সুপ্ত_প্রেমাসুখ পর্ব-১৩

0
880

#সুপ্ত_প্রেমাসুখ
#ইলোরা_জাহান_ঊর্মি
#পর্বঃ১৩

ভার্সিটিতে এসে হতে মুনার খুশি দেখে রীতিমতো সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। গতকাল না-কি পাত্রপক্ষ ওকে দেখতে গিয়েছিল। অনেকটা হঠাৎ করেই ব্যাপারটা ঘটেছে। মুনা কিছুই জানত না। গতকাল বিকেলে তার বাবা হঠাৎ জানায় যে সন্ধ্যায় তাকে দেখতে আসবে। মুনা অনেক অবাক হলেও ব্যাপারটা তার কাছে তেমন কোনো বিষয় মনে হয়নি। সন্ধ্যায় তাকে দেখতে এসেছিল। পাত্র আসেনি, কী জরুরী কাজে না-কি আটকে পড়েছিল। পাত্রের বাবা-মা, খালা-খালু, বড়ো ভাবি আর ছোটো বোন এসেছিল। মুনা কোনোরকম সঙ্কোচ না করে সেজেগুজে তাদের সামনে গিয়েছিল। এমনকি তাদের সব প্রশ্নের ফটাফট উত্তর দিয়েছিল। পাত্রপক্ষ মুনাকে দেখে বেশ পছন্দ করেছেন। ছেলের জন্য এমন সুন্দরী, চঞ্চল একটা মেয়েই না-কি তারা খুঁজছিলেন। পাত্রের বাবা-মায়ের আচরণ আর কথা বলার ধরণ দেখে মুনার খুব মনে ধরেছে। বুঝা গিয়েছিল এদের পুরো পরিবার বেশ শিক্ষিত আর মনও সুন্দর। এমন শ্বশুর-শ্বাশুড়ি থাকা একটা মেয়ের জন্য ভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু মুনা সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছিল যখন পাত্রের মা তার হাতে একটা ডায়মন্ডের রিং পড়িয়ে দিয়েছিল। সে হা করে তার বাবার দিকে তাকিয়ে ছিল। রিং পড়িয়েছে মানে বিয়ে কনফার্ম। কিন্তু পাত্রই তো দেখা হয়নি এখনও। পাত্র না দেখে বিয়ে কনফার্ম করার কোনো মানে হয়? এমনও তো হতে পারে পাত্র দেখলে কারোর পছন্দ হবে না। তখন? পরে মুনা তার মায়ের কাছে জানতে পেরেছিল পাত্র সম্পর্কে তার বাবা সব খোঁজ খবর নিয়েছেন। তিনি না-কি নিজে পাত্রের সাথে দেখা করে কথাও বলেছেন। বাবার ভাষ্যমতে মুনার জন্য এই ছেলেই পারফেক্ট। মুনা ছেলের ছবি দেখতে চেয়েছিল আর ছেলে সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল। তখন তার বাবা বলেছিল ছেলের সাথে দেখা করলেই সে সব জানতে পারবে। ছেলে না-কি দুদিন পর মুনার সাথে দেখা করবে। মুনা আর কোনো প্রশ্ন করেনি। বাবা যখন বলেছে এই ছেলে তার জন্য পারফেক্ট তখন অবশ্যই পারফেক্ট। বাবার পছন্দের উপর তার পুরোপুরি ভরসা আছে। হঠাৎ এভাবে বিয়ে ঠিক হয়ে গেলে মেয়েরা সাধারণত মোটামুটি ধরণের ডিপ্রেশনে চলে যায়। অথচ মুনা প্রচন্ড খুশি। ডিপ্রেশনের ‘ড’ ও তাকে স্পর্শ করতে সক্ষম হয়নি। এর মূল কারণ হচ্ছে মুনা অনেক আগে থেকেই নিজের বিয়ে নিয়ে অনেক এক্সাইটেড ছিল। বিয়ে, বর, শ্বশুরবাড়িকে ঘিরে তার অনেক স্বপ্ন আছে। স্বপ্নগুলো একটু একটু করে জমতে জমতে এখন বস্তা ভর্তি হয়ে গেছে। অলরেডি সেই স্বপ্নগুলো বস্তা থেকে মুক্তি পেয়ে পূরণ হতে চলেছে। এসব ভেবেই মুনা আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছে। আজ ভার্সিটিতে এসেই সবাইকে তার বিয়ের সংবাদ দেয়ার পর সবাই কিছুটা শক খেয়ে বসে আছে। হুট করে এভাবে বিয়ের সংবাদ শোনার কথা কেউ ভাবতেও পারেনি। তার থেকে বড়ো ব্যাপার হচ্ছে মুনা নিজের বিয়ের কথাটা কোনোরকম জড়তা ছাড়াই বেশ উৎফুল্ল হয়ে বলছে। মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে প্রচন্ড খুশি। হঠাৎ বিয়ে ঠিক হওয়ার পরেও কোনো মেয়ে নিজের বিয়ে নিয়ে এতটা এক্সাইটেড কী করে হতে পারে, ভেবেই মুনার বন্ধুমহল বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে সবার খুশি হওয়া উচিত জেনেও সবাই হা করে মুনার খুশি দেখছে। ইলোরা গালে হাত দিয়ে বলল,“তুই যে এত খুশি হয়ে বসে আছিস, যদি ছেলেকে দেখে তোর পছন্দ না হয়। তখন কী করবি?”

