#সুখের_নেশায়
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা
#পর্ব___৪৪
চাচী অপমানে থমথমে মুখ নিয়ে নিশ্চুপে করিডোর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। সেদিকে চেয়ে তপ্ত নিঃশ্বাস ছাড়লেন ফাহমিদা। মেয়ের উদ্দেশ্যে কড়া গলায় বলে উঠলেন,
‘ তুমি এটা ঠিক করো নি চৈত্র। শত খারাপ কিংবা ভুল হোক উনি সম্পর্কে তোমার চাচী শাশুড়ী। ‘
চৈত্রিকা সম্পূর্ণভাবে মা’য়ের কথার অবজ্ঞা করল। বিষাদমাখা চেহারায়,ঠোঁটে খেলে গেল মৃদু হাসির রেখা। অধর জোড়া নড়ে উঠল ক্ষীণ।
‘ উনারা প্রতা*রক,নিষ্ঠুর,অমা*নুষ। যেই থালাতে সারাজীবন খেল সেই থালা-ই ছেদ করল। এক একটা মুখোশধারী শয়*তান। আমার স্বামীর অসুখের কারণ। ‘
ফাহমিদা বলার মতো আর কিছু খুঁজে পেলেন না। সিনথিয়ার মুখে সবটা শুনেছেন উনি। আলো এগিয়ে এসে চৈত্রিকার মাথায় হাত রাখলেন। দৃঢ় কন্ঠে বললেন,
‘ শক্ত হও,কঠোর হও। একজন সাহসী নারী রূপে রাঙিয়ে নাও নিজেকে। শুধু মনে রেখো কখনও ভেঙে পড়া যাবে না। কঠিন হতে কঠিন কষ্টেও না। ‘
চৈত্রিকা শক্ত করে উনাকে জড়িয়ে ধরলো। তড়তড় করে বলে উঠল,
‘ দোয়া করবেন খালামণি। আড়ালের অনেক সত্য প্রকাশ্যে যেন আনতে পারি। আমার জীবন যেন রঙিন হয় রংধনুর সাত রঙের ন্যায়। কিছুই চাই না আমার। শুধু একটাই চাওয়া মৃ’ত্যু’র আগ পর্যন্ত থেকে যাবে তা হলো সাফারাত নামক সুখ। ‘
‘ অবশ্যই ডিয়ার। আমার ছেলেটা সুস্থ হলেই আমার শান্তি। ‘
আলো বেগমকে ছেড়ে দিয়ে চৈত্রিকা আবারও আইসিইউ রুমের সমুখে গেল। ছোট গ্লাস দিয়ে গভীর,গাঢ়,প্রখর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সাফারাতের বিবর্ণ, বিধস্ত চেহারায়। চৈত্রিকার আঁখিদ্বয় অশ্রুসিক্ত হয়ে এল। অভ্যন্তরের আর্তনাদ, আর্তচিৎকার বাহিরের কারো কর্ণপাত হলো না। কেবল জ্বলে উঠল চৈত্রিকার হৃদযন্ত্র।
গুটি গুটি পায়ে ডাক্তারের চেম্বারে আসতেই ডক্টর আদি ওকে বসার জন্য রিকুয়েষ্ট করল। চেয়ার টেনে বসল চৈত্রিকা। কাঁপা কন্ঠে তেজের অস্তিত্ব ঢেলে প্রশ্ন করে,
‘ উনার জ্ঞান ফিরছে না কেন ডক্টর? কখন ফিরবে?’
