#সুপ্ত_ভালোবাসা
#পর্ব_২৫
#Tahmina_Akther
একঝাঁক তরুণ-তরুণীর মাঝে বসে আছে অভিক।কারণ, বিয়ে যেমন তেমনই হোক অন্তত বিয়ের পরের কার্যগুলো তো ঠিকভাবে হওয়া চাই।
অভিক আর হিয়া বারংবার না করা সত্ত্বেও ওরা মানতে নারাজ। অভিকের বন্ধুগুলো যেন আজ সতীন-বন্ধু হয়ে গেছে। কি আর করা হাতের প্লাস্টার নিয়ে বসে আছে অভিক আর হিয়াকে নিয়ে গেছে নতুন করে একটু সাজিয়ে দিতে।
একটু পর তিয়ানা নিয়ে এলো হিয়াকে ইয়া বড় ঘোমটা দিয়ে। অভিক তাকিয়ে ভাবছে এতবড় ঘোমটা দেয়ার মানে কি! ফুলের কি গরম লাগছে না এভাবে থেকে?
হিয়াকে বসিয়ে দিলো অভিকের পাশে অভিক আর হিয়ার দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলো না কারণ এখানে কিছু ভাবি আছে যাদের মুখের ব্রেক নেই যদি উল্টাপাল্টা কিছু বলে দেয় তাহলে ছোট ভাইবোন গুলোকে মুখ দেখাবে কি করে?
এবার মিরা সবার মাঝে দাঁড়িয়ে বললো,
-এখন আমাদের নবদম্পতির আয়নায় মুখ দেখাদেখি হবে। সো তোরা দু’জন তৈরি তো?
অভিক জাস্ট মাথাটা একটু কাত করলো আর হিয়া সে তো জড়বস্তুর ন্যায় বসে আছে।
তিয়ানা একটি বড় লাল ওড়না এনে ছড়িয়ে দিলো হিয়া আর অভিকের উপর।এরপর ওড়নার ভিতরে আয়না প্রবেশ করিয়ে অভিককে জিজ্ঞেস করা হলো,
-অভিক আয়নায় কাকে দেখিস?
অভিক এবার পরিপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো আয়নায় থাকা হিয়ার প্রতিবিম্বের মাঝে। বড় বড় ডাগর চোখজোড়ায় ঘন পাপড়ির মেলা,গোলাপী ঠোঁট জোড়া আজ লাল রঙের নিচে পরেছে ,নাকে হয়তো নাকফুলও আছে কখন পড়লো?
কারো কথায় ভাবনার মাঝে ভাঁটা পরলো অভিকের
-কি রে বলছিস না যে কাকে দেখিস? নাকি দেখতেই থাকবি কিছু বলবি না আমাদের?
ব্যস,শুরু হয়ে গেলো হাসাহাসি । হিয়া বেশ লজ্জা পেলো ওদের কথা শুনে আর কিন্তু, অভিক কিছু বলছে না কেন?দেখতে সুন্দর লাগছে না আমায়। বেশ মন খারাপ হয়ে গেলো হিয়ার।
-আয়নায় আমার ফুলকে দেখা যায়। এই ফুল কিন্তু গাছের ফুল নয় এই ফুল শুধুই অভিকের। শুধু এই আয়নায় আমার ফুলকে দেখতে চাই না। আমার ফুলকে আমি আমার হৃদয়ের আয়নায় হাজারো বার দেখতে চাই এবং দেখি তবুও যেন দেখার স্বাদ মিটলো না।
বলেই আয়নার সামনে উবু হয়ে হিয়ার প্রতিবিম্বে চুমু খেলো অভিক।
হিয়া অভিকের কথা শুনে শুধু লাজুক হাসি দিলো। অভিক সে হাসি দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলো।কারণ,এই প্রথম হিয়ার লজ্জা মাখা হাসি দেখতে পেলো। অভিকও হেসে দিলো তবে ঠোটে লেগে থাকা হাসি যে হাসির শব্দ নেই। দু’জনের এই হাসি সবার অগোচরে রয়ে গেলো।
-এখন হিয়ার পালা, তে হিয়া তুমি বলো আয়নায় কাকে দেখা যাচ্ছে?
