সেদিনও জ্যোৎস্না ছিল পর্ব-২৬

0
6808

#সেদিনও_জ্যোৎস্না_ছিল

#তানিয়া

পর্ব:২৬

সোহানা চলে গেছে আমেরিকায় আজ এক সপ্তাহ হলো।যাওয়ার পর সে অনেকবার আদ্যকে কল করেছে প্রেমালাপ করার জন্য। প্রতিবারই আদ্য কিছু শুনেছে কিছু শুনে নি এমন অবস্থা। তবে সব কথায় সুর মিলিয়েছে।

“আদ্য তোমার জন্য মন খারাপ করছে।মনে হচ্ছে দেশে আমি অনেক বড় কিছু রেখে এসেছি। আই মিস ইউ ডার্লিং। ”

“হুমম সোহানা আমারও একি অবস্থা। তুমি কখন ফিরবে বলো তো?”

“তুমি চাইলে এক্ষুনি চলে আসতে পারি।কি আসব?”

এ কথায় আদ্য কয়েকবার কেশে উঠে। মনে মনে দোয়া করে যেন আগামী এক মাসেও সোহানা না আসে।আদ্য আর তাকে আদিখ্যেতা দেখিয়ে আসার কথা বলবে না।এ মেয়েকে বিশ্বাস নাই চলেও আসতে পারে।

মেহু কেমন জানি মিইয়ে গেছে। সবসময় আদ্যর থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখে।সেই সময়টার পর থেকে আদ্যর মুখোমুখি দাড়াতে তার কেমন জানি অস্বস্তি হয়,শুধু অস্বস্তিই নয় লজ্জায় বারবার কুঁকড়ে যায়। যখনি সে আদ্যকে দেখে চট করে সরে পড়ে। আদ্য ব্যাপারটা প্রায় লক্ষ্য করে কিন্তু সুযোগে মেহুকে পায় না।কেনো জানি ইদানীং আদ্যর একটা অসুখ হয়েছে। আদ্যর প্রায়ই ইচ্ছে করে মেহুকে খুব কাছ থেকে দেখতে তার সাথে সময় কাটাতে , তাকে আদর করতে।কিন্তু সেই সুযোগটা সে পায় না যেখানে চোখের দেখা দেখে না সেখানে আদর করার চিন্তা করাটা অকল্পনীয়। তাছাড়া আদ্য লক্ষ্য করেছে মেহু আগে থেকে আরো সুন্দর হয়ে গেছে। আদ্য লুকিয়ে লুকিয়ে মেহুকে দেখে। যখনি দেখে মেহু নীলা বা আমেনার সাথে কথা বলছে তখনি আদ্য আড়াল থেকে চেয়ে থাকে কারণ সে জানে তাকে দেখলেই মেহু ছুটে পালাবে।

আজ মেহু খুব সুন্দর একটা শাড়ী পরেছে।মেরুন কালারের ওপর অনেকটা এ্যাশের ছড়াছড়ি। শাড়ীর সাথে মেহু হাত খোঁপা করেছে যার কারণে মেহুর উন্মুক্ত গলাটা দেখতে বেশ লাগছে।তার ওপর ঘাড়ের কাছেট তিলটা ডিপ ব্ল্যাক হওয়ায় সেটা আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।আদ্য নিচে নামতে গিয়ে সেদিকে চেয়ে থাকে।আদ্যর খুব ইচ্ছে করছে এ মুহুর্তে মেহুকে জড়িয়ে ধরে একটা চুমু খেতে কিন্তু সেটা কি সম্ভব?মেহু কাজের ফাঁকে চোখ তুলতেই আদ্যর চোখে চোখ পড়ে সে লজ্জা মিশ্রিত দৃষ্টিটা সড়ে নেয়।ইশশ এত লজ্জা পায় কেনো মেয়েটা!এ লজ্জায় বারবার আদ্যকে ঘায়েল করে।হুট করে আদ্যর মাথায় একটা শয়তানি বুদ্ধি খেলে গেলো।এ সুযোগে সে মেহুকে নিজের কাছে আনবে।

“মেহু আমার ব্লু কালারের টি-শার্ট টা কোথায়?”

আদ্যর প্রশ্ন শুনে চমকে উঠে মেহু।কিন্তু সে তো টি-শার্টটা আলমারিতে ভাজ করে রেখেছিল একদম প্রথম সারিতে।আলমারি খুললেই আগে সেটা চোখে পরবে।মেহু একটু মন খারাপ করলো।

“এখন কি দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি রুমে গিয়ে টি-শার্ট খুঁজে দিবে?”