ডক্টর আদি সূক্ষ্ম নজরে চাইলেন। সাফারাতের রিপোর্ট টা চৈত্রিকার সামনে রেখে বলে উঠলেন,
‘ কবে,কখন ফিরবে আপাতত তা বলতে পারছি না মিসেস। সাফারাতের মাথার ইনজুরি টা খুবই গভীর। সময় প্রয়োজন। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। আজ আরেকজন সিনিয়র ডক্টর আসবেন ওর ট্রিটমেন্টের জন্য। উনি খুব ভালো একজন নিউরোসার্জন। তবে আমরা আশঙ্কা করছি সাফারাত হয়ত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে না। মানসিক ভারসাম্য হারাতে পারে নয়ত কোমায় চলে যেতে পারে। যদি আজকেই জ্ঞান ফিরে আসে তাহলে পজিটিভ হতে পারে সবকিছু। মিথ্যে হয়ে যেতে পারে আমাদের ভাবনা। ‘
মুহুর্তেই বৃষ্টির আগমন ঘটল। বিরতিহীন বৃষ্টি, প্রবল বর্ষণের ধারা। কাল বৈশাখী ঝড়ের তান্ডবও হার মেনে যাবে এই মুহুর্তে শুরু হওয়া বৃষ্টির বেগের কাছে। অদ্ভুত ব্যাপার হলো এই বৃষ্টি কাউকে ভিজাতে সক্ষম হলো না। পানি বিন্দু হয়ে কারো দেহ,লোম,ওষ্ঠ, চোখের পাপড়ি কিছুই স্পর্শ করতে পারল না। পারল শুধু চৈত্রিকার ভেতরটা ভরিয়ে দিতে অশ্রুরুপে। মৌনমুখে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল চৈত্রিকা। শক্ত হতে হতে আজ সকল সীমা বুঝি অতিক্রম করে ফেলল মেয়েটা!তার চক্ষুকোল ভিজল না। অক্ষিকাচে ফোঁটায় ফোঁটায় জলের দেখা মিলল না। অথচ বক্ষস্থলে সেকি ঝড় বইছে!জ্বলছে অতীব। টালমাটাল দেহ খানি নিয়ে ডক্টর আদির কেবিন ছেড়ে করিডোরে মা’য়ের পাশে এসে বসল। যে কেউ দেখলে ঠাহর করতে পারবে না এই মেয়ের দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া। শুধু অবলোকন হবে একখানা সুন্দর, মায়াবী গড়নের মলিন, ফ্যাকাসে,রক্তশূণ্য চেহারা।
চৈত্রিকা দু’ চক্ষু মুদে ভাবে পরিবারের প্রত্যেক টা সদস্য নিয়ে,সাফারাতকে নিয়ে। মনে মনে অংক কষে সে। ইন্টার অব্দি পড়লেও জাগতিক বাস্তবতার ব্যাপারে তার জ্ঞান কম নয়। সবকিছু মিলিয়ে সে এক কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়। নিজের সঙ্গে আনা মোবাইলটা হাতে নিয়ে ফোন করে সাফারাতের অফিসের বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যানেজারকে। কল রিসিভ হতেই প্রথমে সালাম দিল। মিহি স্বরে বললো,
‘ আমি চৈত্রিকা। ‘
অপর পাশ থেকে অর্ধবয়স্ক লোকটা হেসে বললেন,
‘ জ্বি ম্যাম। কেমন আছেন আপনি?স্যার কোথায়?আজ আপনি ও স্যার দু’জনেই অফিস আসলেন না এখনও। একটা জরুরি মিটিং আছে ম্যাম। স্যারকে ফোনে পাচ্ছিলাম না। কখন আসবেন?’
বিয়ের কয়েকদিন পর থেকেই চৈত্রিকা আগের মতো অফিসে যাওয়া শুরু করে। সাফারাত অফিসে ওকে নিজের বউ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিলে নরমাল পদবিতে জব করেও শান্তি নেই চৈত্রিকার। নিজের পজিশন থেকে ছোট বড় সকলেই ম্যাম বলে সম্বোধন করে। চৈত্রিকা জবাবে বললো,
‘ আপনাদের স্যারের এক্সি’ডেন্ট হয়েছে। মিটিং টা আপনি সামলে নিয়েন। তার আগে আপনাকে আমার একটা কাজ করতে হবে সৈয়দ সাহেব। ‘
লোকটা বিনয়ী স্বরে বললেন,
‘ বলুন ম্যাম। ‘
‘ ফারুক এহমাদ নামে একজন বিজনেসম্যানের পুরো ডিটেইলস আমার চাই। উনার বিজনেস টা কানাডাতে। ডিটেইলস জেনে আপনি আমাকে ফোন দিবেন। রাখছি। ‘
‘ ঠিক আছে। ‘
আলো বেগমের শঙ্কিত, সন্দেহাতীত নজরের সম্মুখীন হলো চৈত্রিকা তৎক্ষনাৎ। সরব করে শ্রবণগ্রন্থিতে পৌঁছায় উনার চিন্তিত, অবাক কন্ঠস্বর।
‘ ফারুকের সব ডিটেইলস কেন জানতে চাইছ?সাফারাত যদি আবার জেনে যায়?’
