সেই তো এলে তুমি পর্ব_৩১

0
919

#সেই_তো_এলে_তুমি
#পর্ব_৩১
#Saji_Afroz

পাত্রের মা চলে যাওয়ার প্রায় ঘণ্টাখানেক পরে আলিয়া খাতুন বুশরার রুমে আসলেন। তিনি বুশরাকে বললেন, মহিলা তোকে বেশ পছন্দ করেছে। সময় নষ্ট করতে চান না তিনি। ছেলেকে নিয়ে আসতে চায়। ছেলেরও একবার দেখা উচিত তোকে।
.
বুশরা খানিকটা বিরক্ত নিয়েই বলল-
পাত্রের মা মুরব্বি মানুষ। তার সামনে হাজার বার যেতেও আমার সমস্যা নেই। কিন্তু আমি বলেছি বাকিসব বাবা আসলেই হবে। এরপরেও এসব কেনো বলছ ফুফু?
-আমি কি শখে বলছি? বাইরে গিয়ে যে রঙিলা কাজ কারবার করছ, ওসব তোর বাবার কানে গেছে। তাই উনি চাচ্ছে আসার আগেই বিয়ে ঠিকঠাক হতে। এসেই তোর বিয়েটা হবে।
-কী করেছি আমি?
.
আলিয়া খাতুন ফোনের গ্যালারি থেকে নিহির ও তার আজকের কিছু ছবি দেখিয়ে বললেন, এসব তোর বাবাকে কে যেন পাঠিয়েছে। আমাকে খুব ঝারলেন তিনি। দোষ করেছিস তুই কথা শুনলাম আমি। দায়িত্ব নিয়ে কী অপরাধ করেছি?
.
তায়শা যে এসব মা কে দিয়েছে তা গোপন করলেন আলিয়া খাতুন। এদিকে এসব সত্যি ভেবে বুশরার কপালে চিন্তার ভাজ পড়লো।
আলিয়া খাতুন বললেন, আসতে বলব পাত্রকে?
.
বুশরা কিছু একটা ভেবে বলল, নাহ! সবসময় চোখের দেখা সত্যি হয় না। বাবাকে প্রয়োজনে আমার সাথে কথা বলতে বলো। আমি সবটা বুঝিয়ে বলব।
.
এই বলে বুশরা রুম ছেড়ে বেরিয়ে যায়। সেখানে উপস্থিত হয় তায়শা। আলিয়া খাতুন বললেন-
এই মেয়ে দেখছি রাজিই হচ্ছে না। বড়োলোক বাড়িতে যাওয়ার জন্য একদম তৈরী হয়ে বসে আছে। কী করা যায় বল তো তায়শা?
.
নওয়াজের বিষয়ে মা কে কিছুই জানায়নি তায়শা। জানাতেও চায়না সে। শুধু বলল-
তুমি যা পারো করেছ বাকিটা আমার উপরে ছেড়ে দাও। বুশরার বিয়ে নিহিরের সাথে হচ্ছে না এটাই ফাইনাল।
-কী করবি তুই?
-দেখোই না!
.
.
নাফিশার কাছে এসে কান্নায় ভেঙে পড়ে বুশরা। নাফিশা তাকে শান্তনা দিলে সে বলল-
আমার মনেহচ্ছে বাবা আসবেনই না। ওরা মিথ্যে বলছে। এমনটা বলে আমাকে এখানে আনার কী প্রয়োজন ছিল? ফাহমিদা আন্টির সেবা করেই বাকিটা জীবন কাটিয়ে দেব ভেবেছিলাম। জানিস নাফিশা? ওই জীবনটা ভালোই ছিল আমার।
-তবে চলে এলে কেনো? বিয়ে করে নাও নিহির ভাইকে।
-তাকে কেনো আমি বিয়ে করতে যাব?
-নওয়াজকে ভালোবাসো বলে?
-এখন বাসি না। আর নিহির স্যারকে সেভাবে আমি কখনো দেখিনি। তাছাড়া উনিও কেনো আমায় বিয়ে করবেন। ওসব তায়শার উপরে রাগ করে জেদের বশে বলেছিল ওকে কষ্ট দিতে।
-ওহ এই ব্যাপার!
