#সুপ্ত_প্রেমাসুখ
#ইলোরা_জাহান_ঊর্মি
#পর্বঃ৫৬
জীবন কখনও থেমে থাকে না। তার মতো সে চলতে থাকে। তার যে থামার কোনো নিয়ম নেই। জীবনে অনেক ঘটনাপ্রবাহ তৈরি হয় আবার তা গতও হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের মনে হয় চোখের পলকে দিন চলে গেল। এভাবেই এরেন-ইলোরার বিয়ের দু দুটো মাস পার হয়ে গেল। এই দুই মাসে তাদের দুই পরিবারের মধ্যে বেশ ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এরেন নিজের স্বভাবসুলভই শ্বশুরবাড়ি গিয়ে খুব একটা থাকে না। মাঝে মাঝে গিয়ে সবার সাথে দেখা করে আসে। হয়তো একদিন বা একরাত। ভার্সিটিতে এখন ইলোরার সাথে সে স্বাধীনভাবে কথা বলে, ঘুরে বেড়ায়। মাঝে মাঝে কোথাও বসে দুজন গল্প করে কিংবা পড়ন্ত বিকেলে রিকশা নিয়ে শহর চষে বেড়ায়। বলতে গেলে দুজনেই বেশ সুন্দর সময় পার করছে।
আজ মাহাদি অরিশাকে প্রপোজ করেছে। এতদিনে ছেলেটাকে অরিশার মন্দ লাগেনি। খুব বেশি রূপবান না হলেও চেহারায় আকর্ষণীয় ভাব আছে। গম্ভীর, ভদ্র স্বভাবের ছেলেটা প্রেমিক হিসেবে মন্দ নয়। অরিশাও তাই নিজের সিঙ্গেল জীবনের ইতি টেনে মাহাদির প্রপোজাল একসেপ্ট করে নিয়েছে। আজ আবার আরেকবার অন্তরকে স্মরণ করা হয়েছে। অরিশাকে বলা অন্তরের শেষ কথাটাই ছিল মাহাদিকে নিয়ে। অন্তরের ভাষ্যমতে মাহাদি খুব ভালো ছেলে।
ইলোরা ক্লাস শেষ করে বেরোতেই এরেনের ফোন এল। ইলোরা রিসিভ করে কানে ধরে বলল,“হুম বলো।”
এরেন প্রশ্ন করল,“কোথায় তুমি?”
“ক্লাস থেকে বের হলাম।”
“গেটের সামনে আসো।”
“এখন? ওরা তো আড্ডা দিতে চাইছে।”
“তুমি ওদের কাছে বলে চলে আসো। ডালিয়াকে বলো সাকিব ওকে নিয়ে যাবে। তোমাকে আমি দিয়ে আসব।”
“আচ্ছা।”
ফোন রেখে ইলোরা সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,“শোন, তোরা আড্ডা দে। আমাকে যেতে হবে।”
তাহসিন বলল,“যা বইন, যা। তোরই তো দিন।”
ইলোরা ডালিয়াকে বলল,“ডালিয়া, তুই ভাইয়ের সাথে চলে যাস।”
ডালিয়া প্রশ্ন করল,“তুই এরেন ভাইয়ার সাথে যাবি না-কি?”
“হ্যাঁ। আসছি, বাই।”
ইলোরা দ্রুত পায়ে হেঁটে গেটের সামনে গিয়ে দেখল এরেন গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পরনে চকলেট কালার শার্ট আর কালো প্যান্ট। রোদে তার ফরসা মুখটা লালচে বর্ণ ধারণ করেছে। গরমের কারণে শার্টের কলার কিছুটা পেছন দিকে ঠেলে দিয়ে একহাত প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে আরেক হাতে চুল ঠিক করছে। ইলোরাকে দেখেই সে একগাল হাসি উপহার দিলো। ইলোরা এগিয়ে গিয়ে বলল,“তুমি একা। ভাই আর রনি ভাইয়া কোথায়?”
এরেন বলল,“ওরা ক্যাম্পাসেই আছে।”
ইলোরার দৃষ্টি গাড়ির দিকে পড়তেই সে জিজ্ঞেস করল,“এটা কার গাড়ি?”
