“স্বপ্নচূড়ার আহ্বান”
পর্ব-১৪
শীতলতা বইয়ে দেওয়া ঠান্ডা গলায় কিঞ্চিৎ অপ্রস্তুত বোধ করলো পায়রা। সামনের ছেলেটার মুখ চোখ শান্ত। শ্যামবর্ণের মুখে মায়ার চাদর। একটু বেশিই লম্বা মনে হচ্ছে। নাহলে, এত লম্বা পায়রারও ঘাড় উঁচিয়ে দেখতে হয়! গোছানো বিন্যস্ত কেশ স্থিরতা বজায় রেখে পিছিয়ে আছে। ছেলেটা তুড়ি বাজিয়ে বললো-
‘হেই গার্ল, কী দেখছো! ‘
পায়রা মুখ কুঁচকে করে ফেললো। প্রথমত তাকে ধাক্কা দিয়েছে আবার এমন ভাবে কথা বলছে যেনো দোষটা শুধুই তার। কড়া চোখে তাকিয়ে বললো-
‘আপনেরও দোষ আছে, আপনেও তো না দেইখা হাঁটতেসিলেন৷ কানা হইলে আপনেও হইবেন ‘
ছেলেটা হা করে বললো –
‘হোয়াট! তুমি জানো তুমি কার সাথে তর্ক আছে? ইটস, আর.জে স্বপ্নিল আরাজ। ‘
আর.জে বলতে পায়রা কিছু বুঝতে পারলো না। সে ঠোঁট চেপে ভাবলো হয়তো আর.জে মানে অনেক বড় কিছু। তারপরও দোষ তো আছে। কিন্তু কথা বাড়াতে চাইলো না। নতুন জায়গায় মানুষের সাথে খারাপ আচরণ করার প্রয়োজন নেই। জামেল আরও খানিকটা এগিয়ে গেছেন। পায়রা আড়চোখে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে সামনে চলে গেলো। স্বপ্নিল ভ্রুতে ভাজ ফেললো। অদ্ভুত মেয়ে তো! ঢাকার সবচেয়ে বিখ্যাত এফএম রেডিওতে আর.জে সে। তার আওয়াজের কবলে কতশত মেয়েরা আহত হয়ে পড়ে!
আর এই গাইয়া মেয়েটা এমন ভাব দেখালো! এই বিল্ডিং-এর সপ্তম ফ্লোরে থাকে। আজ রেডিও স্টেশন অফ। বাহিরে যাচ্ছিলো, আর তার মাঝেই এই হুলুস্থুল কান্ড!
__________
টুং শব্দ করে কলিং বেল বেজে উঠলো। চকিত হলো পায়রা। বেশ দামী ধরনের দরজা। জামেল দরজার পাশে কলিং বেল চেপেছেন। তার মাস্টার বাবা তাকে কোথায় নিয়ে এসেছেন তা সম্পর্কে এখনো অবগত নয় সে। বিশ্বাস আছে, একটা সুরক্ষিত জায়গায়ই নিয়ে আসবে তাঁকে। দরজা খুলে গেলো৷ বেরিয়ে আসলো যুবতী একটি মেয়ের মুখ৷ পোশাকেই বোঝা যায় বেশ বড়লোক। মুখে রঙবেরঙের প্রসাধনীর ছোঁয়া। মেয়েটি সামান্য হাঁসলো। জামেলের দিকে দৃষ্টি তাক করে বললো-
‘আপনি জামেল আঙ্কেল? ‘
জামেল মৃদু হেসে সম্মতি দিতেই মেয়েটি বাসায় ঢোকার পথ থেকে সরে দাঁড়ালো। ঘরের প্রতিটি জিনিস তাঁক লাগিয়ে দেওয়ার মতোন। কোনো খুঁত খুঁজে পাওয়া যায় , তা নিয়ে সন্দেহ। পায়রা নতুন জায়গায় মানিয়ে নিতে পারবে কিনা, মানুষগুলো কেমন হবে চিন্তায় ঘাম ছুটছে। বেরিয়ে আসলেন একজন ভদ্রলোক। জামেলকে দেখে উৎফুল্ল হয়ে হাসলেন। সঙ্গে সঙ্গে দুজন কোলাকুলি করলেন। ভদ্রলোককে উদ্দ্যেশ্য করে জামেল বললেন –
