#সুপ্ত_প্রেমাসুখ
#ইলোরা_জাহান_ঊর্মি
#পর্বঃ৪০
সকাল থেকে মালিহা বেগম গাল ফুলিয়ে চুপচাপ সব কাজ করছেন। ভয়ে কেউ কিছু বলতেও পারছে না। অনন্যা তো কারো দিকে চোখ তুলে তাকাতেও পারছে না। ব্রেকফাস্ট টেবিলে সবাই যখন নীরবে খাচ্ছে তখন সাজিদ হোসেন বললেন,“মালিহা, এমন গাল ফুলিয়ে থাকার মানে কী? কার ওপর রাগ দেখাচ্ছ তুমি?”
মালিহা বেগম থমথমে মুখে বললেন,“কারোর ওপর কোনো রাগ নেই আমার। ভাগ্যে যা ছিল তাই হয়েছে।”
“এটা বুঝতে পারলে আবার চুপ করে আছো কেন কাল রাত থেকে?”
“এসব নিয়ে কোনো কথা বলো না তো। ভালো লাগে না শুনতে।”
তারপর হঠাৎ তিনি অনন্যার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,“খাবার নাড়াচাড়া করছিস কেন? এ বাড়িতে কি তুই আর কোনোদিন সবার সাথে খেতে বসিসনি?”
অনন্যা মাথা তুলে তাকাল। মালিহা বেগম নিজের খাওয়ায় মনোযোগ দিলেন। অনন্যা ছোটো বেলা থেকেই এ বাড়িতে এসেছে। সবার সাথে একসঙ্গে খেয়েছে, গল্প করেছে। কিন্তু আজকের দিনটা কেন জানি সেই দিনগুলোর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা মনে হচ্ছে। কারোর দিকে তাকাতে লজ্জা লাগছে, কথা বলতে সংকোচ হচ্ছে। সাজিদ হোসেন বললেন,“আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আগামীকাল বউ ভাতের অনুষ্ঠান হবে।”
সবাই সাজিদ হোসেনের দিকে তাকাল। সবার দৃষ্টিতেই খুশি স্পষ্ট। সাকিব প্রশ্ন করল,“কখন সিদ্ধান্ত নিলে?”
“কাল রাতেই। আজকের মধ্যেই সব আয়োজন করতে হবে। পারবি না?”
সাকিব মাথা দুলিয়ে বলল,“পারব।”
সাজিদ হোসেন মালিহা বেগমকে বললেন,“তুমি কী বলো?”
মালিহা বেগম অভিমানী গলায় বললেন,“আমি আবার কী বলব? এ বাড়িতে আমার কথায় কারো কিছু যায় আসে? তোমার যা ভালো মনে হয় করো।”
সাজিদ হোসেন আর কথা বাড়ালেন না। টুকটাক কথার মাঝেই সবাই খাওয়া-দাওয়া শেষ করল। সাকিব বাইরে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে। তখনই অনন্যা রুমে এল। সাকিবের সাথে চোখাচোখি হতেই সে চোখ সরিয়ে নিল। অনন্যাকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সাকিব হাতঘড়ি পরতে পরতে প্রশ্ন করল,“কী হয়েছে?”
অনন্যা ডানে বায়ে মাথা দুলিয়ে বলল,“কিছু না।”
অনন্যা ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে বেলকনিতে দাঁড়াল। কিছুক্ষণ পর কোমরে কারো স্পর্শ পেয়ে কিছুটা চমকে উঠল। সরতে নিতেই সাকিব পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,“অভ্যাস করে নিন ম্যাম। এভাবে চমকে উঠলে তো হবে না। এখন তো আপনি ম্যারিড।”
অনন্যা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। সাকিব অনন্যার কাঁধে থুতনি রেখে তার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,“মন খারাপ?”
অনন্যা মৃদু কন্ঠে বলল,“ফুপি আমাকে মেনে নিতে পারছে না। আমার খুব খারাপ লাগছে সাকিব। পরিচিত মানুষগুলো কেমন অপরিচিত লাগছে। আমি এত দুর্ভাগিনী কেন?”
সাকিব অনন্যাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে গালে হাত রেখে বলল,“আমাকে বিয়ে করতে হয়েছে বলে নিজেকে দুর্ভাগিনী মনে হচ্ছে তোর?”