এরেন প্রশস্ত হেসে বলল,“তোমার বরের গাড়ি। তোমার শ্বশুড়মশাই গিফট করেছে।”
“গিফট? কী উপলক্ষে?”
“সামনের মাসেই তো এক্সাম। অগ্রিম শুভেচ্ছা জানাল।”
“বাহ্! কিন্তু এখন থেকে তুমি এই গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়াবে?”
“অবশ্যই।”
ইলোরা ভোঁতা মুখে বলল,“সারা দিন-রাত এটা নিয়ে ঘুরে বেড়াও। কিন্তু আমাকে নিয়ে বাইরে বের হলে রিকশা ছাড়া আর কিচ্ছু এলাউ করব না।”
এরেন মুচকি হেসে বলল,“আজ্ঞে মহারানি, তা আমার জানা আছে। কিন্তু প্রথমদিন আপনার পায়ের ধুলো দিয়ে আমার গাড়িটাকে একটু ধন্য করুন।”
ইলোরা হেসে বলল,“সে না হয় দিলাম। এখন যাবে কোথায়?”
“জানি না। যেদিকে ইচ্ছা সেদিকে যাব, চলো।”
এরেন গাড়ির দরজা মেলে ধরল। ইলোরা হাসিমুখে গাড়িতে উঠে বসল। কিন্তু গাড়িতে ওঠার সময় সে খেয়াল করল আশেপাশের কয়েকটা মেয়ে বেশ মুগ্ধ দৃষ্টিতে এরেনের দিকে তাকিয়ে আছে। ইলোরার ভ্রু জোড়া কুঞ্চিত হয়ে গেল। এরেন ড্রাইভিং সিটে উঠে বসতেই ইলোরা সামনের টিস্যু বক্স থেকে টিস্যু নিয়ে এরেনের কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বলল,“ঘামে ভিজে গেছ একদম।”
এরেন হেসে বলল,“বউয়ের এমন যত্ন পেতে ঘামে গোসল করতেও আপত্তি নেই।”
ইলোরা এরেনের গলার ঘাম মুছতে মুছতে বলল,“শোনো, তুমি আর এই শার্টটা পরবে না।”
এরেন অবাক হয়ে বলল,“কেন? শার্টটা কেনার সময় তো তুমিই পছন্দ করেছিলে। পছন্দের শার্ট হঠাৎ কী দোষ করল?”
ইলোরা গাল ফুলিয়ে বলল,“এটাতে তোমাকে বেশি হ্যান্ডসাম দেখায়।”
এরেন দুষ্টু হেসে বলল,“তো? তোমার কি তখন বরকে আদর করতে ইচ্ছে করে?”
ইলোরা ঘাম মোছা শেষ করে বলল,“অসভ্য! ফাজলামি করবা না।”
“তাহলে?”
“মেয়েরা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে তোমার দিকে।” ঠোঁট উল্টে কথাটা বলল ইলোরা। এরেন ফিক করে হেসে উঠল। ইলোরা কপালে ভাঁজ ফেলে এরেনের দিকে তাকিয়ে বলল,“খুব হাসছো যে? অনেক খুশি লাগছে এটা শুনে?”
এরেন হাসতে হাসতে বলল,“তোমার জেলাস হচ্ছে?”
ইলোরা কপট রাগ দেখিয়ে বলল,“তোমার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকার অধিকার আছে না-কি ওদের? আশ্চর্য! হসছো কেন?”
এরেন আফসোসের সুরে বলল,“কী করব বলো? আমার বউ তো আমার দিকে তাকায় না। তাই অন্য মেয়েরা তাকালে একটু খুশি তো হতেই হয়, তাই না?”
