সুপ্ত ভালোবাসা❤পর্ব-২৪

0
1370

#সুপ্ত_ভালোবাসার

#পর্ব_২৪

#Tahmina_Akther

হসপিটালের চারদিকে ফিনাইলের কড়া গন্ধ, প্রচুর মানুষের আনাগোনা। হবেই বা না কেন কারো আত্মীয় অসুস্থ তো কারো প্রিয়জন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে না এসে পারা যায়?

এই হসপিটালে হয় কারো নতুন জীবনের সূচনা নয়তো কারো জীবনের অন্তিম মূহুর্ত।

কেউ বা অপারেশন থিয়েটারের সামনে হেসে উঠে কোনো সুসংবাদ শুনে আর কেউ বা কেদে উঠে প্রিয়জনকে আর দেখা হবে না বা ছুঁয়ে দেখা হবে না দুঃসংবাদ শুনে। কেন এক হসপিটালের দু’ভাগের মানুষ দু’রকমের অনুভূতি পায়?

কেউ ফিরে পাওয়ার আর কেউ হারিয়েে ফেলার। কারোই জানা নেই কেন এমন হয়? হয়তো সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছেতে জন্ম-মৃত্যুর এই খেলা চলে।

হসপিটালের এক কক্ষে জামান পরিবারের প্রত্যেক সদস্য উপস্থিত। তাদের সবার দৃষ্টি নিবদ্ধ বেডে শুয়ে থাকা মানুষটির দিকে।নারী সদস্যরা ক্ষণে ক্ষণে কেঁদে উঠছে আর পুরুষ সদস্যরা শুধুই নিরবতা পালন করছে।

দরজা ঠেলে দুজন ডাক্তার প্রবেশ করলেন এরপর এগিয়ে গেলেন বেডের দিকে। কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে জানালেন,

-আলহামদুলিল্লাহ সে এখন ভালো আছে।তবে ডানহাতের ফ্র্যাকচার ঠিক হতে ১ মাস সময় লাগতে পারে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া গুলি তার হাত থেকে বেরিয়ে পরেছিলো। উনার দিকে পর্যাপ্ত পরিমাণে খেয়াল রাখবেন যাতে হাত নড়াচড়া বেশি না করে।ঠিক একসপ্তাহ পর আবার নিয়ে আসবেন আর এই ঔষধগুলো নিয়মিত খাওয়াবেন আর বাকি তথ্য প্রেসক্রিপশনে আছে।

-তাহলে কি আজই ওকে নিয়ে যেতে পারবো?

-ইয়েস মিস্টার রোকন জামান নিয়ে যেতে পারবেন। আপনারা কি কোনো ফ্যাংশনে গিয়েছিলেন মানে এইরকম ভারি ড্রেসআপ?

– জি আপনাদের রোগীর বিয়ে ছিলো কিন্তু হঠাৎ এমন ইন্সিডেন্ট? তবে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া তিনি বড় রকমের বিপদ থেকে উদ্ধার করেছেন।

-তা মিস আপনি এভাবে কাঁদছেন কেন উনি তো এখন সুস্থ। কান্না বন্ধ করুন দুপুর থেকে শুরু করেছেন এখন তো থামুন।

-আরে ও হচ্ছে রোগী মানে আমার ছেলের নববধূ বুঝতেই পারছেন কেন কাঁদছে?

-ও এইজন্য হয়তো। বেস্ট অফ লাক বোথ ওফ ইউ।আর অভিক সাহেব একটু সাবধানে থাকবেন আর মিসেস অভিক আপনিও ভালো থাকবেন আর অভিকের প্রতি খেয়াল রাখবেন। আসি তাহলে আগামী সপ্তাহে দেখা হবে।

চলে গেলো ডাক্তাররা। অভিকের বাবা আর চাচ্চু মিলে নিচে চলে গেলো ডিসচার্জের ব্যবস্থা করতে। অভিকের মা ইশারায় বাকি সবাইকে বললো বেরিয়ে আসতে সবাই ইশারা বুঝতে পেরে বাইরে চলে গেলো।কেবিনে শুধুই এখন অবিক আর হিয়া।

অভিক তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে মন ভরে দেখছে যেন কত জনমের তৃষ্ণার্ত সে! এই কয়েক ঘন্টার মাঝে কেঁদে কেটে চোখ নাক লাল করে ফেলেছে তার লাল সুন্দরী।

