স্বপ্নচূড়ার আহবান ‘ পর্ব-৫৪

0
986

“স্বপ্নচূড়ার আহ্বান”
পর্ব-৫৪

‘আপনি কেনো যাবেন না! ‘

‘দেখো পায়রা, এখানে কত কাজ! ‘

‘আমি কিছু জানিনা। আপনি না গেলে আমিও যাবো না ব্যস, ইটস ফাইনাল। ‘

আভাস দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বসে পড়লো ৷ পায়রা নিজের কথায় অনড়। জেদ করেছে সে। আভাস বলেছে, কাজের জন্য বাংলাদেশে কোম্পানির দুজনের একজন গেলেই হবে। কিন্তু পায়রা কিছুতেই একা যেতে রাজি নয়। বুকের ভিতর ধুকপুক শুরু হয়েছে। আভাসকে ছাড়া এতদূর সে যাওয়ার কথা ভাবতেই পারছেনা। অগত্য আভাস রাজি হলো। পায়রা প্রশান্তির শ্বাস ফেলে নিজের রুমে গেলো। আজ অতীতটা খুব বেশিই মনে পড়ছে। সাত বছর আগেও একটা বাড়ি, সেখানের মানুষ ছেড়ে আসার সময় কষ্ট হচ্ছিলো। আজ সন্ধ্যার দিকেই জুরাইখ ছেড়ে যেতে হবে। সাতটা বছর কম তো নয়। অতীতের বিষাক্ত পাতাগুলো থেকে একটু বিশুদ্ধ জীবনের সন্ধানেই এই জুরাইখে পা রেখেছিলো। পায়রার মাঝে মাঝে মনে হয়, তাঁর জীবন কোথাও স্থির নয়। প্রতিটি জায়গায়ই অস্থায়ী। কখনো না কখনো ছেড়ে যেতেই হয়। প্রিয় স্থান, মানুষ সবই ঠুনকো হয়ে দাঁড়ায়। বিশ্বাস করতেও এখন বড্ড কষ্ট হয় পায়রার। গাল বেয়ে নোনাপানির বহর বয়ে যায়। দুই হাতে মুখ মুছে নেয়। এক সময়ের অসহায় পায়রার মুখে কান্না মানালেও, ইয়াং বিজনেস ওমেন পায়রা বোসকে মানায়না। সে তো সবার চোখেই গম্ভীর, শক্ত, বিনয়ী। কারণ পৃথিবী অসহায় পায়রাদের বাঁচতে দেয়না। হারে হারে উপলব্ধি করেছে সে। যতদিন কেউ নিজের পায়ের তলার মাটি শক্ত না করে তাঁর দাম শূন্যের কোঠায়। এই রুমটাকে খুব মিস করবে পায়রা। অবশ্য এখন আর এতোটা আবেগি হওয়া চলে না তাঁর। যেখানে তাঁকে বরাবরই জায়গা বদলি করতে হয় সেখানে কোনো জায়গার মায়ায় আঁটকে যাওয়া নিতান্তই হাস্যকর।

সন্ধ্যা নেমেছে জুরাইখের অশান্ত শহরে। আশেপাশে হরদমে গাড়ি চলাচল করছে। তাঁর মাঝেই একটি গাড়িতে নিথর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বাহিরের ব্যস্ত গাড়িগুলোর দিকে। মন আরও অস্থির হতে থাকে। চোখ দুটো সবুজ অরণ্যে ঘেরা ভূমি খুঁজে যায়। চোখের প্রশান্তি বলেও তো কিছু আছে, যা এখানে পাওয়া যায় না। শো শো আওয়াজে ঝিম ধরে যায় কানে। পায়রা উইন্ডো লাগিয়ে দেয়। আভাস নিশ্চিন্ত মনে ল্যাপটপে কাজ করছে। পায়রা সেদিকে মনোনীত হয়। অদ্ভুত রকমের মানুষ। কোনোকিছু নিয়ে কখনো দুশ্চিন্তা করতে দেখা যায় না। যেনো তাঁর জীবনের কোনো মায়াটান নেই। শ্বাস চলছে, হৃদপিণ্ড বিট করছে তাই সে বেঁচে আছে। রোবোটের মতো দিনরাত কাজ করতেই থাকে। এয়ারপোর্টে পৌঁছতে বেশি সময় লাগেনা। দুইজন নেমে ধীরে ধীরে ভেতরের দিকে অগ্রসর হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই প্লেনে উঠে যায়। পায়রা উইন্ডো সিটে বসেছে। চোখের নিগুঢ় দৃষ্টি সেদিকেই নিক্ষেপ করে। প্লেন টেক অফ করছে। চোখের পাতা এক করে চিন্তায় মগ্ন হয় সে। হয়তোবা, জীবনের সমীকরণ মিলানোর অব্যর্থ কোনো চেষ্টা!
.
.

