স্বপ্নচূড়ার আহবান ‘ পর্ব-৬০

0
1041

“স্বপ্নচূড়ার আহ্বান”
পর্ব-৬০

সবুজ ঘাসের বুকে ঝড়ে আছে অসংখ্য শিউলী ফুল৷
খুবই ধীর পায়ে ত্রস্ত হেঁটে এসে পাশে দাঁড়ায় এক নারী
। সাত মাসের উঁচু পেট। মুখে প্রশস্ত হাসি। শরীরে মমতার সদ্য ফুটে ওঠা ছাপ। ঢোলা একটা জামায়ও সুন্দর লাগছে। একটু নিচু হয়ে ঝুঁকে শিউলী ফুলগুলো নিজের আঁজলায় নিতে চাইলেও উঁচু পেট বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। দুই একবার আরও চেষ্টার পরও তুলতে না পারায় মুখের হাসি মিলিয়ে যায়। ফোঁস করে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। পেছনে থেকে এক পুরুষ এসে যত্ন করে নিজের পরিণীতার জন্য একটা একটা করে অজস্র ফুল তুলে নেয়। নারী চমৎকার হাসলো। নিজের আঁজলা সামনে তুলে ধরতেই পুরুষ তা ঢেলে দেয়। হাঁটুতে লেগে থাকা ধুলো গুলো ঝেড়ে উঠে দাঁড়ায়। কিছুটা অস্থির হয়ে বলে-

‘আশু! আমাকে বললেই তো হয়। বারবার এমন করো কেনো? ‘

স্বামীর আহ্লাদী কথায় খিলখিল করে হাসে আশরীন।
শিউলী ফুলগুলোর ঘ্রাণ নিয়ে রিনরিনে কন্ঠে বললো-

‘তুমি তো ফোনে ব্যস্ত ছিলে। ‘

‘দুই মিনিট অপেক্ষা করতে! ‘

‘হুহ! তুমি আধা ঘণ্টা যাবৎ কথা বলছো আয়ান দা! ‘

আয়ান বিরক্ত হয়ে বলে-

‘আবারও! ‘

‘আমি কী করবো! আমার অভ্যাস হয়ে গেছে। ‘

‘অভ্যাস বদলাও আশু। আমি আমার বাচ্চার মুখে মামা ডাক শুনতে চাইনা। ‘

আয়ানের করুণ মুখ দেখে ঠোঁট চেপে হাসে আশরীন।
আলতো করে পাশ থেকে আয়ানের বাহু আঁকড়ে কাঁধে মাথা রেখে হাঁটতে হাঁটতে। আয়ানের সঙ্গে তিন বছর আগে বিয়ে হয়েছে আশরীনের। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, আয়ান তাঁর মেঝো খালার বড় ছেলে।
আশরীনের মায়েরা তিন বোন ছিলেন। আশরীনের মা ছিলেন সবার ছোট। আশরীনের বড় খালার কাছে আশরীন বড় হলেও, মেঝো খালাও অনেক আদর করতেন। কিন্তু, তিনি অস্ট্রেলিয়ায় থাকায় আসতে পারেননি আগে ৷ পাঁচ বছর আগে তিনি বাংলাদেশে ফিরে ঠিক করলেন আশরীনকে নিজের পুত্রবধূ করে নিজের কাছে নিয়ে যাবেন। আয়ান প্রথমে মোটেও রাজি ছিলোনা। কিন্তু আশরীনকে দেখেই প্রেমে পড়ে।
আশরীন তখনও বিয়ের কথা ভাবছিলো না। কারণ সে তখনও তাঁর একতরফা প্রেম হারানোর শোকে কাতর।
আয়ানের যত্ন, ভালোবাসা আর নিজের বড় খালামণির ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলে একরকম বাধ্য হয়েই বিয়ের পিরিতে বসে। আয়ানের ভালোবাসার কাছে হার মানতে হয় অবশেষে। ভালোবাসা না পাওয়ার যন্ত্রণা কতটা! তা আশরীন অনেক ভালো করেই জানে। এতো ভালোবাসা পায়ে ঠেলার মতো বোকামি করেনি।

আশরীন আয়ানের দিকে অপলক তাকিয়ে মনে মনে ভাবলো –
‘মানুষ ঠিকই বলে, সৃষ্টিকর্তা যা করেন আমাদের ভালোর জন্যই। স্বপ্নীল নামের পুরুষটিকে সেসময় পাইনি বলেই তো আয়ানের মতো কাউকে নিজের জীবনে পেলাম। সময় সত্যিকার অর্থেই সর্বদা এক থাকে না। একটা সময় দুঃখ থাকলে, বাকি অর্ধেকটা জীবন স্বপ্নের মতো রঙিন হয়। ‘

