#সৃজা
পর্বঃ২৯
লেখিকাঃআরুনীয়া চৌধুরী
সৃজার মৌন দৃষ্টিতে চোখ রেখে ইমরান চৌধুরী খানিকটা ভরকে গেলেন।মেয়েটা হয়তো আবেগে কেঁদে ফেলবে।খুব দ্রুতই নিজেকে সামলে নিল সৃজা।কয়েকদিন হল তার মন আবেগি হয়ে উঠছে বেশি।বিশেষ করে সাফওয়ানের ব্যবহারে পরিবর্তনের পর থেকে তার মন কাঁদে বেশি,বিশেষ সময়ে তা বাইরেও এসে পরে, যা সৃজাকে বড়ই অস্বস্তি দেয়।এবারও তাই ঘটল অস্বস্তিতে নিজের শ্বশুর মশায়ের দিকে তাকাতে পারছেনা।এতো লজ্জা কোথা থেকে তাকে পেয়ে বসে তা মাঝে মাঝে ভেবে অবাক হয় সৃজার চেতন মন।মৌনতা ভেঙে মিনমিন করে সৃজা বলল
“আমিও যেতে চাইছিলাম বাবা,আপনি নিজে থেকে বলায় আমি খুশি হয়েছি।ধন্যবাদ আপনাকে। ”
“আমাকে ধন্যবাদ দেয়ার কিছু নেই।তোমার বিদেশ যাওয়ার পেছনে আমার নিজেরও স্বার্থ রয়েছে।”
ওহ!তাহলে স্বার্থের ঘোরেই কথা বলে সবাই।তবে কি স্বার্থ থাকে পারে ওনার।ইমরান চৌধুরী হয়তো বুঝতে পারলেন চায়ের কাপটা পূনরায় হাতে নিয়ে বললেন
“ভাবছো কি স্বার্থ তাইতো?তাহলে শুনো আমি চাইছি তুমি ভালো করে গ্রাজুয়েশনটা কমপ্লিট করলে আমার কোম্পানি একজন দায়িত্বশীল সিইও পাবে এবং পরবর্তীতে অফিস এবং বাড়ি একইসাথে সামলাতে তোমার কোন সমস্যা হবেনা।আর তাছাড়া সাফওয়ানের চাপটাও কমবে,ছেলেটা একা হাতে সব সামলাচ্ছে,এতে করে সৃষ্টিকর্তা না করুক খুব সহজেই অসুস্থ হয়ে যাওয়ার প্রবনতা রয়েছে।”
সৃজা এবার বুঝতে পারল ইমরান চৌধুরীও একজন দায়িত্বশীল পিতা।তার মাঝেও ভালো বাবার গুণ রয়েছে,নিজ সন্তানকে সুস্থ দেখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা আগেই নিতে চান তিনি।কিন্তু সৃজা!সে কি ভালো স্ত্রী হওয়ার ধর্ম পালন করতে পারছে?হয়তোবা না।
“রেডি হয়ে থেকো আগামিকাল সকালে তুমি যাবে, সাফওয়ান দিয়ে আসবে তোমায়।”
“জ্বী আচ্ছা।”
এর মধ্যে সাফিয়া চৌধুরীর আবির্ভাব ঘটল।তিনিও বিকেলে প্রকৃতি বিলাসে বেরিয়েছেন।তবে বাইরের সৌন্দর্যটা দেখবে কম খুতগুলো চোখে পরবে বেশি তার।হয়তো মালিকেও এজন্য কথা শুনতে হতে পারে,এ গাছে পানি দেয়া হয়না মনে হচ্ছে,ওই গাছের পাতা ছাটা ভালো হয়নি,গাছের ফুল কেন কম?এরকম নানা প্রশ্নে জর্জরিত হবে মালি বেচারা।
কিন্তু সৃজা এর মধ্যে থাকতে চাইলো না তাই কথা শেষে অন্দরমহলের দিকে হাটা দিল সে।ইমরান চৌধুরী পলকহীন সেদিকেই তাকিয়ে রইলেন।এই মেয়েটাকে নিয়েও তার এখন স্বপ্ন বোনা শুরু হয়েছে।চৌধুরী ইন্ডাস্ট্রিকে আরো উচ্চ পর্যায়ে নেয়ার একটি ধাপে পরিণত হবে তার বউমা।