‘স্যার, এই যে ফাইলগুলো। নতুন ক্লায়েন্টদের সঙ্গে কাল সকাল দশটায় একটা মিটিং আছে। ‘

নীলাংশ ফাইলগুলো হাতে নিয়ে মনোযোগ দিয়ে দেখলো। নিচের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ একটু চমকে উঠলো। পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট হায়াদের দিকে তাকিয়ে বললো-

‘রয়েলস কম্পানির মালিক কে যেনো?’

‘মিস্টার এন্ড মিসেস আডাম এলেক্স। ‘

‘আর সেকেন্ড কম্পানিটার?’

‘মিস্টার এন্ড মিসেস বোস। ‘

নীলাংশের কপালে ভাজ পড়লো। মনে হলো নামটা কোথায় যেন শুনেছে। কিন্তু মনে পড়ছে না। বেশি কৌতুহল দেখালো না আর। কাগজগুলোতে সাক্ষর করে হায়াদকে বললো-

‘ওকে, পিয়নকে কফি দিতে বলে দিও৷ ‘

হায়াদ ইতস্তত করে বললো –

‘স্যার! ‘

নীলাংশ ভ্রু কুচকে বিরক্ত হয়ে বললো-

‘হোয়াট হ্যাপেন?’

‘আসলে স্যার, আপনার বাসা থেকে ডিনার এসেছে। ‘

‘তো?’

‘সেটা কী দিয়ে যাবো স্যার? ‘

নীলাংশ তাচ্ছিল্য হেঁসে বললো –

‘যে বক্স এসেছে সেগুলো তুমি খেয়ে নাও। ‘

‘ স্যার তানজিমা ম্যাম, বলে দিয়েছে আপনাকে খাবার গুলো দিতে, রাত হয়ে গেছে অনেক। আমি কীভাবে.. ‘

নীলাংশ তীব্র আক্রোশ নিয়ে তাকালো। হাতের পাশে রাখা কলমটা দুই হাতে এতজোরে চাপ দিলো, তা ভেঙে দুই টুকরোতে পরিণত হলো। হায়াদ ঢোক গিলে নিলো। সে কিছুতেই বুঝতে পারেনা, নিজের মায়ের সঙ্গে এত কীসের রেশারেশি। তাঁর কানে এসেছে, অনেক আগে স্যার নাকি মা ভক্ত ছিলো। কিন্তু নীলাংশের সঙ্গে পাঁচ বছর ধরে পি.এ এর কাজ করে তা গুজব বলেই ধরে নেয়। প্রায়ই বাড়ি থেকে খাবার আসে কিন্তু নীলাংশ কখনো তা ছোঁয়া তো দূরের কথা, চোখ তুলে তাকায়ও না। হায়াদ ভয়ে ভয়ে বের হয়ে গেলো। নীলাংশ টলমল চোখ দুটো উপরের দিকে করে রাখলো। চোখের পানি চোখেই শুকিয়ে গেলো।
উঠে বিশাল জানালার দিকে তাকিয়ে আনমনে বললো-

‘তুমি এমন কেনো করলে মম! কখনো ক্ষমা করবো না আমি, কখনো না! ‘

চলবে-
(আমারও পড়াশোনার চাপ বেড়েছে। ছোট করে হলেও চেষ্টা করছি প্রতি দিন দেয়ার। ইনশাআল্লাহ দ্রুতই শেষ হবে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here