‘ এই হচ্ছে আমার মেয়ে পায়রা। বলেছিলাম না তোকে! ‘
ভদ্রলোক সেদিকে তাকাতেই স্তম্ভিত হলেন৷ পায়রার অবাক দৃষ্টিও তার দিকে। মৃদু কন্ঠে বললো-
‘ডাক্তার কাকা আপনে! ‘
আয়মান সোহরাব ছলছল চোখে তাকালেন। পায়রার মাথায় হাত রেখে বললেন –
‘ভালো আছো মা? ‘
পায়রা আচমকা হুহু করে কেঁদে ফেললো। ডাক্তার কাকা যে সেই বিভৎস ঘটনার সাক্ষী। তার তাঁরা বুবু চিঠিতেও এই ডাক্তার কাকার কথা বলেছিলো। আয়মান নিজেকে সামলান। জামেল তখনও ঘটনা বুঝে উঠতে পারছেন না। পায়রা কী করে তার বন্ধুকে চেনে! পায়রাকে ঢাকায় রাখার জন্য জামেলের একমাত্র ভরসার মানুষ আয়মানকেই মনে হলো। আয়মান জামেলের কৌতুহল মিটিয়ে সেসব ঘটনা বললো। জামেল আরেকটু বিশ্বাস পেলো। এবার আর দুশ্চিন্তা হবেনা একা রেখে যেতে। জামেলের কিছু কাজ পড়ে যাওয়ায় বেশিক্ষণ বসতে পারলেন না তিনি। আয়মানকে বললেন যেনো পায়রাকে দেখেশুনে রাখে, মাসের যাবতীয় খরচ সেই পাঠাবেন৷ কিন্তু আয়মান রাজি হলেন না। তার মতে , মৃত মেয়ের আরেকটা প্রতিচ্ছবি দেখতে পান পায়রার মাঝে। পায়রাকে তার নিজের মেয়ের মতোই রাখবেন। পায়রার মন চাইছিলো না তার মাস্টার বাবার কাছ ছাড়া হতে। কিন্তু ভাগ্য তার সহায় নয়। আয়মান পায়রাকে কিছু বলতে নিচ্ছিলেন । কিন্তু পেছন থেকে
এক নারীর ভারিক্কি কন্ঠে থেমে গেলেন।
‘আয়মান, তোমার সাহস কী করে হয় একটা গ্রামের অশিক্ষিত মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে আসার!’
আয়মান পেছনে ফিরলেন৷ তার স্ত্রী, তানজিমা সোহরাব। গায়ে লম্বা জামদানী শাড়ি জড়ানো। চোখে মুখে অহমিকা উপচে পড়ছে। মুখ চোখ লাল হয়ে আছে। তিনি আবারও রাগী কন্ঠে বললেন-
‘এই মেয়েকে আমার বাড়িতে আনার আগে জিজ্ঞেস কেনো করলেনা! তার উপর আবার শুনলাম মেয়েটার মুখও পোড়ানো। অশুভ মেয়ে…’
তিনি আরও কিছু বলার আগেই পেছন থেকে কলিং বেল বাজলো। দরজাটা খুলেই ছেলেটা হাসিমুখে মাকে দেখে বললো-
‘মম, আমি এসে পড়েছি। ‘
পাশে দাঁড়ানো পায়রার উপর তাকাতেই চমকে গেলো।
আনন্দিত গলায় বললো-
‘পিচ্চি! ‘
চলবে….
আজকের পার্ট টা একটু ছোট হয়েছে দুঃখিত। কালকে ইনশাআল্লাহ বড় করবো। কারা কারা গল্পটা পড়ছেন একটু সাড়া শব্দ দিন 😪