চৈত্রিকা সাথে সাথে উত্তর দিতে পারল না। মন্থর গতিতে সূক্ষ্ম, খুবই সূক্ষ্ম একটা নিঃশ্বাস বিমোচন করে দিল লম্বা, জনপূর্ণ, অনবরত শব্দে মুখরিত হয়ে থাকা করিডোরে।
‘ সাফারাতের যে অনেক কিছু জানা বাকি খালামণি। যেই লোক কে সে শুধু মাত্র অত্যাচারের জন্য খু*নী বলে দাবি করে সেই লোক কি ওর মা’য়ের সত্যিকারের খু*নী হতে পারে না?এমনও তো হতে পারে মা’য়ের মৃত্যু টা স্বাভাবিক নয় বরং ফারুক এহমাদ নিজেই মে’রে ফেলেছেন যার সাথে পরকীয়ায় ছিলেন তাকে বিয়ে করার জন্য। ‘
পিলে চমকে উঠল আলো বেগমের। কিংকর্তব্য বিমূঢ় তিনি ও ফাহমিদা উভয়েই। শরীরের পশম দাঁড়িয়ে গেল বুঝি! এমনভাবে কখনও ভেবে দেখেন নি। সত্যিই কি মৃ’ত্যু টা রহস্যজনক?ফারুক খু*ন করার মতো ভুল করবে?করতেও পারে। এই লোকের কখনও নিজের স্ত্রী-সন্তানের প্রতি মায়া ছিল না। যা ছিল তা কেবল অভিনয়। আচ্ছা এতগুলো বছরে কেন একটা বারও এই বিষয়টা খতিয়ে দেখল না ওরা কেউ। সাফারাত দেখেছে কি?দেখলে ওর কোনো রিয়াকশন কেন প্রকাশ পায় নি। না-কি সে শুধু অত্যাচারের প্রেক্ষিতে বাবাকে খু*নী মানে?
চৈত্রিকা আলো বেগমকে জিজ্ঞেস করলো–‘ মা’য়ের মৃ*ত্যুর দিন চাচা-চাচী পৃথক, প্রিয়ন্তী কোথায় ছিল?’
‘ বাবার বাড়িতে ভাইয়ের মেয়ের বিয়ে ছিল তাই ওরা সবাই সেখানে চলে গিয়েছিল সিয়ার মৃ’ত্যুর ঠিক দু’দিন আগে। ‘
চৈত্রিকা আর কিছুই বলল না। নিরবতায় কেটে গেল সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টার পর ঘন্টা। তিন ঘন্টা। বাতাবরণে সমীরণ বইছে অল্প সল্প,মৃদু। কড়া রোদ্দুরের তেজস্বী রুপ বিলীন হয়েছে। প্রকৃতি জুড়ে নেমে এসেছে বিকেল। একের পর এক নার্স,ডক্টরের আনাগোনা চলেছে সাফারাতের কেবিনে। করিডোরে মানুষের সমাগম। কারো কারো কষ্টদায়ক নিঃশ্বাসে,আহাজারিতে গরম হয়ে উঠেছে হাসপাতাল টা। পাশের কেবিন থেকে উচ্চস্বরে ক্রন্দন,রোদন ধ্বনি ভেসে আসছে। চৈত্রিকা সেদিকে এগিয়ে গেল। ছ্যাঁৎ করে উঠল ওর অন্তস্তল। কম বয়সী একটা মেয়ে। হয়ত আঠারোর ঘর এখনও পেরোয় নি৷ মেয়েটা ক্রমাগত চোখের জল ফেলছে। সাদা কাপড়ে আবৃত একটা লম্বাটে দেহ শুয়ে রাখা হয়েছে হসপিটালের নির্ধারিত সিংগেল বেডে। ঠিক সেই মুখ ঢেকে রাখা নিষ্প্রাণ, নিথর দেহটার দিকে আত্মীয় স্বজনরা চেয়ে চেয়ে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছেন। সেই মেয়েটার ধারে বসে একটা মহিলা মুখে আঁচল চেপে কাঁদছেন। দরজার কাছে দাঁড়ানো নার্সকে জিজ্ঞেস করতেই জানায় ছোট কিশোরী সেই মেয়েটার স্বামী মাত্র দু’মিনিট আগে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে। মেয়েটার বিয়ের বয়স মাত্র পনের দিন। একটা বিল্ডিংয়ের নির্মাণে কাজ করত ছেলেটা। গতকাল কাজের সময় উপর থেকে ছিটকে পড়ে পুরো দেহ থেঁতলে যায়। মাথার জখম অধিক হওয়ায় মা*রা গিয়েছে।
