১৬

0
1133

#সীমাহীন_ভালোবাসার_নীড়
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
#পার্টঃ১৬
,
,
,
,
,
নির আদ্রি বাসায় এসে দেখে আদ্রিয়ান বর সেজে সোফায় বসে আছে। নওমিও তার পাশে লাল শাড়ি পরে বউ সেজে বসে আছে। নির এর পা থমকে গেলো তার পিচ্চি বোন টাকে শাড়ি পড়া অবস্থায় যে এতোটা সুন্দর আর মহোনীয় লাগবে সে কোন দিন ও ভাবেনি এমন টা।চোখের সামনে এক এক করে ভেসে উঠতে লাগলো ছোট থেকে বড় হওয়ার নানান স্মৃতি সব খুনশুটি হাসি কান্না পাগলামো।

নওমি তার ভাইকে দেখে দৌড়ে তার কাছে গেলো আর ঘুরে ঘুরে নিজেকে দেখাতে লাগলো।
নওমিঃভাইয়া দেখো আমাকে কতো সুন্দর লাগছে তাই না,আদি দিয়েছে।
(খুশি হয়ে)

নির কিছুনা বলে বোনকে বুকের মাঝে জরায় নিলো
শেষ কবে বোন এর সাথে দুই দন্ড কথা বলেছে সেটা মনে পড়েনা প্রথমে পড়াশুনার চাপ তারপরে আবার বিজনেস নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জেদ বাবা মার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার নেশা তাকে অন্ধ করে দিয়েছিলো ফ্যামিলি বোন এই সব তো ভুলেই বসেছিলো হাসি মজা সব তো পুনরায় শিখলো আদ্রির জন্য।

নিরঃতুই এই ভাবে কেনো।(নিজেকে সামলে নিয়ে)
নওমিঃওমা কেনো তুমি জানোনা আজকে না আমার বিয়ে উম তুমি কি করে জানবা তোমার কি আর সময় আছে আমার জন্য। (মন খারাপ করে)
নিরঃরেগে আছিস ভাইয়ার উপর ভাইয়া সময় দেয়না তাই।(নিচু করা মাথা উপরে তুলে)
নওমিঃউহুম করিনি। আদি আমাকে বুঝায়েছে যে তোমার অনেক কাজ আর সে জন্য তুমি আদি কে আমার কাছে পাঠায়েছ আমার সাথে কথা বলার জন্য খেলার জন্য।(আদ্রিয়ান এর হাত জরায় ধরে)
নিরঃতুই এখানে বস আমি আদ্রিয়ান এর সাথে কথা বলে আসি ঠিক আছে।
নওমিঃআচ্ছা।(মাথা ঝাকিয়ে)

নির সোজা নিজের রুমের দিকে হাটা ধরে। আদ্রিয়ান ও তার পিছনে যায়।আর রুমে যেতেই নির আদ্রিয়ান এর কপাল বরাবর বন্দুক তাক করে ধরে।
আদ্রিয়ান সেটা দেখে হেসে দেয় সে জানতো নির এমন কিছুটাই করবে সে এটার জন্য প্রস্তুত ছিলো।

