সেদিনও জ্যোৎস্না ছিল পর্ব-২৫

0
7261

#সেদিনও_জ্যোৎস্না_ছিল

#তানিয়া

পর্ব:২৫

মেহু হাঁটুতে মুখ গুঁজে কান্না করছে।কান্নার তালে তার পিঠ বারবার ওঠানামা করছে। সিমরান দুই হাতের ভাজে তার থুতনি রেখে গভীর ভাবনা ভাবছে কিন্তু কি ভাবছে সেটা জানে না।তার মাথায় সব চিন্তা আউলাঝাউলা হয়ে যাচ্ছে। মেহু এসেছে প্রায় দু’ঘন্টা। এরমধ্যে যা বলার সবকিছু বলা হয়েছে। সবটা শুনে সিমরান তো অবাক।

মেহু সকালে উঠতেই তার মাথায় বাজ ভেঙে পড়ে। গতকাল রাতে সে তার জীবনের বড় ভুলটা করে ফেলেছে।কিন্তু এ ভুলটা তো সে ইচ্ছে করে করেনি।আদ্য তাকে ভালোবেসে কাছে ডেকেছিল মেহু শুধু তাতে সায় দিয়েছিল এটাই কি তার ভুল?মেহু পাশ ফিরে আদ্যর দিকে তাকায় গতকাল রাতের সে ভয়ংকর আদ্যর সাথে পাশে থাকা আদ্যর কোনো মিল নেই। একি মানুষ অথচ কত পার্থক্য সামান্য সময়ের ব্যবধানে। মেহু চোখ ফেরাতে দ্রুত চোখ বন্ধ করে ফেলে।হাতড়ে হাতড়ে একটা চাদর নিয়ে সেটা দিয়ে আদ্যকো ঢেকে দেয়।তাড়াতাড়ি নিচে নেমে ওয়াশেরুমে চলে যায়। শাওয়ার নিয়ে নিচে গিয়ে আমেনা খালার কাছে যায়। আমেনা খালা সকালের খাবার তৈরি করতে যেতেই মেহুকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়ে। তার চোখ মুখে অন্য উজ্জ্বলতা কিন্তু মেহুর নজরে সেটা পড়ে নি।কারণ তার মনে অন্য দুঃশ্চিন্তা কড়া নাড়ছে।

“ও মাইয়া এত সকালে কই যাও?”

“খালা আজ ভার্সিটিতে খুব সকালে ক্লাস আছে আমি গেলাম।আর হ্যাঁ কেউ খোঁজ করলে বলবে আমি ভার্সিটি গেছি যাতে চিন্তা না করে।”

মেহু কথা শেষ করে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।আমেনা খালা সেদিকে চেয়ে থেকে একটা হাসি দেয়।

মেহু বাসা থেকে বের হয়ে প্রথমে ভাবে ভার্সিটি যাবে অতঃপর সে চিন্তা বদল করে।গতকাল যা হলো এর পর তার মনে অস্থিরতা ক্রমে বেড়েই যাচ্ছে। এ মুহুর্তে তার এমন কাউকে দরকার যে তার কথা গুলো খুব গুরুত্বের সাথে শুনবে।মেহু পাগল হয়ে যাচ্ছে তার সারা শরীর অবশ হয়ে যাচ্ছে। কোনোরকমে একটা রিকশা নিয়ে সে সিমরানের বাসায় যায়।সিমরান বসার রুমে কিছু কাজ করছিল মেহুকে দেখেই হেসে এগিয়ে আসে কিন্তু মেহুর অস্বাভাবিক অবস্থা দেখে সে ঘাবড়ে যায় আর তখনি মেহুকে কারণ জিজ্ঞেস করে।মেহু কিছু বলার আগেই হু হু করে কেঁদে উঠে। হঠাৎ মেহুর কান্না দেখে সিমরান চমকে যায়। তাড়াতাড়ি নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে তাকে শান্ত করাই!

