#সীমাহীন_ভালোবাসার_নীড়
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
#পার্টঃ৩
,
,
,
,
পরেরদিন সকালে,,,,,
বিরাট এক কম্পানির সামনে দাঁড়ায় আছে আদ্রি। সকাল সকাল নিউজ প্যাপারে এড পরেছে চৌধুরী গ্রুপ ওফ ইন্ডাস্ট্রির সি ই ও র জন্য পিএ লাগবে। ব্যাস সকাল বেলায় কোন রকম রেডি হয়ে দৌড় দিয়েছে
আদ্রি চোখ বন্ধ করে দোয়া পড়তে পড়তে ভিতরে ঢুকচ্ছে। হুট করে তার মাথা একটা দেওয়ালের সাথে টক্কর খাই। আদ্রি চোখ খুলে দেখে সে অফিসের ভিতরে আর তার সামনে সুট বুট পরে দাঁড়ায় আছে অত্যন্ত সুদর্শন এক যুবোক। চোখে চশমা থাকায় বুঝতে পারচ্ছেনা লোকটা রাগে আছে নাকি অন্যকিছু।
আদ্রি কিছু বলতে যাবে তার আগেই সাইড দিয়ে চলে যায় যুবোকটি আদ্রিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই অবাক হয় সে আবার ভাবে ভাব বেশি তাই এমন করলো
রিসেপশনিস্ট এর কাছে থেকে যানতে পারে ইন্টারভিউ শুরু হতে এখনো ১০ মিনিট বাকি আছে ওকে ওয়েটিং রুমে ওয়েট করতে বলে ওয়েটিং রুমে যায়ে অবাক হয়ে যায় আদ্রি ওয়েটিং রুমে ছেলেদের ছায়া পর্যন্ত নাই সব গুলা মেয়ে তাও আবার আল্ট্রামর্ডান যাকে বলে সবার পড়নে ওয়েস্টার্ন পোশাক। আদ্রি একবার সবার দিকে তাকায় এক বার নিজের দিকে যেখানে সবাই বিয়ের সাজ দিয়ে আসেছে সেখানে সে নর্মাল একটা কুর্তি আর জিন্স পরে চুল গুলা ঝুটি করে গলায় স্কার্ফ পেচায়ে চলে আসেছে। আদ্রি ভাবেই নেয় তার জব কেন্সেল।
কিন্তু তার ধারণা কে এক দম পালটে একজন পিয়ন আসে
পিয়নঃসবার মধ্যে আদ্রিতা খান কে
আদ্রিঃজ্বি আমি
পিয়নঃআপনাকে ইন্টারভিউ রুমে ডাকা হয়েছে আর বাকিরা সসম্মানে এখান থেকে চলে যাওয়ার হুকুম জারি করা হয়েছে
আদ্রি পিয়ন এর পিছে পিছে চলে যায় একবার পিছনে তাকায়ে দেখে মেয়ে গুলা তার দিকে রাগী লুক নিয়ে তাকায় আছে মনে হচ্ছে এখনি কাচা চিবায়ে খায়ে ফেলবে। আদ্রির হাসি লাগে সবার চেহারা দেখে
______
আজকে আদ্রি অনেক খুশি বিনা কোন খোজ খবর ইন্টারভিউ সার্টিফিকেট ছাড়া তার জব ফাইনাল হয়ে গেছে কিন্তু এখনো সে তার বস কে চিনেনা কিন্তু সে বিষয়ে মাথা ঘামায় না ওতোটা।
দূর থেকে কেউ একজন আদ্রির সব কিছু ফলো করচ্ছে। আদ্রি কোথায় যাচ্ছে কি করচ্ছে সব কিছু।আদ্রির বেশ কয়েকবার মনে হয়েছে কেউ তাকে ফলো করচ্ছে কিন্তু আদ্রি কোন দিন এমন কাউকে পায় নি।
আদ্রি দোকান থেকে কিছু খাবার কিনলো আর সেটা নিয়ে চলে গেলো সামনের একটা শিশুআশ্রমে সবাই আদ্রিকে পায়ে খুব খুশি হয়ে যায় আদ্রি বেশির ভাগ ই এখানে আসে সব বাচ্চাদের খাবার দেওয়ার পরে ওদের সাথে মজা মস্তি করে বিকালের দিকে বাসায় যায়।
