#সুপ্ত_প্রেমাসুখ
#ইলোরা_জাহান_ঊর্মি
#পর্বঃ৫২
এরেনের বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে আছে সাকিব। রাগে তার চোখ-মুখ লাল হয়ে আছে। অদূরেই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আঙুলে শাড়ির আঁচল পেঁচাচ্ছে ইলোরা। কিছুক্ষণ পর পর সে ঢোক গিলছে আর আড়চোখে সাকিবকে দেখছে। এরেন পাশের একটা চেয়ারে গা এলিয়ে হাঁপাচ্ছে আর শরীরে হাত বুলাচ্ছে। সেও বারবার আড়চোখে সাকিবকে দেখছে। অথচ সাকিব মাথা নিচু করে রাগে ফুঁসছে। না কারো দিকে তাকাচ্ছে আর না কথা বলছে। আসলে সাকিব এসেই এরেনকে এলোপাথাড়ি কিল, ঘুষি মেরেছে। তবু এরেন নির্বাক ছিল। ইলোরা বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এরেন বহু কষ্টে সাকিবকে ধরে বেঁধে বিছানায় বসিয়ে, মাথা ঠান্ডা করে তার কথা শুনতে বলেছিল। কিন্তু সাকিবের একটাই অভিযোগ ছিল, এরেন আর ইলোরা কেন তার কাছে বিয়ের কথাটা গোপন রেখেছে। এরেন আর ইলোরা অবাক হয়নি। কারণ সাকিব যে ডালিয়ার থেকে সত্য কথা বের করে ছেড়েছে তা বুঝতে তাদের অসুবিধা হয়নি। এরেন সেই প্রথম থেকে সব কথা খুলে বলার পরও সাকিবের রাগ কমলো না। বরং আরও একধাপ বেড়ে গেল। এখন তার অভিযোগ, এরেন আর ইলোরা তাকে একটুও বিশ্বাস করে না।
এরেন ইলোরার দিকে তাকাল। ইলোরাও তার দিকে অসহায় মুখে তাকিয়ে আছে। এরেন চোখের ইশারায় তাকে আশ্বস্ত করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে ধীর পায়ে সাকিবের দিকে এগিয়ে গেল। কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে সাকিবের দিকে পানির গ্লাসটা এগিয়ে ধরে মৃদু কন্ঠে বলল,“নে দোস্ত, পানি খা। রাগ একেবারে বাপের বাড়ি চইলা যাইব।”
সাকিব কটমট চাহনিতে এরেনের দিকে তাকাল। এরেন হাবলার মতো মুখে হাসি টেনে বলল,“আরে এমন কইরা তাকাস ক্যান? আমি বাচ্চা মানুষ, ডরাই না? তোর মগজের তাপমাত্রা বেশি বাইড়া গেছে। ঠান্ডা পানি আনমু?”
সাকিব শক্ত মুখে উঠে দাঁড়াতেই এরেন দ্রুত পিছিয়ে গিয়ে গ্লাসটা পুনরায় টেবিলে রাখতে রাখতে বলল,“ব্যাপার না। খাইতে হইব না তোর। তুই বরং মাথায় ঠান্ডা পানি ঢাল। ওয়াশরুমে যা।”
সাকিব তেড়ে এসে এরেনের গলা টিপে ধরে দাঁতে দাঁত পিষে বলল,“ফাইজলামি করস? আমার বোনরে বিয়া কইরা এতদিন সাধু সাইজা ঘুইরা বেড়াইছোস? শালা বাটপার!”
এরেন সাকিবের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে বলল,“অসুস্হ মানুষের ওপর এমন অত্যাচার আল্লাহ্ সইব না দোস্ত। মাইরা ফালাইবি না-কি? আর তুই মিস্টেক করস ক্যান? আমি তোর না, তুই আমার শালা।”
সাকিব আবার তেড়ে আসতেই এরেন এক টানে ইলোরাকে নিজের সামনে দাঁড় করিয়ে দিলো। সাকিব সেখানেই থেমে গেল। ইলোরা থতমত খেয়ে ভীতু দৃষ্টিতে সাকিবের দিকে তাকাল। এরেন ইলোরার পেছন থেকে অসহায় মুখে বলল,“থাম না ভাই। তুই না আমার একটা মাত্র শ্যালক? সব শুইনাও এমন করস ক্যান? শরীরটা ব্যথা বানাইয়া দিলি। হাড্ডি সব ভাইঙ্গা দিলি। আরেকটু হইলে হসপিটালে এডমিট হইতে হইব। মইরা গেলে তো তোরাই কাঁদবি।”
সাকিব মুখ দিয়ে ফুস করে একটা বিরক্তিকর শব্দ বের করল। এরেন ইলোরার পেছন থেকে সরে এসে বলল,“আচ্ছা, আমার ওপর যত রাগ করার কর। কিন্তু তোর বোনের ওপর করিস না। বেচারি নির্দোষ। ভয়ে কিছু বলতে পারেনি। আর ওর ভয়ের কারণে আমিও চুপ ছিলাম।”
ইলোরা মাথা নিচু করে ফেলল। সাকিব একবার ইলোরার দিকে তাকিয়ে আবার এরেনের দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে গম্ভীর মুখে বলল,“আমি কি বাঘ না ভাল্লুক? সত্যি কথা বললে খেয়ে ফেলতাম?”