চৈত্রিকার পুরো কায়া কাঁপল। পিছিয়ে গেল সে কয়েক পা। দৌড়ে সাফারাতের কেবিনের সামনে গিয়ে উপস্থিত হলো। ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাচ্ছে ও প্রিয় মানুষটার কাছে না যেতে পেরে। ওর কষ্ট বুঝার একমাত্র মানুষ টা যে শুয়ে আছে নিরলসভাবে,নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে। আজও গম্ভীর মানুষ টা। ফোনের শব্দ পেয়ে পিছু ঘুরতেই দেখে ফাহমিদা ওর ফোন হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ছোট্ট করে,সাবলীল বাক্য উচ্চারণ করলেন,
‘ তোর ফোন বাজছে।’
চৈত্রিকা ফোন টা নিল। কানে ধরতেই অপর পাশের ব্যক্তি টা বললেন,
‘ ম্যাম ফারুক এহমাদ একেবারে বাংলাদেশ চলে এসেছেন। উনার বিজনেসে লস চলছিল গত সাত মাস ধরে। তিনি আমাদের কোম্পানিকে মানে সাফারাত স্যার কে বার বার কন্ট্রাক্ট করার চেষ্টা করছিলেন। কারণ আমরা যদি উনার সাথে ঢিল করি তাহলে উনার বিজনেসের ক্ষতি টা পুষে যাবে। ‘
এতটুকু বলে থামলেন সৈয়দ সাহেব। শ্বাস টেনে গলা ঝেড়ে বললেন,
‘ ম্যাম একটা কথা বলব?’
‘ বলুন সৈয়দ সাহেব। ‘– সাদামাটা জবাব চৈত্রিকার।
সৈয়দ সাহেব আঁকুপাঁকু করছেন। শব্দমালা এলোমেলো হয়ে গেল হয়ত। তবুও গুছিয়ে বলার আপ্রাণ চেষ্টা করলেন,
‘ ম্যাম উনি তো স্যারের বাবা। স্যারের সাথে হয়ত উনার দীর্ঘ সময় ধরে যোগাযোগ নেই। স্যার যদি একবার সবার কাছে উনাকে বাবা পরিচয় দেন তাহলে আমাদের যত বিজনেস ফ্রেন্ড আছেন মানে আমরা যাদের সাথে ডিল করি তারা ফারুক এহমাদকে কনটাক্ট দিবেন। এতে উনার জন্য কন্টাক্ট পাওয়া কঠিন হবে না। সবাই স্যারের মতই নিঃসন্দেহে উনার সাথে বিজনেস করবেন। যতটুকু জানতে পারলাম আমি উনার এসিস্ট্যান্ট থেকে। কথাটা একটু গোপন। উনার এসিস্ট্যান্ট এখন আমাদের এক বিজনেস পার্টনারের অধীনে কাজ করেন সেখান থেকেই সবটা জেনেছি আমি। ভুল হলে ক্ষমা করবেন ম্যাম। ‘
চৈত্রিকা ফোন টা রেখে দিল। রাখার আগে ক্ষীণ স্বরে সৈয়দ সাহেব কে বললেন–‘ ধন্যবাদ। ‘
জঘন্য, খারাপ কিছু মানুষের স্বভাব অথবা চরিত্র কোনোটারই পরিবর্তন ঘটে না। তন্মধ্যে একজন হলেন ফারুক এহমাদ। চৈত্রিকার অভিলাষ হলো,স্পৃহা জাগল মানুষটার মুখশ্রী তে একদলা থুতু ফেলতে। ফাহমিদার দিকে চেয়ে ব্যগ্র কন্ঠে বলে উঠল,
‘ মা আমি আসছি। ‘
‘ কোথায় যাচ্ছিস?’– শঙ্কিত স্বর ফাহমিদার।
‘ বেশিক্ষণ লাগবে না মা। আমি এক ঘন্টার মধ্যে ফিরে আসব। খুব জরুরি একটা কাজ আছে। ‘
‘ কিন্তু চৈত্র,,!’