“এটা কখন বললাম আমি?”
“আমার তো তাই মনে হচ্ছে।”
অনন্যা মুখটা অন্ধকার করে বলল,“আমার জন্য তোর জীবনটা এলোমেলো হয়ে গেল।”
সাকিব অনন্যাকে আরও কাছে টেনে নিয়ে কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল,“উঁহু, বরং আমার জীবনটা নতুনভাবে সেজেছে। হঠাৎ এমন ঘটনার কারণে আম্মু হয়তো একটু হার্ট হয়েছে। আস্তে আস্তে সবার মন ঠিক হয়ে যাবে দেখিস। আর আমার কথা বললে, আমি তো যা বলার গতকাল রাতেই বলে দিয়েছি। আবার বলছি, ভালোবাসি। এর থেকে বেশি আর কিছু বলতে হবে?”
অনন্যা চোখ বন্ধ করে সাকিবের কথাগুলো শুনছিল। তার চোখ ফেটে দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। বিয়ে ভাঙার কথা যখন শুনেছিল তখনই সে ভেবে নিয়েছিল তার জীবনটা এলোমেলো হয়ে গেছে। কিন্তু এলোমেলো হওয়ার পথ থেকেও যে জীবনটাকে নতুনভাবে কেউ সাজিয়ে দিবে এটা তার ধারণার বাইরে ছিল। সাকিব অনন্যার মুখটা দুহাতে তুলে ধরে চোখে চোখ রেখে বলল,“ভালোবাসবি না আমাকে?”
অনন্যা কোনো উত্তর দিতে পারল না। অশ্রুসিক্ত চোখ জোড়া নামিয়ে নিতেই সাকিব তাকে একহাতে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে আরেকহাতে মুখটা আবার তুলে ধরে বলল,“বল না, ভালোবাসবি?”
অনন্যা সাকিবের দিকে তাকিয়ে থাকতে না পেরে চোখ বন্ধ করে নিল। সেই ছোটো বেলা থেকে এই ছেলেটা তার অতি পরিচিত। কত খুনসুটি হয়েছে তার সাথে। কে জানত একদিন এই ছেলেটাই তার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য পাগল হয়ে উঠবে? সাকিব একই প্রশ্ন বারবার করে চলেছে। একসময় অনন্যা চোখ বন্ধ অবস্থাতেই উপর নিচে মাথা দোলালো। সাকিব মুখে হাসি ফুটিয়ে অনন্যার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,“চোখ খোল।”
অনন্যা চোখ খুলল। সাকিবের সাথে চোখাচোখি হতেই লজ্জায় আবার দৃষ্টি নামিয়ে ছিটকে সরে অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়াল। সাকিব হেসে অনন্যার কাছে এগিয়ে গেল। পেছন থেকে এক হাতে তাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিল। আরেক হাতে অনন্যার পিঠে ছড়িয়ে থাকা চুলগুলো কাঁধের এক পাশে সরিয়ে দিলো। অনন্যা চোখ বন্ধ করে রইল। ঘাড়ে সাকিবের ঠোঁটের ছোঁয়া পেতেই সে শিউরে উঠল। হৃদস্পন্দন বন্ধ হওয়ার উপক্রম দেখে সে সরে যেতে চাইল। কিন্তু সাকিব তাকে সরতে দিলো না। অনন্যা নিজের পেটের ওপর থাকা সাকিবের হাতটা খামচে ধরে মৃদু কন্ঠে বলল,“ছাড়। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।”
সাকিব বলল,“আগে তুমি বল।”
“একবারে পারব না। আস্তে আস্তে চেষ্টা করব।”
“এখনই বলতে হবে।”
“প্লিজ।”
“উঁহু। না বললে এভাবেই থাকতে হবে।”
অনন্যা ইতস্তত করে বলল,“আচ্ছা ছাড়ো।”
সাকিব অনন্যাকে ছেড়ে দিল। অনন্যা লজ্জায় জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। সাকিব হেসে বেলকনি থেকে রুমে পা বাড়িয়ে বলল,“আমি বাইরে যাচ্ছি। রুমে বসে থাকিস না। বাইরে গিয়ে সবার সাথে গল্প কর, ভালো লাগবে।”
অনন্যা চুপচাপ সাকিবের চলে যাওয়া দেখল। সারাক্ষণ তার সাথে খুনসুটি করা ছেলেটা আজ তাকে ভালোবাসে। তাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছে। সময় এক মুহূর্তে কতকিছু পাল্টে দেয়! তার ভাগ্যটাও পাল্টে দিলো। অনন্যা ছোটো একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মৃদু হাসল।
•
পরপর দুবার ফোন করার পর তিনবারের সময় ফোন ধরল ইলোরা। এরেন অভিমানী গলায় বলল,“আজকাল দেখছি আমার বউ আমাকে পাত্তাই দিচ্ছে না। কী ব্যাপার বলো তো? আমি পুরনো হয়ে গেলাম না-কি?”
