#সুপ্ত_প্রেমাসুখ
#ইলোরা_জাহান_ঊর্মি
#পর্বঃ২৩
সকাল হতে না হতেই বিয়ে বাড়ির তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। বাড়ি ভর্তি আত্মীয়-স্বজনের ছড়াছড়ি। গতকাল রাতে মুনা এক ফোঁটাও ঘুমাতে পারেনি। ভেবেছিল নিজের বিয়েতে খুব হাসিখুশি থাকবে। অথচ না চাইতেই কেন জানি বারবার কান্না পেয়ে যায়। বাবা-মাকে ছেড়ে চলে যেতে হবে ভাবলেই মুনা ডুকরে কেঁদে ওঠে। গতকাল রাতে নাহিদা আহমেদ অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে মুনার কান্না থামিয়ে তার সাথেই ঘুমিয়েছিলেন। ভোরবেলা তাড়াতাড়ি উঠে তিনি তার কাজে লেগে পড়েছেন। মুনা ভোর হওয়ার কিছুক্ষণ আগে ঘুমিয়েছে তাই ওকে ডাকেননি। মুনাও শান্তিতে কিছুক্ষণ ঘুমাবে ভেবেছিল। অথচ তার শান্তিকে অশান্তিতে পরিণত করল একদল বাচ্চাকাচ্চা। ওদের চিৎকার, চেঁচামেচি কানে যেতেই মুনার ঘুম ছুটে গেল। বিরক্ত হয়ে উঠে বসে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল সকাল সাতটা বাজে। শিয়রের পাশে পড়ে থাকা ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল আফসারের মেসেজ। মেসেজ ওপেন করে দেখল সেখানে লেখা,“গুড মর্নিং মিসেস। আজ সারাদিন তোমার সাথে কথা বলার সুযোগ পাব না, তাই মেসেজ করলাম। অবশ্য আজ থেকে তো সামনে বসে তোমার বকবক শুনব। তখন দেখব তোমার লজ্জা কোথায় রাখো। শোনো, একদম কান্নাকাটি করবে না। ওকে? গিয়ে যেন তোমার বিখ্যাত হাসিটা মুখে দেখি। হ্যাভ আ গুড ডে। বাই।”
মেসেজটা পড়ে মুনা মুচকি হাসল। তারপর অরিশাকে কল করল। কয়েকবার রিং হওয়ার পর অরিশা ফোন রিসিভ করে ঘুমঘুম কন্ঠে বলল,“হ্যালো। কী বইন? সকাল সকাল জ্বালাস ক্যান?”
মুনা হাই তুলে বলল,“আমার ঘুম ভেঙে গেছে কতগুলো পিচ্চি ব্যাটেলিয়নের চিল্লাচিল্লিতে। আর ঘুমানো লাগবে না। তাড়াতাড়ি ওঠ।”
“তোর ঘুম ভাঙছে তাই বলে তুই আমার ঘুমও ভেঙে ফেললি!”
“হুঁ। আমি সারারাত ঘুমাতে পারিনি।”
“এখনও বিয়েই হলো না, অথচ কাল থেকেই রাত জাগার অভ্যাস করেছিস না কি?”
মুনা অবাক হয়ে বলল,“কী?”
“আরে মুলা, কোন দুঃখে তুই কাল ঘুমাসনি? তোর কপালে তো আজকেও ঘুম নাই।”
“কেন?”
“আজকে থেকে বিয়াইত্তা হইয়া যাইবা আর এখন আইছো ঢং করতে? আজকে তো তোমার বাসর। আর কিছু শুনতে চাও? কমু?”
মুনা চোখ দুটো রসগোল্লার মতো করে শক্ত গলায় বলল,“অশ্লীল মন তোর। ফোন রাখ।”
অরিশা দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,“ফোন তো আমি করিনি। তুই করছোস। এখন বল কেন ফোন করলি।”
“তোরা কখন আসবি?”
“দুপুরবেলা, খাওয়ার সময়।”
“মানে কী?”
“মানে আবার কী? দাওয়াত খেতে যাব।”
“আমাকে সাজাবে কে? আমি তো বলেছি পার্লারে সাজব না। তোরা সাজাবি।”
“পারমু না। কী দিবি সাজাইলে?”
