#সুপ্ত_ভালোবাসা
#পর্ব_৪
#Tahmina_Akther
ডাইনিং টেবিলে বসে অপেক্ষা করছি ব্রেকফাস্টের জন্য। আম্মু আর চাচী মিলে নাশতা তৈরি করছে।একে একে সবাই টেবিলে এসে বসলো। কিন্তু, অভিক এখনো আসে নি। চাচ্চু বারবার সিড়ির দিকে তাকাচ্ছে হয়তো অভিক আসছে কি না দেখার জন্য?
আম্মু আর চাচী সবাইকে খাবার সার্ভ করে দিচ্ছে। সাদাফ আর অরিনের দিকে হঠাৎ করে নজর পড়লো দেখি ওরা দুজন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ইশারায় জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে?
অরিন ঠোঁট নাড়িয়ে বলছে,
-অভিক ভাইয়া নাশতা খাবে না?
আমি ইশারায় ওদের বললাম, দাড়া আমি দেখছি।
-চাচী,অভিক কোথায়? ওকে ডাকছো না যে, ও নাশতা করবে না আমাদের সাথে?
-আমি জানি না মা তোর চাচ্চুকে জিজ্ঞেস কর?
আমি এবার চাচ্চুর দিকে তাকালাম দেখি উনি একমনে খেয়ে যাচ্ছে। তবুও বললাম,
-চাচ্চু, অভিককে তুমি যদি একবার ডাক দাও দেখবে ও তোমার ডাকের সাড়া দিয়েছে।
-একটা নাহয় থাপ্পড় মেরেছি আর এতেই উনি রাগ করে নাওয়াখাওয়া বাদ দিয়ে দরজায় খিল এটে বসে আছে।
-আমিন, এতবড় ছেলের গায়ে তোর হাত উঠানো ঠিক হয় নি? মানছি সেদিন ও ভুল করেছে তবুও তোর কাজটি উচিত হয় নি। আর হিয়া তুই একজন বোধসম্পন্ন মানুষ তুই কেন মিথ্যে মেসেজ দিয়ে ছেলেটাকে ভয় দেখালি?
কথাগুলো বললেন হিয়ার বাবা ইসমাঈল।
-বাদ দাও তো আব্বু,ওর রাগ পড়লে এমনিতেই খেয়ে নিবে।
আমি তাহলে আসি। আজ ইউনিভার্সিটিতে প্রথম দিন আমি চাই না দেরি হোক।আব্বু চাচ্চু আসি আমি দোয়া করো।
আর সাদাফ এবং অরিন তোদের কাজ হলো, অভিকের রাগ ভাঙানো। আল্লাহ হাফেজ আম্মু, চাচী।
বলেই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পরলাম ভার্সিটির উদ্দেশ্য। মনে মনে ভাবছি অভিক যদি সাথে আসতো তাহলে ভালো হতো। ভাগ্যিস,গতকাল চাচ্চুর সঙ্গে ভার্সিটিতে এসেছিলাম নয়তো আজ সবকিছু নিয়ে দূর্ভোগ হতো।
ভার্সিটির সামনে এসে থেমে পরলো রিকশা। নেমে রিকশা ভাড়া মিটিয়ে ভিতরে চললাম। আশপাশে অনেক ছেলেমেয়ে দাড়িয়ে আছে।বেশিরভাগই ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়া মেয়ে। ওদের দিকে তাকালাম আর নিজের দিকে তাকালাম এদের সামনে আমাকে পুরাই কামের বেডি দেখা যাচ্ছে।
আরেকটু সামনে এগুতেই কয়েকটি ছেলেমেয়ে মিলে আমাকে ইশারায় ওদের কাছে ডাকলো।আমি ভয়ে আশপাশে তাকালাম কারণ র্যাগিং চলছে।সাদা শার্ট পড়া একটি ছেলে আমাকে আবারও ইশারায় ডাক দিলো। কি আর করা তাদের দিকে আস্তে আস্তে এগুতে থাকলাম আর মনে মনে আয়াতুল কুরসি পড়ছিলাম। শুনেছি এই র্যাগিং জিনিস খুবই ভয়ানক
যদি আমাকে এই ভরা মাঠে গান গাইতে বলে, নাচতে বলে তখন আমার কি হবে? ভেবেই হাত পা ছুড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছিলো কিন্তু, আফসোস কাঁদতে পারবো না।
তাদের থেকে একটু দূরত্বে দাঁড়ালাম। দু’টো ছেলে, দু’টো মেয়ে। সাদা শার্ট পড়া ছেলেটা আমাকে জিজ্ঞেস করলো,
-তো মিস নতুন নাকি এই ভার্সিটিতে আগে তো কখনো দেখি নি?
