সুপ্ত_প্রেমাসুখ পর্ব-৬২

0
672

#সুপ্ত_প্রেমাসুখ
#ইলোরা_জাহান_ঊর্মি
#পর্বং৬২

পরনে ভারী লেহেঙ্গা, গা ভর্তি গহনা আর মুখে ভারী মেকআপে নববধূর সাজে নিজের ঘরে বসে আছে নাদিয়া। তাকে ঘিরে আছে তার বন্ধুমহল। কিন্তু সবার মাঝে কেবল একজনের শূন্যতা বিরাজমান। সবাই যখন গল্পে মশগুল, তখন নাদিয়া মাঝ থেকে উঠে এসে বেলকনিতে দাঁড়াল। আজ থেকে ঠিক এক মাস তিন দিন আগে পাত্রপক্ষ প্রথম দেখাতেই তাকে পছন্দ করেছিল। তারপর বিয়ের তারিখ ঠিক করা হয়েছিল এক মাস পর। এই এক মাসে শুধু প্রথম দিকে নাদিয়া তাহসিনকে আগের মতোই বুঝানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তাহসিন তার সিদ্ধান্তে অনড় ছিল। বাধ্য হয়েই সে তাহসিনের আশা ত্যাগ করেছিল। এক মাসে তার হবু বর ঈশানের সাথে তার খুব ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। ঈশান ছেলেটাকে তার বেশ ভালোই লাগে। ছেলেটা স্বামী হিসেবে যোগ্য। এখন আর তাহসিনের কথা ভেবে নাদিয়ার চোখের পাতা ভিজে ওঠে না। ঈশান হয়তো তাহসিনের অভাব পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু তবু মনের কোণে কোনো এক শূন্যতা রয়েই গেছে। মাঝে মাঝে গভীর নিশুতি রাতে সেই শূন্যতারা বুকের বাঁ পাশে উত্তাল সমুদ্রের ঢেউয়ের ন্যায় আছড়ে পড়ে। এতকিছুর পরও নাদিয়া আজ নিজেকে সামলে নিয়েছে। সে চায় তাহসিনকে ভুলে ঈশানকে ভালোবাসতে। হয়তো সে সক্ষমও হবে, কিন্তু শূন্যতাটা কোনোদিন ঘুঁচবে কি না সে বিষয়ে সে অবগত নয়।

বেলকনিতে দাঁড়িয়ে নাদিয়া হাতের মুঠোর ফোনটার পাওয়ার বাটন অন করল। কললিস্ট ঘেঁটে কাঙ্ক্ষিত নাম্বারে ডায়াল করল। পর পর কয়েকবার রিং হওয়ার পরই ফোন রিসিভ হলো। কিন্তু ফোনের ওপাশ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া গেল না। নাদিয়া চোখ বন্ধ করে বড়ো করে দম নিয়ে বলল,“হ্যালো, তাহসিন?”

এবার ওপাশ থেকে তাহসিনের শান্ত কন্ঠস্বর ভেসে এল,“কেমন আছিস?”

“ভালো আছি। তুই?”

তাহসিন এই প্রশ্নের উত্তর দিলো না। পালটা প্রশ্ন করল,“বর আসেনি এখনও?”

“তুই আসবি না?”

“কেন? অপেক্ষায় আছিস?”

“ইনভাইট করেছিলাম তো। এলি না কেন?”

তাহসিন হেসে বলল,“আজকাল কারো সুখ সহ্য হয় না রে। বড্ড হিংসুটে হয়ে গেছি।”

“কেউ একজন হয়তো নতুনভাবে আসবে তোর জীবনে, অগোছালো জীবনটা নতুনভাবে সাজিয়ে তুলতে। তখন তুইও সুখী হবি।”