ইলোরা মুখ ফুলিয়ে বলল,“আচ্ছা? তো তুমি এক কাজ করো না। চব্বিশ ঘন্টা সামনে কোনো সুন্দরী মেয়েকে বসিয়ে রাখো, সেও তোমার দিকে চব্বিশ ঘন্টা তাকিয়ে থাকবে।”
এরেন শব্দ করে হেসে এগিয়ে গিয়ে ইলোরার গালে শব্দ করে একটা চুমু খেয়ে বলল,“আমার তো শুধু ইলোনিকেই চাই। কোনো বিশ্বসুন্দরীও ইলোনির অভাব পূরণ করতে পারবে না। ইলোনি কেবল একটাই, আমার ব্যক্তিগত ঔষধ।”
ইলোরা কপাল কুঁচকে ফেলে পরক্ষণেই নিঃশব্দে লাজুক হাসল। এরেন সোজা হয়ে বসে সিটবেল্ট বাঁধল। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সে ডানহাতে স্টেয়ারিং ধরে বাঁ হাতের মুঠোয় ইলোরার হাতটা নিয়ে নিল। ইলোরা বলল,“ড্রাইভিংয়ে মনোযোগ দাও। হাত পরেও ধরতে পারবে।”
এরেন সামনের দিকে দৃষ্টি রেখেই ইলোরার আঙুলের ফাঁকে আঙুল রেখে বলল,“ড্রাইভিংয়ে মনোযোগ আছে। হাতটা দীর্ঘ একদিন পর ধরলাম। ছেড়ে দেই কী করে?”
ইলোরা ভ্রু জোড়া কুঞ্চিত করে বলল,“একদিন এত দীর্ঘ?”
“অবশ্যই। তুমি তো আমাকে ভালোবাসো না, তাই তোমার কাছে দীর্ঘ মনে হয় না।”
“হ্যাঁ। আমার তো আরও কয়েকটা জামাই আছে, তাই তোমাকে ভালবাসি না।”
“তো তাদের ছেড়ে আমার সাথে কী করছো?”
“আর কেউ তো তোমার মতো অসুখে ভোগে না। তাই বাধ্য হয়ে তোমার অসুখ সারাতে তোমার কাছেই আসি।”
“তারপর? বাকি জামাইরা তোমাকে আমার মতো আদর করে?”
ইলোরা ঝুঁকে গিয়ে এক হাতে এরেনের মুখ চেপে ধরে বলল,“চুপ করবে, না মুখ সেলাই করে দিব?”
এরেন ইলোরার হাতে আলতো করে একটা কামড় বসাতেই ইলোরা হাত সরিয়ে নিল। এরেন হেসে নিজের হাতের মুঠোয় বন্দি ইলোরার হাতটায় ছোট্ট একটা চুমু খেয়ে বলল,“ক্ষুধা পেয়েছে মহারানি?”
ইলোরা দ্রুত ওপর নিচে মাথা ঝাঁকাল। এরেন সামনের একটা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি পার্ক করল। গাড়ি থেকে নেমে দুজন একসাথে রেস্টুরেন্টে ঢুকল। দুপুরের ভোজন সেরে তবেই বেরিয়ে এল। এরেন ইলোরাকে নিয়ে পুনরায় গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিলো। ইলোরা মাথার হিজাবটা খুলে রেখে সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। এরেন একহাত ইলোরার কপালে রাখল। ইলোরা চোখ খুলতেই প্রশ্ন করল,“কী হয়েছে?”
ইলোরা অলস ভঙ্গিতে বলল,“ভালো লাগছে না।”
“বাসায় চলে যাবে?”
“এখনই? তুমি তো বললে ঘুরবে।”
এরেন একহাতে ইলোরাকে কাছে টেনে ইলোরার মাথাটা নিজের কাঁধে রেখে হাত বুলাতে বুলাতে বলল,“আগে তোমার সুস্থতা, তারপর ঘোরাঘুরি।”
ইলোরা এরেনের কাঁধে মাথা রেখে চুপচাপ চোখ বন্ধ করে রইল। এরেন একহাতে ইলোরার মাথায় হাত বুলিয়ে আরেক হাতে স্টেয়ারিং সামলালো। এরেন যখন ইলোরাদের বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামাল তখন বিকাল চারটা। ইলোরা ব্যাগটা হাতে নিয়ে প্রশ্ন করল,“ভেতরে যাবে না।”
এরেন বলল,“নাহ্। আব্বু-আম্মুকে আমার সালাম দিয়ো।”
ইলোরা ভালো করেই জানে এরেনের উত্তর এটাই হবে। তবু বলল,“চলো না। একটু পরে না হয় চলে যেও।”
“উঁহু। এখন সোজা বাড়ি চলে যাব।”
“আচ্ছা। আল্লাহ্ হাফেজ।”
ইলোরা গাড়ির দরজা খুলতে যেতেই এরেন ইলোরার হাত টেনে ধরল। ইলোরা এরেনের দিকে ফিরে তাকাতেই সে মুখ গোমড়া করে বলল,“চলে যাচ্ছ?”