– জি আমি নতুন এসেছি।
মেরুন রঙা থ্রীপিছ পড়া মেয়েটি বললো,
-কোন সেমিস্টারে, সাবজেক্ট কি?
-প্রথম সেমিস্টারে আর সাবজেক্ট ইংলিশ।
তারা আমাকে আর কোনো প্রশ্ন করে নি কিন্তু কি যেন ফুসুরফাসুর করছে। আর আমি ভয়ে শেষ নিশ্চিত তারা আমাকে এখন কিছু না কিছু করতে বলবে। হায় আল্লাহ, আমাকে বাচাও এই মুসিবত থেকে।
-তো মিস আপনার নামটা যেন কি?
-হিয়া জা জামান।
-তোতলাচ্ছেন কেন এখনো তো কিছুই করতে বললাম না। তো এখন মিস হিয়া আপনার কাজ হচ্ছে ওই যে দূরে বটগাছটার নিচে আকাশী রংয়ের শার্ট পড়া ছেলেটিকে গিয়ে এই চিরকুটে লেখা শব্দগুলো বলতে হবে।
একটি চিরকুট এগিয়ে দিয়ে বললো পাশের পান্জাবী পরা ছেলেটি।
-আমি পারবোনা ভাইয়া। আমাকে যেতে দিন
বলেই কাকুতি মিনতি করতে লাগলাম তাদের কাছে। কিন্তু, তারা কোনোভাবে মানতে নারাজ।
সাদা শার্ট পরা ছেলেটি হঠাৎ করেই বললো,
– তো মিস হিয়া আপনি তাহলে চিরকুটটি দিবেন না। তাহলে তো আপনাকে অন্য একটি কাজ করতেই হবে তাই না? তো আপনার কাজ হচ্ছে, আমার পায়ের জুতাগুলো মুছে দিতে হবে এবং এখনই।
তার পা গুলো আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে।
আমার তখন লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে হয়েছিলো।
সব ছেলেমেয়েরা এসে জটলা পাকিয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলো।কিছুই করার নেই তাই আমি ছেলেটির পায়ের কাছে বসে পড়লাম।
-আমাদের কাছে তো রুমাল বা টিস্যু নেই তোমার ওড়না দিয়ে না হয় মুছে দাও।
বলেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো দলটি। আর আমি তখন ঝাপসা চোখে ওড়না দিয়ে জুতা মুছতে হাত বাড়িয়েছিলাম। কিন্তু, সেই ছেলেটি হঠাৎ করেই কাত হয়ে পরে গেলো।
ঘাড় ফিরিয়ে তাকাতেই দেখতে পেলাম অভিককে।
অভিক এগিয়ে এসে ছেলেটিকে বেধম পেটাচ্ছে।আমি কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম না,দিশহারা বোধ করেছিলাম। একটুপর ভিড় ঠেলে কয়েকটি ছেলে এসে অভিককে টেনে একপাশে নিয়ে এলো।তবুও সে বারবার ছুটে গিয়ে ছেলেটিকে মারতে চাইছে।
ছেলেটির কপাল কেটে রক্ত বের হচ্ছে হয়তো হাতেও ব্যাথা পেয়েছে।ওদের দলের লোক ওকে টেনে তুললো।
সাদা শার্ট পড়া ছেলেটি এবার অভিককে উদ্দেশ্য করে বললো,
-অভিক তুই এই মেয়েটির জন্য আমার গায়ে হাত তুলতে পারলি? তোর জানে জিগার বন্ধুর গায়ে কিভাবে দোস্ত?