“দেবর থাকলে দিয়া দিতাম। তা তো নাই। এক কাজ করিস, আমার জামাইর ভাগ নিস।”
“মাফ কর বইন। লাগব না। আমরা দশটার দিকে আসব।”
“দেরি করবি না কিন্তু। রাখছি।”
•
জারিন এরেনের রুমে ঢুকে দেখল এরেন এখনও পড়ে-পড়ে ঘুমাচ্ছে। বিছানার কাছে গিয়ে কয়েকবার ডাকল সে। এরেনের কানে তার ডাক পৌঁছল না। জারিন এবার এরেনকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে ডাকল, তা-ও এরেন জাগলো না। জারিন এবার টি-টেবিল থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে কিছুটা পানি হাতে নিয়ে এরেনের মুখে ছিটিয়ে দিলো। এরেন চোখমুখ কুঁচকে ফেলল। তারপর চোখ পিটপিট করে তাকাল। আড়মোড়া ভেঙে রাগত স্বরে বলল,“ঐ বুড়ি, সকাল-সকাল আমার ঘুমের চৌদ্দটা বাজাইতে আইছোস ক্যান?”
জারিন হাতের গ্লাসটা পুনরায় টেবিলে রেখে বলল,“সকাল-সকাল! নয়টা দশ বেজে গেছে ভাইয়া। তুই ভার্সিটি যাবি না?”
এরেন এক লাফ দিয়ে উঠে বসে অবাক হয়ে বলল,“এত বেলা হয়ে গেছে!”
জারিন ভ্রুকুটি করে বলল,“জি হ্যাঁ। ভার্সিটিতে যেতে হবে জেনেও তুই পড়ে-পড়ে ঘুমাচ্ছিলি? কাল রাতে কি ঘামাসনি না কি?”
“হুম। দেরি করে ঘুমিয়েছি।”
জারিন এরেনের পাশে বসে হতাশ কন্ঠে বলল,“হায়রে বিরহ!”
এরেন নিজের চুলে হাত বুলাতে-বুলাতে প্রশ্ন করল,“কিসের বিরহ?”
“বউয়ের বিরহ। কাল রাতে আবার বউকে দেখে এসে সারারাত বিরহে কাতর হয়ে কাটিয়েছিস। জানি তো আমি।”
এরেন জারিনের মাথায় চাটি মেরে বলল,“তোর মুন্ডু জানিস। যা ভাগ।”
জারিন বিছানা থেকে উঠে গাল ফুলিয়ে বলল,“ঘুম থেকে উঠেই আমাকে মারলি? দাঁড়া, বলছি আমি আম্মীর কাছে। আম্মী, আম্মী…………।”
জারিন মাকে ডাকতে ডাকতে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। এরেনের হঠাৎ মনে পড়ল আজ ইলোরার বান্ধবী মুনার বিয়ে। ও তো তাহলে ভার্সিটিতে যাবে না। তার মানে আজ ওর সাথে একবারও দেখা হবে না। ধুর, সকাল-সকাল কোমল মনটাই ভেঙে গেল। ফোনটা হাতে নিয়ে গ্যালারি ঘেঁটে ইলোরার সেই ছবিটা বের করল এরেন। কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে নিচের ঠোঁট কামড়ে মৃদু হেসে বিড়বিড় করে বলল,“সত্যি-সত্যিই বিরহে পড়লাম না কি?”
কথাটা বলেই এরেন আপন মনে শব্দ করে হেসে উঠল। তারপর ফোনটা রেখে ওয়াশরুমে চলে গেল।
•
সকাল দশটা পনেরো বাজতেই সবাই মুনার বাসায় উপস্থিত হলো। মুনা গাল ফুলিয়ে বলল,“পনেরো মিনিট লেট।”
নাদিয়া বলল,“কী করব বল? আমরা প্রচুর দুঃখে আছি।”
মুনা প্রশ্ন করল,“কিসের দুঃখ?”
টুম্পা দুঃখী-দুঃখী মুখ করে বলল,“মারাত্মক দুঃখ! বুঝলি মুনা? কত আশা ছিল বান্ধবীর বাসর ঘরে সিসি ক্যামেরা লাগাব। অথচ তোর বাসর হবে স্যারের বাড়িতে। ওখানে গিয়ে তো আর লাগানো সম্ভব না। তাই আমরা দারুণভাবে শোকাহত।”
মুনার মুখটা হা হয়ে গেল। সে অবাক হয়ে সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে তারপর নিজের চোখ-মুখ কুঁচকে বলল,“শয়তানের দল। তোদের আর কোনো কাজ নেই খেয়ে-দেয়ে? কথায়-কথায় শুধু বাসর, বাসর আর বাসর। ডিসগাস্টিং!”
