#সুপ্ত_প্রেমাসুখ
#ইলোরা_জাহান_ঊর্মি
#পর্বঃ১১
সবেমাত্র ডালিয়া আর ইলোরাকে নিয়ে ভার্সিটি গেইটে পা রেখেছে সাকিব। ঠিক তখনই স্বশব্দে তার ফোনটা বেজে উঠল। সাকিব পকেট থেকে ফোনটা বের করে দেখল তার মা ফোন করেছে। রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে মালিহা বেগম প্রশ্ন করলেন,“তোরা কি ভার্সিটি পৌঁছে গেছিস?”
“হ্যাঁ আম্মু। কেন?”
“তোর মামা এসেছে। একটা কাজে এসেছে, একটু পরেই না-কি চলে যাবে। যাওয়ার আগে ডালিয়াকে দেখতে চাইছে। তুই ওদের নিয়ে বাড়ি চলে আয়।”
“মাত্র এসে দাঁড়ালাম, এখনই চলে যাব? মামাকে থাকতে বলো আজকের দিনটা।”
“বলেছি কিন্তু থাকবে না। চলে আয় না বাবা।”
“আচ্ছা ঠিক আছে। আসছি।”
ইলোরা আর ডালিয়া প্রশ্নভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাকিবের দিকে। সাকিব ফোন পকেটে ঢুকাতে ঢুকাতে বলল,“চল। আমাদেরকে এখনই বাড়ি যেতে হবে।”
ইলোরা অবাক হয়ে প্রশ্ন করল,“কেন?”
“মামা এসেছে। একটু পরে চলে যাবে। তাই ডালিয়ার সাথে দেখা করতে চাইছে।”
ডালিয়ার চোখ-মুখ খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠল। কতদিন পর আজ বাবার সাথে দেখা হবে! ইলোরা বলে উঠল,“তাহলে তুমি ওকে নিয়ে বাড়ি যাও। আমি ক্লাস করব।”
ডালিয়া বলল,“আরে চল না। একদিন ক্লাস না করলে কিছু হবে না।”
ইলোরা নিজের কথায় স্থির থেকে বলল,“আজকে ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস আছে। আমি কিছুতেই মিস করতে পারব না। ভাই, আমি যাব না।”
সাকিব কিছুক্ষণ ভেবে বলল,“ঠিক আছে। আমি এসে তোকে নিয়ে যাব। সাবধানে থাকিস কিন্তু।”
ইলোরা খুশি হয়ে বলল,“আচ্ছা, চিন্তা কোরো না।”
সাকিব তখনই একটা সিএনজি ডেকে ডালিয়াকে নিয়ে উঠে পড়ল। ওরা চলে যাওয়ার পর ইলোরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করল। আশেপাশে কোথাও বন্ধুদের টিকিটুকুও দেখা যাচ্ছে না। গেল কই সব? ইলোরা ব্যাগ থেকে ফোন বের করতেই পেছন থেকে কেউ তার নাম ধরে ডাকল। পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখল এরেন। পরনে সাদা শার্ট, কালো প্যান্ট, হাতে ডায়ালের ঘড়ি, সবসময়কার মতোই চুলগুলো সুন্দরভাবে গোছানো, গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। দারুণ লাগছে দেখতে। প্রথমবারেই চোখ ফেরাতে ইচ্ছে করল না ইলোরার। কিন্তু এরেনও তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। তাই আর দিন দুনিয়া ভুলে তাকিয়ে থাকা সম্ভব হলো না। দ্রুত চোখ নামিয়ে ঢোক গিলল সে। এরেন এভাবে ডেকে দাঁড় করাল কেন বোঝার চেষ্টা করল। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারল না। অবশ্য এরেন এখন মাঝে মাঝেই এমনটা করে। ডেকে দাঁড় করিয়ে কথা বলার চেষ্টা করে। কিন্তু ইলোরাই এটা-ওটা বলে কেটে পড়ে। কারণ সে চায় না এরেনের সাথে কথা বলতে বলতে তার প্রতি কোনো অনুভূতি জন্মাক। এরেন এগিয়ে এসে তার মুখোমুখি দাঁড়াল। মুচকি হেসে বলল,“কেমন আছো?”
ইলোরা না তাকিয়েই উত্তর দিলো,“ভালো, আপনি?”
“আলহামদুলিল্লাহ্। তোমার সাথে কাউকে দেখছি না যে?”