বাসার ভিতরে ঢুকলেও আনমনে হাটছে সৃজা, অব্যাসবসত সে এগিয়ে যাচ্ছে।তার মাথায় সব কথা ছেড়ে একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে আগামীকাল সাফওয়ান তাকে বাড়ি পৌঁছে দিবে।আচ্ছা সে কি কষ্ট পাবে আমাকে নিয়ে যাওয়ার সময়?আর আমাকে ছেড়ে কি সে থাকতে পারবে এ-কদিন।কেনো থাকতে পারবেনা পাঁচ বছর থাকতে পারলে এ-কদিন নাহয় তার প্র্যাক্টিসই করবে।সৃজা মনকে প্রবোধ দিল।সবশেষে তার মনে উকি দিল এতো কাজ ছেড়ে সাফওয়ান কেনো তাকে নিয়ে যাবে?ভাবতে ভাবতে সাফওয়ানের রুমে পৌঁছে গেল সে।এই রুমটাই এখন তার বড্ড প্রিয়।সাফওয়ান বাসায় না থাকলেও মনে হয় আশেপাশেই আছে তাই সৃজা ঠিক করল এ রুমেই পড়বে আজ, নো স্টাডি রুম।
সন্ধ্যার দিকে পড়তে বসলেও রাত ১০টার দিকেই ঘুমিয়ে কাঁদা হয়ে গেল সৃজা।অভ্যাসবসত সে এখনো চেয়ারে বসে টেবিলে বইয়ের উপর মাথা দিয়ে রেখেছে।সাফওয়ান এলো ১১টার দিকে,এসে দেখল রুমের বেহাল দশা।বিছানায় এদিকে সেদিকে শিট ছড়িয়ে পরে আছে।কয়েকটা বই ল্যাম্প টেবিলটার কিনারে।সবশেষে নিজের অর্ধাঙ্গিনীকে দেখল টেবিলে মাথা রেখে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমিয়েছে।সব ক্লান্তি যেনো মুহূর্তেই ক্ষানিকটা উবে গেল।
সাফওয়ান অফিস ব্যাগটা নিঃশব্দে রাখল,রিস্ট ওয়াচটাও তাই করল।কাবার্ড থেকে বাসায় পরার ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকল মৃদু পায়ে।ফিরে এসে দেখল সে এখনো ঘুমে তাই কালবিলম্ব না করে কোলে তুলে নিল।তারপর আস্তে করে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে উঠে যাওয়ার সময় বুঝতে পারল সৃজার হাত তার পোলো শার্টের কলারে।আস্তে করে হাতটা সরিয়ে সাফওয়ান মিনমিন করে বলল
“যেগে থাকতে তো ছুঁতে দাওনা আর ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে নিজ ঠিকই ছুয়ে দাও।”
মনের সাথে অনেক বাকবিতন্ডার পর ঠিক করল ওষ্ঠে নয় কপালে একটা চুমু দিয়েই সরে যাবে।কপালে ঠোঁট ছোঁয়ানোর আগমুহূর্তে সৃজা চোখ মেলে তাকালো সাফওয়ানকে অবাক করে দিয়ে সৃজা বলল
“এতক্ষণ লাগে একটা চুমু দিতে?” কথাটা বলেই আবার চোখ বন্ধ করে ফেলল।সাফওয়ান ক্ষণিকের জন্য চমকালেও বুঝতে পারল ঘুমের ঘোরে কথা বলেছে।এসময় তার মনে নতুন ভাবনা এলো তাহলে কি সৃজা তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে।কথাটা মনে মনে ভাবতেই শিহরণ বয়ে গেল তার মনে।আর দেরি না করে সৃজার ওষ্ঠাধরে নিজের ওষ্ঠ ছোয়ালো গভীরভাবে।সৃজা যেন এবার তড়াক করে চোখ খুলল,চোখগুলো গোলগোল করে কতক্ষণ সময় নিয়ে বুঝল কি হচ্ছে।তবে বুঝতে পেরে সাফওয়ানকে না সরিয়ে সে ও রেসপন্স করল।সাফওয়ান এতোটাই উন্মত্ত ছিল প্রেয়সীর ওষ্ঠাধরে যে বুঝতেই পারলোনা অসম্ভব কিছু হচ্ছে আজ।যখন তার মস্তিষ্ক সে সিগনাল দিল তখন আর ফিরে আসার সময় ছিল না কারন তার অর্ধাঙ্গিনী আজ স্বেচ্ছায় তার কাছে এসেছে।কয়েক মুহূর্ত যেতেই সাফওয়ান নিজে থেকে সরে এলো।সৃজা কতক্ষণ তাকিয়ে থেকে দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলল।ইস!কি লজ্জা কি লজ্জা।নির্লজ্জের মতো এটা কি করল সৃজা।