ইলোরা মুখ বাঁকিয়ে বলল,“ডিসগাস্টিং না ছাই। অতকিছু বুঝি না, যেহেতু আমাদের ক্যামেরা লাগানোর প্ল্যানটা ধুলায় মিশে গেল, সেহেতু আমাদেরকে তুই নিজের মুখে বাসরের গল্প বলবি ব্যাস।”
মুনা কপাল চাপড়ে বলল,“হায় খোদা! এ কাদের ফ্রেন্ড বানালাম আমি! লজ্জা-শরমের মাথা খাইছে এরা সবকটা।”
ডালিয়া হেসে বলল,“ফ্রেন্ডরাই তো শুনবে মুনা। অন্য কেউ তো না। তুই ভালো মেয়ের মতো বলে দিস। আসলে কী জানিস? তোর বাসর নিয়ে সবার ইন্টারেস্টের সবচেয়ে বড়ো কারণ হচ্ছে তোর বর। আমাদের স্যার আর বান্ধবীর বাসর বলে কথা! একটু ইন্টারেস্ট তো থাকবেই।”
মুনা হাতের কাছের বালিশটা ডালিয়ার দিকে ছুঁড়ে মেরে বলল,“নিকুচি করি বাসরের। পাগলা কুকুর কামড়াইছে আমারে? আমি এই বিয়েটা করছি বাবার জন্য, আর ঐ লোকটার মায়ের জন্য। ঐ পাজি লোকটার ধারেকাছেও যাব না আমি।”
অরিশা সরু চোখে তাকিয়ে বলল,“আজ রাতে এই বড়ো-বড়ো ভাষণ কই থাকে দেখা যাবে।”
মুনা বিছানা থেকে নেমে দাঁড়িয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে রাগত স্বরে বলল,“থামবি তোরা? এই টপিক অফ না করলে আমি তোদের ধারেকাছেও আসব না আর।”
নাদিয়া মুনার হাত ধরে টেনে বিছানায় বসিয়ে পিঠে হাত বুলিয়ে বলল,“কুল ডাউন মুনা, কুল ডাউন। আমরা তো সত্যি কথাই বলছিলাম। এখন তো রেগে যাচ্ছিস, অথচ দুদিন পর তুই নিজেই আমাদের বলবি তোদের কথাই ঠিক ছিল রে।”
মুনা চোখ পাকিয়ে নাদিয়ার দিকে তাকাতেই ইলোরা বলল,“আচ্ছা যা, এই টপিক অফ। এখন তোর এই পেঁচার মতো মুখটা ঠিক কর বইন।”
টুম্পা প্রশ্ন করল,“এই মুনা, তুই কিছু খেয়েছিস সকালে?”
মুনা উপর-নিচে মাথা দুলিয়ে বলল,“তোরা আসার আগেই মা খাইয়ে দিয়ে গেছে।”
ইলোরা ফোনে টাইম দেখে বলল,“অন্তু আর তাহসিন কখন আসবে?”
