সেই মেয়েটি আমি নই
.
৮ম পর্ব
.
ছেলেটি তুলিকে জড়িয়ে ধরে একের পর এক অভিযোগ করে যাচ্ছে।
তুলি কোনো জবাব দিতে পারছে না। নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে। কারণ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে অদূরে দাঁড়িয়ে আছে ইশতিয়াক। চোখ দু’টো থেকে যেন আগুনের স্ফুলিঙ্গ বেরুচ্ছে। কেমন বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে মানুষটিকে। ইশতিয়াক এদিকে এগিয়ে আসছে। তার এখন কি করা উচিত? কি হচ্ছে এসব। তুলি কিছু বুঝে উঠার আগেই ছেলেটার গলা আর ঘাড় ধরে ইশতিয়াক হেঁচকা টান দিয়ে ফেলে দিল মাটিতে। তুলিও টাল সামলাতে না পেরে পড়লো গিয়ে একটা গাছের গোড়ায়। পলকে ছেলেটি মাটি থেকে উঠে তুলিকে তুলে দিয়ে ইশতিয়াকের দিকে ধেয়ে এসে বললো,
– ‘এই মিয়া আপনি কে?’
– ‘আমি ওর হাসবেন্ড।’
ছেলেটি খানিক্ষণ ইশতিয়াকের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে পায়ে পড়ে গেল।
– ‘ভাই বিশ্বাস করেন ওকে ছাড়া আমি বাঁচবো না। আমি জানি ওকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হইছে। প্লিজ ভাই আপনি আমার হাতে তুলে দেন ওকে…।’
কথাটি শেষ করার আগেই ইশতিয়াক প্রচণ্ড জোরে ছেলেটির গালে চড় দিয়ে পা ছাড়িয়ে নিয়ে বুকে লাত্থি মেরে ফেলে দেয় মাটিতে। তুলি বিস্ময়ে এতক্ষণ নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। চেতনা যেন ফিরে পেল সে। ছুটে গিয়ে ইশতিয়াকের হাত ধরে বাঁধা দিল। পার্কের অন্য উৎসুক জনতাও এদিকে ছুটে এসেছে। ইশতিয়াক ঘুরে লোকসম্মুখেই তুলির গালে দিল চড় বসিয়ে,
– ‘চরিত্রহীন মেয়ে, বিয়ের পরও আগের নাগরের সঙ্গে পার্কে এসেছিস।’
তুলির বিস্ময়ের চড়ম সীমা অতিক্রম হয়ে যায়। সে গালে হাত দিয়ে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে ইশতিয়াকের মুখের দিকে। আর কিছুই বলার নেই তুলির। সে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার শক্তি হারিয়ে বোবা হয়ে গেছে। তুলিকে জনসম্মুখে টেনে-হেঁচড়ে পার্ক থেকে নিয়ে বের হয়ে গেল ইশতিয়াক। রিকশা ডেকে নিয়ে এলো বাসায়। তুলি পুরো রাস্তা চুপচাপ শূন্য দৃষ্টিতে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে৷ রিকশা যাচ্ছে, টুংটাং শব্দ, গাড়ির হর্ণ, রঙ-বেরঙের পোশাক পরা মানুষ কিছুই যেন তুলি দেখছে না, শুনছে না৷ থমথমে মুখ, শূন্য দৃষ্টি। একেবারে যেন অনুভূতিহীন পাথর সে। বাসার গেইটের সামনে রিকশা থেকে নেমে ইশতিয়াক হাত ধরেই টেনে নিয়ে এলো ওপরে। তুলি কেবল হতবুদ্ধি হয়ে দেখছে। ইশতিয়াকের এই অচেনা রূপ দেখে সে মূক হয়ে গেছে। বাসায় আসার পর দরজা বন্ধ করে হেঁচকা টান দিয়ে যেন তাকে ছুড়ে ফেললো বিছানায়। তুলি বিছানায় পড়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় ইশতিয়াকের দিকে। একদম অচেনা এক হিংস্র পুরুষ। চোখের সামনে ইশতিয়াক প্যান্টের বেল্ট খুলে মোবাইলে সেই ছবিগুলো বের করে বললো, ‘তোর মতো নষ্টা মেয়ে আমার বউ ভাবতেই ঘেন্না লাগছে। এই খানকি এই ছবিগুলো কি? তুই না আর কোনো পুরুষের ছোঁয়াই পাসনি?’