ইলোরা মৃদু হেসে বলল,“হ্যাঁ, ঠিকই বলেছ। তুমি পুরনো হয়ে গেছ, এখন নতুন একজনকে খুঁজছি।”
“আচ্ছা? তো আমার কী হবে?”
“তুমিও নতুন আরেকজন খুঁজবে।”
“কিন্তু আমার তো আমার ইলোনিকেই চাই।”
“আমার তো নতুন একজনকে চাই।”
এরেন মুচকি হেসে বলল,“খুন করে ফেলব।”
ইলোরা ভ্রু উঁচিয়ে বলল,“আচ্ছা? তাই না-কি? তারপর?”
“তারপর নিজেও শেষ হয়ে যাব।”
“সিনেমা?”
“উঁহু, ভালোবাসা।”
ইলোরা এবার শব্দ করে হেসে উঠল। এরেনও হাসল। ইলোরা হাসিমুখেই প্রশ্ন করল,“ব্রেকফাস্ট করেছ?”
এরেন উত্তর দিলো,“হ্যাঁ, তুমি করেছ?”
“হুম। কোথায় তুমি? ভাইয়ের সাথে?”
“নাহ্। বাসায় আছি, এখন বের হব।”
“কাল বৌভাত হবে, শুনেছ?”
“হ্যাঁ, সাকিব বলেছে।”
“বাসার সবাই কেমন আছে?”
“ভালো। জারিনকে নিয়েই চিন্তায় আছি।“
“এত চিন্তা করো না। দেখা যাক কী হয়।”
এরেন বড়ো একটা শ্বাস নিয়ে বলল,“জানি না কী হবে। জারিন অনেক আগে থেকেই রনিকে ভালোবাসে। কিন্তু রনি তো ওকে বোন ছাড়া কিছুই ভাবেনি। আমরাও ভুল ভেবেছিলাম। জারিন যদি একবার শোনে রনি ওকে না মিথিলাকে ভালোবাসে, তাহলে কী পাগলামি শুরু করবে কে জানে।”
ইলোরা বলল,“আমারও চিন্তা হচ্ছে। যাক, বাইরে যাবে তো এখন?”
“হুম।”
“আচ্ছা যাও। আল্লাহ্ হাফেজ।”
“আল্লাহ্ হাফেজ।” এরেন ফোনটা কেটে ঘুরে দাঁড়াতেই থমকে গেল। দরজার সামনে জারিনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সে শুকনো একটা ঢোক গিলল। জারিন অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। বিস্ময় ভর্তি চোখ দুটো ছলছল করছে। এখনই হয়তো শ্রাবণের ঢল নামবে। এরেন মুখ খুলে কিছু বলার আগেই জারিন এক ছুটে সেখান থেকে চলে গেল। এরেন ফোন রেখে জারিনের পেছনে ছুটল। এরেন দোতলার সিঁড়িতে পা রাখতেই জারিন রুমে ঢুকে দরজা ভেতর থেকে লক করে দিলো। এরেন দ্রুত দোতলায় উঠে জারিনের রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে ডাকতে লাগল। কিন্তু জারিন একবারও সাড়া দিলো না। বেশ কিছুক্ষণ ডাকার পরও জারিনের সাড়া পাওয়া গেল না। এরেন এবার ভয় পেয়ে গেল। সে দ্রুত নিচে এসে তার মাকে ডাকতে লাগল,“আম্মী, আম্মী এদিকে এসো তাড়াতাড়ি।”
এরেনের ডাক শুনে আন্নি হক রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। ছেলের চিন্তিত মুখ দেখে প্রশ্ন করলেন,“কী হয়েছে?”
