“স্বপ্নচূড়ার আহবান”
পর্ব-১৩
পায়রার কথা শোনা মাত্রই নিজের প্যান্ট ঠিকঠাক করে দেখলো ৷ পায়রা যেটাকে ছেঁড়া বলছে আসলে তা এক ধরনের ডিজাইন। তমাল স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। যাক সে যা ভেবেছিলো তা হয়নি।
নাহলে, মানসম্মানের বারোটা বেজে যেতো। পায়রা তখনও একনাগাড়ে হাঁসছে। গ্রামের মানুষদের পায়ে প্যান্ট দেখেছে সে। হাঁটুর কাছে সামান্য ছেঁড়া ডিজাইনও দেখেছে। কিন্তু, হাঁটুর উপর থেকে এত বড় বড় করে ছেঁড়া ফাঁড়া দেখেনি৷ এমন স্টাইলও যে হয় তা সে ভাবেইনি। নীলাংশ মৃদু হেসে বললো –
‘পিচ্চি, ওটা এক ধরনের ডিজাইন। ‘
পায়রা হতবাক হয়ে তাকালো। কারিমা ফোনে সবসময়ের মতোই ফোন ঘাঁটছিলো। পায়রার গ্রামীণ পোশাক আশাক দেখেই একটু দূরে সরে দাঁড়িয়ে আছে। পায়রার বোকামি দেখে মুখ বাঁকিয়ে বললো –
‘কী ক্ষেতরে বাবা! নরমাল কমন সেন্স নেই নাকি? ‘
পায়রা মনে মনে আহত হলো। ঢাকা শহরের অনেক নিয়ম কানুন সে তো জানেইনা। তার গ্রামে যে এসব কিছুই হতো না। নীলাংশ কড়া চোখে তাকালো কারিমার দিকে। কারিমা চুপচাপ ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে রইলো। তমাল স্বভাবতই হাঁসলো। পায়রাকে আস্বস্ত করে বললো –
‘ওর কথায় কিছু মনে করো না, মোবাইল পাগলী আরকি। ‘
নীলংশও চেষ্টা করলো পরিস্থিতি ঠিক করতে। পায়রা তেমন কিছু বললো না। একটু দূরে জামেল এসে পায়রা এদিকে দেখে ডাকছেন। পায়রা ধাতস্থ হলো। হাঁসিমুখে নীলাংশ সহ সবাইকে সালাম দিয়ে সেদিকে গেলো। জামেল হাতের ব্যাগটা থেকে খাবারের প্যাকেট পায়রার হাতে দিলো। দুজন সামনের পথে যেতে নিতেই নীলাংশ পেছনে থেকে পায়রাকে ডাকলো। পায়রা অন্য চিন্তায় মগ্ন ছিলো। নীলাংশ দ্রুত পদে এগিয়ে পেছনে থেকে পায়রার ডান হাত আলতো করে টানলো। পায়রা চমকে উঠলো। নীলাংশ হালকা উদ্বীগ্ন কন্ঠে বললো-
‘পিচ্চি, তোমার ঠিকানা তো বললে না। ‘
পায়রা পিছু ফিরে শান্ত কন্ঠে বললো-
‘ভবিতব্য যদি দেখা করাবার চায় তাইলে আবার দেখা হইবো। ‘
নীলাংশ এসব ভাগ্যে বিশ্বাসই নয়। মলিন মুখ করে বললো –
‘ভবিতব্য! ‘
‘হ, আর আমার কোনো ঠিকানা নাই। আমি হইলাম পথিক। ভাগ্য যেইখানে চায় নেয়। সত্যি কইতে, ভাগ্যে যা থাকবো তা হইবোই। যেমন, আমি কহনো ভাবি নাই আমার জীবন এমন হইবো। কিন্তু, হইসে। কারণ ভাগ্যে লেখা আসিলো। ‘
নীলাংশের দৃষ্টি স্থির। এত কম বয়সে এত ওজনের কথা কীভাবে বলে মেয়েটা। হুটহাট বাচ্চামি করে। কিন্তু পরিস্থিতির চাপে হারিয়ে যায়। নীলাংশ মৃদু হেসে বললো –
‘ঠিক আছে। অপেক্ষা করি তবে। ‘
পায়রা কিছুক্ষণ নীলাংশের কোমল হাঁসির দিকে তাকিয়ে বললো-
‘আসি, সুন্দর সাহেব। ‘
নীলাংশের হৃদয়ে বাজলো দামামা। এক সমুদ্র উথাল-পাতাল ঢেউ আছড়ে পড়লো হৃদমাঝারে।
কী হলো কে জানে, নীলাংশের ইচ্ছে করলো পায়রার নরম হাত ধরে বলতে -‘ আমার ভবিতব্যের অপেক্ষা সইবে না পিচ্চি, তুমি তোমার সুন্দর সাহেবের সাথে থেকে যাও। ‘
