“স্বপ্নচূড়ার আহ্বান”
পর্ব-৪২(বোনাস পার্ট)
কিছুক্ষণের মধ্যেই তানজিমাকে নিয়ে নীলাংশ আর আয়মান সাহেব রওনা হলেন। পায়রা নিজের রুমে চলে যেতেই দেখলো, অপূর্ব বসে আছে। পায়রা হেঁসে বললো –
‘কী ব্যাপার অপু? ঘুমাওনি কেনো? দেখো, একটা বেজে যাচ্ছে প্রায়। ‘
অপূর্ব বিছানা থেকে লুডুবোর্ডটা উঠিয়ে ফ্লোরে রাখলো। পায়রাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে টেনে বসালো। পায়রা হা করে তাকিয়ে বললো-
‘এত রাতে তুমি লুডু খেলতে এসেছো!’
‘হ্যা, আজ অনেক দিন পর সুযোগ পেলাম৷ বড়আম্মু থাকলে তো সর্বনাশ হতো! ‘
‘আজ না অপু! আমরা বরং কাল খেলবো। আমার কলেজ আছে, তোমার স্কুল আছে। ‘
‘না না। প্লিজ আজকেই খেলবো। অল্প একটু খেললে কিছুই হবেনা। ‘
পায়রা শেষমেষ নিরুপায় হয়ে খেলতে রাজি হলো।
অপূর্ব বিরাট হাসি দিয়ে খেলা শুরু করলো। যেহেতু পায়রা খেলায় নতুন তাই তেমন পারছেনা। অপূর্বের প্রথমেই ছয় উঠে গেলো। যখন ওর গুটি অনেক গুলো উঠে গেছে তখন পায়রার ছয় উঠলো। একটা গুটি কোনোমতে পাকা ঘর পর্যন্ত আনতেই অপূর্ব নিজের ঘর থেকে এক ছয় পাঁচে গুটিটা খেয়ে নিলো। এভাবেই পায়রার সবগুলো গুটি ঘর থেকে বের হতে হতেই অপূর্বের পাকা ঘরে গুটি নেয়া শেষ। জেতার সাথে সাথেই জোড়ে ‘ইয়াহু’ বলে চিৎকার করে উঠলো। পায়রা দুঃখে ভারাক্রান্ত মনে তাকিয়ে রইলো। অপূর্ব হো হো করে হাসছে। সব খেলায় হারার পর দুঃখ না হলেও লুডু অথবা ক্যারামে হার মানা যায় না। অপূর্ব নিজের কলারটা উঁচু করে ঝাকিয়ে নবাবের মতো বললো –
‘শোনো, হোয়াইট ফেয়ারি। লুডু সবার জন্য না। ইন্টেলিজেন্ট মানুষ ছাড়া লুডুতে জেতা সম্ভব না। পরের বার বুঝে শুনে এই অপূর্ব সোহরাবের সাথে খেলতে এসো! ‘
পায়রা হতবুদ্ধি হয়ে বললো-
‘এ বাবা! আমি কখন তোমার সাথে খেলতে এলাম?