কৃতজ্ঞতা নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল-
‘আমি জানিনা স্বপ্নীল, আপনি কোথায় আছেন। যেখানে থাকবেন ভালো থাকুন। ধন্যবাদ সেসময় আমাকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু যে মরীচিকার পেছনে আপনি ছুটছিলেন, তা কী আদৌও পেয়েছেন আপনি? জানতে ইচ্ছে করে খুব। ‘

___________________

গলা কাটা মুরগীর মতো ছটফট করছে পায়রা। নীলাংশ তাঁকে নিজের সাথে চেপে ধরে আছে। কালকে নীলাংশ নকল আরেকটা চাবি দিয়ে গেট খুলতেই হুড়োহুড়ি করে বের হয়ে গেছিলো পায়রা। কান্নায় ভেঙে গেছিলো। নিজের অনুভূতি গুলো প্রকাশে অনিচ্ছুক সে। তবুও, বিপরীতে প্রেমিক পুরুষটি উতলা সত্য জানতে। হাল ছাড়েনি মোটেও। এতদিন অফিসে নীলাংশের অবাঁধ আচরণ সহ্য করলেও আজকে খুব চটে গেছে পায়রা। ঘুম থেকে সদ্য আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো। ঘুমঘুম চোখে এদিক ওদিক তাকিয়ে চমকে উঠলো। পাশেই আয়েশি ভঙ্গিতে শুয়ে পা দোলাচ্ছে নীলাংশ। পায়রার উঠে যাওয়া দেখেও কোনোরকমের হেলদোল নেই। পায়রা হতভম্ব হয়ে চিৎকার করে বললো –

‘একি! আ আপনি এখানে কেনো? ‘

নীলাংশ মিষ্টি করে হাসলো। খুবই সহজ ভাবে পায়রার দিকে তাকিয়ে বলল-

‘শুভ সকাল পিচ্চিবউ! ‘

পায়রা তড়িৎ গতিতে চমকে উঠলো। মাথা খারাপ হলো গেছে নির্ঘাত। নাহলে, এতো সকালে তাঁর হোটেল কামরায় ঢুকে তো! আবার তাঁকে বউ বলে সম্বোধনও করছে। কত সাহস লোকটার!
রাগে নিশপিশ করে বলল-

‘এই এই! বেড়িয়ে যান বলছি। লজ্জা করেনা, বিবাহিত নারীর ঘরে ঢুকে এমন আচরণ করতে!’

নীলাংশ যেনো কিছুই শোনেনি। কৌতুক শোনার মতো করে হাসলো। হাত দুটো নিজের মাথার পেছনে রেখে বলল-

‘ওহ, তাইতো। আচ্ছা, তোমার বরকে দেখছি না যে! ‘

পায়রা থতমত খেয়ে গেলো। আমতা আমতা করে বলল-

‘আছে, বাহিরে গেছে কাজে। ‘

‘কী কাজে? ‘

‘আমি কী করে জানবো! মানুষের কত রকমের কাজই তো হতে পারে। ‘

‘সব মানুষ আর তোমার বরের মাঝে একটা বিস্তর ফারাক আছে পিচ্চি। নিজের বরের খোঁজ খবরই নেই, অদ্ভুত। ‘

পায়রা দরদর করে ঘামছে। ঠোঁট কামড়ে কিছু বলার আগেই নীলাংশ হঠাৎ করেই পায়রার কাছে এসে পড়লো। পায়রার দুই হাত পেছনে লক করে নিয়ে ঝুঁকে চোখে চোখ রেখে অদ্ভুত হেঁসে বলল-

‘লুকাচুরি খেলছো পিচ্চি? খেলায় তুমি বড্ড কাঁচা। ‘

চলবে –

(অনেকেই চাচ্ছিলেন, আশরীনের সঙ্গে স্বপ্নীলের মিল হোক। কিন্তু ওদের গল্পটা খুব বাস্তবিক ছিলো। সবার প্রথম ভালোবাসা পূর্ণতা পায়না। প্রথম বার ভালোবাসা না পেলেই যে জীবন অসুন্দর হবে এমন কোনো কথা নেই। ধৈর্য ধরুন,আপনি যা হারিয়েছেন তা সৃষ্টিকর্তা দ্বিগুণ করে ফিরিয়ে দিবেন। শুধু সময়কে একটু সময় দিন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here