স্বপ্নচূড়ার আহবান ‘ পর্ব-৩৬

0
888

“স্বপ্নচূড়ার আহ্বান”
পর্ব-৩৬

ভীতিকর নির্জনতা জেঁকে বসেছে পুরো পরিবেশ জুড়ে। টেনশন মিশ্রিত বিন্দু বিন্দু মুক্তার মতো ঘাম জমেছে পায়রার মুখে। নীলাংশের হাতে মোবাইল। দৃষ্টি নিবদ্ধ রেজাল্ট শিট বের করা স্ক্রিনে। মুখভর্তি কাঠিন্যতা বিরাজমান। পায়রা মনে মনে নানাবিধ দুশ্চিন্তা করছে। চোখ বন্ধ করে দোয়া-দরুদ জপ করছে। নীলাংশ গলা খাঁকারি দিয়ে বললো-

‘পায়রা এদিকে তাকাও। ‘

পায়রা চোখভর্তি জল নিয়ে তাকালো। নীলাংশ স্ক্রিনটা পায়রার চোখের সামনে ধরে উৎফুল্লময় চিৎকার সহকারে বললো-

‘পিচ্চি! তুমি গোল্ডেন এ প্লাস নিয়ে অনেক ভালো মার্কস পেয়ে ঢাকা বোর্ডে দ্বিতীয় হয়েছো। ‘

পায়রা প্রথম দশ সেকেন্ড হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে ছিলো। পুরো কথাটা বোধগম্য হতেই সে মুখ চেপে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। আয়মান সাহেব চশমা খুলে নিজের চোখ মুছলেন। তাঁর গালভর্তি হাসি। রায়ানা
এতক্ষণ বহু কষ্টে হাসি লুকিয়ে ছিলো। পায়রা আসার দশ মিনিট আগেই সবাই রেজাল্ট দেখেছে। সবাই অবাকের রেশ কাটাতে পারেনি তখন পূর্ণ ভাবে। তৎক্ষনাৎ সবাই পায়রাকে চমকে দিতে অভিনয় করা শুরু করলো। পায়রা জড়িয়ে ধরে বসে আছে অপূর্ব আর রায়ানা। অপূর্ব অস্থির ভাবে সবার দিকে রাগী ভাবে বললো –

‘আমি বলেছিলাম এমন করার দরকার নেই। দেখো এখন হোয়াইট ফেয়ারি কাঁদছে! ‘

সবাই উচ্চস্বরে হাসলো ৷ পায়রা চোখ মুখ মুছে নিলো। অপূর্বকে বললো-

‘নাও আর কাঁদছি না। কিন্তু খুব রেগে আছি। সবাই কেনো এমন করলে! জানো আমি কত ভয় পেয়েছি!’

পায়রা উঠে আয়মান সাহেবকে সালাম করলো। আয়মান সাহেব মানিব্যাগ বের করে নগদ দশ হাজার টাকা পায়রার হাতে দিয়ে বললো-

‘জানতাম, আমার মেয়ে অনেক ভালো কিছুই করবে।
আগে থেকেই টাকা রেখে দিয়েছিলাম। ‘

পায়রা ইতস্তত করে বললো –

‘কিন্তু এত টাকা.. ‘

‘উহুম! কোনো কিন্তু নয়। এটা আমি খুশি হয়ে সালামি দিয়েছি। সামনে এমন আরও বড় বড় জয় হোক। ‘

পায়রা হাসিমুখেই তানজিমা বেগমকে সালাম করতে নিলো। কিন্তু তিনি একটু দূরে সরে বললেন –

‘ঠিক আছে ঠিক আছে, সালাম করতে হবে না। গুড উইশেস। ‘

মোবাইল ফোনে কারো সাথে কথা বলতে বলতে তিনি উপরে উঠে চলে গেলেন। পায়রা মলিন মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকলো। সবারই ব্যাপারটা খারাপ লাগলো। তানজিমা প্রথম থেকেই বেশ বিরক্ত হয়ে বসেছিলেন।
সবকিছু তাঁর আদিক্ষ্যেতা মনে হচ্ছিলো। চলে যেতে নিয়েছিলেন অবশ্য কিন্তু নীলাংশ অনুরোধ করে বলেছিলো-‘এমন একটা সময় সবাই একসাথে থাকলে পায়রার ভালো লাগবে। ‘ ছেলের কথা ফেলতে না পেরে বসে ছিলেন। কিন্তু আয়মান সাহেবের অযথাই এতগুলো টাকা দেয়াটা তাঁর মোটেও পছন্দ হয়নি।

রূপসা এগিয়ে আসলেন৷ পায়রাকে কাছে টেনে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন-