-হুম।
-তোমার বাবা যে তোমার খবর নিয়ে মা কে শাসিয়েছে সেটা আমিও শুনেছি। কিন্তু দেশে আসার কথা বলেছেন কি না তা আমি শিওর জানিনা।
.
একথা শুনে বুশরার মুখে হাসি ফোটে। সে বলল, বাবা আমার খবর নেন? আমার জন্য বকেছেন ফুফুকে?
-হ্যাঁ।
.
এই অল্প খবরেই মেয়েটার মন ভালো হয়ে গেল।
.
.
ফাহমিদা বেগম একটি পুতুলকে বউ সাজিয়ে নিহিরকে দেখিয়ে বলছেন-
এমন করে বউ সাজিয়ে বুশরাকে নিয়ে আসবি। বল আনবি না?
.
নিহির মৃদু হেসে বলল-
আমি বললেই সে আসবে?
-আসবে আসবে।
-জানো মা, আমিও না চাচ্ছি সে আসুক। এসে আগের মতো এই বাড়িতে ঘুরুক ফিরুক। এই সংসারটাকে সামলিয়ে নিক সে। ও ছাড়া এ বাড়িটা শূন্য মনেহচ্ছে। হঠাৎ করে ওকে নিয়ে আমি এসব ভাবছি কেনো মা নিজেও জানি না। খুব করে ইচ্ছে করছে ওকে নিজের কাছে নিয়ে আসি।
.
এসব কথা ফাহমিদা বেগমের মাথার উপর দিয়ে চলে গেলেও তিনি বলতে লাগলেন-
কবে আনবি তুই বুশরাকে? কতদিন দেখি না!
.
নিহির হেসে বলল-
আনব আনব।
.
ভাইকে বুশরাকে বিয়ে করার ব্যাপারে বলতে এসেছে নিহির। আড়াল থেকে এসব শুনে হতাশ হয়ে পড়লো সে। অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বুশরাকে সে বিয়ে করবে। এই বিষয়ে নিহিরের সাহায্য দরকার। কিন্তু এখন নিহির নিজেও মন দিয়ে বসে আছে বুশরাকে। আবারও দুই ভাইকে একই মেয়ের প্রেমে পড়তে হলো! এখন কী করবে সে!
ভাবতে ভাবতে নিজের রুমে চলে আসলো নিখিল। সে ভাবলো, ভাই এর আগেই কী বুশরাকে মনের কথা জানিয়ে দেবে সে?
.
.
তায়শা ও নওয়াজ একটি রেস্টুরেন্টে সামনাসামনি বসে রয়েছে। নওয়াজ বলল, আর অপেক্ষা করা ঠিক হবে না। আমার হাতে ওত সময়ও নেই। বুশরা আমাকেই ভালোবাসে আমি জানি। শুধুমাত্র তানিশার সংসার ভাঙতে রাজি না সে। তাই স্বীকার করছে না।
-এখন আপনি কী করতে চাইছেন?
-তোমাকে কিডন্যাপ করতে গিয়ে বুশরা কিডন্যাপ হয়েছিল। এখন বুশরাই কিডন্যাপ হবে।
.
এই বলে হাসলো নওয়াজ। আরও বলল-
আমি জানি এতে করে আমার কোনো ক্ষতি হবে না। বিয়ে করে নিলেই সব সমাধান৷ আর তানিশার সাথে মিটমাট তো হয়েই যাচ্ছে। আমার বিয়েতে তার আপত্তি নেই। বুশরা রাজি হচ্ছে না বলেই এই পন্থা।
-আইডিয়া খারাপ না।
-এরজন্য তোমার সাহায্য প্রয়োজন। করবে তো?
-অবশ্যই।
.
.