মেহুর বিন্দুমাত্র যেতে ইচ্ছে করছেনা। সে অসহায় দৃষ্টি নিয়ে আমেনা খালার দিকে তাকায়।আমেনা খালা হাতে থাকা কাজটা করছে যেন সে কিছুই শুনতে পায় নি।মেহু ছোট ছোট পায়ে রুমের দিকে হাঁটা ধরলো। রুমে ঢুকে মেহু আগে ড্রয়ার চেক করে যদি ভুল করে ওখানে রাখা হয়।ড্রয়ার খুলে পেলো না।আলমারি খুলতেই চোখ ছানাবড়া। এতো টি-শার্টটা। তার মানে তো মেহু ভুল করে নি।ওনি কি না খুঁজেই মেহুকে ডেকে আনলো নাকি…..?

মেহু চোখ বড় করে ভাবতে থাকে।তাড়াতাড়ি শার্টটা বের করে দিয়ে যেই না দরজা দিয়ে দৌড় দিবে ওমনি আদ্য দরজায় হেলেন দিয়ে মেহুকে দেখতে থাকে।মেহুর শরীর কাঁপতে থাকে।না জানি কি করে লোকটা?মেহু আস্তে আস্তে দরজার কাছে যেতেই আদ্য ভেতরে ঢুকে দরজার হুক লাগিয়ে দেয়।মেহু ভয়ে পাথর হয়ে যায়। কি করছে আদ্য, দরজা বন্ধ করলো কেনো?

“আপনার টি-শার্ট তো আলমারিতেই ছিল আপনি না খুজে আমাকে ডাকতে গেলেন কেনো?”

“ডেকেছি তো অপরাধ হয়েছে নাকি ডাকা যাবে না বলে নিয়ম আছে? ”

আদ্য হাত ভাজ করে একপাশে দাঁড়িয়ে মেহুর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো।মেহু আদ্যর প্রশ্ন শুনে মাথা নিচু করে রইলো।

“কি হলো জবাব দিচ্ছো না কেনো?”

আদ্য এবার ধীর পায়ে মেহুর দিকে পা বাড়ায়।আদ্যর আগানো দেখে মেহুর পা স্থির হয়ে যায়। মেহুর উচিত নড়াচড়া করে স্থান পরিবর্তন করা কিন্তু সে পা নাড়াতে পারছে না।মনে হচ্ছে কেউ গাম দিয়ে তার পা মেঝের সাথে আটকে দিয়েছে।

আদ্য একদম মেহুর খুব কাছে চলে আসে তবে দূরত্ব রয়েছে সামান্য। মেহু চোখ নিচু করে রেখেছে আর আদ্যকে মেহুকো ভালো করে দেখছে।কত্তো সুন্দর একটা মেয়ে আর এ মেয়ে কিনা তার বউ ভাবতেই আনন্দ ধারা বয়ে যায়। মেহু কি ভাবলো কে জানে সে এক ফাঁকে দরজার দিকে দৌড় দিলো কিন্তু দরজা বন্ধ। দরজার হুক ধরতেই আদ্য মেহুর হাত দুটো দরজার সাথে চেপে ধরে।

“এ মেয়ে তোমার এত পালাই পালাই স্বভাব কেনো?আমাকে কি তোমার বাঘ মনে হয় যে তুমি দেখলেই পালাতে চাও।ইদানীং তুমি আমার থেকে আড়ালে থাকো। অনেকটা লুকিয়ে লুকিয়ে। আমি লক্ষ্য করেছি এমনিতে সবার সাথে হেসে খেলে বেড়াও যেই না আমাকে দেখলে ওমনি কোথাও হাওয়া হয়ে যাও।কারণটা কি বলবে?আমি দেখতে কি খুব খারাপ? ”

আদ্য জড়ানো কণ্ঠ নিয়ে মেহুকে প্রশ্ন করে।মেহু সেসব শুনছে না।সে চোখ বন্ধ করে অন্য দিকে মুখ করে আছে।

“আমার হাতটা ছাড়ুন ব্যাথা পাচ্ছি। ”

“ব্যাথা পেলে পাও আগে আমার কথার উত্তর দাও।আমাকে দেখলে তুমি পালাও কেনো?আর চোখ বন্ধ করে আছো কেনো?চোখের দিকে না তাকালে আমি বুঝবো কি করে তুমি ব্যাথা পাচ্ছো।চোখ খুলো চোখ খুলো বলছি?”

শেষের দিকে একটু ধমকে উঠে আদ্য।মেহু তাড়াতাড়ি চোখ খুলে আদ্যর দিকে তাকাতে পুরো কেঁপে ওঠে। এ চোখ মেহু চিনে।অবিকল সেই রাতের মতো নেশাময়।কিন্তু এ মুহুর্তে তেমন কিছু ঘটতে দেওয়া যাবে না।এক ভুল বারবার করার মানে হয় না।

“কই তুমি তো বললে ব্যাথা পাচ্ছো তোমার চোখে মুখে তো সেই ভাবটা দেখা যাচ্ছে না।আসলে তুমি মোটেও ব্যাথা পাচ্ছো না।আমার হাত থেকে পালাতে মিথ্যা বলছো।আমি এখনো আমার উত্তর পাই নি।বলো না আমি কি বাঘ?”

আদ্যর কথা গুলো জড়িয়ে যাচ্ছে। তার চোখ মুখে অন্য রকম ভাব ফুটে ওঠছে।মেহু কি বলবে ভেবে পেলো না।তবুও বলা দরকার না হলে ছাড়া পাবে নাহ এক প্রশ্ন বারবার করবে।

“দেখুন আপনি বাঘ না আপনি মানুষই।আমি আপনার থেকে পালিয়ে থাকি না তবে আপনার সামনে আসতে ভয় লাগে তাই দূরে থাকি।তাছাড়া এতদিন আপনি সোহানাকে নিয়ে বিজি ছিলেন তাই মনে হয়েছে আমি আড়ালে ছিলাম। আমি কিন্তু ঠিকই ছিলাম।যাই হোক উত্তর পেয়েছেন এবার ছাড়ুন কাজ আছে। ”

“উত্তর তো পেলাম কিন্তু এখন ছাড়বো না।তুমি বলেছো আমি মানুষ অথচ ভয় পাচ্ছো বাঘ ভেবে।তার মানে মিথ্যা বলেছ এর শাস্তি তোমাকে পেতে হবে।”

আদ্য মেহুর মুখের সাথে ঠোঁট ঘষে কথা গুলো বলে উঠে। মেহু নড়তে পাচ্ছে না।আদ্য খুব আস্তে আস্তে মেহুর মুখে ঠোঁট দিয়ে স্লাইড করতে করতে গলায় নেমে আসে।যেই জায়গায় তিলটা আছে সেখানে খুব গভীর করে চুমু বসে দেয়।মেহু চোখ বন্ধ করে শক্ত হয়ে যায়। তার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে।বারবার বুক উঠানামা করছে।মেহু দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁটটা কামড়ে ধরলো তবুও তার দম আটকে আসছে।

“প্লিজ আমাকে ছাড়ুন প্লিজ। ”

আদ্য মেহুর সেসব আর্তনাদ শুনছে না। খুব সফট করে মেহুর উন্মুক্ত ঘাড়ে ঠোঁট বসাচ্ছে যেন এটা শরীর নয় ফুলের পাপড়ি। আদ্যর একহাত মেহুর কোমড় জরিয়ে আছে অন্য হাত পেটের মাঝে কিলবিল করছে।মেহু একহাত আদ্যর হাত ধরে আছে শক্ত করে অন্য হাত দরজার গা ঘেঁষে। মেহু দরজা ধরতে ধরতে হঠাৎ হুকের নাগাল পায়।চোখ খুলে একবার দেখে নেয় অন্য দিকে আদ্যকে দেখছে কতো আরামে সে মেহুর ঘাড়ে মুখ নিয়ে ডুবে আছে। মেহু তাড়াতাড়ি অন্য হাত দিয়ে হুকটা খুলেই আদ্যকে সরিয়ে দিয়ে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।আদ্য মাতালের ন্যায় টলতে লাগলো।ব্যাপারটা কি বুঝতে তার কয়েক মিনিট সময় লাগলো।আসলে মেহুর শরীরের মাতাল নেশায় এতটা বুদ ছিল যে মেহু তাকে ধাক্কা দিয়ে বেরিয়ে গেছে সেটা সে বুঝে উঠতে পারে নি।আর যখন বুঝলো তখন রুম থেকে বের হয়ে দেখে মেহু নেই। রাগে আদ্য দরজায় একটা লাথি দেয়। রাগ তো পরলোই না উল্টো আদ্য পায়ে ব্যাথা পেলো।পা ঢলতে ঢলতে ভাবলো এ মেয়েকে একটা শিক্ষা দিতেই হবে।

