#সুপ্ত_ভালোবাসা
#পর্ব_১৪
#Tahmina_Akther
অভিক প্রায় দৌড়ে চলে গেলো ওর বাবার রুমে সেখানে গিয়ে দেখে দরজা খোলা আর তার বাবা দাঁড়িয়ে বুকশেলফ থেকে বই বের করছে।অভিক দৌড়ে যেয়ে ওর বাবাকে পিছন থেকে গলা জড়িয়ে ধরলো।
আচমকা এভাবে জরিয়ে ধরাতে রোকন সাহবে হকচকিয়ে গেলেন পরমূূহর্তে যখন দেখলেন অভিক জরিয়ে ধরেছে তখন তিনি হেসে ফেললো আর ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-আজ সূর্য কোন দিক দিয়ে ডুবে পড়লো অভিক আজ আমার ঘরে, আমাকেি বিনা পারমিশনে জড়িয়ে ধরলো।
-বাবা, তুমি তো আজ আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ চাওয়া পূর্ণ করে দিলে। আর আমি তোমায় সামান্য জরিয়ে ধরতে পারবো না?
অবাক সুরে বললো অভিক।
-না, অবশ্যই পারবি। আমিও অনেক খুশি কারন আমার অভিক খুশি। হিয়া কি সত্যি রাজি হয়েছে? তোকে বলেছে কিছু?
-হু বলেছে বলেই তো তোমার কাছে এলাম।তুমি কি এমন বলেছো বাবা ফুল এই বিয়েতে রাজি হলো?
-সেটা তোর না জানলেও চলবে। ইট’স সিক্রেট তোকে বলা যাবে না। বললি না হিয়া যে রাজি হয়েছে এটা তোকে ওর নিজের মুখে বলেছে?
-হু বাবা,হিয়া রাজি আমাকে বিয়ে করতে আর এই কথা ওর নিজের মুখেই বলেছে ।
কথাগুলো বলার সময় বেশ লজ্জা পাচ্ছিলো অভিক হয়তো তার বাবার সঙ্গে বলছে কি না!
-আলহামদুলিল্লাহ, তাহলে আমি বড় ভাইজানের সাথে কথা বলে আসি।
এই কথা বলতে বলতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো অভিকের বাবা।
আর অভিক যেন এখনো কোনো স্বপ্নের মাঝে আছে যেন ঘুম ভেঙে গেলে এত সুন্দর সুখের অনূভুতি বিলিন হয়ে যাবে।
————-
চারদিকে আজ সাজ সাজ রব। বিয়ে বাড়ি বলে কথা একের পর এক আত্মীয় বাড়িতে এসে পৌঁছাচ্ছে।উপরে নিজের রুমের জানালা দিয়ে দেখছিলো অভিক। মনে মনে এক চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। হঠাৎ, কারো হাসিতে অভিকের ধ্যান ভাঙলো। জানালা থেকে চোখ ফিরিয়ে খাটের উপর দৃষ্টি ফেললো। দেখলল ওর বন্ধুরা ওর ছবির ফ্রেম নিয়ে হাসাহাসি করছে।
-কি এমন দৃশ্য আছে এই ছবিতে যে ওরা এভাবে মেয়েলোকের মতো হাসছে?ভ্রু কুচকে কথাগুলো ভাবছে অভিক।
মনের কৌতুহল মেটাতে ওর বন্ধু আবিরকে জিজ্ঞেস করলো,
-কি হয়েছে রে আবির? এভাবে ছবি দেখে হাসছিস কেন?