মুনা দৃঢ় কন্ঠে বলল,“বাবা যখন পছন্দ করেছে তখন আমারও পছন্দ হবে, হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর।”

নাদিয়া প্রশ্ন করল,“এতটা শিওর হচ্ছিস কীভাবে?”

মুনা হাসিমুখে উত্তর দিলো,“যেখানে আমার বাবা চোখ বন্ধ করে বলে দিতে পারে কোনটা আমার পছন্দ আর কোনটা অপছন্দ, সেখানে তার মেয়ের লাইফ পার্টনার বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই সে খুব সিরিয়াস ছিল।”

তাহসিন মাথা দুলিয়ে বলল,“তা ঠিক বলেছিস। আঙ্কেল নিশ্চয়ই পারফেক্ট কাউকেই পছন্দ করেছেন। কারণ এটা তার মেয়ের হোল লাইফের ব্যাপার।”

অন্তর বলল,“সবই বুঝলাম। কিন্তু নিজের বিয়া নিয়া এত্ত খুশি হইতে আইজ পর্যন্ত কোনো মাইয়ারে আমি দেখি নাই। মুলা রে, তোর নাম তো ইতিহাসের পাতায় লেখা উচিত।”

মুনা গদগদ কন্ঠে বলল,“কত্ত স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে, আমি খুশি হব না তো কে খুশি হবে?”

অরিশা ভ্রুকুটি করে জিজ্ঞেস করল,“ভার্সিটি লাইফ নিয়ে সবাই কত এক্সাইটেড থাকে। অথচ তুই ভর্তি হতে না হতেই বিয়ে ঠিক হয়ে গেল। তোর আফসোস লাগছে না মুনা?”

অন্তর হো হো করে হেসে উঠল। হাসতে হাসতে বলল,“জোকস অফ দ্যা ইয়ার! ও তো বিয়ার কথা শুইনাই রীতিমতো লাফাইতাছে। ওর কি না হইব আফসোস! জামাইর লাইগা মাইয়াডা পাগল হইয়া গেছে দেখতাছোস না?”