সাফওয়ান নিজেকে সামলে বড় বড় কয়েকটা শ্বাস নিয়ে বলল
“চলো খাবে।আমার ডিনার করা হয়নি।”
সৃজা খুশিমনে সাফওয়ানের পিছুপিছু ডাইনিংয়ে গেল।সাফওয়ানের অভিমান কিছুটা কমেছে মনে হল তার।সবকিছু গুছিয়ে উপরে এসে খেয়াল করল সাফওয়ান তার আগেই শুয়ে পরেছে।চোখের পাতা বন্ধ তার,আশ্চর্য এতো তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেল।লাইটটা নিভিয়ে সৃজাও বিছানায় বসল,তার মনে হল সাফওয়ান সত্যিই ঘুমিয়ে পরেছে।সৃজা নিজেও শুয়ে পরল,সাফওয়ানের থেকে কিছুটা দূরত্বে তার বালিসটা থাকলেও নিজ দায়িত্বে সেই দূরত্ব ঘুচিয়ে দিল।ঘুমানোর ভান করা সাফওয়ান তখন ভাবলো বালিসের মতো এভাবেই যদি সৃজা তার এবং নিজের দূরত্বটা ঘুচিয়ে দিত।
সাফওয়ানের মুখোমুখি হয়ে কতক্ষণ তাকিয়ে থেকে আস্তে করে তার বুকে জায়গা করে নিল সৃজা।সাফওয়ান যেনো এই সময়টার অপেক্ষা করছিল।হয়তো আরো কিছুদিন প্রেয়সীকে জড়িয়ে ঘুমানো হবেনা তাই কিছু সময়ের জন্য অভিমানটা একপাশে সরিয়ে সেও পরম আবেশে সৃজাকে বুকে ঠাই দিল।সৃজাতো মনে করেছে ঘুমের ঘোরেই হয়তো সাফওয়ান তাকে জড়িয়ে ধরেছে,তবে এতেই সে খুশি।
সকাল সকাল উঠেই সৃজা আগে লাগেজ গোছানো শুরু করল।তারপর নিজেও রেডি হওয়া শুরু করল।সাফওয়ান তখন ওয়াশরুমে,ঝর্ণার আওয়াজ রুমেও আসছে তবে তা ক্ষীণ, অর্থাৎ সাফওয়ান গোসল করছে।আওয়াজটা বন্ধ হতেই সৃজা তড়িঘড়ি করে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে একটা গলার হার পরার চেষ্টা করল।কিন্তু লাগাতে পারছেনা।সাফওয়ান ততক্ষণে টাওয়েল গায়ে সৃজার পেছনে এসে দাড়িয়েছে।মৌনতা বজায় রেখেই হারটা পরিয়ে দিল সাফওয়ান।সকালে ভেজা হাতের ছোয়ায় সৃজা কিছুটা কেঁপে উঠল।
সাফওয়ান নিজেও রেডি হয়ে নিল।সৃজার তার শাশুড়ীর রুমে গেছে ততক্ষণে।বৌমাকে দেখে নিজের মনটা খারাপ হয়ে গেল সাফিয়া চৌধুরীর।কি লক্ষ্মী প্রতিমা বৌমা তার,অথচ গায়ে গয়নাই পরতে চায়না।এইযে এখন বাবার বাড়ি যাবে একটা পাতলা হার পরে আছে,এটা যেনো কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি।তাই নিজ হাতে পছন্দের কিছু ভারী গয়না পরিয়ে দিলেন।সৃজার কপালে একটা চুমু খেয়ে বলল
“আমার ঘরের লক্ষ্মীকে খুব মিস করবো।না গেলে হয় না মা?”