“না। কিন্তু তখন তোরা উলটো ওর দোষই দেখতি। কারণ ওর ভুলের কারণেই সেদিন ওমন বিপদে পড়তে হয়েছিল। হয়তো বলতি ও রাগ দেখিয়ে রাত-দুপুরে বাসা থেকে না বেরোলে এমন ঘটনা ঘটত না। আবার এক্সিডেন্টলি বিয়ে হওয়ার কারণে না মেনে ছাড়িয়েও নিতে পারতি। প্রথম দিকে ও তোদের বকা শোনার ভয়ে বলেনি। তখন অবশ্য আমরা দুজনেই বিয়েটা মানতে পারিনি। কিন্তু ভার্সিটিতে দেখা হওয়ার পর আস্তে আস্তে মেনে নিয়েছি। আর, পরে ও তোদের বলেনি ছাড়ার ভয়ে। তাই ভেবেছিলাম আঙ্কেল ওর পছন্দের কথা শুনলে বিয়েটা আটকাবে। কিন্তু তাও হলো না। ও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না। কারণ ও না নিজের ফ্যামিলি ছাড়তে পারবে আর না আমাকে। আর আমিও চাইনি তোরা ওকে ভুল বুঝিস।”
সাকিব তাচ্ছিল্যের হাসি মুখে টেনে বলল,“লাইক সিরিয়াসলি! আমার নিজের বোন আর বেস্ট ফ্রেন্ড এতগুলো বছরে আমাকে এইটুকুই চিনেছে! এইটুকু কী বলছি! চিনতেই তো পারেনি। হাউ লাকি আই এম!”
“তুই ভুল বুঝছিস সাকিব। আমাদের দিক থেকে একবার ভেবে দেখ।”
“ভাবাভাবির সময় নেই। ইলুকে নিয়ে আমায় বাড়ি ফিরতে হবে।”
ইলোরা চমকে উঠে এরেনের দিকে অসহায় মুখে তাকাল। এরেন গম্ভীর মুখে বলল,“ওকে নিতে পারবি না।”
সাকিব ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করল,“আটকাবে কে?”
“ওর হাসবেন্ড।”
“আচ্ছা? কেন আটকাবে?”
“কেন মানে? আমার বউয়ের অন্য কারো সাথে বিয়ে হবে আর আমি হাত পা গুটিয়ে বসে থাকব? চেষ্টা তো কম করিনি। কোনো চেষ্টাই যখন সফল হয়নি তখন আটকেই রাখব।”
“আমার সামনেই আমার বোনকে আটকে রাখার কথা বলছিস?”