ইলোরা এরেনের এই অভ্যাসের সাথে বেশ পরিচিত। যতবারই তাকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে যায়, ততবার যাওয়ার আগে এভাবে হাত ধরে কয়েক মিনিট দাঁড় করিয়ে রাখে। ইলোরা আরেক হাতে এরেনের কপালে পড়া চুলগুলো পেছনে ঠেলে দিয়ে বলল,“ভেতরে তো যেতে চাইছো না।”
“ছাড়তেও ইচ্ছা করছে না।”
“বুঝেছি। এখন হাত ছাড়ো।”
ইলোরা এরেনের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে গাড়ির দরজা খুলতে যেতেই আবার এরেন তার হাত টেনে ধরল। এভাবে কয়েকবারই ইলোরা এরেনের হাত ছাড়িয়ে চলে যেতে চাইল, কিন্তু এরেন প্রত্যেকবার একই কাজ করল। ইলোরা হেসে বলল,“আবার শুরু করলে তুমি? নিজেও যাবে না আমাকেও যেতে দিবে না?”
এরেন ইলোরাকে কোমর ধরে কাছে টেনে নিল। ইলোরা নিচু স্বরে বলল,“বাড়ির সামনে কী করছো তুমি? ছাড়ো।”
এরেন মুচকি হেসে বলল,“আমার বউকে আমি আদর করছি। তাতে কার কী?”
“উফ্, ছাড়ো তো।”
এরেন ইলোরার গালে নাক ঘষে বলল,“একটু আদর করতে পারো না বরকে?”
ইলোরা কিছু বলার আগেই এরেন তাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল। ইলোরা দুহাতে এরেনের শার্টের কলার খামচে ধরল। চোখ বন্ধ করে ফিসফিস করে বলল,“পাগলামি কোরো না। কেউ এসে পড়বে। ছাড়ো।”
এরেন ইলোরাকে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। ইলোরাও নিঃশব্দে হেসে দুহাতে এরেনের গলা জড়িয়ে ধরে বলল,“এবার ছাড়ো।”
এরেন ইলোরাকে ছেড়ে দিলো। ইলোরা গাড়ি থেকে নামতেই বাড়ির গেট খুলে বেরিয়ে এল সাকিব। ইলোরাকে দেখে বলল,“এসে গেছিস? এরেন ভেতরে যাবে না?”
ইলোরা উত্তরে বলল,“না।”
সাকিব এগিয়ে এসে গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে জানালায় টোকা দিলো। এরেন জানালার কাচ নামাতেই সাকিব বলল,“ভেতরে চল।”
এরেন বলল,“না দোস্ত। বাড়ি চলে যাব এখন।”
“আরে সন্ধ্যার দিকে চলে যাস। তোকে আটকে রাখব না। এখন নাম, কথা আছে।”
“কী কথা?”
“বলছি, ভেতরে চল আগে।”
এরেন সাকিবের কথায় গাড়ি স্টার্ট দিলো। সাকিব গেট খুলে দিলো। এরেন বাড়ির ভেতরে ঢুকে গাড়ি পার্ক করে নেমে গেল। ততক্ষণে ইলোরা ভেতরে চলে গেছে। এরেন সাকিবের সাথে কথা বলতে বলতে ভেতরে চলল।
•
ইলোরার দমফাটা হাসি দেখে এরেন বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে কপাল কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে আছে।এরেনের মুখোভাব দেখে ইলোরার হাসির বেগ আরও বেড়ে যাচ্ছে। এরেন কিছুক্ষণ চুপচাপ ইলোরার হাসি দেখে তারপর বলল,“এত্ত খুশি লাগছে? বিয়ে করবে আবার?”