নিরঃকি উদ্দেশ্য আমার বোনকে বিয়ে করার।(গম্ভির স্বরে)
আদ্রিয়ানঃকেনো আবার তোমার টাকার লোভে।(ঠাট্টার স্বরে)
নিরঃএটা আমার বোনের জীবনের প্রশ্ন কোন মজা না।
আদ্রিয়ানঃতুমি জানো আমি তোমার বোনকে ঠিক কতোটা ভালোবাসি তুমি সব সময় এখানে না থাকলেও তোমার কাছে এখানকার সম্পূর্ণ খোঁজ থাকে তোমার। কালকে যখন তোমার নানাকে আমি আমাদের বিয়ের কথা বলেছি সেটাও তোমার অজানা ছিলোনা। ঠিক সেই মহূর্তেই যে তুমি তোমার লোকদের আমার পিছনে লাগিয়েছিলা সেটাও আমার জানা।
নিরঃবাহ ভালোই তো আমার ব্যাপারে ভালোই খোঁজ নিয়েছো ইম্প্রেসিভ। (বন্দুক টা নামিয়ে)
আদ্রিয়ানঃআফটার ওল আমার বোন এর বস প্লাস ওয়ান সাইডার লাভার এর ব্যাপারে এইটুকু খোঁজ রাখতেই পারি। (বিছানার উপর আরামসে বসে)
নিরঃমানে?(ভ্রু কুচকে)
আদ্রিয়ানঃতুমি কি মনে করেছো ফার্স্ট মিট এ তোমার চোখে ফুটে উঠা রাগ আমি খেয়াল করিনি। হ্যা তুমি বুঝতে পারোনি আমরা ভাই বোন যায় হোক। বাট তারপরে আবির নামের ছেলেটার হাত ভাংগা সব খোঁজ আমিও রাখি মিস্টার চৌধুরী। আমার আদরের বোন হ্যা সেভাবে তাকে আগলে রাখতে পারিনি সেটা আমার ব্যার্থতা।(শেষের কথাটা নিচু সুরে বলে উঠে)

নির বুঝতে পারলো আদ্রিয়ান কিছু একটা বলতে যেয়েও বলতে পারছেনা হয়তো বিবেক এ বাধা দিচ্ছে নয়তো অন্য কোথাও। নির আর কথা বারায় না আদ্রিয়ান কে নিয়ে নিচে নেমে যায়। কাজিও এসে যায় ততক্ষনে।

দুই পক্ষের মতামত এ বিয়ের কাজটা সম্পুর্ণ হয়। কিন্তু পুরোটা সময় আদ্রি চুপচাপ এক সাইডে দাঁড়ায় ছিলো শুধু সাক্ষির সিগনেচার এর সময় সাইন টা করে আবার সেখান থেকে সরে গেছে।আদ্রিয়ান বিষয় টা লক্ষ্য করে কিন্তু কিছু বলেনা সে সময়।

ছাদের এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে সে। বিয়ের কাজকর্ম শেষ হয়ে গেছে। নওমি টায়ার্ড থাকায় অনেক তাড়াতাড়ি ঘুমায় পরে।নির আর তার নানু কিছু নিয়ে ডিসকাস করছে।আর তার নানি নাত জামাই এর জন্য রান্না করছে।আদ্রি বাসায় চলে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু তার নানি তাকে যেতে দেয়নি।

আদ্রিয়ান আদ্রির পিছনে যেয়ে দাঁড়ায়। আদ্রি বুঝতে পারে হয়তো রক্তের টান তাইতো শুধু আজকে না যখন ই আদ্রিয়ান আদ্রির আশেপাশে থাকে তখন আদ্রি সেফ ফিল করে।

আদ্রিয়ানঃকি হয়েছে আমার বুড়িটার। আমার পিচ্চিটার মুখের হাসি কই হুম?(নিজের দিকে ফিরিয়ে)
আদ্রিঃআমার হাসি কান্না কোন দিকে আপনার কোন খেয়াল ছিলো কোন দিন না।আমাকে তো আপনারা নিজের মনে করেননি আর হাসি কান্না সেটাও যাদের ভালোবাসে তাদের হাসির খেয়াল রাখে।(তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে)
আদ্রিয়ানঃআমার বুড়িটার এতো অভিমান কেনো হয়েছে হুম?
(গাল টেনে দিয়ে)
আদ্রিঃআমার আর অভিমান।যার মা থাকেনা তার রাগ অভিমান করার কোন অধিকার থাকেনা।
(নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সেখান থেকে চলে যায়)

আদ্রি রুমে যেয়ে জানালার ধারে দাঁড়িয়ে কান্না করে দেয়।কান্না করতে করতে হেচকি উঠায়ে ফেলে।