সৃজা তড়িৎ শাশুড়ীকে জড়িয়ে ধরল।বিদায় মুহূর্তটাও তার জন্য আনন্দের, এতো আনন্দ কেনো তার জীবনে?এমনও শাশুড়ী হয় বুঝি!!সাফিয়া চৌধুরী বললেন ”
“তাড়াতাড়ি এসে পরো কিন্তু, তুমি চলে গেলে আমিতো একা হয়ে যাবো।” সৃজার মায়া হলো শাশুড়ীর জন্য সত্যিই তো তিনি একা হয়ে যাবেন। টিউলিপ ও তো নেই।তারপর নিজে থেকে ভেবেই বলল
“আপনিও আমার সাথে চলুন আম্মা।” সাফিয়া চৌধুরীর মুখে হাসি খেলে গেল।
“এই বাড়ি ছেড়ে যে আমার মরণও নাই মা।তুমিতো নিজেই দেখো ওরা কি পরিমান অনিয়ম করে আর নিজের সংসার ছেড়ে তো আমি বেশিদিন থাকতেই পারিনা।”
“আম্মা তারপরও চলুন না” সৃজা বায়না শুরু করল।
সাফিয়া চৌধুরী পরে গেলেন বিপাকে।পরে বললেন
“তুমি এবার যাও আমি নাহয় পরের বার যাবো।ঠিক আছে?”
“হুম ঠিক আছে।”
নিচ থেকে সাফওয়ানের ডাক এলো।
“নিচে চলো নাহলে সাফী পাগল হয়ে যাবে।এতোদিনে তো বুঝতে পেরেছো ও লেট পছন্দ করেনা।”
গাড়ি চলছে আপন গতিতে।সৃজাদের পেছনেও একটা গাড়ি চলছে তাতে নিরাপত্তা রক্ষীরা রয়েছে।এই গাড়িটা সাফওয়ান ড্রাইভ করছে সৃজা তার পাশের সিটে।সৃজা ভেবে পায় না এই লোকটা এতো ঘাড়ত্যাড়া কিভাবে হলো?ড্রাইভারকে পেছেনের গাড়িতে রেখে সে নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করছে এর চেয়ে ফালতু মানুষ সে দুটো দেখেনি।সৃজার শ্বশুর নিরাপত্তার কথা ভেবে বাড়ির সবচেয়ে ভালো ড্রাইভারটা তাদের গাড়িতে দিয়েছিল আর তার পুত্র কি না নিজেই গাড়ি চালাচ্ছে।একথা যখন জানবে তখন কি ভাববে সৃজার শ্বশুর সে নিয়েই চিন্তায় রয়েছে সৃজা।
জানালার কাচ খোলা সেদিকেই দৃকপাত করে রয়েছে সৃজা।যদিও অতিরিক্ত বাতাসে চোখ খোলা দায় তবুও এই লোকটার দিকে তাকাবেনা সে।তাই নীরবতা ভেঙে সাফওয়ানই বলল
“এতো রাগ করার কি হল?আমি কি প্রথমবার গাড়ি চালাচ্ছি।আর তাছাড়া তোমার অসুবিধাটা কোথায়?ওহ্ তুমি কি পেছনে বসে আমার সাথে একান্তে সময় কাটাতে চাইছিলে?”
