#স্নিগ্ধ_আবেশে_তুমি
#তানজিনা_তিহা (লেখনীতে)
#পর্ব_০৮
মেহু!
জ্বি,
এক সপ্তাহ পরে তোমার রেজাল্ট দিবে।
হুম।
কলেজে ভর্তির প্রিপারেশন নাও।
হুম।
তূর্য চলে গেলেন। দেখতে দেখতে আমাদের বিয়ের প্রায় এক মাস কেটে গেল। এই দিনগুলো বেশ ভালোই গেলো। এই দিনগুলোতে নিজেকে একবারে এই পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিয়েছি আমি। তূর্যের বকা, আদর মাখা ধ্বনি, মিফতার সাথে খুনসুটি এই সব নিয়ে বেশ ভালোই কাটছে আমার দিনগুলো। বুঝতে পারি নি এতো তাড়াতাড়ি কেটে যাবে এতগুলো সময়। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করছি তূর্য কেমন জানি হয়ে যাচ্ছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত একটা কথাও বলেন না উনি এটা প্রথম থেকে হলেও ইদানিং এর প্রভাব বেশি লক্ষ্য করছি আমি। তার ফর্সা মুখটা কেমন জানি শুকিয়ে যাচ্ছে কি জানি চিন্তা করেন উনি। বাড়িতে যতক্ষণ থাকেন আমার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করেন। আজ বিকেলে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে বাহিরের মনোরম প্রকৃতি দেখতে যখন আমি ব্যস্ত তখনই এসে রেজাল্ট এর খবর শুনিয়ে গেলেন উনি। এতো দিন রেজাল্ট নিয়ে ততটা চিন্তা না হলেও এখন খুব চিন্তা হচ্ছে, আমার বুকে ভয় দানা বাঁধছে ধীরে ধীরে। পরীক্ষা মোটামুটি বেশ ভালোই দিয়েছি আমি, আশানুরূপ ফলাফল না হলে তখন কি হবে?
রাত দশটা বেজে গেছে, আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। বিকেলে রেজাল্টের কথা শোনার পর থেকেই হাত পা কাঁপছে। আশেপাশে কি হচ্ছে তা যেন দেখতে পাচ্ছি না আমি। শুধু মনে পড়ছে যদি ফলাফল ভালো না আসে তখন কি হবে?
কি ভাবছো এখনো? ঘুমোবে না?
পিছন ফিরে দেখলাম তূর্য।
হুম।
এতো টেনশন করছো কেন? তোমার রেজাল্ট ভালোই আসবে।
আপনি কি করে বলেন?
উম, আমার বউ তো তাই বললাম।
আপনার বউ হলেই যে ভালো হবে এর কোন গ্যারান্টি আছে?
অবশ্যই আছে, তাসকিন মাহমুদ তূর্য কখনো ভুল বলে না। ওকে,,
আমি কিছু বললাম না, চুপ করে রইলাম। সে আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। মনে হয় কত দিন আমাকে দেখে নি।
তোমায় দেখার পিপাসা যেন মেটেই না। তোমার মাঝে কি আছে যা আমায় আকৃষ্ট করে? তোমার চোখের চাহনিতে এক অপূর্ব মায়া। বার বার কেন এই ছোট পরিটা আমাকে পাগল করে দেয়। কি নেশা আছে তোমার মাঝে? আমায় মনে পড়বে কখনো তোমার মেহু পরি!
তাকে এক দৃষ্টে আমার দিকে চেয়ে থাকতে দেখে আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি দেখছেন?
আমার মেহু পরিটাকে দেখছি, আমার পরিটা বড় হচ্ছে।
আমি তার কথায় মুচকি হাসলাম। তার কথাগুলো শুনতে এখন আমার খুব ভালো লাগে। জানি না কেন এমন হচ্ছে আমার, তবে কি আমি তার প্রতি আসক্ত হয়ে গেছি? আমায় ভাবনার জগতে বিলীন হয়ে যেতে দেখে তূর্য বললেন, মেহু! তুমি কি আমাকে ভুলে যাবে?
আমি আশ্চর্য হলাম। ওনাকে কেন ভুলে যাবো আমি? কি বলতে চাচ্ছেন উনি?
আমি কেন আপনাকে ভুলে যাবো? আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন?
তিনি মুচকি হেসে বললেন, কিছু না পিচ্চি বউ আমার।
আমার মাথায় তার কথাগুলোই ঘুরপাক খাচ্ছে বারবার। আমাকে চিন্তা মগ্ন থাকতে দেখে তিনি বললেন, মেহু শোন।
হুম,,,
গ্ৰামে যাবে?