অরিশা বলল,“বারোটার দিকে আসবে বলেছে।”
ওদের সবার কথার মাঝেই মাহবুব শিকদার বাইরে থেকে দরজায় নক করে বললেন,“মুনা, দরজাটা খোল তো মা।”
ডালিয়া উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। মাহবুব শিকদার রুমে ঢুকে হাসিমুখে বললেন,“মা, তোমরা ওকে একটু তাড়াতাড়ি রেডি করিয়ে দিও। ছেলেপক্ষ আসতে বেশি দেরি করবে না।”
মাহবুব শিকদারের কথায় সবাই সায় দিয়ে বলল,“ঠিক আছে আঙ্কেল।”
বাবার হাসিমুখটার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ মুনার চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে গেল। দুচোখ ছাপিয়ে ঝরঝর করে জল গড়িয়ে পড়ল। মাহবুব শিকদার মুনার মুখের দিকে তাকাতেই মেয়ের ভেজা চোখ দুটো দেখে মুখটা মলিন করে ফেললেন। তিনি ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে মুনার মাথায় ডান হাতটা রাখতেই মুনার বুকের মধ্যে অজানা এক ব্যথা মোচড় দিয়ে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে মুনা বাবাকে আঁকড়ে ধরে বাচ্চাদের মতো শব্দ করে কেঁদে উঠল। আদরের মেয়ের কান্নার আওয়াজ কানে যেতেই মাহবুব শিকদারের চোখের পাতাও ভিজে উঠল। তবু তিনি নিজেকে সামলে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে-দিতে আদুরে গলায় বললেন,“বোকা মেয়ে, কাঁদছিস কেন? তোর যখন এই বাসায় আসতে ইচ্ছে করবে দিহানকে বলবি, ও নিয়ে আসবে। কাঁদিস না মা, অসুস্থ হয়ে পড়বি তো। দিহান তোকে খুব ভালো রাখবে, দেখিস।”
মাহবুব শিকদার দুহাতে মেয়ের মুখটা তুলে ধরে কপালে আলতো করে একটা চুমু এঁকে দিয়ে চোখ মুছে দিলেন। তারপর মুচকি হেসে দ্রুত পদে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। কিন্তু মুনার কান্নার গতি থামল না, বরং আগের থেকে আরও বেড়ে গেল। মুনার কান্না দেখে এতক্ষণ যে বান্ধবীরা এত হাসি, তামাশ, দুষ্টুমি করছিল, তাদের সবার মুখ মুহূর্তে মলিন হয়ে গেল। সবাই মিলে মুনার কান্না থামাতে লেগে পড়ল। এটাই তো বন্ধুত্ব। বন্ধুত্বে একজনের হাসিতে সবাই হাসে। আবার একজনের ব্যথায় সবাই ব্যথিত হয়। বন্ধুত্ব মানেই একে অপরের সব সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেওয়া।
•
বেলা বারোটা বাজতেই মুনাকে বউ সাজানো শুরু করল সবাই। মুনা আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিল সে তার বিয়েতে টুকটুকে লাল শাড়ি পরবে। সেই অনুযায়ীই বেছে-বেছে খুব সুন্দর একটা লাল শাড়ি কিনেছিল। বিয়ের শপিং করার সময় অবশ্য আফসার সাথে ছিল না। আফসারের বোন আর ভাবি মুনাকে নিয়ে সব শপিং করেছিল। মুনাকে শাড়ি পরাতে গিয়ে সবাই হিমশিম খেয়ে গেল। বারবার চেষ্টা করছে তবুও শাড়ি এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। চেষ্টা করতে করতে ঠিক করে শাড়ি পরাতে টানা পঁয়ত্রিশ মিনিট লেগে গেল। শাড়ি পরানো শেষ করে চুল বাঁধার সময় অন্তর আর তাহসিন ভেতরে এল। তাহসিন এসেই ধপ করে বিছানার একপাশে বসে চোখেমুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে বলল,“বাপরে, সেই কখন এসেছি। এত সময় লাগে রেডি করতে? তা-ও তো দেখছি সম্পূর্ণ রেডি করানো হয়নি এখনও।”
মুনা হেসে বলল,“মাত্র তো শাড়ি পরানো শেষ হলো। এখনও পুরো সাজ বাকি।”
অন্তর টেবিলের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,“আমাগো মুলা এমনিতেই যথেষ্ট সুন্দরী। ওরে আর ময়দা সুন্দরী বানাইস না তোরা। আফু ষাঁড় ওর ন্যাচারাল লুক দেইখাই পছন্দ করছে।”
টুম্পা বিরক্ত হয়ে বলল,“বকবক না করে চুপ থাক তো। শান্তিতে সাজাতে দে।”
অন্তর মুখ বন্ধ করে ঠোঁটে আঙুল চেপে ধরে একপাশে মাথা কাৎ করল। তাহসিন প্রশ্ন করল,“বরপক্ষ কখন আসবে রে?”
ইলোরা উত্তর দিলো,“আঙ্কেল তো বলল তাড়াতাড়ি আসবে। আমার মনে হয় জোহরের নামাজ পড়ে তারপর আসবে।”
ডালিয়া বলল,“আজান দিতে বেশি দেরি নেই।”
টুম্পা বলল,“ওনারা আসতে-আসতে সাজ কমপ্লিট হয়ে যাবে।”
অন্তর অবাক হয়ে বলল,“এত সময় লাগবে!”