“হয়তো, হয়তো না। ক্যারিয়ার গড়ব, প্রতিষ্ঠিত হব, নিজের পায়ে দাঁড়াব। তারপর হয়তো পরিবারের চাপে পড়ে কাউকে না কাউকে জীবনের সঙ্গে জড়াতেই হবে। হয়তো সেই মানুষটার প্রতি আমার ভালোবাসা থাকবে। কিন্তু তার প্রতিও আমার ভালোবাসা কখনোই কমবে না, যার জন্য আমি ‘ভালোবাসা’ শব্দটাকে অনুভব করতে পেরেছিলাম। তোর জন্য অনেক অনেক দোআ রইল নাদি। তোর দাম্পত্য জীবনে ভালোবাসার অভাব যেন না হয়।”

নাদিয়া কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে তাহসিন কল কেটে দিলো। নাদিয়া কান থেকে ফোন নামিয়ে শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। আজ আর তার চোখের কার্নিশ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল না। শুধু মুখটা করুণ দেখাল। এমন সময় বাইরে থেকে ‘বর এসে গেছে’ শব্দটা কানে আসতেই সে আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে গভীর তপ্ত দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। যার শব্দ জানান দিলো, শূন্যতাটা রয়েই গেল।


বিছানায় অলস ভঙ্গিতে শুয়ে আছে টুম্পা। নাদিয়ার বিদায়ের পর ওদের বাড়ি থেকে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। টুম্পা এসেই ড্রেস চেঞ্জ করে সটান শুয়ে পড়েছে। ফোনটা হাতে নিয়ে নেট অন করতেই বিভিন্ন নোটিফিকেশনের ভিড়ে কয়েকটা মেসেজের নোটিফিকেশন দেখে টুম্পা মেসেঞ্জারে ঢুকে অবাক হলো। এই ছেলে হঠাৎ তাকে মেসেজ করছে কেন বুঝে উঠতে পারল না। পর পর তিনটা মেসেজ করেছে। যাতে শুধু লেখা, হাই, কেমন আছো, তোমার সাথে কথা আছে। টুম্পা মেসেজ সিন করেও রেখে দিলো। ছেলেটার মেসেজ দেখে হঠাৎ করেই তার প্রচন্ড রাগ উঠে গেল। নেট অফ করতে যাবে ঠিক তখনই আবার মেসেজ এল,“রিপ্লাই দিচ্ছ না কেন? আমি তোমার সাথে গল্প করতে না, একটা খবর জানাতে মেসেজ করেছি।”

মেসেজটা দেখে টুম্পার কপালে হালকা ভাঁজ পড়ল। সে রিপ্লাই দিলো,“কী খবর?”

“তোমার সাথে সৃজনের যোগাযোগ একদমই নেই তাই না?”

টুম্পার চোয়াল শক্ত হয়ে এল। সৃজনের এই বন্ধুটা যে তার সাথে ফেসবুকে এড ছিল, তা সে পুরোপুরি ভুলে বসেছিল। এতদিন পর আজ এমন মেসেজ করায় সৃজনের প্রতি জমে থাকা রাগটুকুও এখন ছেলেটার প্রতি জেগে উঠল। টুম্পা শক্ত মুখে রিপ্লাই দিলো,“এই ফালতু কথা বলতে তুমি মেসেজ করেছ?”

“না, আসলে একটা ঘটনা ঘটে গেছে। সৃজন গত ছয় মাস আগে লন্ডন চলে গিয়েছিল। তারপর থেকে আর ওর সাথে আমার যোগাযোগ নেই। আজ ওর এক আত্মীয়ের সাথে আমার দেখা হয়েছিল। তার থেকে শুনলাম সৃজন না কি লন্ডন যাওয়ার তিন মাসের মাথায় ধর্ষণ মামলায় ফেঁসে গেছে। আর সেখানকার আদালত ওকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে।”

মেসেজটা পড়ে টুম্পা স্তব্ধ হয়ে গেল। মিনিট দুয়েক শান্ত দৃষ্টিতে মেসেজটার দিকে তাকিয়ে থেকে তাচ্ছিল্যের হাসি মুখে টেনে বিড়বিড় করে বলল,“ঈশ্বর ছাড় দেন, কিন্তু ছেড়ে দেন না। পরকালের শাস্তি তুই ইহকালেই ভোগ কর। অন্তু মরেছিল একদিনই, আর তুই মরবি প্রতিদিন। বেঁচে থেকেও জেলে ধুঁকে ধুঁকে মরবি।”