“মেহু থাম এভাবে হুট করে কান্না করছিস কেনো বল তো?তাছাড়া তুই কিছু না বলে কান্না করলে আমি বুঝবো কি করে কোথায় সমস্যা? ঐ বাড়িতে কি কিছু হয়েছে? ”

সিমরান মেহুর বিষয়ে প্রায় সবটা জানে।তাই মেহুর সাথে সাথে সিমরানও ভয়ে থাকে কখন কি ধরনের খবর কানে আসে।হঠাৎ সকালে এভাবে মেহুর হাজির হওয়া তারপর কিছু না বলে কান্না করা এটা নিশ্চয়ই ভালো কিছুর লক্ষণ নয়?

সিমরান কিছু বলতে যাবে তার আগেই মেহু মুখ খুলে,

“সিমরান আমি ভুল করে ফেলেছি রে অনেক বড় ভুল করেছি।না জানি এ ভুলের মাশুল হিসেবে আমাকে কি শাস্তি পেতে হয়।”

সিমরান মেহুর কথার কিছুই ধরতে না পেরে মুখটা লম্বাটে করে ফেলে।তবুও জিজ্ঞেস করে কারণ কি?মেহু এক এক করে এ ক’দিন ঘটে যাওয়া সবটা জানায়।এমনকি গতকাল রাতে ঘটে যাওয়া সেই দূর্ঘটনাও। সবটা শুনে সিমরান সেই ভাবে বসে থাকে আর মেহু ক্রমাগত কাঁদতে থাকে।একসময় সিমরান মেহুর পাশে এসে বসে।মেহুকে স্বাভাবিক হতে বলে,

“মেহু দেখ তুই আমার দিকে তাকা।এ দেখ আমার সামনে বস।আচ্ছা তুই এভাবে কাঁদছিস কেনো,মনে হচ্ছে তুই মানুষ খুন করেছিস?আরে গাধী তুই ভুলে যাচ্ছিস কেনো তুই হচ্ছিস আদ্যর ওয়াইফ। ওর লিগেলি ওয়াইফ তাহলে তুই এত ভয় পাচ্ছিস কেনো?দেখ তোদের মধ্যে যা হয়েছে এগুলো জাস্ট নরমাল ম্যাটার।স্বামী স্ত্রীর মধ্যে এমন সম্পর্ক গড়ে উঠেই।এসব নিয়ে তুই এতো ঘাবড়াচ্ছিস কেনো?তুই বা আদ্য কেউ অন্যায় করিস নি বরং তোরা একে অপরকে ভালোবাসতি কিন্তু কিছু বাঁধা তোদের মধ্যে ছিল যা তোদের এক হতে দেয় নি।কিন্তু প্রকৃতি সেই বাঁধাকে দূরে ঠেলে দিয়ে তোদের এক করেছে।যা সব নরনারীর মধ্যে হয়ে থাকে।তাছাড়া তুই কেনো তোর অধিকার ছাড়বি? এতদিন তুই জানতি না যে আদ্য তোকে ভালোবাসে কিনা কিন্তু কাল তো জানলি এখন তোকে জীবন দিয়ে সেই সম্পর্ক বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আমি বলছি তোকে তুই এখন নিজেকে তৈরি কর এ সম্পর্ক বাঁচাতে।মেহু তুই তো স্ট্রং মেয়ে তুই যদি ভেঙে পড়িস তাহলে কীভাবে তুই এ সম্পর্ক রক্ষা করবি?”

“কিন্তু সিমরান কাল ওনি নেশার ঘোরে ছিল।হয়তো নেশার ঘোরে ওনার মনে যা এসেছে সব বলোছে কিন্তু নেশা কেটে যাওয়ার পর যদি ওনি সবটা অস্বীকার করে বা সবকিছুকে মিথ্যা বলে স্বীকার করে তখন আমি কি করবো?একজনের পক্ষে কখনো একটা সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখা সহজ কথা না।আমি একা জীবনে অনেকটা লড়াই করেছি হয়তো সফলও হয়েছি কিন্তু এ কাজে আমার পক্ষে একা লড়াই করা সম্ভব না।আমার ভয় হচ্ছে হয়তো ওনি সবটা…… ‘

বলেই মেহু আবারও মুখ গুঁজে কাঁদতে থাকে।সিমরান গম্ভীর হয়ে পাশে বসে থাকে।সিমরান জানে মুখে বলা সব কথা কখনো সহজে করা যায় না।তাই বলে এভাবে মেহুকে একাও রাখা যায় না।সিমরান ঠিক করলো আজ সে ভার্সিটি যাবে না।সারাদিন মেহুকে নিয়ে বাসায় থাকবে।সিমরান মেহুকে জোর করে হাত মুখ ধুয়ে খাবার খাওয়াতে বসলো নিশ্চয়ই কাল থেকে কিছুই খায় নি?