ফাহমিদা বলার পূর্বেই চৈত্রিকার ঝড়ের বেগে চলে গেল। একটা ট্যাক্সি ডেকে ড্রাইভার কে জানালো কোথায় যাবে। বিনিময়ে ড্রাইভার ভাড়া দ্বিগুণ চাইলেন। ইনিয়েবিনিয়ে বললেন সামনে জ্যাম পড়তে পারে। তিনি এখন যাবেন না। বেশি ভাড়া দিলেই যাবেন। এসব শুনতে বেশ বিরক্ত লাগছিল চৈত্রিকার। সে নির্দ্বিধায় বললো,– ‘ ভাড়া বেশিই দিব মামা। চলুন প্লিজ। ‘
ড্রাইভার খুশিতে এক গাল হাসলেন। নিজের কান্ডে নিজেই আশ্চর্য,বিস্মিত চৈত্রিকা। যেই মেয়ে দশ-বিশ টাকা বাঁচানোর জন্য হেঁটে যেত টিউশনিতে ঘন্টার পর ঘন্টা। পায়ের তলায় মাঝে মাঝে ফসকা পড়ে যেত তবুও টাকা বাঁচানোর নিমিত্তে হেঁটে যাতায়াত করত সে কি-না আজ সামান্য একটু জায়গা দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে যেতে রাজি হয়ে গেল!সত্যি বিষয়টা বিস্ময়কর। চমকপ্রদ বিষয় হলো সময়। যার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবনেরও পরিবর্তন হয়। চৈত্রিকার এখন আর টাকার পিছনে ছুটতে হয় না। টিউশনি করিয়ে হাজার-দু’হাজার টাকা দিয়ে পুরো মাস চলার কথা ভাবতে হয় না। কিন্তু টাকায় কি প্রকৃত সুখ মিলে?না। যদি মিলত তাহলে চৈত্রিকার কপালে সুখ নেই কেন?তাকে সুখের নেশায় আবারও ছুটতে হচ্ছে কেন?কেন অসুখে পরিণত হলো জীবনে আসা সাময়িক সুখগুলো?
_____________
সূর্য ঢলে পড়েছে। মাগরিবের আযানের ধ্বনি কর্নকুহর হচ্ছে কাছেই অবস্থিত একটা মসজিদ থেকে। চৈত্রিকা ভেবেছিল কাজটা ইজি হবে। কিন্তু তার ভাবনার চেয়েও কঠিন হলো। সেই সাথে উন্মোচন হলো কঠিন এক সত্য। রীতিমতো কাঁপছিল চৈত্রিকা সবটা জানার পর। পুরো শরীর অসাড় হয়ে পড়েছিল। শক্তি পাচ্ছিল না। বিশ্বাস হচ্ছিল না কোনো কিছুই। তবুও বিশ্বাস করা ছাড়া উপায় ছিল না। একেকটা কে আগুনে জ্বলসে দিতে পারলে মন শান্তি পেত।
গত রাত থেকে নির্ঘুম, ক্ষুদার্ত, দুর্বল দেহ টা টেনে টেনে কোনোমতে হসপিটালের সামনে এসে দাঁড়াল ও। ভিতরে প্রবেশ করবে তার মধ্যেই বেজে উঠল ফোন টা। তড়িৎ গতিতে রিসিভ করে কানে দিয়ে বলে উঠল,
‘ বল মিমু। ‘
‘ ভাইয়া,,’
চৈত্রিকার কানে এলো না মিমের কথাগুলো। মোবাইলটা হাত থেকে পড়ে গেল অকস্মাৎ মাথা ঝিমঝিম করে উঠার দরুন। দূর হতে যেন কেউ অতি সন্তর্পণে বলে গেল,
‘ তুই অতি মূল্যবান কিছু হারাতে যাচ্ছিস চৈত্র। ‘
#চলবে,,,,!
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)