– তুই কাজটি ভালো করিস নি আবির? তুই ওকে কষ্ট দিয়েছিস মানে আমাকে দিয়েছিস? জানিস ও কে?
-হু হু বল কে এই মেয়ে? যার জন্য তুই আবিরের গায়ে হাত তুললি?
ওদের দলের একটি মেয়ে বললো।
-শুনবি ও কি হয় আমার? ও হচ্ছে আমার ফুল
বেশ জোরেই বললো অভিক।
অভিকের মুখ থেকে ফুল নামটি শুনে আবির সহ
সবাই অবাক হয়ে গেছে। মেয়েটি ইশারায় কি যেন বললো অভিককে। আর অভিক মাথা নাড়িয়ে হু বললো।
আচমকা, আবির এগিয়ে এসে অভিককে জরিয়ে ধরে হেসে বললো,
-দোস্ত, বুঝতে পারছি ও যে তোর ফুল। যদি জানতাম তাহলে আমি ওকে কোলে করে ক্লাসরুম পর্যন্ত দিয়ে আসতাম।
অভিক আবিরের পেটে কনুই দিয়ে গুতো দিয়ে বললো,
-একবার কোলে নিয়ে দেখ তোর হাত দেখবি তোকে ছাড়াই সুইজারল্যান্ড বেড়াতে চলে গেছে।
হিয়া এদের কারোর ঘটনাই বুঝতে পারছে না। এতক্ষণ মারপিট করে আবার হাসাহাসি চলছে। আর ফুল নাম বলতেই ওরা চিনতে পারলো কিভাবে? নিশ্চয়ই অভিক ওদের সঙ্গে আমার ব্যাপারে আলাপ করেছে। আর ফুসুরফাসুর করে কি বলছে দু’জনে?
অভিক এবার আমার দিকে এগিয়ে এসে বললো,
-ফুল, ওরা হচ্ছে আমার স্কুল লাইফের বন্ধু। দু’টো মেয়েকে দেখিয়ে ও হচ্ছে মিরা আর ও হচ্ছে তিয়ানা। ওকে তো চিনতে পারছো তবুও বলি ও আবির আর ওর পাশের জন সাঈদ।
ওরা আমার সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করলো। আমি সৌজন্যতা রক্ষার্থে কথা বললাম। নয়তো, যেই ডান্জারাস পাব্লিক এরা ;আল্লাহ আজকে বড় বাঁচা বাচিঁয়েছে।
ওদের থেকে বিদায় নিয়ে আমার হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে অভিক।
-আমার জন্য একটু অপেক্ষা করলে কি হতো? এখন দেখেছো আমাকে ছাড়া আসাতে কি হয়েছে? অভিক বললো।
-আমি কি জানি নাকি এমনটা হবে? বেশ মন খারাপ করে বললাম।
-আর কখনো আমাকে ছাড়া ভার্সিটিতে আসবে না। আর এই যে তোমাদের ক্লাসরুম।
ছুটি হলে আমার জন্য ক্যান্টিনে অপেক্ষা করো একসাথে বাড়িতে ফিরবো ঠিক আছে?
-হু অপেক্ষা করবো। অভিক নাশতা খেয়েছিস তুই?
-না,
-কেন খাসনি তুই? ভুল নাহয় আমি করেছি কিন্তু তুই না খেয়ে আছিস কেন? জানিস সকালে চাচ্চু ব্রেকফাস্ট খাওয়ার সময় বারবার সিড়ির দিকে তাকাচ্ছিল।
– কেন একবার ডাক দিতে পারলো না? শুধু পারে শাসন করতে।
-আচ্ছা, এত রেগে থাকা লাগবে না? ক্লাস শেষ হলে আমরা দুজন বিরিয়ানি খেতে যাবে ঠিক আছে?
-ঠিক আছে মানে দৌড়াবে।
#চলবে