আদ্য ধরা মাথা নিয়ে আমেনার কাছে যায়। আমেনা অন্যমনস্ক হয়ে কাজ করছিল।আদ্যর ডাকে তার হাত ফসকে গ্লাস পড়ে যায়।

“ইশশ খালা কি করে কাজ করছো আরেকটু হলে তো গ্লাসটা তোমার পায়ের ওপর পরতো?এতো কি গভীর ভাবনায় আছো শুনি?”

“না বাবা তেমন কিছু না। ঐ একটু চিন্তা করতাছিলাম।তয় তুমি অহোন এইহানে কিছু কইবা বুঝি?”

“হুম খালা।খুব মাথা ধরেছে আদা দিয়ে ভালো করে রং চা দাও তো।মাথার যন্ত্রণায় শরীর সহ অবশ হয়ে যাচ্ছে। ‘

“আইচ্ছা তুমি যাও আমি আইতাছি।”

আদ্য চলে যেতে আবার কি জানি ভেবে আমেনাকে জিজ্ঞেস করে,

“খালা মেহুকে দেখেছো সকাল থেকে ওকে একবারও চোখে পড়ে নি।তুমি কি জানো মেহু কোথায়?”

মেহুর কথা জিজ্ঞেস করতেই আমেনার চেহারায় অন্য হাসি ফুটে ওঠে সাথে একটু লজ্জা।কিন্তু আদ্যকে সেটা বুঝতে দেয় না।

“হো সকালে আইয়া কইলো হের নাকি কি একটা ক্লাস আছে তাই তড়িঘড়ি কইরা চইলা গেছে। কিছু মুখেও দেয় নাই। ক্যান বাবা তুমি কি কিছু কইবা?”

“না খালা তেমন কিছু না।আচ্ছা খালা এখন চা দিও না আমি আসছি পরে এসে খাবো।”

আদ্যর কি হলো কে জানে সে হনহন করে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো। লুৎফা বাগানেই ছিল, দেখে আদ্য গটগট করে চলে যাচ্ছে কোনোদিকে না তাকিয়ে। লুৎফা সেদিকে চেয়ে থেকে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।

মেহু খাবার পাতে বসে আছে কিন্তু খাচ্ছে না।সিমরান খেতে বসে নিজেও খেতে পারছে না।মেহু না খেলে সেই বা কি করে খায়।সিমরান মেহুর হাতে হাত রেখে বললো,

“মেহু তুই যদি এ অল্প সময়ে এতটা চাপ নিস সামনে কি করবি?তাছাড়া খাবারের কি দোষ? নিজের শরীর যদি খারাপ করিস তাহলে তো তুই কিছুই করতে পারবি না।প্লিজ বোন খা তোর জন্যও আমিও খেতে পারছিনা।”

সিমরানের অসহায় মুখটা দেখে মেহু আর না করলো না।খাবার খেতে শুরু করলো যদিও খাবারটা গলায় আটকে যাচ্ছে পানি দিয়ে গিলে ফেলছে সেটা।

আদ্য প্রায় দেড় ঘন্টা হলো ভার্সিটিতে এসেছে। এরমধ্যে মেহুর ডিপার্টমেন্টে কয়েকবার খোঁজ নেওয়া হয়েছে যা থেকে জানা যায় আজ মেহু ভার্সিটি আসে নি আর আসলেও ক্লাস হয়তো করেনি।একটা ক্লাসেও তার কোনো এটেনডেন্স নাই। অগত্যা আদ্য দাঁড়িয়েই রইলো যদি ক্লাস না করেও মেহু ভার্সিটির অন্য কোথাও বসে থাকে।কিন্তু আদ্য কোথাও পেলো না।আদ্য ক্লান্ত হয়ে একপাশে বসতেই কিছু ছেলেমেয়েকে আসতে দেখে। তাদের মধ্যে হঠাৎ করে সেদিনের ছেলেটাকে দেখে যার সাথে মেহুকে ফুসকা খেতে দেখেছিল।কি জানি নামটা?অনেক্ক্ষণ ভাবার পর রাহাত নামটা উদ্ধার করলো।রাহাত রাহাত শব্দ করে কয়েকবার চেঁচাতে রাহাত এদিক ওদিক তাকায়।