কথাগুলো বিড়বিড় করতে করতেই টুম্পার গাল বেয়ে টপ টপ করে ঝরে পড়ল কয়েক ফোঁটা অশ্রুজল। বুকের মধ্যে ভারী পাথর চাপা দিয়ে সে দিন পার করলেও, রাতটা যেন জঘন্য হয়ে ওঠে। অন্তু নামক অসুখটা আজকাল তাকে কুঁড়ে-কুঁড়ে খায়। কিন্তু তবু আজ শুধু আফসোস আর দীর্ঘশ্বাস ছাড়া আর কোনো পন্থাই খোলা নেই।


ভার্সিটি গেইটের সামনে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এরেন। অদূরেই ইলোরাকে দেখা যাচ্ছে। বান্ধবীদের সাথে এদিকেই আসছে। ইলোরা, ডালিয়া আর অরিশা এসে এরেনের সামনে দাঁড়াতেই এরেন হাসিমুখে বলল,“শ্যালিকাগণ, কেমন আছো?”

অরিশা হেসে বলল,“ভালো আছি ভাইয়া। আপনি কেমন আছেন?”

“ভালো। ডালিয়া, আরফিন ভাই কেমন আছে?”

ডালিয়া মেকি হেসে বলল,“সে তো সবসময়ই ভালো থাকে।”

“কেন এমন সংসার করছো বলো তো? এখনও সময় আছে, চলে এসো। এর চেয়ে ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দিব তোমাকে। তাছাড়া তাহসিন তোমাকে ফিরিয়ে দিবে না। বরং সানন্দে গ্রহণ করবে। আর কতবার বললে তুমি বুঝবে?”

“আমার পোড়া কপাল নিয়ে তাহসিনের সুন্দর জীবনটা কেন নষ্ট করব ভাইয়া? ভাগ্যে যা লেখা ছিল তা-ই হয়েছে। দেখি কত সহ্য করতে পারি।”

ডালিয়ার অসহায় মুখে এরূপ কথা শুনে উপস্থিত সবাই দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ইলোরা এরেনকে উদ্দেশ্য করে বলল,“এখন এসব কথা রাখো। ডালিয়াকে রিকশা ডেকে দাও।”

এরেন একটা রিকশা ডাকল। ডালিয়া সবার থেকে বিদায় নিয়ে রিকশায় উঠে বসল। রিকশা দৃষ্টির আড়াল হতেই অরিশা বলল,“আমিও যাই।”

এরেন বলল,“রিকশা ডেকে দেই, দাঁড়াও।”

অরিশা আমতা-আমতা করে বলল,“লাগবে না ভাইয়া। আমি হেঁটে যাব।”

এরেন অবাক হয়ে বলল,“কী বলো! এতদূর হেঁটে যাবে কীভাবে?”

ইলোরা হেসে বলল,“আরে ওকে ছাড়ো তো। ওর আশিক ওর জন্য অপেক্ষা করছে। কিছুদূর হেঁটে গিয়ে তার সাথে দেখা করবে।”

এরেন মুখটা ছুঁচালো করে বলল,“ওওও। তা শ্যালিকা, সবাই তো বিয়ে করে ফেলল। এখন শুধু বাকি আছো তুমি আর টুম্পা। তুমি বরং টুম্পাকে টেক্কা মারো।”

অরিশা লাজুক হেসে বলল,“এত তাড়াতাড়ি না। অনার্স শেষ করে তারপর সিদ্ধান্ত নিব।”

“ফ্যামিলিকে ম্যানেজ করতে পারবে তো? তোমার এই বান্ধবীর অবস্থা তো দেখেছিলে।”

