স্বপ্নচূড়ার আহবান ‘ পর্ব-৪৭

0
828

“স্বপ্নচূড়ার আহ্বান”
পর্ব-৪৭

গাড়ি স্কুলের সামনে থামতেই পায়রা বের হলো। এক পলক নীলাংশের দিকে তাকালো৷ কিন্তু ফলাফল ভীষণ হতাশাজনক। নীলাংশ চিন্তিত মুখে রুশানীর সঙ্গে কথা বলায় এতোই মগ্ন যে একবারও তার দিকে চাইলো না। পায়রা দ্রুত পা চালিয়ে স্কুলের ভেতর প্রবেশ করলো। যেতে যেতে শুনতে পেলো, নীলাংশ তাকে পেছনে ডাকছে। ফিরে তাকালো না পায়রা। কিছুটা অভিমান ও রাগে। বেশিক্ষণ থাকলে নিজেকে আর সামলাতে পারবেনা যে!

টেস্টের রেজাল্ট দেয়া হলো। পায়রা স্বভাবতই প্রথম হলো। ক্লাসের প্রায় সবাই শুভেচ্ছা জানালো। কেউ কেউ আবার হিংসা করে আড়ালে কটু কথা বলছে। আনন্দ বা দুঃখ কিছুই অনুভব হচ্ছে পায়রার। সে নির্বিকার চিত্তে মাথা নিচু করে বসে রইলো। দিহান সবাইকে খাতা দিয়ে পায়রার পাশে এসে বসলো। সে দ্বিতীয় হয়েছে। পায়রার দিকে তাকিয়ে বললো-

‘কী ম্যাডাম? প্রথম হলেন। মুখে হাসি নেই কেনো?মন খারাপ? ‘

পায়রা আগের মতো কড়া ব্যবহার করলো না। বরং মলিন হাসি দিয়ে বললো-

‘আরে না। তেমন কিছু না। ‘

‘ওহহো! তাহলে কেমন কিছু? এতদিন ধরে একসাথে আছি, এতটুকু তো বুঝতে পারি। ‘

পায়রা কিছুই বললো না। কী বলার আছে! জীবনের কোন সমস্যাটার কথা বলবে। পুরো জীবনটাই যেখানে সমস্যায় ভরা। যাকে আঁকড়ে একটু ভালো থাকার স্বপ্ন দেখে সেই সব স্বপ্ন চুরমার করে দিয়ে চলে যায়। দিহান কোনো উত্তর না পেয়ে চুপ করে চলে গেলো। ছুটির পর ধীর পায়ে করিডরে হাঁটছে পায়রা। প্রতি দিন যার জন্য দ্রুত বের হয়, আজ মন বলছে সেই মানুষটি তার অপেক্ষায় নেই। বুকে কেউ যেনো পাথর বেঁধে দিয়েছে। সেই ওজন নেয়ার ক্ষমতা তার হয়নি।
দুই হাতে চোখের কোণের জলটুকু মুছে নিয়ে আবারও হাঁটতে শুরু করলো। এতদিনের কঠোর পরিশ্রমের সুফল আজ পেয়েও নেই কোনো আনন্দ, উত্তেজনা। সবকিছুই ফিকে। প্রিয় মানুষটা সাথে না থাকলে হয়তো সুখ বড্ড দুর্লভ।

বিশাল করিডোর পেরিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নামতেই পেছনে থেকে গম্ভীর গলায় কেউ বললো-

‘মিস.ইন্টেলিজেন্ট! ‘

পায়রা চমকালো না। শুধু বিরসতা নিয়ে পিছে ঘুরলো।
সবসময়কার মতোনই সাদা কোর্ট প্যান্টে দাঁড়িয়ে আছে আভাস বোস। পায়রার কাছে এসে দাঁড়াতেই পায়রা বললো-

‘স্যার? ‘

‘বলো। ‘

‘একটা অনুরোধ করবো রাখবেন? ‘

আভাস ঠোঁট চেপে বললো-

‘কী অনুরোধ? ‘

‘এই পোশাকে, কোনো অসুস্থ মানুষের সামনে
যাবেন না। ‘

‘তা কেনো?’

‘যমদূত ভেবে ভুল করতে পারে। ‘

বলেই পায়রা আবার হাঁটা ধরলো। আভাস অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে পায়রার পিছনে আসতে আসতে বললো –

‘তুমি সবসময়ই আমার ড্রেসআপের দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকো। তাই বলে যমদূত! ‘

পায়রা আনমনে হাসলো। কথাটা ঠিক। যতবার আভাস তার সামনে আসে। পায়রা অদ্ভুত ভাবেই তাকায়। দোষটা অবশ্য পায়রার না। বিদেশিদের মতো ধবধবে সাদা চামড়ায় সাদা কোর্ট চোখের ঘোলাটে মণি। আর গাঢ় বাদামী চুলের সঙ্গে গালে খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে খানিকটা অবাক করার মতোই। এমন পোশাক বাংলাদেশে আর কাউকে দেখেনি সে। মাঝে মাঝে পায়রা দুষ্টুমি করে ভাবতো, লোকটা ভিনগ্রহের কেউ নয় তো?

ভাবনার ঘোর ভেঙে যায় আভাসের কন্ঠে-

‘অতীত কী হয়েছে তা ভেবে বর্তমান আর ভবিষ্যৎ নষ্ট করা বোকামি জানো? ‘

পায়রা মনে মনে অর্থ বিশ্লেষণের চেষ্টা করে বললো –

‘এই কথাটা কেনো বললেন?’

আভাস মুচকি হেঁসে বললো –

‘এমনি। ‘

কথা ঘুরিয়ে আবার বললো-

‘প্রথম হয়েছো। খুশি হওনি?’

পায়রার দৃষ্টি বাহিরের জানালার দিকে। চোখ দুটো বারবার চেনা পরিচিত মুখটা খুঁজে যাচ্ছে। সেদিকে তাকিয়েই বললো-

‘খুশি ভাগ করে নেয়ার মানুষটা না থাকলে আনন্দের রঙ হারিয়ে যায়। ‘

তারা কথা বলতে বলতে গেটের সামনে এসে দাঁড়ালো।
পায়রা বাহিরের দিকে পা বাড়াতেই, আভাস বললো-

‘নির্ভরশীলতা খুব খারাপ । কারো উপর শারীরিক ভাবে নির্ভর করলেও মানসিক ভাবে নির্ভর করার মতো ভুল একদমই উচিত না। শারীরিক ভাবে মানুষের মৃত্যু হয় একবার। মানসিক মৃত্যুর সংখ্যা পৃথিবীর বুকে বসবাসরত কোন মানবের পক্ষে বের করা অসম্ভব। ‘

পায়রা তীক্ষ্ম দৃষ্টি দিয়ে বললো-

‘কিন্তু মন?মনের উপরে কার নিয়ন্ত্রণ চলে?’

‘মন হচ্ছে মস্তিষ্কের এক জটিল খেলা। আমরা যখন কোনো কিছুর ফলাফল বের করতে অক্ষম হই। তখন কারো না কারো উপর দোষটা চাপিয়ে দেই। মস্তিষ্ক যখন কোনো কিছু বিশ্লেষণে অসফল হয়। তখন তা মন বলে চালিয়ে দেয়। সবটাই অনুভূতি। মন বলতে শরীরে কোনো অংশ নেই। বুকের বা পাশে হৃদপিণ্ডের অবস্থান। কোনো মানুষ যখন আমাদের মস্তিষ্কের পুরোটা জুড়েই বসবাস শুরু করে তখনই আমরা অনুভব করি সেই মানুষটাকে আমাদের প্রয়োজন। যা লোকমুখে ভালোবাসা বলে প্রচলিত। ভালোবাসার সংজ্ঞা পৃথিবীতে হাজার হাজার আছে। তুমি যে সংজ্ঞায় বিশ্বাস করবে, তোমার কাছে তাই সত্যি। ‘

বিস্ময়ে ভরাট পায়রাকে একবার দেখে আভাস দৃঢ়তার সঙ্গে কলেজ ভবনে চলে গেলেন। পায়রার অবুঝ মন কিছুই বুঝতে পারলো না। অর্থ যতবার বের করতে চাচ্ছে ততবারই ফলাফল ইরোর! ইরোর!

.
.
.
দুপুরে খাওয়া দাওয়ার জন্য সবাই একে একে ডাইনিং টেবিলে এসে বসলো। পায়রা নিজে থেকেই জেবাকে সাহায্য করছে। রূপসা টুকটাক এগিয়ে দিচ্ছেন। রায়ানা আর অপূর্ব একপাশে বসেছে। সামনেরটায় আয়মান সাহেব ও তানজিমা। তানজিমা কোনো কাজ করেননা। সাধারণত তার ফ্যাশন ডিজাইনিং হাউজের কাজ সামলান। ঘরে বসেই বেশির ভাগ কাজ করেন।
অল্প বয়স থেকেই এই কাজে যুক্ত তিনি। এজন্য মোটামুটি বয়স হলেও কম বয়সী লাগে। ফর্সা টানটান শরীরে সবসময়ই কনুই পর্যন্ত চিকন হাতার সঙ্গে নানান রকম ডিজাইন করা শাড়ি। একবার তাকালেই পরখ করা যায়, তিনি কতটা শৌখিন।

পায়রা পানির জগটা এনে পাশে রেখে বসলো। উৎসুক দৃষ্টিতে নীলাংশকে খুঁজল। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে চুপ করে রইলো। নীলাংশ অনেক ক্ষণ পর আসলো। তার পিছু পিছু রুশানী। মুখে আলতো হাসির রেখা। নীলাংশের মুখেও হাসি। পায়রার বুকে কাঁটার মতো বিঁধে সবটা।
নীলাংশ মৃদু হেঁসে টেবিলে বসলো। খাওয়া দাওয়া করতে করতে রুশানী আর নীলাংশ মাঝে মাঝে হালকা পাতলা কথা বলছে। পায়রা ঘোলা চোখে সেদিকেই তাকিয়ে আছে। নিজেকে সামলে নিয়ে মুখে একটু খাবার নিলো। নীলাংশ পায়রার দিকে তাকিয়ে বললো-

‘একি পিচ্চি! তুমি খাচ্ছো না কেনো? ‘

পায়রা মনে মনে তাচ্ছিল্য হাসলো। মুখে স্বাভাবিক ভাবে বললো –

‘খাচ্ছি। ‘

এই দুই দিনে এখনের মতো উজ্জ্বল নীলাংশকে লাগেনি। পায়রা আনমনেই ভাবলো, রুশানীর সঙ্গে কী এমন কথা হলো যে আজ সে এতো খুশি। সকাল পর্যন্ত দুজনকেই চিন্তিত লাগছিলো। অজানা আশঙ্কায় বুক ধরফড় করে পায়রার। পায়রাকে অন্যমনস্ক হতে দেখে নীলাংশ আড়ালে পায়রার হাতটা মুঠোয় নিয়ে বললো-

‘কী হয়েছে পিচ্চি! বলছো না যে? ‘

পায়রা মাথা নাড়িয়ে কিছু হয়নি বললো। নীলাংশ আচমকা বললো-

‘আজ না তোমার টেস্টের রেজাল্ট দেয়ার কথা? ‘

পায়রার মন খারাপ হলো। এতক্ষণে অবশেষে মনে পড়লো তার রেজাল্টের কথা। তার গুরুত্বটা কমেই যাচ্ছে তাহলে। ভাঙা গলায় বললো –

‘হুম দিয়েছে। ‘

‘বললে না যে! ‘

‘আপনি জিজ্ঞেসও তো করেননি।’

গম্ভীর গলায় বললো পায়রা। নীলাংশ কিছুটা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। পায়রার এমন শক্ত কন্ঠে কিছুটা আহত হলো বোধ হয়। সবাই তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। আয়মান সাহেব বললেন –

‘পায়রা মা, রেজাল্ট কেমন হয়েছে তোমার? ‘

পায়রা নিচুস্বরে বললো-

‘ভালো হয়েছে কাকা। প্রথম স্থান হয়েছি। ‘

মুখে কোনো প্রকার ঔজ্জ্বল্যতা না দেখতে পেয়ে প্রচুর অবাক হলো সবাই। অপূর্ব হা করে বললো-

‘ফেয়ারি আমি ক্লাসে ফোর্থ হয়েও যে পরিমাণে খুশি হই। তুমি ফার্স্ট হয়েও হলে না! ‘

পায়রা মলিন হাসলো। নীলাংশ মৃদু হেঁসে বললো –

‘দেখলে তো, কষ্টের ফল মিষ্টি। ‘

পায়রা তীক্ষ্ণতা নিয়ে তাকিয়ে আছে। নীলাংশ রোজকার মতো পায়রার চোখের ভাষা আজ পড়তে পারছেনা। পায়রার মনোভাব ধরতেও পারলো না।
পায়রার অভিমানের কারণও বুঝলো না। পায়রা আরও কষ্ট পেলো। খাবার প্লেটে অর্ধেক রেখেই বললো-

‘আমার পেট ভরে গেছে। আমি উঠি। ‘

সবাই আজকের আচরণে একের পর এক অবাক হচ্ছে। নীলাংশ চিন্তিত মুখে কোনো রকম খাবারটা খেয়ে নিলো। দ্রুত পদে পায়রার রুমে গেলো। পায়রা বালিশে মুখ গুঁজে কাদছিলো। নীলাংশ হতবিহ্বল হয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। পায়রার শরীরটা কান্নায় কেঁপে কেঁপে উঠছে। নীলাংশ এসে পায়রাকে ওঠানোর চেষ্টা করতেই পায়রা ধাক্কা দিয়ে হাত সরিয়ে দিলো।
নীলাংশ জোড় করে ওঠাতেই পায়রার লাল হয়ে যাওয়া চোখ মুখ দেখে ভড়কে গেলো। গালে হাত রেখে বললো –

‘কী হয়েছে পিচ্চি! কিছু না বললে বুঝবো কী করে?’