“তোর বোনটা আমার বউ। তুই যেমন নিজের বোনের কষ্ট দেখতে পারিস না আমিও তেমনি আমার বউয়ের কষ্ট দেখতে পারি না। আর এই মুহূর্তে আমি তোকে শ্যালক না, বন্ধু হিসেবে বলছি, পরিস্থিতিটা বুঝার চেষ্টা কর।”
সাকিব মৃদু হেসে মাথা দোলালো। তারপর এগিয়ে গিয়ে ইলোরার এক হাত মুঠোয় নিয়ে বলল,“চল।”
ইলোরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে এরেনের মুখের দিকে তাকাল। এরেন বলল,“আমি কোনো ঝামেলা করতে চাইছি না। তবে বিয়েটা আমি হতে দিবো না। ভেবেচিন্তে নিয়ে যা।”
সাকিব মৃদু হাসি মুখে ঝুলিয়ে ইলোরাকে নিয়ে দরজার দিকে পা বাড়াতে বাড়াতে বলল,“ছোটো বেলা থেকে আমার বোনের ভালোটাই আমি ভেবে এসেছি। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়।”
ইলোরা ঘাড় ঘুরিয়ে ছলছল চোখে এরেনের দিকে তাকাল। এরেন চুপ মেরে দাঁড়িয়ে আছে। এই মুহূর্তে এরেনের এমন নিশ্চুপ থাকাটা ইলোরার কাছে মোটেও ভালো লাগল না। তার কেবলই মনে হতে লাগল, সম্পর্কের পূর্ণতাতেই সমাপ্তি ঘটল।
বাড়িতে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে মালিহা বেগম ইলোরাকে দেখে তেড়ে এলেন। কিন্তু সাকিব বাঁধা দিয়ে বলে দিলো ইলোরার গায়ে হাত তোলা তো দূর, কেউ যেন ওকে জেরাও না করে। সাজিদ হোসেন চুপচাপ বসে ছিলেন। আদরের মেয়ের এমন একটা কান্ড তিনি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। আবার ছেলের ওপরও তার ভরসা আছে। ছেলে যখন চুপ থাকতে বলেছে তো তার অবশ্যই কোনো কারণ আছে। ডালিয়া আর ইলোরাকে ভেতরে পাঠিয়ে দিয়ে সাকিব বাবা-মায়ের সাথে আলোচনায় বসল। সে প্রথমেই বলে বসল,“বিয়েটা ক্যানসেল করে দাও।”
সাজিদ হোসেন আর মালিহা বেগম বিস্ময় নিয়ে ছেলের মুখপানে তাকিয়ে রইলেন। সাজিদ হোসেন বললেন,“এসব কী বলছিস?”
মালিহা বেগম বললেন,“কাল গায়ে হলুদ আর আজ বিয়ে ভাঙার কথা বলছিস! মাথায় কী ঢুকেছে তোর?”
সাকিব গম্ভীর মুখে বলল,“পাকা কথা বলার আগে ইলুর মত জানাটা দরকার ছিল। কিন্তু আমরা কেউই সেসবে পাত্তা দেইনি। এটা আমাদের অনেক বড়ো ভুল। আগে জিজ্ঞেস করলে এখন এই পরিস্থিতি তৈরি হত না। এখন তো মনে হচ্ছে আগেই বিয়েটা না ভেঙে আমরা আরও ভুল করেছি। এই বিয়ে হলে ইলু ভালো থাকবে না। আর ও যাতে ভালো না থাকবে তাতে আমি সম্মতিও জানাব না। আমার কাছে আমার বোনের ভালো থাকাটা সবচেয়ে বড়ো।”
সাজিদ হোসেন বললেন,“বিয়ের দুদিন আগে এসব বোকা বোকা কথা বলার কোনো মানে হয় না। এখন বিয়ে ভাঙলে আমাদের মুখ কোথায় থাকবে? মান-সম্মান সব শেষ হয়ে যাবে। তমালের পরিবারের কাছে এই কথা তুলব কোন মুখে?”
“আব্বু, অন্যে কী বলবে, কী ভাববে এসব দেখার সময় না এখন। সোজাসাপ্টা বলো তুমি এই বিয়ে ক্যানসেল করবে কি না?”
সাজিদ হোসেন গম্ভীর গলায় বললেন,“সম্ভব না। জাকির ভাইজান যখন এসেছিল তখন যদি বলতি মেনে নিতাম। কিন্তু এখন এটা কোনোভাবেই সম্ভব না। বিয়েটা কোনো ছেলে খেলা না।”
সাকিব মাথা দুলিয়ে বলল,“ঠিক আছে। তোমাদের কিছু করতে হবে না।”
মালিহা বেগম গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন,“তুই কী চাইছিস বল তো?”
সাকিব হেসে রুমের দিকে হাঁটা দিয়ে বলল,“আমার বোনের সুখ।”
সাজিদ হোসেন আর মালিহা বেগম অবাক হয়ে ছেলের চলে যাওয়া দেখলেন। মেয়ের সাথে ছেলেটারও মাথা গেল না-কি?