“ভাই আর ডালিয়া এসে আবার চলে গেছে?”
“কেন?”
ইলোরা এখান থেকে কেটে পড়ার জন্য অজুহাত খুঁজছে আর এরেন একটার পর একটা কথা বাড়িয়েই চলেছে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও ইলোরা জবাব দিলো,“মামা এসেছে। ডালিয়ার সাথে দেখা করতে চায়।”
এরেনের মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠল। গদগদ কন্ঠে বলল,“তোমার মামা সত্যিই খুব ভালো একজন মানুষ। জানো? ছোট খালার জমির সব সমস্যা সমাধান করতে তিনি আমাকে কত সাহায্য করেছে। এমনকি তার পরদিন আমাকে ধরে-বেঁধে আবার তার বাড়ি নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পরদিন যাওয়ার পর দেখলাম তুমি নেই। আমরা যাওয়ার আগেই চলে এসেছ।”
ইলোরা অবাক হয়ে গেল। এরেন আবার গিয়েছিল তার মামার বাড়ি? এটা তো ইলোরা জানত না। এরেন আবার হাসিমুখে বলল,“মামা আমাকে আবার যেতে বলেছে। আসার সময় হঠাৎ বলল, তুমি দারুণ একটা ছেলে। তুমি কিন্তু আবার আমার বাড়িতে আসবেই আসবে। আমিও সঙ্গে সঙ্গে বলে ফেলেছিলাম, অবশ্যই আসব। পরেরবার সাকিব এলেই ওর সাথে আসব। কথাটা কী ভেবে বলেছিলাম তা আমি নিজেই ভেবে পাই না। কারণ আমি কখনও ফ্যামিলি ছাড়া কোথাও যেতে পছন্দ করি না।”
ইলোরার বুকটা ধক করে উঠল। পরেরবার সাকিবের সাথে যাবে মানে কী? ভাই তো তাদের ছাড়া একা কখনও মামাবাড়ি যায় না। তাহলে কি পরেরবার মামাবাড়ি গেলে এই ছেলেও সাথে যাবে? আবার একসাথে কিশোরগঞ্জ যেতে হবে? ইলোরা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেল। মুহুর্তে মনের পর্দায় ভেসে উঠল সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ভোরের কথা। এরেন খেয়াল করল ইলোরার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। কেমন যেন উসখুশ করছে। বুঝতে পারল হয়তো সেই ভোরের কথা মনে পড়েছে, তাই আবার অস্বস্তিতে পড়ে গেছে। তবু এরেন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন করল,“আর ইউ ওকে?”
ইলোরা মুখে কোনো উত্তর না দিয়ে উপর নিচে মাথা দোলালো। এরেন ছোটো একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ইলোরার অস্বস্তি বেড়ে গেছে। আর এই ছেলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব না বুঝতে পেরে তাড়াহুড়ো করে বলল,“আমি আসছি।”
কথাটা বলেই ইলোরা দ্রুত ঘুরে সামনের দিকে পা বাড়াল। এরেন হঠাৎ পেছন থেকে বলে উঠল,“পালাচ্ছ?”
ইলোরা থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল। সে তো সবসময়ই এমন পালিয়ে বেড়ায়। কখনও তো এরেন এমন করে বলেনি। আজ হঠাৎ কেন বলল? এরেন আবার বলে উঠল,“এভাবে পালিয়ে বেড়ালেই কি সবকিছু ভোলা সম্ভব?”
ইলোরা এবার বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল। ঘুরে দাঁড়িয়ে আড়চোখে এরেনের দিকে তাকাল। এরেন বুঝল ইলোরা অবাক হয়েছে। তাই আবার বলল,“কী হলো? বলো।”
ইলোরা শুকনো একটা ঢোক গিলে কাঁপা গলায় বলল,“কী বলব?”
“পালাও কেন আমার থেকে?”