এরেন আন্নি হকের হাত ধরে দোতলার সিঁড়ির দিকে পা বাড়াতে বাড়াতে বলল,“পরে বলছি। আগে ওপরে চলো। বুড়ি অনেকক্ষণ ধরে দরজা খুলছে না।”
আন্নি হক এরেনের কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারলেন না। এরেন তাকে নিয়ে জারিনের রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। আন্নি হক বললেন,“কী হয়েছে তা তো বলবি?”
এরেন বলল,“আম্মী, বুড়ি খুব হার্ট হয়েছে। আমি অনেকক্ষণ ধরে ডাকছি তাও দরজা খুলছে না। প্লিজ ওকে দরজা খুলতে বলো। আমার খুব চিন্তা হচ্ছে।”
আন্নি হক হেসে বললেন,“ঝগড়া করেছিস? রাগ করে আর কতক্ষণ দরজা আটকে রাখবে? রাগ কমলে নিজেই খুলবে। এটা নিয়ে এত চিন্তা করার কী আছে?”
এরেন চিন্তিত কন্ঠে বলল,“এমন কিছু না আম্মী। ব্যাপারটা স্বাভাবিক না। আমি বলব সবকিছু। আগে ওকে দরজাটা খুলতে বলো।”
আন্নি হক কিছু আন্দাজ করতে না পেরেও জারিনকে ডাকতে লাগলেন। চিন্তায় এরেন বারবার মাথার চুল টেনে ধরছে। আন্নি হক ছেলের এমন ছটফট দেখে বুঝতে পারলেন যাই হয়ে থাকুক তা স্বাভাবিক না। তাই সেও বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লেন। বেশ কিছুক্ষণ পর জারিন ভেতর থেকে বলল,“আমি ওয়াশরুমে ছিলাম। ডাকাডাকি করো না, আমার মাথা ধরেছে। এখন ঘুমাব।”
এরেন বাইরে থেকে উত্তেজিত কন্ঠে বলল,“বুড়ি, তুই ঠিক আছিস তো?”
জারিন গম্ভীর গলায় বলল,“আমি ঠিক আছি ভাইয়া। প্লিজ এখন এখান থেকে যা।”
“তোর সাথে আমার কথা আছে। দরজা খোল প্লিজ।”
“পরে শুনব।”
এরেন কাঁপা গলায় বলল,“খারাপ কিছু ঘটাবি না তো?”
জারিন ভেতর থেকে উত্তর দিলো,“আমি এতটাও বোকা না ভাইয়া। অযথা দুশ্চিন্তা করিস না। যা এখান থেকে।”
এরেন এবার একটু স্বস্তি পেল। আন্নি হক অবাক হয়ে এরেনের মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন। এরেন বুঝতে পারল মা পুরো ব্যাপারটার কিছুই বুঝতে পারেনি। এরেন ছোটো একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,“নিচে চল, বলছি।”
এরেন আর আন্নি হক দোতলা থেকে নিচে নামলেন। আন্নি হক একটা চেয়ারে বসলেন। এরেন তার সামনে দাঁড়াল। বুক ফুলিয়ে শ্বাস নিয়ে তার বিয়ের ঘটনা থেকে শুরু করে জারিনের ব্যাপারেও সব খুলে বলল। প্রায় অনেকটা সময় নিয়ে সে সবকথা খুলে বলল। আন্নি হক পুরোটা সময় চোখে মুখে বিস্ময় নিয়ে ছেলের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। এরেন এখন আন্নি হকের পাশের চেয়ারে মাথা নিচু করে বসে আছে। আন্নি হক হতবাক হয়ে শুধু ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন। তার কন্ঠনালি দিয়ে কোনো কথাই বেরোতে চাইছে না। তবে তিনি ছেলের ওপর রাগও করেননি। কারণ সে পরিস্থিতিটা বুঝতে পেরেছেন। মাকে চুপ দেখে এরেন মৃদু কন্ঠে বলল,“সরি আম্মী। আমার হাতে কিছু ছিল না। আমি পরিস্থিতির শিকার ছিলাম।”
আন্নি হক এবার মুখ খুললেন। এরেনকে প্রশ্ন করলেন,“বিয়ের কত মাস হয়েছে?”