অরিশা মেকআপ বক্স হাতে নিয়ে বলল,“বিয়ের সাজে একটু সময় লাগে রে ভাই।”
তাহসিন বলে উঠল,“এই মুনা, আর মাত্র দেড়-দুই ঘণ্টা পর আমাদের আফসার স্যারের বউ হতে চলেছিস। তোর ফিলিং কী তা বল।”
মুনা মুখ বাঁকিয়ে বলল,“ফিলিং কিচ্ছু না।”
অন্তর কপাল চাপড়ে বলল,“হায় ঈশ্বর! এই মাইয়ারে বিয়া কইরা নিশ্চিত আমাগো স্যারের কপাল ফাইট্টা চৌচির হইয়া যাইব।”
অন্তরের কথায় মুনা দাঁত কেলিয়ে হাসল। মুনার সাজ কমপ্লিট হতে-হতে দেড়টা বেজে গেল। সাজ কমপ্লিট হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই বরপক্ষ চলে এল। বরপক্ষ এসেছে শুনেই সবাই ছুটল বর দেখতে। মুনা অবাক হয়ে বলল,“আশ্চর্য! তোরা কি জীবনে দেখিসনি ওনাকে? এখন আবার নতুন করে দেখার কী আছে?”
ইলোরা যেতে-যেতে বলল,“বরবেশে তো আর দেখিনি। তুই বস, আমরা দেখে আসি একটু।”
মুনা গাল ফুলিয়ে বসে রইল। কিছুক্ষণ পরেই সবাই ফিরে এল। টুম্পা গদগদ কন্ঠে বলল,“আরে মুনা, তোর বরকে যা লাগছে না! ইচ্ছে করছিল আরেক দফা ক্রাশ খাই। কিন্তু এখন আর ক্রাশ খেয়ে লাভ নেই, তাই খেতে গিয়েও খেলাম না।”
নাদিয়া বলল,“আমাদের মুনাকেও কম সুন্দর লাগছে না। স্যার আজকে নিশ্চিত হার্ট অ্যাটাক করে বসবে ওকে দেখে।”
ইলোরা হেসে বলল,“তার দরকার নাই। হার্ট অ্যাটাক করলে আবার সমস্যা। তার থেকে ভালো স্ট্যাচু হোক।”
হঠাৎ করেই মুনা খেয়াল করল তার প্রচন্ড লজ্জা লাগছে। কেন এমন হচ্ছে? কিছুক্ষণের মধ্যেই তো সে আজীবনের জন্য একজনের অর্ধাঙ্গিনী হয়ে যাবে। বেশ কিছুক্ষণ পর মুনার বাবা, কাজি সাহেব আর মুনার কয়েকজন আত্মীয় রুমে এল। রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করার সময় মুনা আবার কেঁদে দিলো। মাহবুব শিকদার মুনাকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে সাইন করালেন। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে ধর্মীয় এবং আইনগতভাবে মুনা আফসারের স্ত্রী হয়ে গেল। কয়েক মিনিট আগেও সে ছিল শুধুই কারো মেয়ে। আর এখন তার সাথে নতুন আরেকটা পরিচয় যোগ হলো। বিয়ে পড়ানো শেষ করে শুরু হলো খাওয়া-দাওয়া। সব মেহমানদের খাওয়া-দাওয়া শেষ হতে-হতে বিকেল সাড়ে চারটা বেজে গেল। সবশেষে এল বিদায়ের পালা। মেয়েদের জীবনের সবচেয়ে দমবন্ধ করা মুহূর্তের মধ্যে একটি হচ্ছে বিয়ের পর বাবার বাড়ি থেকে বিদায়ের মুহূর্ত। এই মুহূর্তটা যে কতটা কষ্টদায়ক তা শুধু একটা মেয়েই টের পায়। মুনার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। মাহবুব শিকদার আর নাহিদা আহমেদ তাদের একমাত্র আদরের মেয়েকে আফসারের হাতে তুলে দিয়ে কান্না জুড়ে দিলেন। আর মুনা তো বাবা-মাকে আঁকড়ে ধরে রীতিমতো চিৎকার শুরু করে দিয়েছে। মুনার কান্না দেখে বন্ধুদের চোখের পাতাও ভিজে গেছে। আফসার আহত চোখে মুনার দিকে তাকিয়ে রইল। কান্না করতে করতে এক পর্যায়ে মুনা জ্ঞান হারিয়ে ফেলল। সেই অবস্থাতেই তাকে বিদায় দিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে দিলো মাহবুব শিকদার। আফসার আর তার পরিবারও মুনার পরিবারের থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ল।
চলবে………………….🌸