ইলোরা বলল,“আমার মতো সিচুয়েশনে পড়তে হবে না ওকে। ওর বাবা-মা ওর পছন্দের ছেলের সাথেই বিয়ে দিবে বলেছে। কিন্তু শয়তানটা এখনও ওর বাবা-মাকে জানায়নি মাহাদি ভাইয়ের কথা। অথচ মাহাদি ভাই অলরেডি তার ফ্যামিলিকে জানিয়েছে ওর কথা।”

এরেন অরিশাকে বলল,“অরিশা, সময় থাকতে তুমিও বলে দাও। নইলে পরে দেখবে আন্টি-আঙ্কেল অন্য ছেলে পছন্দ করে বসে আছেন।”

অরিশা মাথা দুলিয়ে বলল,“বলব। এখন আমি আসছি, নইলে আজ বাসায় ফিরতে দেরী হয়ে যাবে। বাই।”

ইলোরা হাত নেড়ে বলল,“বাই।”

এরেন বলল,“সাবধানে যেয়ো, আর হবু ভায়রা ভাইকে আমার তরফ থেকে শুভ কামনা জানিয়ো।”

অরিশা হেসে উলটো পথে হাঁটা দিলো। এরেন আর ইলোরা গাড়িতে উঠে বসল। সবসময়কার মতোই এরেন এক হাতের মুঠোয় ইলোরার হাত ধরে অন্যহাতে স্টেয়ারিং সামলালো। কিছুদূর গিয়েই এরেন ব্রেক কষলো। ইলোরা সিটে গা এলিয়ে দিয়েছিল, গাড়ি থেমে যাওয়ায় মাথা উঁচু করে রাস্তার দিকে তাকিয়ে প্রশ্নভরা দৃষ্টিতে এরেনের দিকে তাকিয়ে বলল,“এখানে থামালে কেন?”

এরেন হেসে বলল,“ক্ষুধা পেয়েছে। চলো এই রেস্টুরেন্ট থেকে লাঞ্চ করে যাই।”

“আম্মী অপেক্ষা করবে তো আমাদের জন্য।”

“ফোন করে বলে দিচ্ছি। চলো নামো।”

এরেন আর ইলোরা গাড়ি থেকে নেমে পাশের রেস্টুরেন্টে ঢুকল। যেতে যেতে এরেন আন্নি হককে ফোন করে জানিয়ে দিলো তারা আজ বাইরে থেকে লাঞ্চ করে ফিরবে, সে যেন তাদের জন্য অপেক্ষা না করে খেয়ে নেয়। রেস্টুরেন্টে ঢুকে কয়েক পা এগোতেই এরেন দাঁড়িয়ে পড়ল। ইলোরা ভ্রুকুটি করে প্রশ্ন করল,“থামলে কেন?”

এরেন চোখ দিয়ে একদিকে ইশারা করতেই ইলোরা সেদিকে তাকাল। তারপর সে চোখ দুটো সরু করে বলল,“ওরা এখানে কী করছে?”

এরেন সামনের দিকে পা বাড়িয়ে বলল,“চলো, দেখা যাক।”

ইলোরা এরেনের পেছন পেছন চলল। এরেন দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে কোণের একটা টেবিলের কাছে গেল। গলা ঝাড়া দিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসতেই রনি আর মিথিলা ভূত দেখার মতো চমকে উঠল। এরেন দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,“আরে, ব্যাংকার সাহেব আজকাল টিফিন ক্যারিয়ার ফেলে রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করছেন না কি?”

রনি অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে নড়েচড়ে বসে মেকি হেসে বলল,“তোরা এখানে?”

ইলোরা এরেনের পাশের চেয়ার টেনে বসে বলল,“ডিস্টার্ব করলাম?”

রনি একইভাবে হেসে বলল,“আরে না না।‌ হঠাৎ করে চলে এলে তো তাই আর কী।”

ইলোরা মিথিলার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,“আজকাল রেস্টুরেন্টে ক্লাস চলছে না কি?”