অন্তরের কথায় সবাই শব্দ করে হেসে উঠল। মুনা রেগেমেগে ঠাস করে অন্তরের মাথায় এক থাপ্পড় মারল। অন্তর ব্যথা পেয়ে মুখটা ছুঁচালো করে বলল,“হায় ঈশ্বর! কোন কপালপোড়ার গলায় যে এই মাইয়ারে ঝুলাই দিছো তুমি জানো। ওর এই বিশ কেজি ওজনের থাপ্পড় খাইতে খাইতে ওই পোলার কপাল ফাইট্টা চৌচির হইয়া যাইব। আমার তো ওই পোলার লাইগা অনেক মায়া লাগতাছে। আহারে! বেচারা শেষমেষ কি না এই গুন্ডিরে বিয়া করব! ভাবতেই কষ্টে বুকটা ফাইট্টা যাইতাছে আমার।”

অন্তরের দুঃখী দুঃখী মুখ দেখে আর ওর কথা শুনে একেকজনের হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ার মতো অবস্থা। মুনা রাগী চোখে সবার দিকে তাকিয়ে বলল,“বান্ধবীর বিয়ে ঠিক হয়েছে শুনে তোদের আনন্দ করার কথা। অথচ তোরা ফান করছিস?”

ডালিয়া হাসতে হাসতে বলল,“আমরা আর কী আনন্দ করব বল? বান্ধবী কি আমাদের জন্য একটুও আনন্দ বাকি রেখেছে? নিজেই তো একা সব আনন্দ করে বসে আছে।”

ইলোরা মজা করে বলল,“আহা, তোরা এত ফান করিস না প্লিজ। আমাদের মুনা কী আর এমন করেছে? শুধু জামাই পাওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। কত সাধনার পর একটা জামাই পাবে, ভাবা যায়!”

আবার শুরু হলো সবার পেটফাটা হাসি। মুনা গাল ফুলিয়ে সবার হাসি দেখল। অরিশা হাসি থামিয়ে বলল,“আচ্ছা এবার সবাই হাসি থামা। এমন একটা ব্যাপার ঘটে গেছে আর এই আনন্দে আমরা ট্রিট পাব না, এটা কি হয়?”

তাহসিন তাল মিলিয়ে বলল,“একদম ঠিক। মুনা, আজ তোর পক্ষ থেকে আমাদের সবাইকে ট্রিট দিবি।”

মুনা কপাল কুঁচকে বলল,“আমি তোদের জন্য টাকার বস্তা নিয়ে ভার্সিটিতে এসেছি না-কি? এত খাই খাই করস ক্যান? খেয়ে খেয়ে তো দিনদিন মোটু হয়ে যাচ্ছিস।”

নাদিয়া বলল,“এসব বললে তো চলবে না মুনা। ট্রিট দেয়া বাধ্যতামূলক। আফটার অল আমাদের ফ্রেন্ডদের মধ্যে তোরই আগে বিয়ে হচ্ছে।”

টুম্পা তাল মিলিয়ে বলল,“অবশ্যই। ট্রিট না দিলে বিয়ের দিন তোর জামাইকে কিডন্যাপ করব দেখিস। তারপর তোর বিয়ের সাধ মিটে যাবে।”

মুনা মাথায় হাত দিয়ে বলল,“সামান্য ট্রিটের জন্য আমার বিয়ে ভাঙার প্ল্যান করছিস? ও খোদা, এ কেমন ফ্রেন্ড আমার কপালে জুটল!”

ইলোরা দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,“ট্রু ফ্রেন্ড।”

মুনা মুখ ঝামটা দিয়ে বলল,“ট্রু না ছাই!”

অরিশা বলল,“ওসব ট্রু ফ্রু পারে বুঝা যাবে। এখন তাড়াতাড়ি ট্রিট দিবি চল।”

মুনা অরিশার দিকে তাকিয়ে বলল,“হ্যাঁ, তোদের ট্রিট দিব পথে বসার জন্য।”

অন্তর অবাক হবার ভান করে বলল,“বিয়ার আগেই এমন কিপ্টামি করতাছোস, বিয়ার পর তো কইবি তোদের একবেলা দাওয়াত কইরা খাওয়াইলে আমার জামাই ভিখারি হইয়া যাইব।”