ইলোরা এই প্রশ্নের জবাব দিলো না। মাথা নিচু করে রইল। এই প্রশ্ন আবার জিজ্ঞেস করা লাগে না-কি? সামনে দাঁড়ালেই অস্বস্তি হয় এটা কি বুঝতে পারে না? এরেন কিছুক্ষণ নীরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ইলোরার মুখের দিকে। তারপর হঠাৎ শান্ত স্বরে বলল,“তাকাও আমার দিকে।”
ইলোরা চমকে উঠল। সে পারবে না এরেনের চোখের দিকে তাকাতে। সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেই অস্বস্তি লাগছে আর চোখের দিকে তাকালে তো অজ্ঞানই হয়ে যাবে। ইলোরা মাথা নিচু করেই দুহাত কচলাতে শুরু করল। এরেন আবার বলল,“তাকাও।”
ইলোরা আবার ঢোক গিলল। ভয়ে ভয়ে মুখ তুলে এরেনের দিকে তাকাতেই ওর চোখে চোখ পড়ে গেল। ইলোরার হার্টবিট বেড়ে গেল। ছেলেটা কেমন শান্ত চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে! এরেনের দৃষ্টির সামনে বেশিক্ষণ নিজের দৃষ্টিকে টিকিয়ে রাখতে পারল না ইলোরা। দ্রুত চোখ নামিয়ে নিল। এরেন বলল,“আসামির মতো এভাবে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছো কেন? সবাই ভাববে তুমি কোনো অপরাধ করে আমার কাছে বকা শুনেছ, তাই এভাবে দাঁড়িয়ে আছো।”
ইলোরা দ্রুত মাথা উঁচু করে অন্যদিকে তাকিয়ে রইল। এরেন মুচকি হাসল। হাসিমুখেই বলল,“তুমি কিন্তু আমার একটা কথারও উত্তর দাওনি।”
ইলোরা তবু চুপ। এরেনও কিছুক্ষণ চুপ থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে প্রশ্ন করল,“কিচ্ছু বলার নেই তোমার?”
ইলোরা জিব দিয়ে শুকনো ঠোঁটটা ভিজিয়ে কোনোমতে বলল,“আমি ক্লাসে যাব।”
এরেন হতাশ হয়ে বলল,“আবার এড়িয়ে যাচ্ছ? আচ্ছা? মানুষটা এড়িয়ে গেলেই কি সম্পর্কটা এড়ানো সম্ভব কোনোদিন?”
ইলোরা যেন এবার অবাকের উচ্চস্তরে পৌঁছে গেছে।এরেন এমন কিছু বলবে তা তার ধারণার বাইরে ছিল। এরেনের এই কথার মানে কী? সেও তাহলে এই ভিত্তিহীন সম্পর্কটার কথা ভাবে? নিশ্চয়ই ভাবে। ভাবে বলেই তো এমন প্রশ্ন করেছে। সে তো ভেবেছিল এরেন ওসব কিছু অনেক আগেই ভুলে গেছে। সে একাই মনে রেখেছে। এখন তো মনে হচ্ছে এরেনও কিছু ভুলতে পারেনি। তার মানে এতদিন যেচে কথা বলতে চাইত সম্পর্কের টানে? অথচ সে নিজের অস্বস্তি কাটাতে পালিয়ে বেড়িয়েছে সবসময়। আচ্ছা এরেন কেন সম্পর্কের কথা টানছে? সেও কি তার মতোই সম্পর্কটাকে সুযোগ দেয়ার কথা ভাবে? ভাবলে এতদিন বলেনি কেন? বলবেই কী করে? সে তো সবসময় নানান অজুহাতে পালিয়েছে। হয়তো এরেন বলতে চেয়েছিল কিন্তু সে-ই সুযোগ দেয়নি। আবার এমনও তো হতে পারে এরেন তাকে ছেড়ে দেয়ার কথা বলবে। এতদিন বলার সুযোগ পায়নি বা অস্বস্তি লেগেছে তাই বলতে পারেনি। এখন হয়তো অস্বস্তি কাটিয়ে ছেড়ে দেয়ার কথাটাই বলতে চাইছে। এরেন যদি সত্যিই ছেড়ে দেয়ার কথা বলে তাহলে তো আজীবন এই সম্পর্কটা একটা লুকানো সত্যি হয়ে থাকবে। প্রতিনিয়ত সেই লুকানো সত্যি তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাবে। না কোনোদিন কাউকে মুখ ফুটে বলতে পারবে আর না মেনে নিতে পারবে। সবেমাত্র ইলোরা এরেনকে নিয়ে আর তাদের মধ্যকার সম্পর্কটা নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবতে শুরু করেছে। আর এখনই বিচ্ছেদ এসে সব ওলট-পালট করে দিবে? এমন বিচ্ছেদের থেকে তো তাহলে ভিত্তিহীন সম্পর্কটাই শ্রেয়। এরেন কি একবার তার মতো সিরিয়াস হয়ে ভাবতে পারে না? ইলোরা আর ভাবতে পারছে না। মাথার মধ্যে হঠাৎ চক্কর দিয়ে উঠল। আশেপাশের সবকিছু আবছা দেখাচ্ছে। কিছুতেই সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। ইলোরা দুহাতে কপাল চেপে ধরে চোখ বন্ধ করল। এরেন চমকে উঠল। হন্তদন্ত হয়ে বলল,“কী হয়েছে? ঠিক আছো তুমি?”