মিথিলা অসহায় মুখ করে এলোমেলো দৃষ্টিতে বোনের দিকে তাকাল। ইলোরার সাথে চোখাচোখি হতেই দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে আমতা-আমতা করে বলল,“ঐ, আমার ক্লাস আজ একঘন্টা আগে শেষ হয়েছে। ভাই স্কুলে একটা কাজে আটকে গেছে। তাই রনি ভাইয়াকে ফোন করে বলে দিয়েছে আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিতে।”

এরেন অবাক হবার ভান করে এদিক-ওদিক তাকিয়ে বলল,“কিন্তু এটা তো বাড়ি বলে মনে হচ্ছে না।”

রনি বলল,“আসলে আমার খুব ক্ষুধা পেয়েছে, তাই ভাবলাম আগে কিছু খেয়ে নিই। মিথিলা রাজি হচ্ছিল না রেস্টুরেন্টে আসতে, আমিই জোর করে নিয়ে এসেছি।”

এরেন মাথা দুলিয়ে বলল,“আচ্ছা, বুঝলাম। তো, হবু ভায়রা ভাইকে কী খাওয়াবেন ব্যাংকার সাহেব? জলদি অর্ডার করুন।”

রনি কপাল কুঁচকে বলল,“শালা, তুই এই এক কথা বলে বলে এই পর্যন্ত আমার কত টাকা গিলেছিস তার হিসেব রেখেছিস?”

এরেন অলস ভঙ্গিতে হামি তুলে বলল,“আমার পেট খালি থাকলে আবার মাথা এলোমেলো হয়ে যায়। দেখা গেল ভুলবশত আমি মিথিলার জন্য পাত্র ঠিক করে ফেললাম।”

রনি গাল ফুলিয়ে ইলোরাকে বলল,“আমি কিন্তু যেকোনো সময় তোমার জামাইর পেট ফুঁটা কইরা ফেলমু ইলোরা। বাটপারটায় এই ব্ল্যাকমেইল কইরা কইরা কবে জানি আমারে ভিখারি বানাইয়া ছাড়ব।”

ইলোরা আর মিথিলা ফিক করে হেসে উঠল। রনি বিরক্তি নিয়ে মিথিলার দিকে তাকিয়ে বলল,“হাস হাস, ইচ্ছা মতো হাস। তোর এই দুলাভাই এমন কইরাই তোর না হওয়া সংসারে লাল বাতি জ্বালাইব।”

এরেন বলল,“সার্কাস রাখ আর অর্ডার কর তাড়াতাড়ি।”

রনি বিরক্তি নিয়ে ওয়েটারকে ডাকল। এরেনের পছন্দ মতো খাবার অর্ডার করল। খাবার চলে এল কিছুক্ষণের মধ্যেই। খেতে খেতে চারজনের বেশ জমজমাট একটা আড্ডা হয়ে গেল। খাবার শেষ করে বিল পেইড করার সময় রনির আগে এরেনই টাকা বের করে দিলো। রনি এক ভ্রু উঁচিয়ে বলল,“কী হলো?”

এরেন মুচকি হেসে বলল,“শ্যালিকা আর হবু ভায়রা ভাইকে আমার আর আমার বউয়ের পক্ষ থেকে ট্রিট দিলাম যাহ্। আমার আবার মনটা বহুত বড়ো তো।”

রনি বলল,“তোর মন না, বল যে পেট বড়ো। খেয়ে খেয়ে আমাকে শেষ করে দিলি।”

এরেন অবাক হয়ে ইলোরাকে বলল,“এই, তুমি চুপ আছো কেন? তোমার জামাইকে অপমান করা হচ্ছে দেখছো না? আমার পেট বড়ো, না কি ছোটো তা ওদের বলো।”

ইলোরা ঠোঁট জোড়া প্রসারিত করে বলল,“আমি আর কী বলব? তোমাকে তো আমার অনেক আগে থেকে তোমার বন্ধুই চেনে।”

“মানে! তুমি ইনডিরেক্টলি রনির পক্ষে কথা বলছো? এই মিথিলা, তুমি কিছু বলবে না?” তোমার দশটা না, পাঁচটা না, একটা মাত্র দুলাভাইকে অপমান করা হচ্ছে।”

মিথিলা ইলোরার মতো করেই বলল,“আমি তো আপ্পিরও অনেক পর থেকে আপনাকে চিনি ভাইয়া। আমি কী বলব?”