তুলি যেন কথাগুলো শুনতেই পারছে না। চোখের সামনে যা দেখছে সবই যেন স্বপ্নদৃশ্য৷ ইশতিয়াকের হাতে বেল্ট। ‘খানকি’ শব্দ ভীষণ কানে এসে লাগলো। আর কি বাকি আছে? সে আর ছবিগুলোর কি ব্যখ্যা দেবে? দিয়ে কি হবে? লোকসম্মুখে চড়, রিকশা থেকে টেনে উপরে নিয়ে আসা। এখন আবার প্যান্টের বেল্ট..।
তুলি ভাবতেই পারে না। আচমকা পিঠে আঘাত পেয়ে তুলি আর্তনাদ করে উঠলো।
– ‘এখন কথা বেরুচ্ছে না, তাই না? হাতেনাতে জড়াজড়িতে ধরা পড়ে মুখবন্ধ? নাগরকে যখন ভুলতেই পারবি না বিয়ে বসলি কেন? টাকার লোভ? ব্যাংকার জামাই শুনেই বিয়ে বসে গেছিস?’
আবার বেল্ট দিয়ে প্রহার করলো ইশতিয়াক৷
মোবাইলে ভিডিয়ো প্লে করে বললো,
– ‘মিথ্যুকের বাচ্চা বলেছিলি তোকে কেউ স্পর্শ করেনি, তাহলে এসব কি?’
তুলির বিস্ময় আর ধৈর্যের বাঁধ যেন ভেঙে গেল। যেন চেতনা ফিরে পেল এখন। তাকে বেল্ট দিয়ে আঘাত করছে ইশতিয়াক? লোকটি তার গায়ে হাত তুললো। অশ্রাব্য বাসায় গালাগাল করছে।
কিছু বুঝার আগে, জিজ্ঞেস করার আগেই জনসম্মুখে চড় মেরে অপমান করলো? তাকে নিজের মা-বাবাও কখনও এরকম গালি দেয়নি। আর ইশতিয়াক কি-না…।
ঘেন্না লাগছে তুলির। এমন একটা জঘন্য মানুষ তার স্বামী৷ যে স্ত্রীকে কিছু না বুঝে, অন্যায়ভাবে অশ্রাব্য ভাষায় গালি দেয়। গায়ে হাত তুলে। এই ঘটনা না ঘটলে তো সে ইশতিয়াকের এমন হিংস্র রূপ দেখতে পেত না। সে এখনও এখানে কি করছে?
‘খানকি বিয়ের আগে শুয়েছিস তো শুয়েছিস এখন আবার পার্কে গিয়ে জড়াজড়ি।’ কথাগুলো বলে ইশতিয়াক পুনরায় প্রহার করতেই বেল্ট ঢুকে গেল তুলির হাতের মুঠোয়। এলোমেলো চুল। শূন্য পাথর দৃষ্টি। চোখের পলকে একটা চড় গিয়ে লাগলো ইশতিয়াকের গালে।
– ‘পাগলের বাচ্চা ‘সেই মেয়েটি আমি নই’।
ইশতিয়াক হেঁসে উঠে চুল মুঠো ধরে বললো,
– ‘আবার মিথ্যে কথা। ছবিগুলো মিথ্যে হলে নাগরের সঙ্গে দেখা করে জড়াজড়ি করতে গেলি কেন?’