“ছয় মাস।”
এরেনের উত্তর শুনে আন্নি হক বললেন,“এত মাস পরে আমাকে জানাচ্ছিস? এতদিন জানালি না কেন?”
“প্রথমদিক দিয়ে আমি খুব কনফিউজড ছিলাম। হঠাৎ ওমন একটা ঘটনার কারণে মনটাও ঠিক ছিল না। তারপর ভেবেছিলাম মাস্টার্স শেষ করে তোমাদের জানাব। বাবাকে নিয়েও কিছুটা ভয়ে ছিলাম।”
আন্নি হক মাথাটা হালকা ঝাঁকিয়ে বললেন,“জারিন রনিকে পছন্দ করে কবে থেকে?”
“প্রায় দেড় বছর।”
আন্নি হক অবাক হয়ে বললেন,“দেড় বছর পরও রনি এখনও জানে না?”
“বুড়ি কখনও বুঝতে দেয়নি। রনি আর মিথিলার আচরণেও বুঝার উপায় ছিল না যে ওদের মধ্যে অন্য কোনো সম্পর্ক আছে।”
আন্নি হক কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,“সাকিবের বোনের নাম কী যেন বললি?”
“ইলোরা জাহান।”
“ওকে তোর পছন্দ? মানে কী ভেবেছিস ওকে নিয়ে?”
এরেন বলল,“প্রথমদিকে আমরা দুজনই বিয়েটা মানতে পারিনি। কিন্তু তারপর ভেবেচিন্তে ঠিক করলাম বিয়ে যখন হয়েই গেছে তখন সেটা মেনে নেয়াই ভালো। তাছাড়া ওকে আমার বেশ পছন্দ হয়েছিল। পরে জানতে পারি ও-ও এটাই চায়। আমি ভেবেছি মাস্টার্স শেষ করে বাবার বিজনেসের দায়িত্ব নিব। তারপর বাবাকে ইলোরার কথা জানাব। অন্যসময় বিয়ের মতোই তোমরাও ওর বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবে। আশা করি সব ঠিকঠাক মতোই হবে। শুধু আমাদের আগের বিয়েটার কথা হাইড করতে হবে।”
আন্নি হক কপাল কুঁচকে প্রশ্ন করলেন,“কেন?”
“এসব শুনলে সাকিব আর ওর বাবা-মা খুব হার্ট হবে। বিশেষ করে সাকিব। ইলোরা কখনও কোনো কথা তাদের থেকে গোপন রাখে না। কিন্তু জীবনের সবচেয়ে বড়ো ব্যাপারটাই ভয়ে আর অস্বস্তিতে কাউকে জানাতে পারেনি। ও এখনও এটা নিয়ে ভয় পায়। তাই ব্যাপারটা হাইড করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
আন্নি হক কপালে হাত ঠেকিয়ে চিন্তিত মুখে বসে রইলেন। এরেন মায়ের এক হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,“বাবাকে এখন আমার বা বুড়ির ব্যাপারে কিছু জানিয়ো না। আপাতত বুড়িকে বুঝাতে হবে। আমরা বুঝালে হয়তো ও বুঝবে।”
আন্নি হক মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানালেন। মেয়ের ব্যাপার থেকে ছেলের ব্যাপারটা নিয়ে তিনি বেশি চিন্তিত। তিনি জানেন তার মেয়ে বেশ বুদ্ধিমতী। কয়েকদিন বুঝালে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু ছেলে? বিয়ে করেছে ছয় মাস হয়েছে অথচ এখনও পর্যন্ত কেউ কিচ্ছু জানে না। হঠাৎ করে দুই ছেলে-মেয়ের ব্যাপারে এমন কথা শুনলে কোন মা চুপ থাকতে পারবে? তবু তিনি নিজেকে শান্ত রাখলেন। কিন্তু জারিন-এরেনের বাবাকে নিয়ে খুব চিন্তায় পড়ে গেলেন। ওদের বাবা এসব জানলে কেমন রিয়েক্ট করবে কে জানে?
চলবে……………….🌸