ইলোরা হাসতে হাসতে উপর নিচে মাথা ঝাঁকিয়ে বলল,“অবশ্যই করব। এমন যোগ্য পাত্র হাতছাড়া করা কি ঠিক, বলো?”
“আচ্ছা, তো বিয়ের ব্যবস্থা করব?”
ইলোরা আবার উপর নিচে মাথা ঝাঁকাল। এরেন বলল,“দু দুবার বিয়ে করেও সাধ মিটেনি?”
ইলোরা এবার ডানে বায়ে মাথা দোলালো। এরেন হুট করে উঠে গিয়ে ইলোরাকে পাঁজাকোলে তুলে নিয়ে বলল,“মিটাচ্ছি তোমার সাধ।”
ইলোরা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে হাসি থামিয়ে বলল,“কী হলো? কোলে করে শ্বশুরবাড়ি দিয়ে আসবে না-কি আমাকে?”
এরেন ইলোরাকে নিয়ে বিছানায় ফেলে দিয়ে বলল,“ঐ যে বললাম, বিয়ের সাধ মিটাব।”
ইলোরা ঢোক গিলে উঠে যেতে নিতেই এরেন হঠাৎ তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। এরেনের আকস্মিক আক্রমণে ইলোরা কিছুটা ভড়কে গেলেও নিজেকে সামলে নিল। সে জানে এরেন তার কাছে আসার বাহানা দেখাতেই শুধু শুধু এমনটা করেছে। এরেনের ঠুনকো রাগ দেখানোর কারণ হচ্ছে সাকিবের সাথে সে বাসায় ঢোকার পর শুনল আজ ইলোরার জন্য একটা বিয়ের সম্বন্ধ এসেছে। বেশ যোগ্য পাত্র। কিন্তু ছেলের পরিবার জানত না যে ইলোরা বিবাহিত। এরেনকে কথাটা বলার সময় এটা নিয়ে অনন্যা, ডালিয়া আর মিথিলা একদফা হাসাহাসি করেছে। তারপর ইলোরা শোনার পর সেও হাসি থামাতে পারেনি। এরেন জানে এটা কাকতালীয় ঘটনা, তবু সবার হাসি দেখে ইচ্ছে করেই ইলোরার ওপর রাগ দেখাল।
ইলোরার বুকে মাথা রেখে শুয়ে তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে এরেন। ইলোরা এরেনের মাথার চুলে বিলি কাটতে কাটতে হঠাৎ করেই আবার মৃদু শব্দ তুলে হেসে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে এরেন তার কোমরে মৃদু চাপ দিয়ে বলল,“আর মাত্র তিনমাস যেতে দাও। তারপর তোমার হাসি বের করব।”
ইলোরা বলল,“দেরি আছে।”
“ওহ্ শোনো। আগামী মাসে তো আমার এক্সাম শুরু।”
“হ্যাঁ, জানি।”
“এখন থেকে বেশি শ্বশুরবাড়ি আসা যাবে না। এক্সামের প্রিপারেশন নিতে হবে।”
“মাঝে মাঝে আসবে না?”
“বলতে পারছি না। খুবই কম আসব। ভার্সিটিতে তো দেখা হবেই।”
“হুম।”
বেশ কিছুক্ষণ দুজন চোখ বন্ধ করে নীরবতায় কাটাল। তারপর নীরবতা ভেঙে ইলোরা জিজ্ঞেস করল,“চা খাবে?”
এরেন ছোটো একটা শব্দ করল,“হুম।”
“ছাড়ো। চা করে নিয়ে আসি।”
এরেন ইলোরাকে ছেড়ে দিয়েই আবার বালিশে মুখ গুঁজে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ল। ইলোরা উঠে ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এল। রান্নাঘরে গিয়ে চা বসানোর সময় অনন্যা এল। সে এসেই বলল,“দে আমি করে দিচ্ছি। তুই যা।”
ইলোরা বলল,“না আপি, আমিই করছি।”
অনন্যা হেসে বলল,“ওহ্! জামাই রাজা বউয়ের হাতের চা খাবে বুঝি?”