•
বেলকনিতে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে ইলোরা আর ডালিয়া। দুজনেই নিশ্চুপ। একজনের মনে কী চলছে তা অপরজন জানে না। হয়তো দুজনের চিন্তাধারা ভিন্ন, কিংবা এক। তবে ভিন্ন হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ডালিয়া রাস্তার দিকে তাকিয়ে অযথাই রিকশা গুণে চলেছে। রিকশার সংখ্যা বেশি হওয়ায় মাঝে মাঝে গুলিয়ে ফেলছে, আবার গুণছে। আজাইরা মানুষের যখন যা মাথায় আসে আরকি। ইলোরা আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা খুঁজে চলেছে। অনেক খোঁজার পর আকাশে একটা মাত্র তারা চোখে পড়ল। তারাটা একটু বেশিই জ্বলজ্বল করছে। যেন এই বিশাল আকাশটা তার রাজ্য আর সে একা তার রাজা। সমস্ত আকাশজুড়ে তারই রাজত্ব। ইলোরা ভাবল, এটা কি সন্ধ্যাতারা? কী জানি! হবে হয়তো। নিশ্চিত না সে। কিন্তু এই মুহূর্তে তার ইচ্ছে করছে আকাশ ভর্তি তারার মেলা দেখতে। সেখানে মাত্র একটা তারা তার খুব একটা ভালো লাগল না। আকাশে এক ফালি চাঁদ হাসছে। আচ্ছা? চাঁদ কি সত্যিই হাসতে পারে? যে হাসতে পারে সে তো কাঁদতেও পারে। কই? কখনও তো বলা হয় না, আকাশে এক ফালি চাঁদ কাঁদছে। এমন সব উদ্ভট চিন্তা করে ইলোরা নিজের মনেই হেসে ফেলল। পাশ ফিরে ডালিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখল ডালিয়া রাস্তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা দেখছে আর বিড়বিড় করছে। ইলোরা ভ্রু জোড়া কুঞ্চিত করে ডালিয়াকে ডাকল,“ডালিয়া।”
ডালিয়া শুনল না। ইলোরা এবার ডালিয়ার গায়ে হাত দিয়ে মৃদু ধাক্কা দিয়ে কিছুটা জোরে ডাকল,“ডালিয়া।”
ডালিয়া কিছুটা চমকে উঠে বলল,“হাহ্?”
“ধ্যানে পড়েছিলি?”
ডালিয়া হেসে বলল,“তেমনই।”
“সকালে আমি যাওয়ার পর কী হয়েছিল তা তো বললি না এখনও।”
ডালিয়া বুকে হাত দিয়ে বড়ো একটা শ্বাস নিয়ে বলল,“আর বলিস না বোন। ভয়ে আমার কলিজা শুকিয়ে গিয়েছিল আজ।”
“খুলে বল।”
“তুই যাওয়ার পরপরই ভাই বাসায় এসেছিল। এসে তোর কথা জিজ্ঞেস করার পর ফুপি বলেছিল তুই মুনাদের সাথে অরিদের বাসায় গিয়েছিস। ভাই বাসায় এসে আবার চলে গিয়েছিল অরিদের বাসায় দাওয়াত করার জন্য। সেটাই কাল হয়েছে। গিয়ে দেখেছে অরি একদম সুস্থ স্বাভাবিক আছে। আর তুই বা বাকিরা কেউ ওদের বাড়িতে নেই। অরি তো ভাইকে দেখেই পালিয়েছে। ভাই বুদ্ধি করে অরির আম্মুকে জিজ্ঞেস করেছে ওর বান্ধবীদের আজ ওদের বাড়িতে যাওয়ার কথা কি না। অরির আম্মু না বলেছে। ব্যাস, ভাই সন্দেহ করে বসেছে। তারপর বাসায় এসে আমাকে জেরা করেছে। তা-ও আবার একা একা। আমি তো ভয়ে জমে গিয়েছিলাম। বাধ্য হয়ে সত্যি কথা বলে দিয়েছিলাম। তাতেও ভাই থামেনি। তোদের সম্পর্কের শুরু কোথায়, কীভাবে হয়েছিল সব জিজ্ঞেস করেছিল। আমার অবস্থা তখন, ছাইড়া দে ভাই কাইন্দা বাঁচি। ভাইয়ের রাগী চেহারা দেখে গড়গড় করে প্রথম থেকে সব বলে দিয়েছিলাম। আল্লাহ্! মনে পড়লে এখনও আমার গলা শুকিয়ে যায়।”
ইলোরা গম্ভীর মুখে বলল,“তোকে একা জিজ্ঞেস করার পর আব্বু-আম্মুকেও সব জানিয়ে দিয়েছিল?”
“উঁহু। শুধু বলেছিল তুই ওই বাড়ি চলে গিয়েছিস। বিয়ের কথাটা গোপন রেখেছে। আমার মনে হয় বিয়ের কথাটা ভাই কাউকে জানাবে না।”
ইলোরা কপাল কুঁচকে বলল,“তাহলে ভাই কী চাইছে বল তো?”
