#স্পর্শতায়_তুমি
#পর্ব_০৩
#অধির_রায়
ক্যাফেডিয়ামে এক ধ্যানে বসে আছে প্রকৃতি। তিথি অর্পি একাধারে গল্প করে যাচ্ছে। প্রকৃতির মাথায় ঘুরঘুর করছে কিছুক্ষণ আগের ঘটনা স্বরণ করে৷ বুকের মাঝে প্রবল স্রোতের ধারা বয়ে যাচ্ছে৷ রাগে লজ্জায় সুইসাইড করতে ইচ্ছা করছে৷ তিথি প্রকৃতিকে ধাক্কা দিয়ে বলল,
“পুষ্প স্যারের কথা ভাবছিস৷ পুষ্প স্যার তোকে মুরগী বানিয়ে রেখেছিল নাকি৷ আমরা তোকে মুরগী হতে দেখতে পারলাম না৷ স্যার মানা করেছে যেতে৷ আমি ভেবেছিলাম ভিডিও করলে ফেসবুকে ছেড়ে দিবো।”
তিথির কথা নাকের ডগায় রাগ উঠে যায়৷ প্রকৃতি রাগী গলায় বলল,
“আমি ওই পুষ্পের বাচ্চাকে ছাড়ব না৷ আমাকে অপমান করা৷ আমি তাকে নাকানিচুবানি না খাওয়াতে পারলে আমিও প্রকৃতি নয়৷”
“আমাকে দেখে মানসিক রোগী মনে হয়৷ আমার ফোনের পাসওয়ার্ড আমার যা ইচ্ছা তাই দিবো৷ আপনার তাতে কি?”
পুষ্প স্যার প্রকৃতির দিকে ঝুঁকে বলল,
“তোমার গোবর মাথায় এর থেকে ভালো চিন্তা কখনও আসতে পারে। আমার ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো৷ তোমাকে মানসিক হসপিটালে নয়, পা’গ’ল কু”কু”রে”র মাঝে ছেড়ে দেওয়া হবে৷”
“স্যার আপনি কিন্তু আমাকে…. ”
পুষ্প স্যার ভারী গম্ভীর কন্ঠে বলল,
“আমাকে নিয়ে মেসেঞ্জার গ্রুপে এতো বাজে কথা কিভাবে বলো? তোমার রুচি এতোটাই খারাপ তুমি আমাকে রাস্তার গু’ন্ডার সাথে তুলনা করো৷ আমি লু’চু, লম্পট টাইপের স্যার৷ একজন শিক্ষককে নিয়ে তোমার ধারণা এতোটা নিম্ন।”
পুষ্প স্যার এতোটাই রেগে আছে বলে বুঝানো যাবে না৷ নিজের নামে খারাপ কথা কেউ সহ্য করতে পারে না৷ পুষ্প স্যার এক পা দুই করে এগিয়ে যাচ্ছে৷ প্রকৃতি পিছিয়ে যাচ্ছে৷ সুযোগ বুঝে প্রকৃতি নিজের ফোন স্যারের হাত থেকে ফোন কেঁড়ে নেয়৷ এক দৌড়ে পুষ্প স্যারের রুম থেকে চলে আসে৷
“অর্পি কাটা গায়ে নুনের ছিঁটা দেওয়ার জন্য অসহায় কন্ঠে বলল,
“তোর ক্রাশ পুষ্প স্যার তোকে বদ্ধ ঘরে কিছু করেনি৷ যদিও পুষ্প স্যার ভালো কিন্তু তুই তো পুষ্প স্যারের উপর ফিদা৷ তোকে তো বিশ্বাস নেই৷ কখন কি করে ফেলিস পুষ্প স্যারের সাথে? তাছাড়া পুষ্প স্যারও অনেক কিছু করতে পারে৷ বাড়িতে বউ নেই৷”
অর্পি কথা শেষ হতেই উচ্চ স্বরে হাসিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে অর্পি, তিথি৷ চারপাশের অন্য ছেলেমেয়েরা তাদের দিকে ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে দেখছে৷ কিছু যায় আসে না অর্পি তিথির৷ প্রকৃতি বেচরা এবার কান্না করে দেয়৷ প্রকৃতির কান্না দেখে অর্পি, তিথি চিকত হয়ে যায়। তিথি চিন্তিত গলায় বলল,
“কি হয়েছে কান্না করিস কেন?”