ইলোরা গ্যাস অন করে মৃদু হাসল। অনন্যার সাথে কথা বলতে বলতে চা বানিয়ে ফেলল। চা নিয়ে রুমে ঢুকে দেখল এরেন ঘুমে মগ্ন। ইলোরা কাছে গিয়ে দুবার ডাক দিতেই এরেনের কাঁচা ঘুম ছুটে গেল। ইলোরার হাত থেকে চা নিয়ে কাপে চুমুক দিয়ে সে বিছানা ছাড়ল। চা খেতে খেতে ইলোরার সাথে টুকটাক কথাও হলো। চা শেষ করে এরেন ইলোরার হাতে কাপটা ফিরিয়ে দিলো। ইলোরা চায়ের কাপ রেখে এসে দেখল এরেন শার্ট পরছে। ইলোরা এক ভ্রু উঁচিয়ে কিছু একটা ভেবে দৌড়ে গিয়ে এরেনের হাত ধরে আটকে দিলো। এরেন সবেমাত্র শার্টের নিচের দিকের দুইটা বোতাম লাগিয়েছে। ইলোরার বাঁধা পেয়ে সে প্রশ্নভরা দৃষ্টিতে তাকাল। কিন্তু ইলোরা তার দিকে না তাকিয়েই শার্টের বোতাম দুটো খুলে ফেলল। এরেন প্রশ্ন করল,“কী করছো?”
ইলোরা শার্ট টানতে টানতে বলল,“খোলো এটা।”
এরেন দুষ্টু হেসে বলল,“তোমার মতলব কী বলো তো? আমার কিন্তু এখন আদর করার সময় নেই।”
ইলোরা চোখ পাকিয়ে এরেনের শরীর থেকে শার্টটা খুলে নিল। তারপর শার্টটা নিয়ে আলমারিতে রাখতে রাখতে বলল,“বাইরে গেলে এখন থেকে এটা পরা নিষেধ। এটা শুধু আমার সামনে পরবে।”
এরেন হেসে বলল,“কেন? তোমার জামাইকে কেউ চকলেট ভেবে খেয়ে ফেলবে?”
“খেতেও পারে। ঐ মেয়েগুলোকে বিশ্বাস নেই।”
ইলোরা আলমারি থেকে এরেনের আরেকটা শার্ট বের করে হাতে ধরিয়ে দিলো। এরেন শার্টটা পরতে পরতে বলল,“কাল একটু শপিংয়ে যাব তোমাকে নিয়ে।”
ইলোরা বলল,“কাল আবার কেন? গত সপ্তাহেই তো শপিং করলে। আবার কী পছন্দ হয়েছে শুনি?”
এরেন হাতঘড়িটা পরে বলল,“শাড়ি পছন্দ হয়েছে। তোমার পছন্দ হলে কিনে নিব।”
ইলোরা মাথা দুলিয়ে বলল,“একদম না। এই দুই মাসেই তুমি আলমারি ভর্তি করে ফেলেছ। আপাতত আর একটা শাড়িও আমি নিব না। শুধু শুধু টাকা নষ্ট।”
“আমার বউকে আমি যা খুশি কিনে দিব। তোমার কী?”
“বউটা তো আমিই। তাই আমার লাগবে না।”’
“আমার লাগবে।”
ইলোরা খুব ভালো করেই জানে এরেনের সাথে এসব নিয়ে কথা বাড়িয়েও কোনো লাভ হবে না। তাই সে থেমে গেল। চিরুনি নিয়ে এরেনের চুলগুলো সুন্দর করে আঁচড়ে দিলো। এরেন ইলোরাকে নিজের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে কপালে গাঢ় করে একটা চুমু খেল। তারপর ইলোরার হাত ধরে রুম থেকে বেরিয়ে এল। সবার থেকে বিদায় নিয়ে ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
চলবে…………………..🌸