________
শামসের রেজওয়ান এর বাসায় এসেছে আদ্রিয়ান। উনার একমাত্র নাতনির চিকিৎসার জন্য (ওওহ আপনাদের তো বলাই হয়নি আদ্রিয়ান একজন psychiatrist )
আদ্রিয়ান বাসার ভিতরে ঢুকতেই একটা কাগজের প্লেন আসে লাগে আদ্রিয়ান এর কপালে। আদ্রিয়ান বিরক্ত হয় কিন্তু তার সব বিরক্ত দূর হয়ে যায় সামনে দাঁড়ানো রমনীকে দেখে
দুই পাশে দুই ঝুটি করা মায়াবী চোখের অধিকারীনি
দাঁড়ায় আছে তার সামনে মাজায় হাত দিয়ে রাগী চোখে তাকাই আছে আদ্রিয়ান এর দিকে গোলাপি ঠোঁটের মাঝ থেকে বের হয়ে আসা শব্দ তার কান অব্দি পৌঁছাতেও যেনো সক্ষম হচ্ছেনা
আদ্রিয়ান এর ধ্যান ভাংগে দাড়িতে টান পড়ায়। আহ করে উঠে আদ্রিয়ান।
আদ্রিয়ানঃহেউ ইউ আর ইউ মেড এই ভাবে কেউ কাউকে ব্যাথা দেয় (চিল্লায়ে)
মেয়েটা আদ্রিয়ান এর চিৎকার শুনে ঠোঁট উলটে কান্না করে দেয়। আদ্রিয়ান অবাক হয়ে যায় এতো বড় মেয়েকে বাচ্চাদের মতো কান্না করতে দেখে
হঠাৎ করে আদ্রিয়ান এর টনক নড়ে তার আর বুঝতে বাকি নাই এই সে মেয়ে যার চিকিৎসার জন্য শামসের রেজওয়ান এর মতো এতো বড় একজন ভিআইপি নিজে আসে তার কাছে রিকোয়েস্ট করে গেছিলেন।
আদ্রিয়ানঃহুস কাদেনা তুমি না বিগ গার্ল আর বিগ গার্লস কান্না করেনা তাই না এই ভাবে কান্না করলে মানুষ তো পচা বলবে তাই না।তুমি কি পচা
রমনী দুই সাইডে মাথা নাড়ায়
নওমিঃনা আমি পচা না আমি তো নওমি আর নওমি গুড গার্ল (ঠোঁট উলটে)
আদ্রিয়ানঃইয়েস রাইট নওমি গুড গার্ল তো এবার চোখের পানি মুছো দেখি
নওমিঃচোখ কি(ফ্যালফ্যাল করে আদ্রিয়ান এর দিকে তাকায়ে)
আদ্রিয়ানঃচোখ মানে এই যে এটা যেটা দিয়ে তুমি আমি আমরা সবাই দেখি
নওমিঃকিন্তু আমি তো শুধু তোমাকে দেখতে পারচ্ছি নিজেকে তো দেখতেই পারচ্ছিনা
(নওমির চোখ জোড়া আবার পানিতে টইটম্বুর হয়ে যায়)
আদ্রিয়ানঃনিজেকে দেখা যায় না নিজের চোখ দিয়ে অন্যকে দেখা যায়
নওমিঃকিন্তু আমি তো আমাকে দেখতে চায় তুমি দেখাও আমাকে
আদ্রিয়ানঃসেটাতো হয়না
নওনিঃনাহ নাহ নাহ আমি কিছু জানিনা আমি দেখবো আমাকে আমাকে আমাকে দেখাও বলচ্ছি(ছোট বাচ্চাদের মতো ফ্লোরে পা ছুড়াছুড়ি করে)
আদ্রিয়ানঃআচ্ছা আচ্ছা আমার চোখের দিকে তাকাও (নওমির চোখের দিকে তাকায়ে)
নওমি আদ্রিয়ান এর চোখের দিকে তাকায়ে চুপ হয়ে যায় আদ্রিয়ান ও নওমির চোখের মায়ায় হারাতে শুরু করে। যেনো কোন এক ঘোরের মাঝে ঢুকে যায় দুইজন
আদ্রিয়ান এর ধ্যান ভাংগে মিসেস রেজওয়ান এর ডাকে