-হা হা হা তুই হা হা হা বলছিস এভাবে হাসছি কেন? হাহাহা শালা তোর এই ছবিটা দেখে হাসছি।
বলেই ছবিটা আমাকে দেখালো সাঈদ।
আমি বেশ মনোযোগ সহকারে ছবিটা দেখলাম কিন্তু হাসার মতো কিছুই খুজে পেলাম না। ওরা কি পাগল হয়ে গেলো না কি? আমার কপালের চুল গুলো পিছনে ঠেলে দিয়ে বললাম,
-আমি তো হাসার মতো কিছুই দেখলাম না। আমি আর ফুল আছি এই ছবিতে তাহলে হাসার মতো কি থাকবে পাগলের দলেরা।
এবার খুব কষ্টে হাসি থামিয়ে আবির বললো,
-ভাই তোর কপালটা বাংলাদেশ জাদুঘরে নিয়ে রাখতে হবে। তোর কি কপাল রে ভাই তুই তোর বৌয়ের কোলে ন্যাপি পরে আছিস।
বলেই আবারও হাসতে লাগলো আবির। হাসির দমকে বেচারার চেহারা পুরাই লাল দেখাচ্ছে।
এবার বুঝতে পারলাম ওদের এত মরা হাসির কারণ।আসলে ছবিটিতে আমি বেশে ছোট হয়তো তখন বসতে পারতাম আর ফুল হয়তোবা দু’বছরের হবে। সে আমাকে কোলে নিয়ে বসেছিলো এই ছবিটিতে।
-আবির, সাঈদ তোরা হাসা বন্ধ কর নইলে মোটেও ভালো হবে না কিন্তু।
-কেন কি করবি আমাদের কোলেও এভাবে বসে থাকনি না কি? হাহাহা আল্লাহ এত হাসি রাখি কোথায়?
-কি নিয়ে এত হাসাহাসি করছিস তোরা? মিরা, তিয়ানা রুমের ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো।
-এই ছবিটা দেখ তাহলেই বুঝতে পারবি। বলেই ছবিটি এগিয়ে দিলো সাঈদ।
এবার ওরা দুজনও হাসা শুরু করলো।
আমার তখন ইচ্ছে করছিলো সবকটাকে বেধে উল্টো লটকিয়ে গায়ে তেলাপোকা ছেড়ে দেই। তাহলে ওদের সব হাহা হিহি বেরিয়ে যেতো।
-অভিক তোমাকে ছোট আব্বু ডাকছে? বলতে বলতে রুমে ঢুকলো হিয়া।
ওরা সবাই হিয়াকে দেখে হাসি থামিয়ে রাখার বহু চেষ্টা করেছিলো কিন্তু সফল হয় নি। আবারও হেসে ফেললো। হিয়া অবাক হয়ে গেছে ওদের এভাবে হাসতে দেখে। তাই বলে বসলো,
-কি হলো তোমাদের এভাবে হাসছো কেন?
-তোমার আর অভিকের এই ছবিটি দেখে আমাদের এই অবস্থা। বলতে হবে অভিকের অনেক ভাগ্য জন্মের পরে থেকেই বৌয়ের কোলে উঠতে পারলো আর আমরা মিসকিনরা এখনো বৌয়ের ছায়ার ধারে কাছেও যেতে পারলাম না। বলে আবার হেসে ফেললো আবির।
হিয়াও বেশ লজ্জা পেলো ওদের কথা শুনে। তিয়ানা খেয়াল করলো হিয়া লজ্জা পাচ্ছে তাই রুমের পরিবেশ ঠিক করতে বললো,
-তবে অভিক তোর কিন্তু এখন উচিত হবে হিয়া যতবার তোকে কোলে নিয়েছে সব ফিরিয়ে দেয়ার।
-মানে আমি কিভাবে?এসব কি ফিরিয়ে দেয়া যায় না কি?
-যায় তো বিয়ের পর হিয়াকে প্রতিদিন কোলে নিবি তাহলে তুই সব ফিরিয়ে দিতে পারবি হিয়াকে। তাই না হিয়া ?