এরেন টেবিলে থাপ্পড় মেরে বলল,“আচ্ছা! দুই বোন এখন আমার বিপক্ষে কথা বলছো। রনির বাচ্চা, তোর বিয়ার সাধ আমি মিটাই দিমু। জাস্ট ওয়েট কর।”

রনি চোখ দুটো ছোটো করে বলল,“হোয়াট ডু ইউ মিন বাই রনির বাচ্চা? আমার তো এখনও বিয়েই হলো না। বাচ্চা এল কোত্থেকে? আর যেখানে বাচ্চাই নেই, সেখানে তার বিয়ের কথাই বা এল কোত্থেকে? এই ইলোরা, তোমার জামাইর মাথায় গন্ডগোল আছে। তাড়াতাড়ি ট্রিটমেন্ট করাও।”

এরেন প্রতিবাদ করে বলল,“এখন উলটা-পালটা কথা কইলেও কাজ হইব না মামা। তোমার ভবিষ্যৎ অন্ধকার কইরা ছাড়মু আমি। এক্কেবারে দেবদাস লাইট বানামু।”

ইলোরা কপাল চাপড়ে বলল,“দোহাই আল্লাহর, এবার থামো তোমরা।”

মিথিলা অসহায় মুখে বলল,“একটুর জন্য কালা হলাম না।”

এরেন মিথিলাকে বলল,“এই শালারে বিয়া করলে দুইদিনেই কালা হইবা মিস শ্যালিকা। চিন্তা নাই।”

ইলোরা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,“তোমরা কি উঠবে? না কি আজ এখানেই থেকে যাবে?”

ইলোরার তাড়ায় সবাই টেবিল ছাড়ল। রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে রনি-মিথিলার থেকে বিদায় নিয়ে এরেন-ইলোরা গাড়িতে উঠে বসল। এরেন গাড়ি স্টার্ট করতেই রনিও তার বাইকে চড়ে বসল। মিথিলা রনির পেছনে উঠে বসতে বসতে কটাক্ষ করে বলল,“এত্ত ঝগড়া কীভাবে করেন আপনি? ঝগড়াটে লোক!”

রনি ঘাড় ঘুরিয়ে অবাক কন্ঠে বলল,“আমি ঝগড়াটে? আর তোর আদরের দুলাভাই? শালা আমার পেছনে কীভাবে উঠেপড়ে লাগে তা চোখে দেখিস না।”

মিথিলা কপাল কুঁচকে বলল,“সবই দেখেছি। এখন বাইক স্টার্ট করবেন, না কি নেমে যাব?”

রনি মাথা দুলিয়ে বাইক স্টার্ট করল। ইচ্ছে করেই রনি বাইকটা জোরে স্টার্ট করল, বিধায় মিথিলা আঁতকে উঠে চোখ-মুখ খিঁচে দুহাতে রনিকে জাপটে ধরল। রনি বাইকের স্পীড কমিয়ে হো-হো করে হেসে উঠল। মিথিলা রনিকে ছেড়ে দিয়ে রনির কাঁধে হালকা করে ঘুষি মেরে বলল,“বজ্জাত লোক!”

রনি হাসতে হাসতেই বলল,“বজ্জাত লোক লাভস ইউ ডিপলি পিচ্চি।”

চলবে…………………🌸

(কালকে এক্সাম আর আমি বসে বসে গল্প লিখলাম। আমি বুঝি না, পেইজ থেকে অনেকেই গল্প পড়ে, কিন্তু রেসপন্স কেন করে না?🙂)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here