‘কীরে! আমি বুঝি কেউনা? ‘

পায়রা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বললো-

‘তুমি তো আমার ভালো মা! ‘

পায়রার এত ভালো রেজাল্ট উপলক্ষে আয়মান সাহেব পনেরো কেজি মিষ্টি পুরো এলাকায় বিতরণের ব্যবস্থা করলেন। সবাই অঢেল উৎসাহ প্রশংসা দিয়ে গেলো পায়রাকে। পুরো দিনটি জুড়েই উৎসবের মতো মনে হলো৷ কিন্তু পায়রার মন এতে খুব একটা প্রসন্ন হলোনা। কারণটা নীলাংশ। এই যে, কত কত মানুষ তাকে শুভকামনা জানালো। অথচ, নীলাংশ রেজাল্টের সংবাদটি বলেই উধাও। সেই যে বেড়িয়েছে
এখন রাত আটটা বাড়ি ফিরেনি। পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগেই নীলাংশ পায়রাকে বলেছিলো, পায়রা যদি ভালো রেজাল্ট করতে পারে তাহলে তাঁকে জীবনের বেস্ট উপহার দেবে। পায়রা রেজাল্ট জানার পর থেকেই নীলাংশের জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছে। রূপসা পায়রার পছন্দের সকল খাবার রান্না করেছেন আজ। কিন্তু পায়রা নীলাংশের অপেক্ষায় সবাইকে বলেছে তাঁর এখন ক্ষুধা নেই। দেখতে দেখতে দশটা বেজে গেছে। সবাই যার যার রুমে। পায়রার খাওয়ার ইচ্ছেটাই মরে গেলো। মনে মনে ভীষণ অভিমান হলো। এই দিনটার জন্য নীলাংশ সবচেয়ে বেশি কষ্ট করেছে।
রাত জেগে ঘন্টার পর ঘন্টা পড়িয়েছে। একটু পর পর পড়ার মধ্যে নিজ হাতে খাইয়ে দিয়েছে। অথচ,আজ তাঁর দেখাই পাওয়া যাচ্ছে না। ডাইনিং রুমে বসে থাকতে থাকতে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো পায়রার।
চুপচাপ গোমড়া মুখে নিজের রুমে গিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লো। চোখ বুঁজে ঘুমানোর চেষ্টা করলো।
রাগে অভিমানে দু ফোটা জল গড়িয়ে টুপ করে বালিশে পড়লো ৷ ঠোঁট উল্টে দুই হাতে চোখ মুছে শুয়ে রইলো। আর কথাই বলবে না সে নীলাংশের সাথে। মনে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করে ঘুমানোর চেষ্টা করলো। কিছুক্ষণ পরই মনে হলো কানের কাছে কারো তপ্ত নিঃশ্বাস বাড়ি খাচ্ছে। হালকা সজাগ হতেই কানে আসলো পুরুষালি কন্ঠ-
‘সরি পিচ্চি! ‘

পায়রা হকচকিয়ে জেগে গেলো। উঠে বসতেই দেখলো নীলাংশ মলিন হাসি নিয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে।
পায়রা অভিমান করে বললো –

‘আপনি এখন যান, আমি ঘুমাবো। ‘

নীলাংশ হঠাৎ-ই কালো কাপড় দিয়ে পায়রার চোখ বেঁধে দিলো। পায়রা চেঁচিয়ে উঠে বললো-

‘একি চোখ বাঁধছেন কেনো? ‘

‘হুঁশশ! বেশি কথা বলবে না। ‘

পায়রাকে দাঁড় করিয়ে পিছনে থেকে ধরে এগিয়ে যেতে লাগলো। পায়রা কিছুই বুঝতে পারছেনা। কিন্তু সিঁড়ি বেয়ে ওঠায় বুঝতে পারলো তাঁকে ছাঁদে নেয়া হচ্ছে। নীলাংশ গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতেই পায়রার চোখের পট্টি খুলে দিলো। পায়রা বিস্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে আছে। নীলাংশ হুট করে পায়রা হাতটা মুঠোয় নিয়ে খেয়ে বললো-
‘সারপ্রাইজ পিচ্চি! ‘

চলবে-
(আজ কিছু কথা বলবো, মনোযোগ দিয়ে শুনবেন।
বলতে যদিও কষ্ট হয় তারপরও বাধ্য হয়ে বলতে হচ্ছে। একটা গল্প লিখতে সাজাতে ইডিট করতে সব মিলিয়ে অনেক সময় লাগে। কিন্তু পড়তে তাঁর ১০ ভাগ সময়ও লাগেনা। আমি আগেও বলেছি, আমার গল্পের যদি একজন পাঠক হয় এবং সে যদি নিয়মিত মন্তব্য করেন তাহলে তাঁর জন্য আমি যত কষ্টই হোক আমি নিয়মিত দিবো। কিন্তু গল্পের পাঠক ৫০ এর উপরে অথচ মন্তব্য হয় তিনটা চারটা। অর্থাৎ, আমি অযথাই প্রতি দিন গল্প দিচ্ছি। তেমন কারো ভালোও লাগছে না। এক কাজ করি তাহলে, সপ্তাহে দুইদিন গল্প দেই।
এটাই কী ভালো নয়?বর্তমানে সবাই পড়াশোনায় প্রচুর ব্যস্ত। আমার নিজেরও পড়াশোনা আছে৷ বেশির ভাগ লেখক লেখিকারা এই সময়ে অনিয়ম গল্প দেন। এটা কিন্তু লেখক বা লেখিকার দোষ নয়। সময়ের সাথে পেরে উঠে না বলেই পারেননা ৷ এখন কথা হচ্ছে, গল্প লেখার জন্য কিন্তু কেউ-ই টাকা পাননা। যাই লেখেন তা শুধুমাত্র কিছু পাঠকের ভালোবাসা আর অনুপ্রেরণার জন্য। তাহলে, পাঠকরা যেমন রেসপন্স করবে লেখক লেখিকারা তেমন ভাবেই এগিয়ে যাবেন। আমি গল্পের রিচ, কমেন্ট দেখে ভীষণ হতাশ।

এখন থেকে ঠিক করেছি, যদি পর্বে দশটার কম কমেন্ট হয় তাহলে পরের দিন আর গল্প আসবে না। যেদিন হবে সেদিন দ্রুত পোস্ট হবে। পঞ্চাশ জন পাঠকের মধ্যে আমি নিশ্চয়ই দশটা মন্তব্য বেশি কিছু চাচ্ছিনা! এবার থেকে গল্প আপনাদের উপর নির্ভর করবে। দুটো শব্দ মন্তব্য করতে যদি এতো কষ্ট হয় তাহলে সেই অনুযায়ী আমারও দেরি করে গল্প দেয়া উচিত।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here