তাহসিন অন্তরের কাঁধে হাত রেখে বলল,“একদম ঠিক কইছোস মামা। একদিকে বাপের টাকা অন্যদিকে জামাইর টাকা, তবু কেমন কিপ্টামি করতাছে এই মাইয়া! মুলা, ট্রিট না দিলে তোর সংসারে চার পাঁচটা সতিনের জ্বালা ভোগ করতে হইব, দেখিস।”

মুনা মুখ ভেঙিয়ে বলল,“শয়তানের দোয়া কবুল হয় না।”


সন্ধ্যা আটটা। মুনা পড়ার টেবিলে বসে আছে। সামনে বই খোলা অথচ সেদিকে তার ভ্রুক্ষেপ নেই। সে অন্যমনস্ক হয়ে নিজের বরের কথা ভাবছে। বরের ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত সে কিছুই জানে না। কৌতুহল বশত মায়ের কাছে নাম জানতে চেয়েছিল। মা বললেন ছেলের নাম দিহান। নামটা মুনার বেশ পছন্দ হয়েছে। হয়তো মানুষটাও নামের মতোই সুন্দর। মুনার আগ্রহ ক্রমশ বেড়ে চলেছে। মাথার মধ্যে শুধু একটা নামই ঘুরঘুর করছে,‘দিহান।’ পড়ায় কিছুতেই মন বসাতে পারছে না। তবে সে যে মনোযোগ দেয়ার বিশেষ চেষ্টা করছে তা-ও না। দিহান নামের মানুষটাকে নিয়ে ভাবতে ভালোই লাগছে। মানুষটাকে নিয়ে মনের মধ্যে নানান জল্পনা কল্পনা তৈরি হচ্ছে। ভাবতে ভাবতে মনের পর্দায় মানুষটার দারুণ একটা মুখাবয়বও তৈরি হয়েছে। মাঝে মাঝে মুনার ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসির রেখা ফুটে উঠছে। মুনার স্বর্গীয় ভাবনায় এক বালতি জল ঢেলে দিয়ে বিছানায় পড়ে থাকা ফোনটা বেপরোয়ার মতো বেজে উঠল। মুনা ভাবনায় ডুবে থাকায় ফোনের রিংটোনের শব্দ কানে যেতেই চমকে উঠল। এমন একটা সময়ে ফোনটা ডিস্টার্ব করায় মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। ফোনটা ধরতে ইচ্ছে হলো না তাই বসেই রইল। কিন্তু ফোনটা কেটে গিয়ে আবার বেজে উঠল। হয়তো বন্ধুরা কেউ কল করেছে ভেবে অনিচ্ছা সত্ত্বেও চেয়ার ছেড়ে উঠে বিছানার কাছে এগিয়ে গেল। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল আননোন নাম্বার। কপাল হালকা কুঁচকে ভাবল কে হতে পারে। এমনিতেই মেজাজটা বিগড়ে গেছে তার মধ্যে আবার আননোন নাম্বার দেখে রাগটা আরও একধাপ বেড়ে গেল। ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরল, কিন্তু কোনো কথা বলল না। এক মিনিট পার হয়ে গেল অথচ ফোনের ওপাশ থেকে টু শব্দটি পর্যন্ত শোনা গেল না। মুনা কিছুটা অবাক হলো। তারপর নিজেই বলে উঠল,“হ্যালো।”

ওপাশ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া গেল না। পরপর কয়েকবার মুনা হ্যালো হ্যালো করল। তবু ওপাশে শুধুই নীরবতা। মুনা চটে গিয়ে বলল,“আশ্চর্য! বোবা না-কি?”

কথাটা বলে মুনা কান থেকে ফোন নামিয়ে কেটে দেয়ার প্রস্তুতি নিতেই হঠাৎ ফোনে একটা পুরুষালি কন্ঠ ভেসে এল,“আমার মনে হয় বোবারা কথা বলতে পারবে না জেনেও কোনো সুন্দরী মেয়েকে কল করবে না।”

মুনা এবার হা করে ফোনের দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর ফোনটা আবার কানের কাছে ধরে‌ কিছুটা গম্ভীরভাবে প্রশ্ন করল,“কে আপনি?”