————-
হিয়া যেন আরও লজ্জা পেলো তাই ও রুমে থেকে বের হয়ে এলো। আর মনে মনে বললো,
-ইশ কি লজ্জা কি লজ্জা? এখন মুখ দেখাই কি করে? ওদের সামনে আর আসা যাবে না। নাহলে দেখা যাবে ওরা আবারও বলা শুরু করবে। আমি আমার রুমেই চলে যাই।
হিয়া ওর রুমে চলে যেতে নিচ্ছিলো কিন্তু ওর মা ওকে কেন যেন ডাক দেয় তাই ওর মা’র কাছে চলে যায় ।
হিয়া গিয়ে দেখে ওর মা’র পাশে একজন বৃদ্ধা দাঁড়িয়ে আছে। বেশ চেনা চেনা লাগছে হিয়ার কাছে। আরে ইনি তো অভিকের নানু হিয়া বেশ খুশি হয়ে বৃদ্ধাকে জড়িয়ে ধরলো।বৃদ্ধাও হেসে জড়িয়ে ধরলো হিয়াকে।
-আমাকে কে তো তোরা একবারও দেখতে যাস না। আর দেখে আমি তোদের বিয়ে হবে শুনে রাতের ট্রেনে রওনা হয়ে তোদের কাছে এলাম।
-নানু, আসলে সময় পাইনি পড়াশোনার চাপে। তুমি যখন এসেই পড়েছো তাহলে এখন জম্পেশ আড্ডা চলবে তেমার সঙ্গে।
-তা তো চলবেই। আয় তো বইন আমাকে একটু তোর নিয়ে যা। কিছু কথা আছে তোর সঙ্গে।
-এতদূর থেকে এসেছো আগে বিশ্রাম নাও তারপর বিকেলে নাহয় বলো কি কথা বলতে চাও আমাকে।
-না এখনই বলবো। আয় তুই আমার সঙ্গে।
হিয়ার হাত ধরে টেনে নিয়ে চললেন অভিকের নানু।
————-
আর এদিকে অভিককে আবির বলছে,
-তোদের বিয়ে এত দেরিতে কেন হচ্ছে দোস্ত?
আমি তো শুনলাম আর চারবছর আগেই তোদের বিয়ে ঠিক হয়েছিলো।
-আমাদের বিয়ে চার বছর আগেই ঠিক হয়েছিলো। তবে হিয়া পরে আমাদের সবার সামনে শর্ত রেখেছিলো। আমাদের দুজনের অনার্স কমপ্লিট হলেই এই বিয়ে হবে তার আগে নয়। আমাকে ভালো চাকরি করতে হবে। তাই আজ চারবছর পর এই বিয়ে হচ্ছে বুঝলি সবাই। আর তোরা এ-সব জানবি কিভাবে একেকজন একেক জায়গায় চলে গেলি যোগাযোগও তেমন রাখলি না।তবে এক হিসেবে ভাল হয়েছে নয়তো জীবনেও ভালল চাকরি পেতাম না। ভালো একটা পজিশনে আছি সাথে চাচ্চুর ব্যবসা সামলাচ্ছি । এই তো বেশ যাচ্ছে দিন গুলো।
-হু সবই বুঝলাম, তবে আমরা সবাই অনেক খুশি অবশেষে তুই তোর ফুলকে তোর বাগানে স্থান দিতে পারলি।
মিরা বললো আর এতে সকলেই সায় দিলো।
-হু অনেক প্রতিক্ষিত এই দিনটি আমার জন্য। আচ্ছা আমি তাহলে উঠছি তোরা সবাই বিকেলে তৈরি থাকিস মার্কেটে যাবো বিয়ের কেনাকাটা করতে হবে ঠিক আছে?
-হু ঠিক আছে।
অভিক রুমে থেকে বেড়িয়ে চলে এলো ছাঁদে। পকেট থেকে একটি সিগারেট বের করে ঠোঁটের মাঝে রেখে লাইটার দিয়ে আগুন ধরালো।
একটান দিয়ে ধোঁয়া গুলো উড়িয়ে দিয়ে ভাবছে তার আর হিয়ার কথা। আসলে যতটা তাদের স্বাভাবিক দেখা যায় আসলে কি তারা দুজন ততটা স্বাভাবিক এই সম্পর্কে?
এই চার বছরে তারা কি আসতে পেরেছে তাদের হৃদয়ের কাছাকাছি নাকি আরো দূরে সরে গেছে যতটুকু ছিলো কাছে?
#চলবে