প্রকৃতি ঠোঁট ভিজিয়ে বলল,
“স্যার সব জেনে গেছে৷ এখন আমার কি হবে? আমি কিভাবে মুখ দেখাব? আমি পারব না স্যারর সামনে যেতে৷”
তিথি টেবিল টুংটাং শব্দ করে বলল,
“গুড নিউজ। তার মানে পুষ্প স্যার জানে তুই পুষ্প স্যারকে ভালোবাসিস৷ যাক বাবা ভালোই হলো রাগী গম্ভীর স্যারকে দুলাভাই ডাকতে পারবো৷”
মামা আরও সিঙ্গারা দেন৷ আজ সব বিল প্রকৃতি দিবে।”
তিথি, অর্পি খাবার অর্ডার করে টেবিল ভর্তি করে ফেলে৷ রা’ক্ষসের মতো গ”পা”গ”প খেয়েই যাচ্ছে৷ দেখে মনে হচ্ছে বনের ক্ষুধার্ত পশু৷ দীর্ঘ দিন খাবারের জন্য অপেক্ষা করেছে৷ প্রকৃতি তাদের থামতে বলে৷ প্রকৃতির কথা কেউ কর্ণপাত করছে না৷ রা”ক্ষসের মতো খেয়ে যাচ্ছে৷ একবারও প্রকৃতিতে খাবারের কথা বলছে না৷ প্রকৃতি মনে মনে বলল,
“আমি মাঝে মাঝে ভুলে যায় এরা আমার বান্ধবী। আমাকে রেখে কিভাবে খাচ্ছে? পুরো কথা শুনার কোন তাগিদ তাদের মাঝে নেই৷ পাশের বাসার কাকিমাদের মতো। তিল থেকে তাল করা এদের মহান কাজ৷ যখন এরা কাকিমা হবে তখন পুরো দুনিয়াতে কেউ কথা বলতে পারবে না৷”
খাওয়ার পর্ব শেষে যে যার মতো করে চলে যাচ্ছে৷ এখানে থাকলে তাদের বিল দিতে হবে। সেজন্য কোন কথা না বলে কেটে পড়ছে৷ তিথি তো বাঁচাল টাইপের মেয়ে৷ কথা না বলে থাকতেই পারে না৷ ক্যাফেডিয়ামের দ্বারের কাছে এসে নুনের ছিঁটা দিয়ে গেল৷ দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল,
“দোস্ত চাপ নিবি না৷ চিল কর চিল৷ সামনে আরও তোর পকেট খালি করব।”
কিছু বলার আগেই দৌড়ে তিথি সেখান থেকে চলে যায়৷ প্রকৃতি খাবারের বিল মিটিয়ে তিনজনের গোষ্ঠী উদ্ধার করতে করতে বাসায় ফিরে৷
অর্পন আর ঋষি ছাঁদে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে৷ নিকোটিনের ধোঁয়া বাতাসে উঠিয়ে দিচ্ছে৷ অর্পন নিকোটিনের ধোঁয়া উড়িয়ে বলল,
“ঋষি তুই এভাবে কতোদিন থাকবি৷ বাসা থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিলি কেন? প্রায় একটা মাস হয়ে গেলে তুই বাসা থেকে বের হচ্ছিস না৷”
ঋষি মলিন হেঁসে মিহি কন্ঠে বলল,
“বাহিরের জগৎ নিজের কাছে বিষাদময় লাগে৷ সমস্ত শান্তি হারিয়ে গেছে৷ বাহিরে বের হলেই মনে পড়ে ছোঁয়ার কথা৷ তার সাথে হাত ধরে রাতের আকাশে তারা দেখেছি৷ হেঁটে হেঁটে এগিয়ে গেছি দিক থেকে দিগান্তর৷ সবকিছু পোড়ে পোড়ে আমাকে খায়। বুকের পা পাশে চিন চিন ব্যথা শুরু হয়৷”
ঋষির কাঁধে হাত রেখে বলল,
“তুই নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা কর৷ কাজে থাকলে নিজেকে মুভ অন করতে পারবি৷”
“সেজন্য পুরো দমে পড়ালেখা শুরু করছি৷ আমাকে যে ভাবেই হোক বিসিএস পরীক্ষায় ভালাে ফল করতে হবে৷ বাবার পাশে দাঁড়াতে হবে৷ বাবা অবসরের আগেই আমাকে একটা জব করতে হবে৷”
“শুধু বিসিএসের জন্য বসে থাকলে চলবে না৷ মাস্টার্স কমপ্লিট করেছিস৷ কোম্পানিতে ট্রাই কর৷ ভালো সেলারি পাবি। পাশাপাশি প্রিপারেশন নিতে পারবি বিসিএসের৷”