ওপাশ থেকে উত্তর এল,“কেউ একজন।”

“কেউ একজন সেটা তো আমিও জানি। আপনার পরিচয় জানতে চেয়েছি‌।”

“ওসব দেখা হলে বলা যাবে। ফোনে বলতে ইচ্ছে করছে না।”

মুনার বিস্ময় এবার আরও বাড়ল। সে আবার বলল,“আপনি বোধ হয় ভুল নাম্বারে কল করেছেন। চেক করে দেখুন।”

লোকটা দৃঢ়ভাবে উত্তর দিলো,“আমি ঠিক মানুষকেই কল করেছি।”

“আজব! আচ্ছা আপনি কাকে কল করেছেন?”

“স্পেশাল একজনকে। মানে যার কাছে কল করেছি সে আমার কাছে স্পেশাল।”

মুনা এবার চটে গেল। ধমকে উঠে বলল,“ফাজলামি করার আর জায়গা পান না? রং নাম্বারে কল করে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলার চেষ্টা করছেন। ফোন রাখুন, ফালতু লোক কোথাকার।”

ওপাশের লোকটা সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিলো,“লাইক সিরিয়াসলি! তোমার মনে হয় তোমার উডবি হাসবেন্ড একটা ফালতু লোক?”

মুনা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। রাগগুলো সব ফুস করে উড়ে গিয়ে মুহূর্তে মুখটা চুপসে গেল। গলা দিয়ে কোনো কথাই বের হচ্ছে না। শব্দগুলো যেন গলা পর্যন্ত এসেই আটকে যাচ্ছে। কোনোরকমে শুধু বলল,“আ-প-নি কে?”

ওপাশ থেকে হাসির শব্দ শোনা গেল। মনে হচ্ছে লোকটা বেশ মজা পেয়েছে। হাসি থামিয়ে লোকটা বলল,“বাহ্! তোমার তো খুব রাগ আছে দেখছি। তবে রাগটা ঠিকই ছিল। অপরিচিত মানুষ ভেবেই হয়তো রাগটা মাথায় চেপেছে। আই লাইক ইট। তুমি কি এখনও আমাকে চিনতে পারোনি?”

মুনা কোনোমতে বলল,“বোধ হয় চিনেছি।”

“বোধ হয় চিনেছো? শিওর না। আচ্ছা তাহলে বলো তো আমি কে?”

মুনা এবার থতমত খেয়ে গেল। তার ধারণা দিহান ফোন করেছে। এমনিতেই সে বেশ অবাক হয়ে বসে আছে তারমধ্যে এই প্রশ্ন শুনে তার গলা শুকিয়ে গেছে। কী উত্তর দিবে খুঁজে পাচ্ছে না। মুনা চুপচাপ নখ কামড়াতে শুরু করল। ওপাশ থেকে লোকটা আবার বলল,“তুমি হয়তো লজ্জা পাচ্ছ। যাক আমিই বলছি। আমি দিহান। তোমার উডবি হাসবেন্ড। এবার শিওর হয়েছো?”

মুনা ছোট একটা শব্দ করল,“হুম।”

“তুমি কি নার্ভাস হয়ে পড়েছ?”

মুনা কী বলবে? সে তো সত্যিই নার্ভাস হয়ে পড়েছে। লোকটা যে এভাবে হঠাৎ করে ফোন করবে তা তো সে ভাবতেই পারেনি। মুনার উত্তর না পেয়ে দিহান নামের লোকটা হেসে বলল,“বেশি নার্ভাস হয়ো না। আমি এখনই রেখে দেবো। শোনো, যে জন্য ফোন করেছি, কাল তো আমাদের মিট করার কথা। মনে আছে?”