সৃজা ততক্ষণে রাগে ফুসছে তবে সেটা রাস্তার গুটিকয়েক মানুষই দেখতে পেল।সাফওয়ান আবারো রাগানোর জন্য বলল
“আরে তোমার মনের কথা ভেবেই তো ড্রাইভার নিলাম না যাতে রোমান্সে থার্ড পারসন না থাকে।”
সৃজা এবার নিজের উড়ন্ত চুলগুলোকে কানের পেছনে গুজে সাফওয়ানের দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল
“আর একটা কথা বললে আমার থেকে খারাপ কেউ হবেনা।”
সাফওয়ান সে দৃষ্টি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে শান্ত কন্ঠে বলল
“তুমি খারাপ হবে কেন?খারাপ তো আমি তাই নিজের ওয়াইফ পাঁচ বছরের জন্য শাস্তি দিয়ে অন্য কোথাও পারি দিচ্ছে।”
রাগী দৃষ্টি নিমিষেই শান্ত দৃষ্টিতে পরিণত হল।সৃজার বুকটা ধ্বক করে উঠল।এই কথার পৃষ্ঠে কি বলবে তা ভেবে পেলনা,তাই পূণরায় বাইরে দৃষ্টি মেলল।সাফওয়ান সেদিকে একবার তাকিয়ে ড্রাইভিং এ মন দিল।
বর্তমানে সৃজার চুলের তীব্র গন্ধ সাফওয়ানকে ঘায়েল করছে।সে যদিও ঘুমিয়ে আছে সিটে মাথা এলিয়ে,কিন্তু তীব্র বাতাসে চুলগুলো সব সাফওয়ানের মুখে যেয়ে পরছে।সাফওয়ান গাড়ির কাঁচটা উঠিয়ে দিল এরপর সৃজার মাথাটা নিজের কাঁধে নিয়ে নিল খুব সাবধানে।সৃজাও সাফওয়ানের এক হাত জড়িয়ে ঘুমিয়ে রইল।
প্রায় ৫ ঘন্টা জার্নির পর সৃজা কাঙ্ক্ষিত জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছে।গ্রামের মাটির সুগন্ধ নাকে পৌঁছাতেই তার ঘুম ভেঙে গেল।তড়িঘড়ি করে উঠে ঘুমঘুম কন্ঠেই সাফওয়ানকে বলল কাচটা নামিয়ে দিতে।
কাচটা নামাতেই সৃজা অপলক বাইরে তাকিয়ে রইল।এখন তার কলেজের সামনে দিয়ে গাড়িটা যাচ্ছে কতক্ষণ কলেজের নামটার দিকে তাকিয়ে রইল এর একটু পরেই কাঁচাবাজার এখানে তার এক বান্ধুবির বাবার দোকান রয়েছে।গাড়িতে সৃজাকে এক মুহূর্ত দেখে তিনি খুশিমনে হাত নাড়ালেন।সৃজাও হাত নাড়াল,সাফওয়ান সেদিকে একবার তাকাল।পথে যাওয়ার সময় বিভিন্ন জনের সাথে দেখা হল প্রায় সকলেই হাসি মুখে সৃজার দিকে তাকিয়ে রইল।
বাড়িতে পৌঁছা মাত্রই সৃজা আর সাফওয়ানের অপেক্ষা করলনা তার আগেই নেমে পরল।ড্রয়িং রুমে গিয়েই আগে পেছন থেকে মাকে জড়িয়ে ধরল।সৃজার মা অবাক হলেন মেয়েকে এসময় দেখে কারণ তারা সম্পূর্ণ না জানিয়েই এসেছে।সৃজার মা মেয়ের আগে জামাইর খবর নিলেন।
“জামাই কোথায়?তুই একা কেন মা?”
সৃজার মাতায় এবার বাজ পরল,অতিখুশিতে সেতো তাকে বাইরে রেখেই চলে এসেছে।যেভাবে দৌড়ে এসেছিল ঠিক সেভাবেই বাইরে গেল,ততক্ষণে সাফওয়ান গাড়ি পার্কিং করে সৃজার লাগেজ নিয়ে ভিতরে ঢুকছে।দূর থেকে মন্টু এসে জোর করেই লাগেজটা তার হাতে নিল।মন্টু এ বাড়ির কাজ করে দেয়।সৃজা তাকে দেখে বলল
“কেমন আছো মন্টু ভাই?”
মন্টু বত্রিশ পাটি দাঁত বের করা একটা হাসি দিয়ে বলল
“ভালা আছি সিজা আপা।”
“ওফফো তুমি কখনোই আমার নামটা ঠিক করে বলতে শিখলেনা।”
সাফওয়ান কিছুক্ষণ সৃজার চিন্তান্বিত চেহারার দিকে তাকিয়ে রইল।সৃজার মা জামাইকে দেখে খুবই খুশি হলেন।এই প্রথম ছোট মেয়ে আর জামাই বাড়ি একসাথে বাড়ি এল।
সৃজা স্নান করছে আর সাফওয়ান তার বিছানায় শুয়ে ফোনে কথা বলছে।সৃজা ওয়াশরুম থেকে বেরোতেই কথা বলতে বলতে সাফওয়ান মাঝপথে আটকে গেল।কি পরেছে এটা সৃজা!১৬ বছরের কিশোরীর মতো সৃজা আজ স্কার্ট আর টপস পরেছে আর গলায় ওড়না।সাফওয়ান যেনো আরেকবার ঘায়েল হল এই রূপে।কই আগেতো জানতনা সৃজা বাসায় এগুলো পরে।
চলবে….