বলতে বলতে এরেন ইলোরাকে ধরে দাঁড় করিয়ে রাখার জন্য হাত বাড়াতেই ইলোরা বাঁধা দিয়ে মৃদু কন্ঠে বলল,“আমি ঠিক আছি। সমস্যা নেই।”
এরেন উত্তেজিত হয়ে বলল,“কী ঠিক আছো? মাথা চেপে ধরে রেখেছ। নিশ্চয়ই মাথা ধরেছে।”
ইলোরা কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিল। তারপর হঠাৎ চোখ খুলে বলল,“চিন্তা করবেন না। আমি একদম ঠিক আছি। ক্লাসে যেতে হবে, আমি আসছি।”
ইলোরা আর এক মুহূর্তও দাঁড়াল না। টলমলে পায়ে যত দ্রুত সম্ভব সেখান থেকে চলে গেল। এরেন থম মেরে আহত চোখে ইলোরার চলে যাওয়া দেখল। ইলোরা চোখের আড়াল হতেই ভাবল, মেয়েটা এত দুর্বল কেন? ওকে দেখলেই তো বুঝা যায় ও এই সম্পর্কটাকে নিয়ে ভাবে। তাহলে কী ভাবে? একটা সুযোগ দেয়ার কথা কি ভাবে? এই ব্যাপারটা নিয়ে ওর সাথে ঠান্ডা মাথায় আলোচনা করা দরকার। কিন্তু ও যদি এভাবে পালিয়ে বেড়ায় তাহলে কীভাবে সব ঠিক হবে? মেয়েটা যে তখন ওভাবে মাথা চেপে ধরেছিল দেখেই বুঝা গেছে প্রচুর মাথা ধরেছে। যদি বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে? এরেন জোরে শ্বাস নিয়ে মাথাটা হালকা ঝাড়া দিল। এত চিন্তা আর ভালো লাগছে না তার।
•
আড্ডার মধ্যে মুখ গোমড়া করে বসে আছে তাহসিন। অন্তর সন্দিহান দৃষ্টিতে নিরীক্ষণ করে বলল,“কী মামা? একদিন না দেখতে পাইরা দেবদাস হইয়া গেলা?”
তাহসিন রাগত স্বরে বলল,“ওই ব্যাটা, দেবদাসের কী দেখলি?”
নাদিয়া গোমড়া মুখে বলল,“তাইলে মুখটা ওমন পেঁচার মতো কইরা রাখছোস ক্যান?”
টুম্পা হেসে বলল,“আহারে! আমাদের ডালিয়া যে কবে বুঝবে?”
তাহসিন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,“জানি না।”
অরিশা বিদ্রুপ করে বলে উঠল,“কে কার কথা বলে? তুই তো দুই বছরেও বুঝলি না টুম্পা। আর ডালিয়ার ব্যাপার তো মাত্র কয়েকদিনের।”
কথাটা শুনেই টুম্পা হুট করে রেগে গেল। রাগত স্বরে বলল,“সবকিছুর মধ্যে আমাকে না টানলে কি তোরা শান্তি পাস না? একপাক্ষিক ফিলিংস কোনো কাজে আসে না। যার প্রতি আমার কোনো ফিলিংই নেই তাকে বুঝে কী করব আমি?”
অরিশা আবার বলল,“ফিলিংস আসবে কোত্থেকে? তুই কোনোদিনও ওকে নিয়ে সিরিয়াসলি ভেবে দেখেছিস?”