“এই যে রাহাত আমি এদিকে।”

আদ্য বসা থেকে উঠে এগিয়ে যায়। রাহাত অচেনা মানুষকে তার নাম ডাকতে দেখে একটু অবাকই হয়।

‘আপনি কি আমাকে ডাকছিলেন?আপনাকে তো চিনতে পারলাম না?’

“আমাকে তুমি চিনবে না কিন্তু তোমাকে আমি চিনি।তুমি মেহুর বন্ধু তাই তো?”

“জ্বি কিন্তু আপনি?”

“আমি মেহুর হাসবেন্ড। আচ্ছা আজ কি মেহু ভার্সিটি এসেছিল?”

রাহাত জানায় মেহু আজ আসে নি।আদ্য এবার হতাশ হয়ে পড়ে। মেহু গেলো কোথায়?আদ্য জিজ্ঞেস করে মেহু কোথায় গেছে সেটা রাহাত আন্দাজ করতে পারছে কিনা অথবা তার আর কোনো ফ্রেন্ড আছে কিনা?রাহাত কিছুক্ষণ ভাবুক ভঙ্গিতে থেকে জানায় সিমরান নামের তাদের এক ফ্রেন্ড আছে কিন্তু তার ঠিকানা রাহাত জানে না।আদ্য সব দিক দিয়ে হতাশ হয়ে যায়। যা-ও একটা তথ্য পেলো তবে সেটার ঠিকানা জানা নেই। আদ্য খুব চিন্তিত মুখ নিয়ে গাড়িতে উঠে।

আদ্য বাসায় এসেই সোফায় বসে পড়ে।গত কালকের ড্রিংকসের প্রভাবটা এখনো তার শরীরে রয়েছে। মাথা ভার হয়ে আছে। তার ওপর সকাল থেকে এদিক ওদিক দৌড়াদৌড়ি করায় সে খুব ক্লান্ত। আমেনা খালা আদ্যকে দেখেই ঠান্ডা লেবুর শরবত নিয়ে আসে।লেবুর শরবত হাতে পেতেই আদ্য ঢকঢক করে শেষ করে।আমেনা কাচুমাচু করে জানায় মেহু ফিরেছে একটু আগে। খবরটা জানতেই আদ্য চট করে সোজা হয়ে বসলো।তার চোখ জ্বলজ্বল করছে মনে হচ্ছে মেহুর আশার খবরটা শোনার অপেক্ষায় ছিল আদ্য।আমেনা আদ্যর অস্থিরতা বুঝেই তাড়াতাড়ি মেহুর কথাটা জানায়।বেচারাকে দেখে আমেনার খুব মায়া হলো।আদ্যর শরীরে এতক্ষণ যে ক্লান্তিটা ছিল এখন যেন সেটা উধাও হয়ে গেছে। সে তাড়াতাড়ি করে হাঁটা ধরলো ছাদের দিকে।সিঁড়িতে উঠতে সোহানা তাকে আটকায়।

“আদ্য কি হয়েছে তোমার?সারা দুপুর কোথায় ছিলে?সকালে তোমার সাথে কথা বলতে যেতেই তুমি এড়িয়ে গেলে এরপর তোমার রুমে গিয়ে দেখি তুমি নেই। এরমধ্যে কতবার তোমার খোঁজে গেলাম কিন্তু পেলাম না।অন্যদের জিজ্ঞেস করলাম তারাও কিছু বলতে পারলো না।”

“সোহানা আসলে আজ একটু ব্যস্ত ছিলাম।তাছাড়া এ মুহুর্তে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। তুমি কিছু মনে করো না।তুমি রুমে অপেক্ষা করো আমি অল্প সময়ের মধ্যে আসছি।”

সোহানাকে কিছু বলতে না দিয়ে আদ্য দ্রুত পায়ে সিড়ি ভেঙে উপরে চলে যায়। সোহানা অবাক হয়ে সেদিকে চেয়ে থাকে।ছাদে তো মেহু থাকে আদ্য ছাদে কেনো যাচ্ছে? যেভাবে তাড়াহুড়ো ভঙ্গিতে গেলো তার মানে কি জরুরি কাজটা মেহুর সাথে কিন্তু কি সেই কাজ?