-আয়নায় আমার মালিকে দেখতে পাই।যে তার ফুলের অতি যত্ন নেয়। কখনো রোদের অতি প্রখরতা থেকে কখনোবা বৃষ্টির তোড় থেকে। এই জীবনের অন্তিম মূহুর্ত পর্যন্ত এই মালির সানিধ্যে থাকতে চায় তার ফুল।
হিয়ার কথা শুনে সবাই একসাথে বলে উঠলো,
-আয় হায় মে মারাজাবা; এত রোমান্টিক কথা শুনে কি আর সঙ্গী ছাড়া থাকা যায়
বলেই ভাবিরা চলে গেলো ভাইদের খোঁজে আর কিছু ছেলে উঠে গেলো তাদের গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলতে।অভিকের বন্ধু আবির তো বলেই ফেললো,
– দোস্ত, এবার আর সিঙ্গেল থাকা যাবে না। বিয়ে করেই ফেলবো। কারণ, তোদের রোমান্টিকতার ঝড় আমাদের উপর তান্ডব চালাচ্ছে। এই তিয়ানা চল বিয়ে করে ফেলি।
-আমি তো তোকে বিয়ে করতে রাজি আছি কিন্তু তুই নাকি এখনও বিয়ে করতে প্রস্তুত না। তাহলে কেমনে কি?এবার বাবাকে বলে দিবো আমার জন্য ছেলে দেখতে তুই থাক তোর প্রস্তুতি নিয়ে।
বলেই রেগে উঠে গেলো তিয়ানা আর ওর পিছু পিছু আমাদের আবির সাহেব।
রয়ে গেলো মিরা আর সাঈদ আর ছোট্ট কিছু কাজিনরা।
এবার নানু এসে বলতে লাগলেন,
-সাঈদ, ওদের রুমে দিয়ে আসো তো। অভিকের শরীরটা এমনিতেই ভালো নেই তারমধ্যে এইসব। আর আমি খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি রুমে
হিয়া আর অভিক তোরা খেয়ে নিস কেমন?
হিয়া আর অভিক মাথা কাত করে সম্মতি দিলো।সাঈদ অভিককে নিয়ে গেলো আর ওদের পিছে মিরা আর হিয়া আস্তে আস্তে যাচ্ছে। এরইমাঝে মিরা হিয়ার কানে কি যেন বলতেই হেসে ফেললো হিয়া।
রুমে প্রবেশ করতেই গোলাপ ফুলের সুগন্ধি নাকে এসে ঠেকলো।পুরো রুম জুড়েই ফুলের ছড়াছড়ি, একপাশে খাটের উপর গোলাপের পাপড়ি দিয়ে লাভ শেইপ আঁকা, ড্রেসিংটেবিলের পাশেই সোফা তার পাশেই বুকশেলফ। রুমের পুরো খালি অংশ জুড়েই ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে রাখা হয়েছে এবং এই রুমে প্রবেশ করতে হলে ফুলের উপর পায়ে হেটে আসতে হবে।
এত আয়োজন দেখে বেশ পুলকিত হলো হিয়া। আর অভিক বেচারার মন খারাপ কারণ এই আয়ুশের চক্করে ওর দশটা না পাঁচটা না একটা বাসররাত মাটি হয়ে গেলো। এই দুঃখ কাকে বলবে অভিক?
অভিককে বসিয়ে দিলো সোফায় আর হিয়াকে খাটে। এরইমাঝে খাবার পাঠিয়ে দিলো অভিকের মা। সাঈদ আর মিরা চলে গেলো ওদের বাসর রাতের অভিনন্দন জানিয়ে।
সাঈদ মিরা চলে যেতেই অভিক উঠে গিয়ে দরজা লক করে দিলো।এরপর, হিয়ার পাশে গিয়ে বসলো,হিয়ার বামহাত হাতের মুঠোয় নিয়ে অভিক তার পকেট থেকে একটি খাম বের করে হাতে দিয়ে দিলো।হিয়া অবাক-খুশি হয়ে খামটি খুলেই দেখতে পেলো টাকা।
-টাকা কেন? আমি কি টাকা চেয়েছি তোমার কাছে?
-তুমি না চাইলেও পাবে। কারণ এইটা তোমার দেনমোহরের টাকা। পুরোটা শোধ করে দিয়েছি এবার তোমার প্রতি আমার পূর্ণ অধিকার আছে বুঝলে ফুল।
-পূর্ণ অধিকার বলতে শারীরিক অধিকারের কথা বলছো অভিক? কিছুটা ইতস্তত হয়ে বললো হিয়া।
#চলবে
(হয়তো সুপ্ত_ভালোবাসা গল্পের আর কয়েকটি পর্ব আছে। আপনাদের কাছে কেমন লাগে এই অভিক-হিয়ার জুটি?জানাবেন কিন্তু।)