টুম্পা বিরক্ত হয়ে বলল,“আশ্চর্য! ওকে নিয়ে কী ভাববো আমি? আমি তো বলেই দিয়েছি ওর সাথে জাস্ট ফ্রেন্ড ছাড়া অন্য কোনো রিলেশন পসিবল না।”
নাদিয়া বলল,“ইম্পসিবলও না। মন থেকে একবার চেষ্টা করলেই পসিবল।”
অন্তর তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল,“কী নিয়ে পড়লি বল তো? কোথা থেকে কোথায় চলে গেলি! যে বোঝার সে এক কথায় বোঝে। আর যে নিজেই বুঝতে চায় না তাকে সারা দিনরাত এক করে বুঝালেও বুঝবে না। এইসব নিয়ে তোরা ঝগড়া বাঁধাইস না প্লিজ।”
তাহসিন দুঃখী দুঃখী গলায় বলল,“আমি এখানে দুঃখে বাঁচি না আর তোরা ঝগড়া করস?”
ইলোরা তাহসিনকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল,“কাঁদিস না ভাই। ও তো এমনিতেই খুব লাজুক। এখন কোনো রেসপন্স নাই তো কী হয়েছে? প্রপোজ করার পর হয়তো রেসপন্স করতেও পারে। কবে প্রপোজ করবি তা বল?”
তাহসিনের কপালে চিন্তার রেখা ফুটে উঠল। কবে প্রপোজ করবে তা সে নিজেও জানে না। চিন্তিত কন্ঠে বলল,“করব একদিন সুযোগ বুঝে।”
নাদিয়া অসহায় দৃষ্টিতে তাহসিনের দিকে তাকিয়ে রইল। চোখ দুটো জ্বলছে। হয়তো কান্না পাচ্ছে। কিন্তু সবার সামনে বোকার মতো কান্না করা যাবে না। যে ভাগ্যে নেই তার জন্য হাজার কাঁদলেও তাকে কোনোদিনও পাওয়া যাবে না। কেমন যেন কষ্ট লাগছে তার। কষ্টটাকে মুচকি হাসির নিচে ধামাচাপা দিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল নাদিয়া। মুনা দাঁত বের করে হেসে বলল,“প্রপোজ করলে তাড়াতাড়ি করিস তাহসিন। নইলে তোর আগে অন্য কেউ নিয়ে উড়াল দিতে পারে।”
অন্তর হঠাৎ কিছুটা জোরে বলে উঠল,“মুলা রে, তোর আফু ষাঁড় আইতাছে।”
মুনা কিছুটা চমকে উঠল। সামনে তাকাতেই দেখল আফসার স্যার এদিকেই আসছে। মুহুর্তে মুনার মুখটা চুপসে গেল। মাথার মধ্যে রাগটা দপ করে জ্বলে উঠল। কিন্তু এই মুহূর্তে রাগকে গুরুত্ব দেয়ার সময় নেই। এই লোক এখানে এসেই আবার তার হাসি নিয়ে খোঁটা দিবে। মুনা দ্রুত ঘুরে দাঁড়িয়ে দিক-বিদিক ভুলে উল্টো দিকে হাঁটা দিলো। সবাই মিলে পেছন ডেকেও তাকে থামাতে পারল না। মুনার কান্ড দেখে সবার দমফাটা হাসি আসছে। কিন্তু স্যার ততক্ষণে তাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। সবাই হাসিটাকে চেপে রেখে স্যারের সাথে কুশল বিনিময় করল। স্যার মুচকি হেসে বললেন,“তোমাদের লাফিং কুইন আমাকে দেখেই পালাল মনে হচ্ছে?”
সবাই চুপ হয়ে গেল। স্যারের এমন প্রশ্নের জবাবে কী বলবে খুঁজে পেল না। স্যার এবার শব্দ করে হেসে বললেন,“থাক, উত্তর দিতে হবে না। আমি বুঝতে পেরেছি।”
স্যার কিছুক্ষণ সবার সাথে গল্প করে চলে গেলেন। স্যার চলে যেতেই সবাই শব্দ করে হেসে উঠল। টুম্পা বলল,“মুনা গেল কই রে?”
ইলোরা এদিক-ওদিক তাকিয়ে বলল,“আছে হয়তো আশেপাশেই কোথাও।”
কিছুক্ষণের মধ্যেই কোথা থেকে যেন মুনা এসে উপস্থিত হলো। মুনাকে দেখে আবার সবাই আরেক দফা হাসল। মুনা রাগে গজগজ করে চুপচাপ সবার হাসি দেখল।
চলবে……………..………🌸