আলিয়া খাতুনের বাজে বাজে কথাগুলো আর শুনতে ইচ্ছে করছে না বুশরার। নিহিরকে জড়িয়ে তিনি নানা কথা বলছেন।
এখনো চেঁচিয়ে বলছেন তিনি-
ওই ছেলে ফালতু একটা ছেলে। প্রথমে আমার মেয়ের সাথে ঘুরছে ফিরছে, বিয়ের আশা দিছে এখন একই কাজ করছে আমার ভাই এর মেয়ের সাথে। সেও ঢ্যাং ঢ্যাং করে বোনের না হওয়া বরের সাথে ঘুরছে ফিরছে। কী মনে করে? ওই বড়ো লোকের ছেলে তাকে বিয়ে করবে? কখনোই না। তায়শাকে যেমন স্বপ্ন দেখায়ছে তেমনি করবে। ওরেও ছেড়ে দেবে। আর তোরেও কী বলি? দুনিয়ায় ছেলের অভাব পড়ছে? ওর সাথে ফোনে ফিসফিস করে দুনিয়া ঘুরতে হবে? একসময় তোর বোনের হাত ধরে ঘুরছে তা মাথায় ছিল না! ছি ছি ছি! আমার ভাই এর কানেও এসব চলে গেছে। উনি এখন এতই রেগে গেছে যে দেশেই আসতে চায়না।
.
বুশরা এসে দাঁতে দাঁত চেপে বলল-
করব না আর ফিসফিস। ঘুরব না কোথাও। তবে হ্যাঁ, বাবাকে আসতে বলো। বিয়ে বাবা আসলেই আমি করব এর আগে না। এখন গিয়েই নিহিরকে তার ফোন দিয়ে দেব।
.
এই বলে সে তৈরী হতে রুমে আসে। নাফিশা বলল-
কোথায় যাও?
-ফোন ফেরত দিতে। আসলেই তো! কেনো তার সাথে যোগাযোগ রাখব আমি! এদের সবার জন্যই আমার এই অবস্থা। তারপরেও কত কটু কথা শুনতে হচ্ছে। মিথ্যে বিয়ের গল্পও আর বয়ে বেড়ানোর দরকার নেই।
.
এই বলে সে ফোনটা নিয়ে বাড়ির বাইরে বেরুই। সি.এন.জি ঠিক করে রওনা দেয় নিহিরের বাড়ির উদ্দেশ্যে। পথিমধ্যে ফোন বন্ধ করে দেয় বুশরা।
.
.
বুশরাকে হঠাৎ দেখে নিখিল বলল, আরেহ তুমি! তোমার সাথেই যোগাযোগ করব ভাবছিলাম। ভালোই হলো এসেছ। তোমার নাম্বারটা দিয়ে যেও।
-আসলে আমি ফোন ফেরত দিতে এসেছি। বাসায় কেউ এটা ব্যবহার করা পছন্দ করছে না। নিহির স্যার কী বাসায় আছে?
-এই সময়ে ভাইয়া আর বাসা! নেই উনি।
.
সেনোয়ারা বেগম আসলে বুশরার সাথে কথা শুরু করলেন। নিখিল ভেবেছিল মনের কথাটি জানিয়ে দেবে তাকে। কিন্তু সেনোয়ারা বেগমের জন্য তা পারলো না। বুশরা তাকে ফোনটি বুঝিয়ে দেয়। সাথে বলে নিহিরকে তা দিতে। ফাহমিদা বেগমকে দেখতে চাইলে সেনোয়ারার সাথে উপরে যায় সে। ফাহমিদা বেগম ঘুমোচ্ছেন। বুশরা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে নিচে নেমে আসে। বিদায় জানিয়ে বেরুতে চাইলে নিখিল তাকে পৌঁছে দিতে চায়। কিন্তু বুশরা রাজি হয় না। সে বলল-
আমি গাড়ি বাইরে দাঁড় করিয়েই এসেছি।
.
এই বলে সে বেরিয়ে পড়ে। নিহিরের সাথে দেখা হলো না বলে খারাপ লাগে তার। দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ফেললো সে। জানেনা আর কখনো দেখা হবে কি না! যোগাযোগের সব রাস্তাই যে বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু এতে বুশরার কেনো খারাপ লাগছে!
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here