হঠাৎ করে কাধে কারো গরম নিশ্বাস পরতে কেপে উঠে।চোখ জোড়া বন্ধ হতে লাগে। আলাদা এক অনুভূতিতে কেঁপে উঠে মন।

নিরঃআমার বোনের সাথে বিয়ে হয়েছে বলে এতো কান্না। নাকি আমার বোন মানষিক ভাবে আনস্টেবল দেখে ভাইয়ের প্রতি এতো অভিমান কোনটা

আবেশে বুধ হওয়া চোখ টা খুলে গেলো ভালো লাগার জোয়ার টাও যেনো থেমে গেলো।গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে ইচ্ছা করছে কেন বুঝেনা তাকে কেউ কেনো সবসময় ভুলে বুঝা হয় তাকে সে কি এতোটাই খারাপ।

আদ্রিঃআপনারা আমাকে যতোটা খারাপ ভাবেন ততোটা খারাপ আমি নয় স্যার।আমি নিজেও চাইতাম ভাইয়া যেনো সারাজীবনের জন্য নওমির হাত টা ধরে।আমি খুব খুশি নওমি আর ভাইয়ার বিয়েতে। কিন্তু একটা আফসোস কি জানেন আমার ভাই যে কি না আদৌ কোন দিন আমাকে নিজের বোন মনে করেছে কি না আমি ঠিক জানিনা। কিন্তু ছোট বেলা থেকে তাকেই ভাই বলে মেনেছি। কিন্তু আজকে তার জীবনের এতোবড় একটা দিন সে সবাইকে জানিয়েছে আপনার নানা নানু আপনার সাথেও কথা বলেছে কিন্তু আমি। আমি কি তার লাইফেও এক পার্সেন্ট এর ও ইমপোর্টেন্স রাখিনা যে একটা বার আমাকে বলবে।

চোখ দুইটা দিয়ে অবিরাম পানি পরতে থাকে আদ্রি চোখ জোড়া দিয়ে।পরিবেশ টা কেমন ভারি হয়ে এসেছে নির বুঝতে পারছে সেটা। আদ্রি মনে যে এক আকাশ সমান অভিমান পুষে রেখেছে সেটা সে টের পাচ্ছে ভালোই।বড্ড অভিমানী যে তার আদর পাখি সেটা বুঝতে তার খুব বেশি বেগ পেতে হয়না।

নিরঃএই আদর পাখি রাতের চাঁদ টা দেখেছো কি সুন্দর উজ্জ্বল। চাঁদনী রাত টা উপভোগ করবে এই অধম টার সাথে এই রাতের আকাশে তোমার সমস্ত চোখের পানি আমি আমার নাম করতে চায় দিবে সে সুযোগ একটু বিশ্বাস করে পারি দিবা আমার সাথে ছোট একটা সফরে।

আদ্রি অবাক হয়ে তাকায় নির এর দিকে নির যে এতোটা গুছিয়ে তার কাছে আবদার করবে সেটা সে কোন দিন আশাও করেনি। আপন মনেই হাত টা চলে যায় নির এর হাতের উপর।

নির মুচকি হেসে আদ্রির হাত ধরেই হাটা দেয় চাঁদনী রাত টা উপভোগ করার তাগিদে।

——-

ফাকা রাস্তাই পাশাপাশি হেটে যাচ্ছে নির আর আদ্রি।প্রকৃতি তার কোন সময় পছন্দ ছিলোনা কিন্তু আজকে এই রাতটা তার খুব বেশি ভালো লাগছে কিসের এই ভালোলাগা সে জানেনা কিন্তু তার ভালো লাগছে। পাশে থাকা ব্যাক্তিটির আঙ্গুলের ভাজে নিজের আঙুল গুলো দেখতেও তার ভালো লাগছে। হঠাৎ করে মনের মাঝে জমে থাকা অভিমান জেনো উড়ে গেলো এই ঠান্ডা হাওয়ার মাঝে। শত শত তারাও তার মন ভালো করার জন্যই বুঝি আজকে এতোটা সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছে অন্ধকার আকাশকে…

চলবে…!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here