সেই তো এলে তুমি পর্ব_১৬

0
845

#সেই_তো_এলে_তুমি
#পর্ব_১৬
#Saji_Afroz
.
.
আলিয়া খাতুন হতাশ মনে নওয়াজের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেন। পথিমধ্যে এক প্রতিবেশী মহিলার সাথে তার দেখা হয়। তিনি অনেকটা ব্যঙ্গ করে বললেন, কিরে আলিয়া? তায়শার কী খবর? আর কোনো পাত্র পাবে বলে মনেহয় ওর জন্যে?
.
আলিয়া ভ্রু কুচকে বলল-
কেনো? সে কী করেছে? সে তো আর পালায়নি?
-সে কিছু না করলেও বিয়ে তো ভেঙেছে৷ একবার যার বিয়ে ভেঙেছে তার কী ওত সহজে ভালো ঘরে বিয়ে হবে? কী করবে ওকে নিয়ে এখন?
-সেটা আমার মেয়ে আমি বুঝব।
-না মানে আমার হাতে একটা প্রস্তাব ছিল।
.
এইবার আলিয়া উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, ছেলে কেমন?
-ছেলে ভালোই। শুধু মাথায় চুল কম।
-কী করে?
-ব্যবসা।
-কীসের?
-রিকশার। চার চারটে রিকশা আছে তার। মাঝেমধ্যে নিজেও চালায়। ভালো ইনকামের জন্য আরকি।
.
এইবার তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন আলিয়া খাতুন। তিনি বললেন, আমার মেয়ে কে রিকশাওয়ালার সাথে বিয়ে দেব?
-তুমি দেখি রেগে গেলে। যাহ বাবা! ভালো করতে নেই কারও জন্য।
-করার প্রয়োজন নেই। অন্তত আমার জন্য।
.
এই বলে আলিয়া নিজের বাড়ি ফিরে এলেন। তার স্বামী এক কাপ চাওয়াতে তিনি রেগেমেগে বললেন, এক কাপ চাও কী বানিয়ে খেতে পারো না?
-কখনো চা বানিয়ে খেয়েছি বলে তো মনে পড়ে না।
-হুম তোমরা সব লাখ সাহেব। মেয়েরা কাজে হাতও দেয় না, বাপ আমার ভাই এর টাকায় বসে বসে খায়। একমাত্র কাজ সব আমাকেই সামলাতে হবে।
-তা ক’দিন ধরে সামলাচ্ছ তুমি? আমার যতদূর মনে পড়ে বুঝতে শেখার পর থেকেই এই বাড়ির কাজ সব বুশরা সামলায়।
-জীবনের প্রথম বুশরার সুনাম করলে তুমি।
-করতে হচ্ছে। আসলে আমরা সেই মানুষটারই কদর করি না, যে আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি করে থাকে।
যাক গে, বাইরে থেকে খেয়ে নেব আমি।
.
এই বলে তিনি বেরিয়ে গেলেন। আলিয়া খাতুনের মেজাজ আরও খারাপ হয়ে যায়। তিনি সোজা চলে এলেন তায়শার কাছে। তায়শা নিহিরের সাথে ফোনে কথা বলছিল। আলিয়া খাতুন চেঁচিয়ে বললেন, বিয়ে ভেঙে গেছে সেদিকে কোনো চিন্তা তোর আছে? যত চিন্তা সব আমাকেই করতে হয়। সমাজে মুখ দেখাতে পারছি না আমি। তোকে বিয়ে না দিয়ে আমার শান্তি নাই। এখন যাকে পাব তার সাথেই তোর বিয়ে দিয়ে দেব। সেটা হোক রিকশাওয়ালা।
.
তায়শা তাড়াহুড়ো করে ফোনের লাইন কেটে দেয়।
রাগে গিজগিজ করতে করতে তায়শা বলল, হলো টা কী তোমার?