“শুনলাম ভাই না-কি ফুপাকে বলেছে বিয়েটা ক্যানসেল করে দিতে। কিন্তু ফুপা রাজি হয়নি।”
ইলোরা চোখ বড়ো করে বলল,“ভাই এই কথা বলেছে?”
ডালিয়া মাথা দুলিয়ে বলল,“হুম। ভাই তোর সুখ চাইছে। কিন্তু ফুপা তো বিয়ে ক্যানসেল করতে পারবে না বলে দিয়েছে।”
ইলোরা উত্তেজিত হয়ে বলল,“তারপর ভাই কী বলেছে?”
“আর কিছু জানি না। এটুকুই শুনেছি আপ্পির থেকে।”
ইলোরা চিন্তিত মুখে বলল,“তাহলে কী হবে? আমি আবার চলে যাব ডালিয়া। ও বলেছে বিয়ে ক্যানসেল না হলে আমাকে নিয়ে যাবে। ভাই যেহেতু পারল না সেহেতু বিয়েটা আটকানো আর সম্ভব না।”
“আমার কিন্তু তা মনে হচ্ছে না।”
“কেন?”
“দেখ, ভাই যেহেতু বলেছে তোর ভালো থাকাটা তার কাছে সবচেয়ে বড়ো। সেহেতু এই বিয়ে কোনোভাবেই হবে না। মিলিয়ে নিস।”
ইলোরা একরাশ দুশ্চিন্তা নিয়ে বলল,“আল্লাহ্ জানে।”
কাকির ডাকে বেলকনি থেকে রুমে এল ইলোরা। পেছন পেছন ডালিয়াও এল। ইলোরার কাকা আর ফুপির পরিবার আজ বিকালে চলে এসেছে। আর ডালিয়ার বাবা-মা এসেছে সকালে। আগামীকাল থেকে হয়তো বাকি সব আত্মীয়-স্বজন আসা শুরু করবে। ইলোরা রুমে ঢুকে দেখল তার কাকি একটা শপিং ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে আছে। ইলোরাকে দেখে তিনি হাসিমুখে এগিয়ে এসে ইলোরার হাতে ব্যাগটা ধরিয়ে দিয়ে বললেন,“হলুদের শাড়ি এনেছি, দেখ তো তোর পছন্দ হয় কি না। পছন্দ না হলে বলিস কিন্তু, পালটে আনব।”
ইলোরা ঘাড় কাত করে সম্মতি জানাল। ডালিয়া বলল,“কাকি, আজ না শপিংয়ে যাওয়ার কথা ছিল? কাউকে তো এই ব্যাপারে কিছু বলতেই শুনছি না। তো শপিংয়ে যাবে কে?”
ইলোরার কাকি বললেন,“হ্যাঁ, যাওয়ার কথা তো ছিলই। তমাল আর ওর মা ফোনও করেছিল। কিন্তু সাকিব বলল কাল সকালে যাওয়ার কথা।”
“কেন?”
“জানি না। ওর না-কি শরীর ভালো লাগছে না। আর তমাল বলেছে সাকিবকে সাথে নিয়েই শপিং করবে। তাই সকালেই যাবে ঠিক করেছে। শোন, তোরা কিন্তু সকালে একটু তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে থাকবি। হলুদের ঝামেলাও তো আছে কাল।”
ডালিয়া হেসে বলল,“আচ্ছা।”
“চা খেতে আয়।” কথাটা বলতে বলতে কাকি চলে গেলেন। ইলোরা হাতের শপিং ব্যাগের দিকে এক নজর তাকিয়েই সেটা বিছানায় ছুঁড়ে মারল। ডালিয়া ঠোঁট কামড়ে ধরে কিছু একটা ভেবে বলল,“ভাই নিশ্চিত মিথ্যা কথা বলেছে। একটু আগেই আমি তাকে সুস্থ স্বাভাবিক দেখলাম। কিন্তু মিথ্যা কেন বলল? ভাইয়ের মাথায় ঠিক কী চলছে বল তো?”
ইলোরা ধপ করে বিছানায় বসে দুহাতে মাথা চেপে ধরে চিন্তিত কন্ঠে বলল,“জানি না। যার মাথায় যাই চলুক, কাল সকাল সকাল আমি ওই বাড়ি চলে যাব। এটাই ফাইনাল।”
চলবে………………….🌸