তুলি হেঁচকা টানে হাত ছাড়িয়ে বললো,
– ‘তোর কাছে আর নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার চেষ্টা করে নিজেকে ছোট করার ইচ্ছা নাই।’
তুলি বিছানা থেকে ওড়না নিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে গেল।
ইশতিয়াক আঁটকে রাখার চেষ্টা করলো না। অস্ফুটে বললো,
‘হ্যাঁ চোরের মেয়ের বড় গলা তো থাকেই। ছবি মিথ্যে, জড়াজড়ি মিথ্যে। সেই মেয়েটি তুমি নও, সেটা ভূত। খানকি ভাগ এখান থেকে৷’ কথাগুলো বলে ঘেন্নায় সে ‘থুথু’ ফেললো মাটিতে। কথাগুলো শুনে তুলির মুখে বিষাদমাখা হাসি ছড়িয়ে গেল। পেছনে না তাকিয়ে প্রস্থান করলো সে বাসা থেকে।
*
তুষারের হাতে তুলির ভ্যানিটিব্যাগ। সে ঘটনার আকস্মিকতায় হকচকিয়ে গিয়েছিল। খানিক পর রিকশার পিছু পিছু ছুটে গিয়েও তুলিদের হারিয়ে ফেলে৷ দুঃখ-কষ্টে ফিরে যাবে ফুপুর বাসায় তখনই মনে পড়লো তুলির ভ্যানিটিব্যাগ পার্কে গাছের গোড়ায় পড়ে আছে। সেটা নিয়ে যায়নি তুলি। কেউ পেয়ে গেল কি-না কে জানে। পুনরায় সে দৌড়ে ছুটে যায় পার্কে। গাছের নিচেই পেয়ে যায় ব্যাগ। ব্যাগের ভেতরে তেমন কিছুই নেই। কিছু টাকা, মোবাইল আর মেয়েলি সাজগোজের জিনিসপত্র। তুষার মোবাইল হাতে নিয়ে দেখেছে লক করা। এই মোবাইল সে তুলির কাছে ফিরিয়ে না দিলে কিভাবে যোগাযোগ করবে ওর সঙ্গে? এই নাম্বার ছাড়া আপাতত তার কাছে কিছুই নেই। ওর বাসার ঠিকানা সে জানে না। নাম্বারটাও খুঁজে পেয়েছে ভাগ্যগুণে। তুলি ব্যাগের খুঁজে এখানে আসবে এই আশায় সে পার্কের বেঞ্চে শুয়ে আছে। চোখের সোজা গাছের ডালে কিছু কাক বসে কর্কশ গলায় কা-কা করছে। সে ভাবছে তুলির বরকে নিয়ে। লোকটা ভালো না। লোক সম্মুখে স্ত্রীর গায়ে হাত তুলেছে। টাকা-পয়সা হলেই হয় না। এই সংসার ওর ছেড়ে দেওয়াই উচিত। লোকটা নিশ্চয় মদ-গাঁজা খায়। না হলে এমন বদমেজাজি হয় না-কি? কিন্তু ওর সঙ্গে সে এখন কিভাবে যোগাযোগ করবে? মোবাইলই তো ফেলে চলে গেছে। এটা পৌঁছে যে দেবে বাসার ঠিকানাও সে জানে না। জোহরের আজান দিচ্ছে মসজিদগুলোতে। সে তো এখনও এলো না। মোবাইলের জন্য কি মনে পড়া মাত্রই ছুটে আসার কথা না? তুষারের মোবাইল ফোন বেজে উঠে। নাম্বার দেখে সে অবাক হয়ে অস্ফুটে বলে ‘স্যারের কল।’
রিসিভ করলো তুষার। ভয়েজ শুনেই সে হাঁপ ছেড়ে বাঁচে।
– ‘তোমার ভ্যানিটিব্যাগ আমার কাছেই আছে।’
ওপাশ থেকে বললো,
– ‘ভ্যানিটিব্যাগ মানে, কি যা-তা বলছো। আগে আমার কথা শুনো। যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে।’
তুষার নাম্বার আবার দেখে। কিছুই সে বুঝতে পারছে না। ভ্যানিটিব্যাগ তো ওরই। তবুও সে এসবে না গিয়ে বললো,
– ‘হ্যাঁ বলো কি করতে হবে।’
– ‘আমি এই মুহূর্তে সিলেট শাহজালাল মাজারে আছি। খুব কষ্টে বাবার মোবাইল নিয়ে পালিয়ে এসেছি। এখানকার কিছুই আমি চিনি না। টাকা-পয়সাও আমার কাছে নেই। তুমি এখনই রাওনা দাও।’
তুষার অবাক হয়ে বললো,
– ‘আশ্চর্য তুমি সিলেট গেলে কখন?’