অভিকের আজ কেন যেন নিজেকে বড্ড সুখী মনে হচ্ছে, সে এখন বলতে পারবে তার কেউ একজন তো আছে যে প্রতিটি সুখের মূহুর্তে তার হাসির সঙ্গী হবে ,প্রতিটি দুঃখের মূহুর্তের দুঃখের ভাগিদ্বার হবে ,তার শরীরে একটি ব্যাথার বিনিময়ে যার আখিঁদ্বয় থেকে একফোঁটা অশ্রু নিশ্রিুত হবে।এই তো সে চেয়েছিলো ফুলের কাছে এবং পেয়ে গেছে বিধাতার কৃপায়।
এখন তার ফুলকে একটু সান্তনা দিতে হবে বেচারি কেঁদে শেষ।

-ফুল, আর কতক্ষণ কাঁদবে বলতো? আমি কি মরে গেছি! দেখো আমার দিকে আমার পুরো সুস্থ আছি।

-এত মরার শখ কেন তোমার? জানো আমি কত ভয় পেয়েছিলাম মনে হয়েছে এই বুঝি আমি তোমাকে হারিয়ে ফেললাম।কেন যে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলাম? রাজি না হলে তুমি ভালো থাকতে আর ওই সাইকোটা এরকমটা করতো না?

-আমাকে বিয়ে না করলে ওই সাইকোটার বৌ হতে তুমি। তারপর সারাজীবন ওর সাইকো-গিরি দেখতে,
বেশ রেগে গিয়ে বললো অভিক। হিয়া কান্নার মাঝে হেসে ফেললো অভিকের রাগ দেখে।

-ওর বৌ হতে দিলে কই হলুদের দিন সকালেই তো বিয়ে করে ফেললে।

-ভালো কাজ করেছি। আয়ুশের কি অবস্থা এখন?

-আয়ুশ আর নেই ও মারা গেছে
দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো রোকন জামান।

হিয়া আর অভিক দুজনে যেন আকাশ থেকে পড়লো।বিশ্বাস হচ্ছে না যে আয়ুশ মারা গেছে!

-কিন্তু, বাবা ও মানে কি ভাবে মারা গেলো?

-তোকে যখন গুলি করে তখন আমিও ওকে পিছন থেকে শ্যুট করে দেই। গুলি ওর মাথায় গিয়ে লাগে তৎক্ষনাৎ সে মারা যায়।আয়ুশকে তোর দিকে গুলি করতে দেখেই হিয়া ভয়ে চিৎকার করে উঠে তোর হাতে গুলি লাগতেই হিয়া তোকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে। এইসবে আর হিয়ার খেয়াল ছিলো না। তোরা এইসব চিন্তা বাদ দে, ইনকাউন্টারে মারা গেছে আয়ুশ আমি সব সামলে নিবো। হিয়া?

– জি ছোট আব্বু।

-চলো বাড়িতে অভিকের ডিসচার্জের সকল ফর্মালিটি শেষ। গাড়িতে যেয়ে উঠে বসো।তোমার ছোট আম্মু, তোমার আম্মু অরিন,সাদাফ সকলেই গাড়িতে তোমার অপেক্ষা করছে। আমি অভিককে নিয়ে আসছি।

-না, আমিও আসি তোমাদের সাথে। তোমার একটু হ্যাল্পে আসতে পারবো আমি। প্লিজ ছোট আব্বু?

-আচ্ছা আসো।

—————-

সবাই বাড়িতে এসে পৌঁছাতেই বাকি আত্মীয়রা দৌড়ে এলো। অভিককে আলগোছে কোলে করে নিয়ে গেলো আবির আর সাঈদ।আবির আর সাঈদ হসপিটালে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু অভিকের বাবা না করে দেয় তাই ওরা কেউ যায় নি।

কিন্তু, প্রাণপ্রিয় বন্ধু এহেন অবস্থা চোখের সামনে দেখে বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলো ওরা চারজন। তবে, আয়ুশের শেষ পরিণতিতে ওরা বেশ খুশি। এই ছেলে সবার জীবনের অভিশাপ ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। নিজের পরিবারকে হত্যা করেছে ওর এতটুকু শাস্তি তো প্রাপ্য ছিলো।

তাদের চারজনের শুধু ওদের একটি চাওয়া অভিক আর হিয়া যেন সবসময় হাসিখুশিতে থাকে তাদের জীবনে যেন আর কোনো বিপদ বা কষ্ট না আসে। বহু তো হলো সঙ্গীকে না পাওয়ার বেদনা জর্জরিত হওয়া এবার না হয় একটু সুখের জোয়ারে ভাসুক অভিক-হিয়া নবদম্পতি।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here