বলা হলো না। পায়রা চলে গেলো জামেলের সঙ্গে। পায়রার মনে তেমন কোনো অনুভূতি তৈরি হয়নি। সে অনুভূতিহীন হয়ে সামনে এগিয়ে গেলো। নীলাংশ শ্বাস ফেললো। সে কীভাবে বলবে, অচেনা পথিকের মায়ায় জড়িয়ে গেছে সে। ঘুম ভেঙে যাওয়ার পর নির্মল স্নিগ্ধ চোখের দিকেই সে তাকিয়ে সময় পাড় করেছে। হুট করেই এ কেমন মায়ায় পড়লো ভেবে পেলো না সে। মনে মনে ভাবলো যদি সত্যিই ভাগ্যে লেখা থাকে তবে অবশ্যই দেখা হবে।
_________
বিশাল বড় বিল্ডিং-এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে জামেল আর পায়রা। পায়রার চোখ বিস্ময়ে ভরপুর। টিভিতে দেখেছে এমন বড় বড় বিল্ডিং। বাস্তবে এমন দেখেনি। চমৎকার আভিজাত্য ফুটে উঠেছে কোণায় কোণায়। বিল্ডিং-এর রঙটা কী তা পায়রা বুঝতে পারছেনা। তার মনে হচ্ছে গুড়ের তৈরি পায়েস। মনে মনে এমনটাই ভাবলো সে। জামেল ফোনে কথা বলে দারোয়ানকে বলে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলো। পায়রা জামেলের পিছু পিছু। দুটো বিদেশে কুকুর বোলে তাদের খাবার খাচ্ছে। পায়রা ভয় পেয়ে সিঁটিয়ে গেলো। তাদের গ্রামে প্রচলিত আছে, কোনো মানুষকে কুকুর কামড় দিলে পেটে কুকুরের বাচ্চা হয়। গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। জামেল পায়রাকে ভয় পেতে দেখে জিজ্ঞেস করতেই পায়রা বললো-
‘মাস্টার বাবা, সত্যিই কী কুকুর কামড় দিলে পেটে কুকুরের বাচ্চা হয়? ‘
জামেল হেঁসে ফেললেন। মেয়েটা মাঝে মাঝেই এমন বোকা বোকা প্রশ্ন করে। পায়রার উদ্দেশ্যে বললেন –
‘ সেসব হচ্ছে গ্রামের কুসংস্কার। ওখানে কতশত এমন অযৌক্তিক কথা বলে। কুকুরের কামড়ে কখনো বাচ্চা হয়না। কুকুরের কামড় থেকে জলাতঙ্ক রোগ হতে পারে। রেবিস নামক ভাইরাস থেকে জলাতঙ্ক রোগ হয়ে থাকে। এটি একটি স্নায়ুর রোগ। রেবিস ভাইরাস কুকুরের লালা থেকে ক্ষতস্থানে লেগে যায় এবং সেখান থেকে স্নায়ুতে পৌঁছে জলাতঙ্ক রোগে সৃষ্টি করে। এবার তো শহরে এসেছিস। দেখবি সব কিছু নতুন ভাবে দেখবি, শিখবি। কিন্তু খবরদার কখনো অহংকার করবি না।কিছু মানুষ শহরের আধুনিকতায় চোখে রঙিন চশমা পড়ে। মনে থাকবে তো? ‘
পায়রা মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো। তার মনে থাকবে। তার মাস্টার বাবার কথা সে কী ভুলতে পারে! কুকুরের কামড়ে যে কিছু হয়না জানতে পারে সোজা হয়ে হাঁটা শুরু করলো। লিফ্ট নামক বাহকে পায়রার প্রথম অভিজ্ঞতা হলো। কী অদ্ভুত! সেটায় হালকা ঝাঁকুনি দিতেই কলিজা শুকিয়ে গেলো। ইউনুস পড়ে বুকে ফুঁক
দিলো। লিফ্ট খুলে যেতেই তড়িঘড়ি করে বেরুলো। কিন্তু বিপত্তি সৃষ্টি হলো আরেক জায়গায়। কারো বলিষ্ঠ দেহের সঙ্গে ধাক্কা খেলো। ব্যাথায় চোখ মুখ কুঁচকে আসলো। সামনের ব্যাক্তিটি গুরুগম্ভীর গলায় বললো –
‘সাবধানে চলবেন তো মিস,আর ইউ ব্লাইন্ড? ‘
চলবে….
এতদিনে এটা নিশ্চয়ই ক্লিয়ার পায়রাকে ঘিরেই হবে সব। আমি কিন্তু, আসল মেল ক্যারেক্টার এখনও কাউকে বলিনি। দেরি হওয়ার জন্য দুঃখিত। রাতে আরেকটা পার্ট আসবে।