“একদম ঠিক বলছিস৷ নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখতে হবে৷ আমাকে মুভ অন করতে হবে৷ আমার জন্য না হলেও আমার মা, বাবা, বোনের জন্য হলেও মুভ অন করতে হবে।”
।
।
ইন্টারভিউ দিয়ে অফিস থেকে বের হবার পথে ঋষির সাথে ধাক্কা লাগে অজানা কারোর সাথে৷ ঋষি কিছু বলার আগের মেয়েটি ঋষিকে থা”প্পড় বসিয়ে দেয়। চেঁচিয়ে বলল,
“মেয়ে মানুষ দেখলে গায়ে পড়তে ইচ্ছা করে৷ তোদের মতো ছেলেদের জন্য আজ আমরা বের হতে পারিনা৷”
ঋষি মাথা নিচু করে বলল,
“ম্যাম আপনি ভুল ভাবছেন৷ আমি ইচ্ছা করে আপনাকে ধাক্কা দেয়নি৷ ফোনে কথা বলায় মগ্ন থাকার জন্য ভুলবশত হয়ে গেছে।”
মেয়েটি তেড়ে ঋষির দিকে আসে৷ ঋষি কথা না বাড়িয়ে চলে আসে৷ এতে মেয়েটি আরও রেগে যায়৷ মেয়েটি দূরে ঋষির সামনে আসে৷ ঋষির হাত ধরে টানতে টানতে বাহিরে নিয়ে আসে৷ ঋষি মেয়েটির ব্যবহার দেখে হতভম্ব। কি বলবে বুঝতে পারছে না? ঋষির পায়ে লা’থি দিয়ে বলল,
“কান ধরে ওঠবস করতে হবে। আমাকে ধাক্কা দেওয়ার শাস্তি পেতে হবে৷”
ঋষি কোমল কন্ঠে বলল,
“ম্যান এখানে সিনক্রিয়েট করার চেষ্টা করবেন না৷ আমি মানছি আমার ভুল হয়ে গেছে। মানুষ মাত্রই ভুল৷ আজ আমার জায়গায় যদি আপনি থাকতেন৷”
মেয়েটি হুংকার দিয়ে বলল,
“ব্যাস। আপনার নীতির বাক্য আপনার কাছে রাখেন৷ আমাকে জ্ঞান দিতে আসবেন না৷ আপনি যদি আমার কথা না মানেন আমি আপনাকে খু’ন করব।”
“আপনি সামান্য একটা ধাক্কা নিয়ে অনেক বড় সিনক্রিয়েট করছেন৷ আমার হাতে সময় নেই৷ আমাকে বাস ধরতে হবে৷ আপনার বাজে কথা শোনার মতো টাইম আমার হাতে নেই৷”
মেয়েটি অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
“আমি বাজে কথা বলছি৷ আজ তোকে নিজ হাতে শাস্তি দিব৷”
মেয়েটি ঋষিকে মারার জন্য হাত বাড়ালেই ঋষি হাত ধরে মেয়েটিকে ফ্লোরে ফেলে দেয়৷ কোন কথা না বলে সেখান থেকে চলে আসে৷
তিথি প্রকৃতির কাঁধে মাথা রেখে বলল,
“প্রকৃতি তোর ক্রাশটা সেই৷ পুষ্প স্যারকে কালো শার্টে অনেক কিউট লাগছে৷ তুই তো অনেক ফর্সা৷ তোকে পুষ্প স্যারের সাথে যায়না৷ তুই বরং পুষ্প স্যারকে আমার হাতে তুলে দেয়৷ স্যারকে বিয়ে করে এমন পি’টানি দিব ভাবতে পারনি না৷”
অর্পি আড় চোখে তিথির দিকে তাকিয়ে বলল,
“তোর লজ্জা করে না৷ তুই অন্যের স্বামীর দিকে নজর দেস৷ প্রকৃতির মুখটা দেখ৷ একদম ছোট হয়ে গেছে৷ শিক্ষকদের পি”টানোর কথা বলতে পারলি৷
অর্পিকে ধাক্কা দিয়ে বলল,
” তুই এখানে দাদিমাদের মতো কথা বলবি না৷ প্রকৃতির স্বামী কিভাবে হলো? প্রকৃতির সাথে পুষ্প স্যারের বিয়ে হয়নি৷ আর তুই উনাকে স্বামী বানিয়ে দিলি৷ ইনকোর্স না দিলে ফেল করিয়ে দেয়৷ তাকে না পি”টিয়ে তোকে পিটাব।
“বিয়ে হতে কতোদিন। স্যার প্রকৃতির ভালোবাসা এক্সেপ্ট করেছে৷ সেখানে আমরা তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে কিভাবে থাকব?”