মেহু বাসায় ফিরেই ওয়াশরুমে ঢুকে ভালো করে হাত মুখ ধুয়ে নেয়।প্রচুর ঘুম আসছে তার কিন্তু বিছানায় গেলে বোধ হয় ঘুমের আলসেটা চলে যাবে তাই মেহু বিছানায় না গিয়ে পাশের চেয়ারটাতে হেলান দিয়ে বসে।ঠিক তখনি আদ্য মেহুর ঘরে ঢুকে।মেহু চোখ বন্ধ করে চেয়ারের গায়ে মাথা রাখে।আদ্য ভালো করে দেখতে বুঝে মেহুকে কতটা অসহায় লাগছে।আদ্যর চোখে জল জমে তাড়াতাড়ি চোখ কচলে সেটা সামলায়।

“মেহু!”

কণ্ঠ শুনে মেহু ব্যাঙ লাফের মতো করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।আদ্যর গলা শুনে মেহু যেভাবে লাফ দিলো তাতে মনে হলো মানুষ নয় আজরাইল এসেছে মেহুর জান কবজ করতে।মেহু লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলে।

“সারাদিন কোথায় ছিলে? ”

মেহু মাথা নিচু আছে। তার কেনো জানি আদ্যর দিকে তাকাতে লজ্জা করছে।শুধু তাই নয় আদ্যর কথার উত্তর দিতেও মেহুর কেমন জানি লাগছে।সে মাথা নিচু করে রইল।আদ্য বেশ বিরক্ত হচ্ছে একে তো সারাদিন নিখোঁজ তার ওপর এখন চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। আদ্য মেহুকে কি বলবে নিজেই ভেবে পাচ্ছে না।মেহুর সামনে দাঁড়াতেই তার শরীরে অন্য রকম বাতাস বয়ে গেলো।সে সামনে উপস্থিত মেয়েটাকে দেখছে।কতটা ভীতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মেহু।আদ্যর হাসি পেলো তবে সেটাকে প্রকাশ করলো না।

“মেহু তোমার কোনো ধারণা আছে আমি তোমাকে নিয়ে কতটা চিন্তিত ছিলাম।তোমার সমস্যা কি বলবে?সারাদিন তুমি কোথায় ছিলে?আমেনা খালাকে বলেছো ভার্সিটি যাচ্ছো কিন্তু আমি সেখানে তোমাকে পেলাম না।এমনকি তোমার বন্ধু রাহাতকেও জিজ্ঞেস করলে সে জানায় তুমি ক্লাসে ছিলে না।তাহলে সারাদিন ছিলেটা কই তুমি?”

মেহু অবাক হয়ে যায়। আদ্য সারাদিন তাকে খুঁজেছে।কিন্তু মেহু তো সিমরানের বাসায় ছিল।সিমরানই তাকে ভার্সিটি যেতে বারণ করেছে।তাছাড়া আদ্য বা তাকে নিয়ে হঠাৎ এতটা উদ্বিগ্ন হলো কেনো?নাকি গতকাল রাতের ঘটনায় সে আপসেট হচ্ছে তাই…..

“কি হলো তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করছি তুমি উত্তর দিচ্ছো না কেনো?এটা কি তোমার সমস্যা একি প্রশ্ন হাজারবার করলেও উত্তর পাওয়া যায় না?”

মেহুর ভাবনার মাঝে আদ্য বিরক্ত আর রাগী গলায় হুংকার ছাড়ে।মেহু আমতা আমতা করে সিমরানের বাসায় যাওয়ার বিষয়টা জানায়।সেই সাথে বাড়তি কিছু মিথ্যাও যোগ করে নাহলে আদ্য সন্দেহ করবে। আদ্য সবটা শুনে বিশ্বাস করলো কি করলো না কে জানে কারণ সে সরু চোখে মেহুকে দেখছিল।

“বন্ধুর বাসায় গিয়েছো ভালো কথা কিন্তু ফোন তো ছিলো একটা কল করে তো জানাতে পারতে।তাছাড়া আমি কতবার কল করেছি বারবার সুইচ অফ বলছে।ফোন যদি বন্ধই থাকে তাহলে সেটা দিলামই বা কেনো?যাই হোক পরেরবার এভাবে মানুষকে চিন্তায় রেখে উধাও হয়ে যাবে না।খেয়েছো?”

“হু”

“ওকে যাও ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নাও।”

আদ্য আরকিছু না বলে চলে যেতে পা বাড়ায়।মেহু এতক্ষণে মাথাটা সোজা করে।মানুষটার চোখের দিকে তাকাতেই লজ্জায় বারবার শিউরে ওঠছে।মুখ না দেখলেও পেছনের অবয়ব দেখে মেহুর মনে শান্তি জাগে।মেহু ভেবেছিল আদ্য গতরাতের বিষয় নিয়ে তাকে প্রশ্ন করবি কিন্তু আশ্চর্য সে বিষয়ে কোনো প্রসঙ্গই তুললো না বরং এমন একটা ভাব নিয়ে কথা বললো যেন সব স্বাভাবিক। তবে মেহু অবাক হচ্ছে আদ্য তার খোঁজ করছিল। তাছাড়া মেহুকে না পেয়ে আদ্য কতটা অস্থির ছিল তা আদ্যর ব্যবহারে বোঝায় যাচ্ছে। মেহু এক টুকরো হাসি দিয়ে আদ্যর চলে যাওয়া দেখছে।তৎক্ষনাৎ আদ্য ফিরতেই মেহুর সাথে চোখাচোখি হয়ে যায়। মেহু কি করবে ভেবে পেলো না।এভাবে আদ্যর দিকে তাকিয়ে থাকার বিষয়টা নিশ্চয়ই আদ্য ধরতে পেরেছে তাই তো এভাবে ঘুরে দাঁড়ালো।

“এভাবে আমার দিকে চেয়ে আছো কেন?তাছাড়া পেছন থেকে শুধু মাথাটাই দেখা যাচ্ছে তুমি বললে তো আমি তোমার সামনে গিয়ে দাঁড়াতাম।যাই হোক বিছানার চাদরটা পাল্টে ফেলবে।সবকিছুর প্রমাণ সবাইকে দেখিয়ে বেড়ানো ঠিক না।”

এবার কথা শেষ করেই আদ্য দ্রুত পায়ে বেরিয়ে যায় যেন সে নিজেই লজ্জা পেয়েছে। মেহু বিছানার দিকে তাকাতে সেখানে ছোপ ছোপ লাল রঙ দেখে। সেটা দেখেই মেহু কাপড় দিয়ে মুখ ঢাকে।এ লোকটা তাকে কয়েক মুহুর্তের মাঝেই বিরাট লজ্জায় ফেলে দিয়েছে। একে তো মেহুর লুকিয়ে আদ্যকে দেখা দ্বিতীয় বিছানার বিষয়টা।এভাবে মেহুকে লজ্জায় ফেলতে কি আনন্দ পায় কে জানে?

মেহু দ্রুত চাদরটা তুলতে গিয়ে একবার সেই দাগে হাত বুলায়।আপন মনে হেসে উঠে তার সারা শরীর।

আদ্য রুমে গিয়ে দেখে সোহানা বসে আছে খুব ভাবুক দৃষ্টিতে। আদ্য রুমে ঢুকেই সোহানাকে ডাক দেয়।

“সোহানা তুমি কি এতক্ষণ বসে ছিলে?”

“হুমম আদ্য তুমি বলেছো অপেক্ষা করতে তাই। তুমি কি মেহুর কাছে গিয়েছো?”