আদ্য অনেকটা রেগে গেলো মেহুর সেই আচরণে।তাই এখন আর কোনো কাজে মেহুকে ডাকে না।দেখলেও চোখ সরিয়ে নেয় যেন মেহুকে চিনেও না।মেহু কতোবার ইনিয়েবিনিয়ে আদ্যর সাথে কথা বলতে গিয়েছে কিন্তু আদ্য পাত্তা দেয় না।মেহু জানে এসব আদ্যর ভং আদ্য যে মেহুকে ভালোবাসে সেটা মেহু জানে।সেদিন রাতে আদ্য তার মনের কথা সব বলে দিয়েছিল।মানুষ সুস্থ অবস্থায় মিথ্যা বলতে পারে কিন্তু নেশা অবস্থায় সে তার মনের সব অপ্রকাশিত কথা গুলো বলে দেয়।আর আদ্য সেদিন যা বলেছিল তাতে বিন্দুমাত্র মিথ্যা নেই সেটা মেহু বোঝে।কিন্তু আদ্যর সাথে নিজেকে মেশাতে মেহু ভয় পায়।যতই হোক এ বাড়ির মধ্যে বেশ পরিবর্তন এসেছে। এরমধ্যে দেখা যাবে হয়তো সত্যিই মেহুকে এ বাড়ি ছেড়ে যেতে হবে তখন তার কি গতি হবে?সেসব ভাবতেই মেহুর চোখ ছলছল করে উঠে।

মেহু দিন দিন কেমন জানি মোটা হয়ে যাচ্ছে। মেহু বুঝতে পারছে না হঠাৎ তার মোটা হওয়ার লক্ষণ কী?সে তো তেমন খাবার দাবারও খায় না।তাছাড়া তার ওপর দিন দিন যা মানসিক বিপর্যয় যাচ্ছে তাতে তো তার আরো শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাওয়ার কথা কিন্তু হচ্ছে উল্টোটা।তার ওপর কেমন জানি ঝিমুনি ভাব চলে এসেছে সবসময় শরীরটা ভার লাগে।প্রায় অসুস্থ হয়।একবার তো চোখ মুখ ঝাপসা করে প্রায় অন্ধকার দেখছিল যার কারণে হাত পর্যন্ত কেটে ফেলে।তবে লুৎফা আর আমেনা তাকে রেস্ট করতে বলেছে।

নীলা কিছু জিনিস কিনবে তাই মেহুকে সাথে নিয়ে বের হয়।দুজনে শপিং মলে গিয়ে প্রথমে কিছুটা ঘুরাঘুরি করে নেয় তারপর হালকা নাশতা করে আবারও ঘুরতে থাকে।নীলা কিছু টপস,একটা শাড়ী,চুড়ি সাথে কয়েকটা নাইটি।নাইটি নেওয়ার সময় নীলা মেহুকে চয়েস করে দিতে বলে।এত লজ্জা লাগছিল যে মেহু সেদিক থেকে সরে যেতে নেয় ওমনি নীলা হাত ধরে আহ্লাদে বলে,

“কি গো চয়েস করে দিতে বলছি চলে যাচ্ছো যে।এত লজ্জা পেলে হয়।পারলে তুমিও কিনো।সেগুলো পরে যখন আদ্যর সামনে যাবে দেখবা বেচারা এমনিতেই জ্ঞান হারিয়েছে। তখন কে সোহানা,কে রেহানা সবাই তোমার কাছে হার মানবে।”

নীলা কথা গুলো বলতেই মেহু লজ্জায় লাল হয়ে যায়। দোকানদার হেসে অন্যদিকে চলে যায়। মেহু নীলাকে কড়কড়ে চোখে তাকাতে নীলা কিছু হয় নি এমন ভাব করে অন্য দিকে গিয়ে কাপড় নাড়াচাড়া করে।

নীলা শপিং শেষ করতেই মেহুকে নিয়ে হাসপাতালে যায়। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় লুৎফা বারবার বলেছিল মেহুকে যেন হাসপাতালে নিয়ে একটু চেকআপ করা হয়। কিছুদিন ধরে তার অসুস্থতা সবার নজরে পড়ছে।সেই হিসাবে নীলা মেহুকে নিয়ে হাসপাতালে গেলো।মেহু যেতে চায়নি কিন্তু নীলার জোরাজোরিতে আর না করলো না।

ডাক্তার অর্ণা পাল মেহুকে দেখছেন।তিনি খুব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছেন।তিনি মেহুকে বেডে শুতে বললেন।কিছুক্ষণ চেকআপ করে তিনি চেয়ারে এসে বসলেন।বেশ চিন্তিত মুখে তিনি কিছু ঔষধ লিখে দিলেন কিন্তু কিছু বললেন না।

মেহু আর নীলা বের হয়েই মাত্র গেইটের কাছে এসেছে হঠাৎ কোত্থেকে একটা গাড়ি এসেই মেহুকে তুলে নিলো।নীলা কিছু বোঝার আগেই গাড়িটা সাঁই করে তার চোখের সামনে বেরিয়ে গেলো।নীলা যখন বুঝলো তখন চিৎকার চেচামেচি করতে লাগলো।কিন্তু তার আগেই গাড়িটা নাগালের বাইরে চলে গেলো।
,
,
,
চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here