প্রকৃতির ধৈর্যর বাঁধ ভেঙে যায়৷ প্রকৃতি হুংকার দিয়ে বলে উঠে,
“দু’জনেই মুখ বন্ধ কর৷ তোদের মুখ থেকে বাজে কথা শুনতে ভালো লাগছে না৷ বা”লের স্যারের সাথে আমি কেন প্রেম করতে যাব। আমি শেষে কিনা বুড়ো স্যারের সাথে প্রেম করব। তোর ওই বুড়ো স্যারের সাথে প্রেম কর৷ আমি বুড়ো স্যারের সাথে প্রেম করতে পারব না৷”
তিথি প্রকৃতির পীঠে একটা কি’ল বসিয়ে বলল,
“কু’ত্তী সেদিন তুই বললি কেন? স্যার তোর ভালোবাসা জেনে গেছে৷ তোকে মেনে নিয়েছে৷”
“আমি তোদের কখন বললাম৷ আমি কি বলেছি স্যার আমার ভালোবাসা মেনে নিয়েছে? তোরাই তো পাশের বাসার কাকিমাদের মতো ভেবে নিলি৷ বুঝিস কম লুটিয়ে বেড়াচ্ছিস বেশি৷”
“আরে ইয়ার চিল চিল। প্যারা নেস না৷ বুড়ো হলেও কিন্তু স্যারটা জুস। ভার্সিটির রুলসের ব্যাপারে অনেক সিরিয়াস৷”
প্রকৃতি মুচকি হেঁসে বলল,
“তবে আজ আমি স্যারকে ছাড় দিব না৷ আজ ক্লাসের মাঝে বায়ু দূষণ ঘটাবি ৷ বেশি বেশি করে মুলা কিনে খা। স্যারকে ক্লাসে টিকে থাকতে দিব না৷ আমাকে সেদিন অনেক অপমান করেছে৷ স্যার ভুলে গেছে এটা স্কুল কলেজ নয়৷ এটা ভার্সিটি। ভার্সিটির লিড়ারদেট অপমান করলে তার কি ফল হতে পারে এবার দেখাব?”
অর্পি বসা থেকে দাঁড়িয়ে বলল,
“আমি তোদের সাথে নেই৷ আমি কিছুতেই স্যারকে অপমান করতে পারব না৷ আমি তোদের মতো অসভ্য নয়৷”
প্রকৃতি আর অর্পি এক সাথে বলে উঠল,
“আহা আমাদের সভ্য অর্পি৷ B T S লাভার অর্পি কবে থেকে সভ্য জাতিতে পরিণত হলি৷”
অর্পি নাকের ডগায় রাগ নিয়ে বলল,
“তোরা যাই বলিস B T S দের মতো বর পাওয়ার জন্য হাজার মেয়ে দিন রাত স্বপ্ন দেখে৷ মনে কর আমিও একজন তাদের মাঝে৷”
কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে চো’রের মতো দাঁড়িয়ে আছে প্রকৃতি। অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে পুষ্প স্যার অর্কিডে বসে আছে৷ প্রকৃতি শাস্তি হিসেবে এক পায়ে ভর করে দাঁড়িয়ে আছে৷ শাস্তি হিসেবে বলতে দেওয় হয়েছে,
❝প্রকৃতি এক পায়ে দাঁড়িয়ে কাঁচকলা খাই চা’বিয়ে।❞
চলবে….
ভুল ত্রুটিগুলো মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন। এখানে নায়ক হিসেবে থাকবে ঋষি, পুষ্প৷ নায়কা হিসেবে থাকবে প্রকৃতি.. অজানা মেয়ে অজান্তা+ছোঁয়া পাঁচজনের কেমিস্ট্রির পাশাপাশি বন্ধুদের দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসা।