“স্বপ্নচূড়ার আহ্বান”
পর্ব-৪৩
এক সপ্তাহ কেটে গেছে তানজিমা সোহরাব সৌদি আরবে গেছেন। বাড়ির সকলে বেশ খানিকটা আনন্দ ফুর্তিতে কাটাচ্ছে। বাঁধা দেয়ার কেউ নেই বলেই হয়তো। রায়ানা ফ্রেন্ডদের সঙ্গে অনেকটা সময় কাটাচ্ছে। পায়রা প্রায়শই রান্নাবান্না করছে। অপূর্ব
পড়াশোনাকে আপাতত একটু দূরেই রাখছে। নীলাংশের শাসনে দুই একবার পড়তে হয়। নীলাংশের তেমন কোনো পরিবর্তন নেই। মাকে খুব মিস করে সে। মা যত কঠিনই হোক। নিজের ছেলেকে কখনো কাঠিন্যতার ছোঁয়া লাগাননি। নীলাংশও কখনো মায়ের থেকে এতদূরে থাকেনি। তাই, মাঝে মাঝেই একটু মন খারাপ হচ্ছে। কিন্তু, আরেকটা সুবিধা হয়েছে। এখন আর লুকিয়ে চুরিয়ে বাহিরে যেতে হয়না পায়রাকে নিয়ে। সন্ধ্যা নামলেই পায়রাকে নিয়ে শহর ঘুরে আসে। নানান রকম জায়গা পরিদর্শন করায়। নীলাংশের সঙ্গে সঙ্গে এই শহরেরও প্রেমে পড়ে যাচ্ছে পায়রা। তাঁর ভাবতেই অবাক লাগে, যেদিন প্রথম সে এই লাল নীল শহরে এসেছিলো তখন কতটা খাপছাড়া লাগতো নিজেকে। মানিয়ে নিতে পারবে না কখনো, এই বলে ধরেই নিয়েছিলো। কিন্তু এখন সে উপলব্ধি করলো,শহর আসলেই সুন্দর, প্রাণবন্ত, চমৎকার। যদি সাথে একজন সুন্দর মনের মানুষ থাকে তো। কুৎসিত মনের মানুষ গুলোর জন্যই শহরের এই বিষাদ। এখন সবকিছুই ভালো লাগে। কোনোকিছুতেই আর অপূর্ণ লাগেনা। ফুটপাতের ল্যাম্পপোস্টের বাতির আলোয় দাঁড়িয়ে মোহিত নয়নে তাকিয়ে আছে পায়রা। নীলাংশ পাশেই দাঁড়িয়ে। জনবহুল রাস্তাটা আজ খানিকটা নীরবতা পালন করছে। দুই তিন জোড়া কপোত-কপোতী ও একটা পপকর্ণের দোকান দেখা যাচ্ছে। রাস্তায় হালকা হলদেটে আলো। পপকর্ণের একটা সুন্দর ঘ্রাণ চারপাশে মো মো করছে। দুই তিনটা ছোট ছোট বাচ্চা টাকা দিয়ে সেগুলো কিনছে। নীলাংশ পায়রার দিকে তাকিয়ে বললো-
‘খাবে? ‘
‘না। ‘
‘তাহলে তাকিয়ে আছো যে! ‘
‘কিছু জিনিস দূর থেকে দেখতেই সুন্দর লাগে। ‘
‘আমার পিচ্চি কঠিন কথা বলা শিখে গেছে! ‘
পায়রা তাকিয়ে মৃদু হাসলো। সত্যিই সে কিছুটা বদলেছে। ঢাকা- শহরের হাওয়াই এমন। নিজের কাছে নিজেকেই বদলে দেয়। নীলাংশ পায়রার হাতটা ধরে নাড়তে চাড়তে বললো-
‘বাসায় যাবে? ‘
পায়রা ধীরগতিতে নিজের মাথাটা নীলাংশের কাঁধে রাখলো। নীলাংশের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে বললো-
‘পরে!’
‘আচ্ছা।’
আরও কিছুটা সময় পিনপিনে নির্জনতা। হঠাৎ পায়রা কিছু একটা মনে করে বললো –
‘সুন্দর সাহেব..’
‘বলো। ‘
‘আপনি পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি কাকে ভালোবাসেন?’
‘মমকে। ‘
পায়রা স্মিত হাসলো। নীলাংশ ভ্রু কুচকে বললো-
‘হাসছো যে! ‘
‘আমার হিংসা হচ্ছে আপনাকে।’
‘কেনো?’
‘এই যে, আপনার মা আপনাকে কত ভালোবাসে। আর আমার মা..’
পুরোটা বলার আগেই গলার স্বর অস্পষ্ট হয়ে গেলো। যত যাই বলুক সে। দিনশেষে একাকীত্ব ঘিরে রাখে। মা বাবার জায়গাটা বোধ হয় কেউ নিতে পারেনা। তাঁরা বুবুর পর সেও তাঁর মাকে খুব ভালোবাসে। মাঝে মাঝে মনে পড়লো চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করে। কেনো, তাঁর মা এতো পাষাণ! নিষ্ঠুর!
নীলাংশের বুকে চিনচিন ব্যাথা করলো। পায়রার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে টুপ করে পড়ছে তাঁর কাঁধে। নীলাংশ
পায়রার মাথাটা বুকের বাম পাশে চেপে রাখলো। পায়রা টিশার্টটা আঁকড়ে ধরে আছে। নীলাংশ স্নেহময় কন্ঠে বললো-
‘গ্রামে যাবে পিচ্চি?’
পায়রা বুক থেকে মাথা উঠালো। আচমকা চোখ মুখ স্বাভাবিক করে নিলো। চোখটা দুহাতে মুছে বললো-
‘যাবো। ‘
‘কবে যাবে? বলো ‘
পায়রা তীক্ষ্ণতা নিয়ে তাকালো। ভীষণ শক্ত গলায় বললো –
‘যেদিন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবো আর সেসব তুচ্ছতাচ্ছিল্যের জবাব দিতে সক্ষম হবো। ‘
নীলাংশ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। পায়রা নীলাংশের দৃষ্টির মানে বুঝলো। অদ্ভুদ ভাবে হেঁসে বললো –
‘যথাযথ শাস্তি তাদের প্রাপ্য। যারা দুঃসময়ে পিঠে লাথি দিয়েছে, আমার তাঁরা বুবুকে বাধ্য করেছে আত্মহত্যা করতে। আমি ভুলিনি, আর ভুলবোও না। কিছু কিছু শাস্তি নিজ হাতেই দিতে হয়, প্রকৃতি সেই অধিকার দিয়েই দেয়। ‘
কথাটা বলে ঘোলাটে দৃষ্টিতে পায়রা নীলাংশের দিকে তাকিয়ে বললো-
‘আপনি সে পর্যন্ত থাকবেন তো সুন্দর সাহেব?’
নীলাংশ মৃদু হেঁসে বললো –
‘আমি না থাকলেও আমার ভালোবাসা অমর থাকবে। কথা দিলাম। ‘
চলবে-
মন্তব্যে দেখে একটু চিন্তা করবো কাল বোনাস পার্ট দেয়া যায় নাকি!