আদ্য সহজ আর নির্বিকার ভঙ্গিতে জানায় উত্তরটা।সোহানা আশ্চর্য চোখে চেয়ে থাকে।কোথাও যেন এ আদ্যকে সে চিনতে পারছে না।একরাতের ব্যবধানে যেন আদ্য অনেকটা পাল্টে গেছে। সোহানা নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে,

“আদ্য তোমার কি কিছু হয়েছে বা তুমি কি কোনোকিছু নিয়ে আপসেট?”

“না সোহানা তেমন কিছু না।তাছাড়া তুমি কি জানি জরুরি কথা বলবে বলছিলে বলো।”

“আদ্য আসলে আমি বলছিলাম আমেরিকায় আমার কিছু কাজ আছে মূলত আমি যেখানে পড়াশোনা করছি সেখানে কিছু কাজ পড়ে গেছে। আমি এতদিন এখানে ছিলাম শুধু তোমার আর আমার এনগেজমেন্টের জন্য। সেটা যখন হয়ে গেছে আমি এবার দেশে যেতে চাই কিছু দিনের জন্য। তাই তোমাকে বিষয়টা জানাতে এসেছিলাম।”

“ওহ আচ্ছা। কোনো সমস্যা নেই সোহানা।তুমি নিশ্চিন্তে যেতে পারো।তাড়াহুড়োর দরকার নেই কাজ শেষ হলেই চলে আসবে ঠিক আছে। ”

“আদ্য আমি আমেরিকা যাচ্ছি। হয়তো বেশ লম্বা সময়ও লাগতে পারে তুমি কি আপসেট নও?”

“অভিয়াসলি সোহানা।আফটার অল তুমি আমার বাগদত্তা। এতদিন তুমি দূরে থাকবে সেটা ভাবতেই খারাপ লাগছে।”

সোহানা আদ্যর কথা শুনছে।আদ্য যেভাবে বললো তাকে ছাড়া থাকতে আদ্যর কষ্ট হবে চোখে মুখে তা একটুও প্রকাশ পেলো না।বরং কোথাও যেন একটা খুশি ভাব ফুটে ওঠলো।সোহানা চলে যাওয়াতে কি আদ্য খুশী?সোহানা বেশ চিন্তায় পড়ে গেলো।হঠাৎ তার চোখ যায় আদ্যর হাতের দিকে।গতকালের এনগেজমেন্টের আংটিটা আদ্যর হাতে নেই। কোথায় গেলো সেটা?

“আদ্য তোমার আংটি কই?”

সোহানার কথায় আদ্য চমকে উঠে। আঙুলের দিকে তাকাতে সে টের পায় গতকাল রাতে রুমে এসে জেদ করে সে আংটি খুলে ছুড়ে মেরেছিল কিন্তু কোথায় ফেলেছে সে জানে না?এখন কি বলবে সোহানাকে?

“আসলে আমি গোসল করার সময় সেটা খুলে ড্রয়ারে রেখেছিলাম।পরতে মনে ছিলো না।এখনি পরবো।তুমি কি আর কিছু বলবে?তোমার ফ্লাইট কখন?”

সোহানা ফ্লাইটের তথ্য দিলো।তারপর আদ্য এমন একটা ভঙ্গিমা করলো যেন আদ্য খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করবে।সোহানা ভেবে পেলো না সে থাকবে নাকি চলে যাবে।অবশেষে সে বের হতে গিয়ে পুনরায় আদ্যর দিকে তাকালো।এতদিনের চেনা আদ্যকে হঠাৎ তার অচেনা লাগছে।আমেরিকা যাওয়ার কথা শুনেও আদ্য বিশেষ চমকালো না।আপসেট হলো না।গতকাল মাত্র এনগেজমেন্ট হয়েছে আর আজই সে আংটি খুলে রাখলো।সব মিলে যেন কোথাও একটা গন্ডোগোল আছে যা সোহানা ধরতে পারছে না আবার মনে হয় পারছে কিন্তু স্পষ্ট না।সোহানা ভাবতে ভাবতে রুম ত্যাগ করলো।সোহানা যেতেই আদ্য একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।সে মনে মনে খুশিই হলো যে সোহানা থাকবে না।যা করার তাকে এ সময়ে করতে হবে।
,
,
,
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here