মিসেস রেজওয়ানঃআরে ডক্টর আদ্রিয়ান যে বাহিরে দাড়ায় আছো কেন ভিতরে এসো
নানুভাই তোমাকে না বলেছি বাসায় মেহমান আসলে তাকে ভিতরে ঢুকতে বলতে হয়
নওমিঃকেন বলবো আমি বলবোনা
মিসেস রেজওয়ানঃনানু ভাই পচা কথা
নওমিঃনা না না আমি বলবো না বলবোনা(চিল্লাতে চিল্লাতে)
মিসেস রেজওয়ানঃনওমি(ধমক দিয়ে)
নওমি ভয় পায়ে যায় অভিমান ভরা চোখে একবার নানু মার দিকে তাকায় আরেকবার আদ্রিয়ান এর দিকে তাকায়। নওমির অভিমানী চোখ জোড়া আদ্রিয়ান এর বুকের ভিতর তোলপার শুরু করে দেয়।
নওমিঃতোমরা কেউ ভালোনা আমি ভাইয়াকে বলে দিবো তখন ভাইয়া তোমাদের সবাইকে শাস্তি দিবে দেখে নিও পচা পচা সবাই পচা(বলতে বলতে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে যায়)
আদ্রিয়ান এর কেনো জানি খুব ইচ্ছা করচ্ছিলো বাচ্চাটাকে বুকে জরায় ধরে চোখের পানি গুলা মুছে দিতে কিন্তু চাইলেই কি সম্ভব
আদ্রিয়ান এর অজান্তেই তার বুকটা ভারি ভারি লাগা শুরু করলো
মিসেস রেজওয়ানঃওর তরফ থেকে আমি ক্ষমা চাচ্ছি বাবা আসলে ওই শুধু শারীরিক ভাবে বেড়ে উঠেছে কিন্তু মানসিক ভাবে সে এখনো বাচ্চাটিই রয়ে গেছে
আদ্রিয়ানঃআসলে ওর সাথে কি হয়েছিলো কিভাবে হয়েছিলো একটু ডিটেলস এ বললে ভালো হতো চিকিৎসার জন্য
মিসেস রেজওয়ানঃহুম অবশ্যই তখন নওমির ১২ বছর ছিলো সে তার আব্বু আম্মু দাদা ভাই দাদি মার সাথে গেছিলো ফ্যামিলি পিকনিকে। নওমি জেদ ধরেছিলো এক্সাম শেষ এখন একটা ট্রুরে যাবে সে। বাবা মায়ের আদরের ছিলো প্রচন্ড সে মুখ থেকে বের হওয়া মাত্র তার বাবা রাজি হয়ে যায় মেয়ের আবদার বলে কথা
সবাই মিলে যায় তারা কিন্তু মাঝ রাস্তাই,,,,,,,
মিসেস নিহারিকা রেজওয়ান কিছু বলবে তার আগেই শামসের রেজওয়ান বলে উঠে
ঃগাড়ির ব্রেক ফেল হয়ে যায় আর গাড়িটা ব্লাস্ট হয়ে যায় কিন্তু নওমির বাবা আগেই নওমিকে গাড়ি থেকে ফেলে দিয়েছিলো যার কারনে সে বেচে যায় কিন্তু তার মাথা যায়ে লাগে একটা পাথরের সাথে। আসেপাশে মানুষ তাদের হস্পিটালে এডমিট করায় নওমির বাবা মা দাদা দাদী সবাই মারা যায়। নওমি বাচে গেলোও তার মাথায় আঘাত পাওয়ার কারনে সে মানসিক ভারসাম্য হারায় ফেলে।।।
আদ্রিয়ান মনোযোগ দিয়ে সব কিছু শুনলো
আদ্রিয়ানঃনওমির এই অবস্থা আই মিন এক্সিডেন্ট হওয়ার কই বছর হলো
শামসের রেজওয়ানঃ৯ বছর
আদ্রিয়ানঃহুম আচ্ছা আমি কি তার ম্যাডিকাল রিপোর্ট দেখতে পারি
নিহারিখাঃআমি নিয়ে আসচ্ছি
আদ্রিয়ানঃওকে আমি ততোক্ষন নওমির রুমে গেলাম ওর নরমাল চেকআপ এর জন্য
শামসের রেজওয়ানঃউপরে যায়ে ৩ নাম্বার রুমটা ওর
আদ্রিয়ানঃজ্বি
_______
চলবে!!!!.