– ‘এসব এখন শোনার সময় নেই তুষার। আগে আমাকে নিতে আসো। এই মোবাইলেও খুব বেশি চার্জ নাই। আর বাড়ি থেকে কল আসতে শুরু হবে। আমি এখনই অফ করবো৷’
তুষারের মাথায় কিছুই ঢুকছে না। সে আমতা-আমতা করে বললো,
– ‘সেখানে পৌঁছাতে ৭-৮ ঘণ্টা লাগবে।’
– ‘সমস্যা নেই আমি অপেক্ষা করবো।’
– ‘কিন্তু আমাকে তো বলো তুমি সিলেট গেলে কিভাবে৷ আমার সঙ্গে রসিকতা করছো না-কি?’
ওপাশ থেকে ঝাঁঝালো কণ্ঠে ভেসে এলো,
– ‘এখন রসিকতার সময়? আমি কি বিপদে আছি তুমি জানো? এতো কথা না বলে রওনা দেবে না-কি আমি ফিরে যাব।’
– ‘আচ্ছা আচ্ছা আমি আসছি।’
ফোন রেখে সে কিছুই মেলাতে পারছে না। একটু আগে যে মানুষটি ঢাকা দেখা করেছে, সে আবার সিলেট কিভাবে যায়? কি হচ্ছে এসব? সে কি ভূত-পেত্নীর পাল্লায় পড়েছে না-কি? এখন তার কি করা উচিত? সিলেট যাবে? সত্যিই ওখানে সে? কিভাবে সম্ভব? তাছাড়া ভ্যানিটিব্যাগ কি করবে এখন? আচ্ছা কোনোভাবে কি এই দু’জন মানুষ আলাদা? তুষারের মাথা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। সে আর কিছু ভাবতে চায় না। এখন সোজা বাসায় যাবে। রেডি হয়ে তাড়াতাড়ি বের হতে হবে সিলেটের উদ্দ্যশ্যে।
সে বাসায় গিয়ে ফুপুকে বুঝিয়ে রেডি হয়ে বের হতে হতে তিনটা হয়ে গেছে। সায়দাবাদ থেকে সে বাসে উঠলো সাড়ে তিনটায়। বাস ছেড়ে দিয়েছে। তখনই মনে পড়লো ওর ভ্যানিটিব্যাগ বাসায় ফেলে চলে এসেছে। ওকে একটা কল কি দেবে? মোবাইল বন্ধ করে ফেলবে বলেছিল। তবুও তুষার কল দিল। রিং হচ্ছে৷
– ‘হ্যালো।’
– ‘হ্যাঁ আমি বাসে আছি এখন। আসবো? আসলেই তুমি সিলেট?’
– ‘এরকম কথা বলছো কেন? কয়বার বলবো আমি সিলেট। আর ফোনে চার্জ নেই। আমি অফ করে দিচ্ছি এখন। তুমি সোজা মাজারে আসবে। আমার এই নাম্বার টাকা দিয়ো পারলে। তাহলে আমি নিজেই মোবাইল অন করে কল দিতে পারবো।’
– ‘আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু আমি ভ্যানিটিব্যাগ বাসায় ফেলে চলে এসেছি। কিন্তু যে আমার সঙ্গে দেখা করছে সেই মেয়েটি তুমি হলে তো এখন সিলেট থাকার কথা না। তাহলে ভ্যানিটিব্যাগ নিয়ে যাবই বা কেন?’
– ‘আরে ধুরো তোমার কিসের ভ্যানিটিব্যাগ আর সেই মেয়ে। কি আবোল-তাবোল বকছো।’
– ‘আচ্ছা আচ্ছা আমি আসি। তারপর সব বলছি।
*
হুস্না বেগম তুলির দরজায় ডাকাডাকি করছেন।
– ‘কি হয়েছে বলবি তো তুলি? সেই যে এসে দরজা বন্ধ করে ভেতরে আছিস আর তো বেরই হচ্ছিস না।’
তুলি ভেতর থেকে বললো,
– ‘কিছুই হয়নি মা। আমি ঠিক আছি।’
– ‘সেই কখন থেকে তো বলছিস ঠিক আছিস। কিন্তু দেখেও তো মনে হয়েছিল কিছু একটা সমস্যা আছে রে মা।’
কাজের মেয়েটি বললো, ‘আন্টি আপার হাতে ব্যাগও ছিল না আসার সময়ে।’
– ‘হ্যাঁ বের হয়েছিল হাতে ভ্যানিটিব্যাগ নিয়ে।’
তিনি আবার ডাকলেন,
– ‘তুলি তোকে ছিনতাইকারী ধরেছিল না-কি?’