মুহূর্তেই মনটা ভালো হয়ে গেল। অনেক খুশি লাগছে এখন। বিয়ের পর একবার ও বাড়িতে যাওয়া হয় নি। অনেক দিন পর বাড়িতে যাবো। মাঝে মাঝে আম্মু আব্বুর সাথে কথা বললেও তাদের দেখার ইচ্ছেটা আমার মাঝে তীব্র গতিতে বাড়েছে। আমি উৎকণ্ঠা হয়ে বললাম,
কবে? কবে? কবে?
এতো খুশি? কাল সকালে যাবো।
আচ্ছা, ঠিক আছে।
ব্যাগ গুছিয়ে নাও।
আচ্ছা। মিফতাও কিন্তু যাবে।
হুম।
সে আর কিছু বললেন না, আমিও কিছু না বলে ব্যাগ গুছাতে চলে গেলাম। সকালে গ্ৰামে যাবো, খুব খুশি লাগছে আমার।
————————————
দীর্ঘ সময় পাড়ি দিয়ে বাড়িতে চলে এলাম। বাড়ির কাছে আসতেই দেখতে পেলাম মধু বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। দৌড়ে গিয়ে মধুকে জরিয়ে ধরলাম। ও আমাকে দেখে কেঁদেই দিলো। আমিও কাঁদতে লাগলাম। কত দিন পরে ছোট বোনটাকে দেখছি। একে একে মা আর আমার চাচিরা ছুটে এলেন। মা কে জরিয়ে ধরে আরেক দফা কান্নার পর্ব শেষ হলো। এবার সবার চোখ গেল জামাইয়ের উপর। দেখতে পেলাম তূর্য মুখটা বাঁকা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। সবাই জামাইয়ের সাথে কথা বলে তাকে ভিতরে আসতে বললো। তূর্য আমাকে বললো, তোমাদের মেয়েদের চোখ কি দিয়ে তৈরি বলতো? পানির ট্যাংক মনে হয়।
আমি হালকা রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম, কেন? এভাবে বলছেন কেন?
সে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ছিঁচকাদুনে একটা।
বলেই তিনি ভিতরে চলে গেলেন। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। মিফতা বললো, ভাবি মণি কেঁদো না।
আমি মিফতাকে নিয়ে ভিতরে গেলাম, মহাশয় তো আমাদের রেখেই ভিতরে চলে গেলেন। মনে হয় উনি এ বাড়িতে কত এসেছেন, সব চিনেন। ভিতরে গিয়ে দেখলাম সবাই জামাই নিয়ে মহাব্যস্ত। বাড়িতে ছোট খাটো একটা আয়োজন লেগে গেছে। তূর্য একটা চেয়ারে বসে আছেন।আমার দিকে তাকিয়ে ইশারায় তার কাছে যেতে বললেন। আমি তার কাছে না গিয়ে ভিতরে চলে গেলাম, এতে হয় তো উনি রাগ করেছেন কিন্তু আমার বেশ ভালো লাগছে।
মায়ের সাথে টুকিটাকি কাজ, ছোট বোনের সাথে ঘুরাঘুরি আর হাসিঠাট্টায় কেটে গেল দিনটা। রাতে তূর্য আর আমার জন্য বাড়ির সবচেয়ে সুসজ্জিত ঘরটায় থাকার বন্দোবস্ত করা হলো কিন্তু আমি মিফতা আর মধুর সাথে গিয়ে শুয়ে পরলাম। আজ তূর্যের কাছে যাওয়ার সাহস আমার নেই। সারাদিন তার কোন খবরই আমি রাখি নি। রাগে তার মুখটা যে টমেটোর মতো ফুলে আছে এটা আমার চোখের আড়াল হয় নি। বেশ কয়েকবার আমাকে তার কাছে যেতে বলেছিলেন কিন্তু আমার মুখ ভেংচে অন্যদিকে চলে গেছি। এতে তো উনি বেজায় রেগে আছেন। এখন গেলে হয় তো আমাকে চিবিয়ে খাবেন।
গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন রত অবস্থায় বুঝতে পারলাম আমি শূন্যে ভাসছি। গভীর ঘুমে মগ্ন থাকায় চোখ খুলতে ইচ্ছে হচ্ছে না কিন্তু হঠাৎই চোখ খুলে দেখলাম, আমি তূর্যের কোলে।
আমি কিছু বলতে যাবো এর আগেই উনি বললেন, চিৎকার করলে কিন্তু এখনই কোল থেকে ফেলে দিবো। আমি কিন্তু এ কাজ করতে দ্বিতীয় বার ভাববো না।
তার কথা শুনে কিছু বলার আগেই আমি চুপ হয়ে গেলাম। তাকে বিশ্বাস নেই, তিনি আমায় ফেলেও দিতে পারেন। তাই চুপটি করে থাকলাম। তিনি আমাকে নিয়ে এসে খাটে শুইয়ে দিলেন এরপর আমার পাশ ঘেঁষে শুয়ে পড়লেন। আমি সাথে সাথেই উঠে বসে পড়লাম। তার সাথে ঘুমানো অসম্ভব। আমাকে উঠে বসতে দেখে তিনি বললেন, কি হয়েছে? ঘুমোবে না?
