স্বপ্নচূড়ার আহবান ‘ পর্ব-৪৯

0
885

“স্বপ্নচূড়ার আহ্বান”
পর্ব-৪৯

ট্রেডমিল চলছে গড়গড় শব্দ করে। বড় বড় পা ফেলে মেয়েটি হাত পা চালিয়ে দৌড়াচ্ছে। পড়নে লং শার্ট। হাঁটুর একটু নিচ পর্যন্ত এক্সারসাইজ প্যান্ট। পনিটেইল করা সোজা চুলগুলো দুলে দুলে উঠছে। দরজায় নক পড়লো। বিদেশি এক নারী মাথা নিচু করে অত্যন্ত নিচুস্বরে ফরাসি ভাষায় বললেন-

‘আসতে পারি?’

মেয়েটি ট্রেডমিলের সুইচ চেপে বন্ধ করে দিলো। শার্টের উপরের দুটো খোলা বাটন লাগিয়ে নিলো৷ মহিলাটির উদ্দেশ্য বললো-

‘কাম ইন আলাসা ৷ ‘

গম্ভীর গলার আওয়াজটি শুনে তিনি কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলেন। হাতে হট লেমনেড। মেয়েটি সোফায় আসন করে বসে লম্বা লম্বা শ্বাস নিচ্ছে। হাপড়ের মতো বুক উঠানামা করছে। এক ঘন্টা কখন পার হয়ে গেলো সে টেরই পায়নি। মেয়েটি চোখ তুলে ইশারা করতেই আলাসা তড়িঘড়ি করে লেমনেডে এক চামচ মধু মিশিয়ে দিলেন। মেয়েটি তিন চুমুকে শেষ করে নিখুঁত সৌন্দর্যে মোড়ানো শরীরটা উঠিয়ে রেডি হয়ে নিলো।
পড়নে রাউন্ড শর্ট টপস। ডিজাইন করা কাটাকাটা প্লাজু। কোমরে একটা ব্রাউন বেল্ট। কাঁধের একটু নিচ পর্যন্ত গ্রে কালারের চুল। ফর্সা টানটান চেহারা। পূর্ণা যৌবনা নারী।

মেয়েটি ভীষণ আভিজাত্যপূর্ণ ভঙ্গিতে সিঁড়ি বেয়ে নিচ তলায় পৌঁছালো। টেবিলের কাছে এসে দাঁড়ালো। দুই চোখ টেবিলে বসা একজন পুরুষের দিকে। পুরুষটি নিঃশব্দে মুখে খাবার দিয়ে চর্বন করছেন। মেয়েটি করে চেয়ার টেনে বসলো। বিনা বাক্য ব্যায়ে সম্পূর্ণ খাওয়া শেষ হলো। পুরুষটি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললো-

‘মিষ্টান্ন খাবে?’

মেয়েটি হাত মুছলো। পুরুষটির দিকে তাকিয়ে ঝুঁকে
হা করলো। নির্দ্বিধায় মুখে খাবার পুড়ে দিলেন তিনি।
বেশ মজাদার একটা খাবার। জুগার কিরস্টোর্টে। মিষ্টি দাঁতযুক্তদের জন্য নিখুঁত, জুগার কিরস্টোর্টে হলো বাদাম-আক্রান্ত মেরিংয়ে, স্পঞ্জ এবং মাখনের ক্রিমযুক্ত স্তরযুক্ত কেক। মিষ্টি যোগ করার জন্য এটি চেরি ব্র্যান্ডি দিয়ে বয়ে গেছে। মেয়েটি খেয়ে থাম্বস আপ করে দেখালো। মুখে বললো-

‘স্যার, এটা ভীষণ সুস্বাদু। ‘

‘তোমার ভালো লেগেছে? ‘

‘একটু বেশী। ‘

‘তাহলে আরেকটু খাও। ‘

মেয়েটি না বোধক মাথা নাড়লো। খুবই মিহি স্বরে বললো –

‘নো। আমার ডায়েট চার্টে এটুকুর বেশি মিষ্টি গলধিকরণ করা নিষেধ। ‘

‘তোমার বয়স যেনো কত?’

‘আপনি জানেন। ‘

‘তারপরও বলো। ‘

‘কয়েক দিন আগেই চব্বিশ হয়েছে। ‘

‘এত কম বয়স থেকে এতটা বিধিনিষেধে নিজেকে বাঁধার প্রয়োজন হয়না ৷ বলেছিলাম? ‘

মেয়েটি নির্লিপ্ততায় উঠে দাঁড়ালো। চেয়ার আগের জায়গায় রাখতে রাখতে বললো-

‘মনের রঙ হারিয়ে গেলে বয়সটা আর দেখার বিষয় না। ‘

ঠোঁট চেপে কিছু ভেবে আবারও বললো-

‘জুরিখে এবার একটু বেশি গরম পড়েছে তাই না?’

পুরুষটি হাসলেন। নির্বিঘ্নে উঠে দাঁড়ালেন। মেয়েটির হাত ধরে বাহিরে যেতে যেতে বললেন-

‘দেরি হয়ে যাচ্ছে। ‘

‘ওয়েডিং সেরেমানি শুরু হতে আরও অনেকটা সময় বাকি। ‘

‘আগে পৌঁছালে ক্ষতি কী পায়রা?’

সুইজারল্যান্ডের দেশটির বৃহৎ দুটি শহর হলো জুরিখ ও জেনেভা। তবে, জুরিখ যা সুইজারল্যান্ডের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসাবে সুপরিচিত। ইউরোপের প্রধান শিল্প ও অর্থনৈতিক রাজধানীগুলোর মধ্যে জুরিখ পর্যটকদের জন্য সবচেয়ে আনন্দদায়ক এবং আকর্ষণীয় স্থান। সাংস্কৃতিপ্রেমীদের জন্য এখানে আছে বেশকিছু জাদুঘর এবং মধ্যযুগীয় স্থাপনা। পর্যটকদের দর্শনের জন্য জুরিখ সেরা সুইস শহরগুলির মধ্যে অন্যতম৷
পায়রা বর্তমানে জুরিখে অবস্থান করছে । সময় বদলানোর সাথে সাথে তাঁরও আপাদমস্তকে বিশাল পরিবর্তন এসেছে। পুরনো কেউ দেখলে হয়তো আর তাঁকে কেউ চিনতেই পারবেনা।

আজ সুইজারল্যান্ডে বেশ ধনী একটি পরিবারের বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছে। সকল মানুষ সেখানে উপস্থিত হচ্ছেন ৷ পায়রা ও তাঁর সঙ্গের পুরুষটি সেখানে প্রবেশ করতেই অতিথি আপ্যায়নের জন্য নিয়োজিত ব্যাক্তিবর্গ তাদের স্বাগতম জানিয়ে বললেন –

‘ওয়েলকাম, মি. আবাশ বোশ।’

‘ইটস নট আবাশ। আভাস বোস। ‘

‘ওহহ ইয়েস ইয়েস। ‘

আভাস বোসের পেছনে পুতুলের মতো একটি মেয়েকে দেখে বিনয়ী ভঙ্গীতে বললেন –

‘ইজ শী ইউর গার্লফ্রেন্ড ? ‘

আভাস বোস পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পায়রার কোমড় এক হাতে জড়িয়ে বললেন –

‘নোপ! মাই ওয়ান এন্ড অনলি ওয়াইফ। পায়রা বোস। ‘

চলবে-
অতীতে কী হয়েছে, বর্তমানেই বা কী হচ্ছে! এক পর্বেই সব বুঝতে পারবেন না। দুই তিন পর্বেই সবটা ক্লিয়ার হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here