ওপাশ থেকে কোনো জবাবই এলো না।
– ‘রহিমা দেখতো আমার মোবাইল কোথায়। তুলির নাম্বারে কল দিয়ে দেখি।’
রহিমা গিয়ে মোবাইল নিয়ে এলো। তিনি তুলির নাম্বারে অনেকগুলো কল দিলেন রিং হচ্ছে কিন্তু কেউ রিসিভ করছে না। রহিমা কান লাগিয়ে দেখে এসে বললো,
– ‘আপার রুমে কোনো রিং হয় নাই আন্টি। তাইলে আপারে ছিনতাইকারী ধরেছিল মনে অয়।’
হুস্না বেগম আবার ডাকতে লাগলেন,
– ‘দরজা খুল তো মা, কি হয়েছে তোর?’
তুলি দরজা খুলে দিয়ে বিছানায় গিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে কাঁদতে লাগলো। হুস্না বেগম গিয়ে তুলের পাশে বসে আঁতকে উঠলেন। ওর ঘাড়ের নিচে এটা কিসের দাগ। কি হয়েছে তুলির?
– ‘কি হয়েছে মা, কাঁদছিস কেন? তোর পিঠে কিসের দাগ? আর মোবাইল কোথায় ফেলে এসেছিস?’
তুলি উঠে মা’কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
– ‘আমি আর ওই পশুর কাছে ফিরে যাব না মা। আমি তোমাদের সঙ্গেই থাকবো। তোমরা ডিভোর্সের ব্যবস্থা করো।’
হুস্না বেগম মেয়ের কথা শুনে বিস্মিত হয়ে গেলেন। সে বের হয়ে গেল একটা কাজে। হুট করে ইশতিয়াককে পেল কোথায় আর ওর সঙ্গেই বা কি হয়েছে?
তিনি মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,
– ‘কি হয়েছে বলতো মা?’
তুলি কিছুই বলতে পারছে না। মায়ের বুকে মুখ গুঁজে কেবল কেঁদে যাচ্ছে। উনার চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। এই মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়েই তারা বেঁচে আছেন। ও ছাড়া তাদের আর কে আছে? মেয়েটি যদি সুখী না হয় তাহলে এই বিয়ে সংসার দিয়ে কি হবে?
তিনি মেয়েকে শীতল গলায় বললেন,
– ‘মা কি হয়েছে বলতো, তোর ঘাড়ে নিচে কিসের দাগ। দেখি কামিজ তুলতো।’
– ‘কিছু না মা এগুলো।’
তিনি নিজেই কামিজ তুলে দেখে বিস্মিত হয়ে গেলেন। ওর পিঠে অনেকগুলো মারের দাগ। কে মারলো তাদের মেয়েকে? যাকে তারা ফুলের টোকাও দেননি কখনও। ইশতিয়াক? কিন্তু ইশতিয়াককে তুলি এখন পেল কোথায়? আর কেনই বা মারবে সে? মারার মতো কি কারণ থাকতে পারে? তারা তো এটা বরদাস্ত করবেন না। কত বড়ো সাহস তাদের মেয়ের গায়ে হাত দেয়! তিনি তুলির মাথা টেনে তুলে বললেন, ‘কে তোকে এমন করেছে বল তো মা? সব বল আমাকে।’
তুলি আস্তে আস্তে মা’কে সব বলতে শুরু করে।
ইশতিয়াক বেলকনিতে চেয়ার নিয়ে বসে একের পর এক সিগারেট টানছে। নষ্টা মেয়ে। আবার কত বড়ো বেয়াদব তাকে চড় মেরেছে। এই মেয়েকে সে ডিভোর্স দেবে। এমন মেয়েকে সে কিভাবে ভালোবেসেছিল? কিভাবে ওর প্রেমে পড়েছিল? নিজের রুচির প্রতি ঘেন্না লাগছে তার।
___চলবে__
সেই মেয়েটি আমি নই
লেখা: জবরুল ইসলাম
বি:দ্র: আপনি লেখক হলে এই উপন্যাস হ্যাপি না-কি স্যাড এন্ডিং হতো?