পায়রা নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। চোখ মুখ মুছে অন্য দিকে তাকিয়ে বললো-

‘আমি একটু একা থাকতে চাই। ‘

নীলাংশ হাসার চেষ্টা করলো। পরিস্থিতি আয়ত্বে আনার জন্য বললো-

‘কেনো পিচ্চি?আমি কোনো দোষ করেছি?’

পায়রা গালে থেকে ছিটকে হাতটা সরিয়ে দিলো। রাগে কান্নায় গলায় কথা আসছে না। তবুও নীলাংশের দিকে তীব্র আক্রোশ নিয়ে বললো-

‘কিছু বুঝতে পারেননা তাই না? আপনি কেনো দোষ করবেন? দোষ আপনার না, আমার। আমার উচিত হয়নি আপনাকে ভালোবাসা। ‘

কান্নার দমকে আর কথা বলতে পারলো না পায়রা। নীলাংশে হতভম্বকর চাহনি। সে অস্থির হয়ে অনুরোধের গলায় বললো –

‘এসব কেনো বলছো! আমার দোষটা কোথায়?’

পায়রা রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো। চিৎকার করে বললো –

‘তাঁরা বুবু ঠিক বলেছিলো। মানুষকে ঠিক করে চিনে তারপর ভালোবাসা উচিত। কিন্তু আমিও একই ভুল করলাম। আমারও তো সাজা পাওয়া উচিত। বিষ খেয়ে মরে যাওয়া উচিত আমারও! ‘

পায়রা কী বলছে সে নিজেও জানেনা। রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেনা। কিন্তু অপর পাশে নীলাংশ এবার প্রচুর রেগে গেলো। পায়রার কাছে এসে শক্ত করে দুই বাহু চেপে ধরে বললো-

‘পায়রা! সমস্যা কী তোমার? তখন থেকে যা ইচ্ছে বলে যাচ্ছো! আরেক বার এ ধরনের কথা বললে খবর আছে তোমার। ‘

নীলাংশ তখনই পায়রা বলে যখন সে রেগে যায়। এখন পায়রা বলায় আহত দৃষ্টি দিয়ে পায়রা বললো-

‘আপনি আমাকে কখনো ভালোইবাসেননি তাইনা?সবটা নাটক ছিলো! ‘

নীলাদ্রি হতবুদ্ধি হয়ে গেলো। হাত আলগা হয়ে গেলো। তীব্র ভীতি নিয়ে বললো-

‘এসব ক কী বলছো..!’

‘ঠিকই বলছি আমি, সবটাই করুণা ছিলো। আমার মতো এসিড ভিক্টিম, গ্রামের গাইয়া মেয়েকে আপনি কেনোইবা ভালোবাসবেন! আমি কত বোকা! ‘

নীলাংশ কাঁপা গলায় বললো –

‘পিচ্চি! এটা সত্যি আমি যখন তোমাকে প্রথম দেখি আমার অন্য কোনো অনুভূতি কাজ করেনি। মায়া লেগেছিলো আমার। কিন্তু.. ‘

‘কিন্তু, তারপর ভাবলেন গাইয়া মেয়েটাকে একটু বাজিয়ে দেখি। এমনিতেই অসহায় কোথায়ই বা যাবে!’

‘পায়রা! ‘

নীলাংশ কী বলবে বুঝতে পারলো না। ভাষা হারিয়ে গেলো যেনো। পায়রা পাগলের মতো কান্না করছে মুখ চেপে। দরজা লাগানো তাই কেউ এখানের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছেনা। পায়রা হেলে দাঁড়িয়ে আছে। নীলাংশের দিকে তাকিয়ে আবারও বললো-

‘আপনি আগে থেকেই রুশানী আপুকে ভালোবাসেন তাই না? আমাকে শুধু ব্যবহার করতে চাইছিলেন! ‘

নীলাংশ সঙ্গে সঙ্গেই অবিশ্বাস্য কাজ করে বসলো। পায়রা বুঝে গেলো তার অস্তিত্বটা কতটা ঠুনকো!

চলবে-
অনেকেই বলছিলেন ইন্ডিং যেনো স্যাড না দেই। এখন কথা হচ্ছে। ইন্ডিং হতে এখনো অনেক দিন বাকি। হ্যাপি রিডিং। আর, আজ আরেক পার্টের চাপ যদি তোমরা নেয়ার ক্ষমতা রাখো, তাহলে দিবো😌।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here