-কী হলো বুঝছিস না? যে যখন পারে কথা শুনিয়ে যাচ্ছে আমাকে। আজ একটা প্রস্তাব এসেছে। ছেলের না কি কয়েকটা রিকশা আছে। সে নিজেও চালায় মাঝেমধ্যে।
-ছি! এসব তুমি চুপচাপ শুনে গেলে?
-তো কী করব? কিছু বলার মুখ তুই রেখেছিস? শেষমেশ ওমন কারও সাথেই বিয়েটা দিতে হবে মনে হচ্ছে।
-মোটেও না। আমি কোটিপতি বিয়ে করব।
-কোটিপোতি?
-হুম।
.
আলিয়া খাতুন এইবার হেসে ফেললেন। হাসতে হাসতেই বললেন, জেগে জেগে স্বপ্ন দেখা হচ্ছে?
-হু হচ্ছে। তবে এটা খুব জলদি সত্যি হতে চলেছে।
-আবার কী পাকাচ্ছিস তুই?
-সামনেই দেখতে পাবা।
.
.
তাহরিমার মা এর বলা কথাটি শুনতে পেয়েছে নিহির। তার মানে আসলেই বিয়ের জন্যে তাকে প্রেশার দেওয়া হচ্ছে। নিহির যে তাকে পছন্দ করে এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু জীবনসঙ্গিনী হিসেবে সে কেমন হবে? এত তাড়াতাড়ি নিজের জীবনের এতবড়ো একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া কী ঠিক হবে? এই ভেবে চিন্তায় পড়ে যায় নিহির।
এই সময়ে এক কাপ কফি হলে মন্দ হয় না। কফির জন্য রান্নাঘরে আসে নিহির। কিন্তু সেখানে দেখলো, বুশরা রান্না করছে। নিহির বলল, মায়া কোথায়?
-সেনোয়ারা ম্যাডামের রুম গোছাতে গেছেন।
-আপনি এসব করছেন কেনো?
-কাটাকাটি সব মায়া খালাই করেছেন। জাস্ট চুলোতে বসিয়ে দিচ্ছি। এটা আর এমন কী? তাছাড়া আমার কাজ করতে ভালোই লাগে। অহেতুক বসে থেকেও কী করব?
-হুম।
-আপনার কিছু লাগবে?
-কফি।
-রুমে যান। বানিয়ে আনছি।
.
মায়া চলে আসে। নিহির কে দেখে বলল, স্যার এই ম্যাডাম কে ভালো করে বকে দেন তো।
-কেনো?
-তিনি আসার পর থেকে আমার কাজ তো কমে যাচ্ছে। সে নিজেই এটা সেটা সারাক্ষণ করতে থাকে। আমাকে যে বেতন দেবেন সেটা তো আর উসুল হলো না।
.
এই বলে তিনি হাসলেন। বুশরা বলল, কি যে বলো না খালা। এদিকে এসে রান্নাগুলো দেখো। আমি কফি বানাই।
.
নিহির রুমে চলে আসে। তাহরিমার কথা মনে পড়ে তার। নিহির তাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, রান্না করতে পারে কি না। উত্তরে সে বলেছিল, রান্নাবান্না তার জন্যে নয়। সে কাজ করতেই পছন্দ করে না। নিজের কাজও না। অথচ নিহিরের ইচ্ছে, বিয়ের পরে বউ এর হাতের রান্না খাওয়ার। অন্য কারও রান্না সে খেতে পছন্দ করে না। সেনোয়ারা বেগম বাড়ির কোনো কাজ না করলেও সবসময় রান্নাটা নিজে করেন। এই কয়েকদিন তার শরীর আর মনমানসিকতা না কি ভালো নেই। তাই রান্না করছেন না। ভালোই হলো বুশরা তা সামলে নিচ্ছে।
বুশরা কফির মগ হাতে নিহিরের রুমে আসলো। তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, আপনার কফি।
-ধন্যবাদ।
.
বুশরা চলে যেতে চায়। কিন্তু তাকে থামিয়ে নিহির জিজ্ঞাসা করলো, বাসার কথা মনে পড়ছে না?