“হুম।”

“তুমি তো আমাকে চেনই না। তাহলে মিট করতে গিয়ে আমাকে খুঁজে পাবে কীভাবে?”

“তাইতো।”

“তোমার বাবা কি বলেছেন আমরা কোন রেস্টুরেন্টে মিট করব? ফোন নাম্বার নেয়ার সময় আমি তার কাছে বলে দিয়েছিলাম।”

“বলেছে।”

“দুপুর একটায় মিট করব। এর আগে আমি ফ্রি হতে পারব না। আমার গায়ে অফ-হোয়াইট কালার শার্ট থাকবে। তোমার আগেই আমি রেস্টুরেন্টে পৌঁছে যাব। আমি তোমাকে দেখলেই চিনব। তাই এটা নিয়ে চিন্তা কোরো না। ওকে?”

“হুম।”

দিহান দুষ্টু হেসে বলল,“ঠিক সময়ে চলে এসো। বেশি লেট করলে তারজন্য কিন্তু পরে পানিশমেন্ট দেয়া হবে। রাখছি, বাই।”

মুনাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই দিহান ফোন কেটে দিলো। মুনা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে রইল। এখন পর্যন্ত বিয়ের তারিখও ঠিক হলো না অথচ বলছে পরে পানিশমেন্ট দেয়া হবে! লোকটা কি নারী নির্যাতন করবে না-কি? পরক্ষণেই মুনা খেয়াল করল এতদিন সে এই লোকটাকে নিয়ে কত কিছু ভেবেছে, কত এক্সাইটেড ছিল এই লোকটাকে নিয়ে। অথচ আজ লোকটার কন্ঠ শুনেই সে বোবা বনে চলে গেল! শুধু কন্ঠ শুনেই যেহেতু এই অবস্থা হয়েছে, সামনে গেলে কী হবে? মুহূর্তে মুনার হার্ট লাফাতে শুরু করল। আগামীকাল দুপুর একটার কথা ভাবতেই সে শুকনো একটা ঢোক গিলল। আচ্ছা? লোকটার সামনে গিয়ে অতিরিক্ত নার্ভাস হয়ে যদি সে সেন্সলেস হয়ে পড়ে। তাহলে কী হবে? লোকটা কী ভাববে তাকে? মুনা মনে মনে আল্লাহকে ডাকতে শুরু করল। আল্লাহই জানে কী হবে কাল।


এক্সামের আজ দুদিন হয়ে গেল। এই দুদিনে একবারও ইলোরা আর এরেনের দেখা হয়নি। এরেনের খুব ইচ্ছে করে ইলোরাকে একবার দেখতে। মনটা কেমন যেন উস-খুস করতে থাকে। দেখার ইচ্ছে প্রবল হলেই ফোনের গ্যালারিতে থাকা ইলোরার ছবিগুলো বের করে মুগ্ধ দৃষ্টিতে একধ্যানে তাকিয়ে থাকে। এতে কী আর মন ভরে? ওদিকে এরেনের সামনে না পড়ায় ইলোরা ভাবে, কয়েকদিনের জন্য অন্তত সে অস্বস্তি থেকে মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু পরক্ষণেই কেন জানি মনটা খারাপ হয়ে যায়। ভার্সিটিতে গেলে খুঁজে পাবে না জেনেও না চাইতেই চোখ দুটো শুধু একটা মুখের সন্ধান করে বেড়ায়। দুটো মানুষের মনই সবসময় একে অপরের সন্ধান করে বেড়ায়। কিন্তু আফসোস, কেউ কারোর মনের খবর জানে না। আদৌ কোনোদিন জানতে পারবে কি না কে জানে? একবার যদি একজন আরেকজনের মনের খবর জেনে যেত, তাহলে হয়তো সব অস্বস্তি, ভুল ধারণা কেটে গিয়ে সম্পর্কটা সুন্দর একটা রূপ ধারণ করত।

চলবে…………………..🌸

(ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here