আমি আপনার সাথে ঘুমাবো না।
তো কোথায় ঘুমাবে? নিচে?
কেন?
বা রে খাটে না ঘুমোলে তো নিচেই ঘুমোতে হবে তোমার। বাড়িতে ঘুমোই বলে শ্বশুর বাড়িতে এসে নিচে শুতে পারবো না।
বলেই উনি খাটে শুয়ে পড়লেন। আমি খাটের এক কোণে বসে থাকলাম, ওনার সাথে এক সাথে আমি ঘুমোতে রাজি নই। আমাদের ঘরটা টিনের আর মেঝেটা মাটির নিচে শোয়া অসম্ভব। আমি পড়লাম বিপদে।
সকালে পাখির কুঞ্জনে ঘুম ভেঙ্গে গেল। নিজেকে তূর্যের বাহুডোরে আবিষ্কার করলাম। সেই দিনের মতো আজও বেশ শক্ত করে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছেন তিনি। রাতে খাটের উপর বসে বসেই তো ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, তাহলে তূর্য আমাকে,,,,
আমি তার বাঁধন থেকে নিজেকে মুক্ত করতে ব্যস্ত কিন্তু তার শক্ত বাঁধন থেকে মুক্তি পাওয়া যেন আমার জন্য অসম্ভব। তাকে ডাক দিয়ে বললাম, প্লিজ ছাড়ুন।
তূর্য মনে হয় সজাগই ছিলেন। আমার কথা শুনে চোখ খুলে বললেন, এতো নড়াচড়া করছো কেন? শান্তি মতো একটু ঘুমোতেও দিবে না?
আপনি ঘুমান কোন নিষেধ নেই, আমাকে ছাড়ুন। তূর্য আমার কথা কানে নিলেন না বরং আগের থেকে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরলেন আমাকে।
আরেকটু ঘুমোবো,যতক্ষণ না আমার ঘুম শেষ হবে ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি উঠতে পারবে না।
আশ্চর্য তো, আপনার ঘুমের সাথে আমার কি সম্পর্ক?
সে এবার আমার দিকে চেয়ে বললেন, আমি বউ ছাড়া ঘুমোতে পারি না। তাই তুমিও শুয়ে থাকবে।
বিস্ফোরিত নয়নে তার দিকে চেয়ে থাকলাম। সে যেন কিছুই দেখতে পারছে না। কোন উপায় না পেয়ে নিজেকে আট কপালে মনে হচ্ছে এখন।
—————————
দুদিন হলো বাড়িতে ফিরেছি। এতো দিন পরে বাপের বাড়ি গেলাম কিন্তু থাকতে পারলাম না পরদিনই চলে আসতে হলো। তূর্য একদিনের বেশি কিছুতেই থাকবেন না অবশ্য এরও কারণ আছে তাকে কর্মক্ষেত্রে বিচরণ করতে হবে। দুদিন হলো ঢাকা ফিরেছি, দুদিনে তূর্যকে এক মুহুর্তের জন্যও জিরোতে দেখি নি। দুদিন ধরেই সেই সকালে বের হন আর মধ্যরাতে বাড়ি ফিরেন। বেচারার অবস্থা কাজের চাপে নাজেহাল। আমি যতটা পারি সাহায্য করি তাকে।
আজ তিনি বাড়িতে আছেন। হঠাৎ করে আজ তার জন্য নিজ হাতে রান্না করতে ইচ্ছে করছে। আমি চটপট রান্নাঘরে চলে গেলাম।
চলবে……..
(অনুগ্রহ করে ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন, কেমন হয়েছে জানাবেন।)
নিয়মিত গল্প পেতে আমাদের সাথে থাকুন🥰
page :https://www.facebook.com/story.link380
Group 1. গল্পের লিংক ( গল্পের রিভিউ)+আলোচনা :https://www.facebook.com/groups/999645603764557/
Group 2. 💛হলদে খামের ভালোবাসা💛 :https://www.facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa
Happy reading to all😍