-অনেক বেশি মনে পড়ছে। বোন গুলোর কথা খুব মনে পড়ে।
-এত কিছুর পরেও?
-তারা তো কিছু করেনি আমার সাথে।
-কিন্তু আপনার এই অবস্থার জন্য তায়শা দায়ী।
-ইচ্ছেকৃতভাবে নয়।
-বাসায় যোগাযোগ করবেন?
-ইচ্ছে নেই।
.
সেনোয়ারা বেগম নিহিরের রুমে আসছিলেন। কিন্তু বুশরা কে দেখে তিনি চলে যান। নিহির যে এই মেয়েটাকে ইচ্ছে করেই এখানে এনেছে এতে তার কোনো সন্দেহ নেই। দু’দিন যেতেই সেনোয়ারা কে বলবে, তাকে বিয়ে করতে চায় সে। করলে করুক! তার মাথাব্যথা নেই। কিন্তু নিখিলের জন্য তিনি ভালো বংশের মেয়েই আনবেন।
.
.
নিহির নিশ্চয় কথাগুলো শুনেছে। ইশ! কি যে মনে করবে সে! তবে এক প্রকারে ভালোই হলো। মা যে তাকে বিয়ে নিয়ে বিরক্ত করছে এটা বলা যাবে নিহির কে। তায়শা মনে মনে কথাগুলো আওড়ে ফোন দেয় নিহির কে। বুশরা পাশে থাকায় নিহির ফোন রিসিভ করে না। মেয়েটা সারাদিন বাসায় একা থাকে। মায়া ছাড়া কেউ কথা বলে না। একটু তাকেও সময় দেওয়া যাক। এই ভেবে ফোন সাইলেন্ট করে দেয় নিহির। এদিকে তায়শা চিন্তিত হয়ে পড়ে। মা এর ভাষা কী পছন্দ হলো না নিহিরের? কিন্তু ফোনের রিংটোন এর শব্দে ঘোর কাটে তার। স্ক্রিনে না তাকিয়েই ফোন রিসিভ করে বলল, হ্যালো?
-হ্যালো?
.
ওপরপাশ থেকে ‘হ্যালো’ শব্দটি শুনে তায়শার বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। সেই পরিচিত কণ্ঠ এটি। আশিকের কণ্ঠ! তায়শা আমতাআমতা করে বলল, তুমি?
-হুম। ফোন দেব দেব করে দিয়ে উঠতে পারছিলাম না।
-কেনো ফোন দিয়েছ?
-সরি বলার জন্য। আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ। সেদিন তোমাকে বিয়ের আসরে রেখে চলে যাওয়া ঠিক হয়নি আমার।
-সব ভুলের ক্ষমা হয়না।
-আমি শুধু ক্ষমা নয়, তোমাকে আমার জীবনে ফিরে পেতে চাই। আরেকটা সুযোগ দিতে চাই।
-আমি কী চেয়েছি সুযোগ?
-জীবন কে দিতে চাই সুযোগ।
-সেটা আর সম্ভব নয়।
-নতুন কাউকে পেলে?
-ভাত ছিটালে কাকের অভাব হয়না। তুমিও পাবে।
-আমি তোমাকেই চাই।
-কিন্তু আমি চাইনা।
-আচ্ছা তুমি একটু ভেবে দেখো?
-ভাবাভাবির কিছু নেই।
-যে অসম্মান তোমার হয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি সম্মান দিয়ে তোমাকে নিয়ে যেতে চাই আমি।
-আমি যেতে চাই না।
-আচ্ছা ফাইন! তুমি ভাবো। কয়েকটা দিন ভাবো। আমি তোমাকে আবার ফোন দেব।
.
তায়শা কে বিদায় জানিয়ে ফোনের লাইন কেটে দেয় আশিক। তায়শা পড়ে যায় মহা ভাবনায়। নিহির তার জীবনে না আসলে নিঃসন্দেহে আশিকের কাছে ফিরে যেত সে। কিন্তু এখন কাকে বেছে নেবে সে? নিহির না কি আশিক!
.
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here