তুমিই তো জোড় করে বসলে খেলতে। ‘
অপূর্ব ভাঙলো তবে মচকালো না। সে ঠাট দেখিয়ে বললো-
‘থাক, ডোন্ট বি স্যাড। কেউ এই অপূর্বের সাথে জিততে পারেনা। ‘
‘কে তোর সাথে জিততে পারে না! ‘
পায়রার ঘরে ঢুকতে ঢুকতে নীলাংশ কথাটা বললো। পায়রা বসে ছিলো বিধায় মাথাটা উঁচু করে দেখলো, নীলাংশ চুল ঠিক করতে করতে এগিয়ে আসছে। পায়রা অবাক হয়ে বললো-
‘আপনি! ‘
নীলাংশ মৃদু হেঁসে অপূর্ব আর পায়রার মাঝে বসে বললো-
‘হুম আমি। ঘুমাতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু লাইট জ্বালানো দেখে এসে দেখি তোমাদের কীর্তি। ‘
পায়রা স্মিত হাসলো। নীলাংশ বাঁকা হেসে বললো –
‘পিচ্চি, কে যেনো বললো অপূর্বকে কেউ হারাতে পারেনা! ‘
অপূর্ব শুঁকনো ঢোক গিলে নিলো। সে যে খুব বেশি ভালো খেলে তা নয়। বরংচ, পরিবারের সবার কাছে খেলতে বসলে বারবার হারে। নীলাংশকে কোনো ভাবেই হারাতে পারেনা। তাই, আজ পায়রাকে নতুন পেয়ে খেলতে বসলো। পায়রা সরল মনে বললো-
‘অপূর্ব বললো ওকে কেউ হারাতে পারেনা।’
নীলাংশ শব্দ করে হেঁসে বললো –
‘তাই নাকিরে অপূর্ব! তাহলে চল, আমি একবার তোর কাছে হারি। ‘
অপূর্ব আমতা আমতা করে বললো –
‘থাক থাক, ভাইয়ু। আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। আজ না। ‘
পায়রা অতশত না জেনে উৎসুক হয়ে বললো-
‘থাকবে কেনো! সুন্দর সাহেব! প্লিজ এখন একবার খেলে দেখান। আমিও শিখতে পারবো। ‘
নীলাংশ শয়তানি হাসি দিলো অপূর্বের দিকে তাকিয়ে।
অপূর্ব কাঁদো কাঁদো হয়ে নীলাংশের দিকে ঝুঁকে বললো-
‘প্লিজ ভাইয়ু, ফেয়ারির সামনে প্রেস্টিজটা পাঞ্চার করে দিওনা। ‘
নীলাংশ মিটিমিটি হাসতে হাসতে খেলা শুরু করলো।
দুই তিন মিনিটের মধ্যেই সব গুটি উঠলো। অপূর্বেরও ভালোই উঠেছিলো। কিন্তু নীলাংশ এত পরিমাণ গুটি কাটলো যে অপূর্ব ফতুরে পরিণত হলো। পায়রা বেশ মজা পাচ্ছে। আগের বার যেমন পায়রা হেরেছিলো তাঁর চেয়ে খারাপ অবস্থা করে হারালো নীলাংশ। পুরো খেলা শেষ হতেই পায়রা হাসিতে ফেটে পড়লো। অপূর্ব মুখটা কালো করে ঝামটি মেরে লুডু বোর্ড হাতে নিয়ে হাই তুলতে তুলতে বেরিয়ে গেলো। পায়রা ফ্লোর থেকে উঠে বিছানা ঝাড়তে ঝাড়তেও হাসি থামাতে পারেনি। নীলাংশ মৃদু হেঁসে বললো –
‘অপূর্ব এমনই, নতুন পেয়ে তোমাকে হারালো। ফাঁকা মাঠে গোল মারলো আরকি! ‘
হঠাৎ-ই পায়রাকে নীলাংশ টেনে নিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। পায়রা কিছু বুঝে উঠার আগের নীলাংশ উৎফুল্ল কন্ঠে বললো-
‘দেখো দেখো, ফানুস! ‘
পায়রা চকিতে তাকালো। বিস্ময়ে বিমোহিত হয়ে তাকিয়ে রইলো। একটা দুইটা ফানুস নয়। অনেক গুলো ফানুস। আরেকটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারলো, একটু দূরের বিল্ডিং থেকে একটা ছেলে অপরপাশের বিল্ডিংএর মেয়েটার জন্য ফানুস গুলো উড়িয়ে দিয়েছে। অনেক দূরে থেকেও বোঝা যাচ্ছে মেয়েটা ফানুস দেখে খুশিতে লাফাচ্ছে। আর অন্য পাশের ছেলেটা দাঁড়িয়ে হাসছে। অন্ধকার মাখা আকাশে সোনালী ফানুসে আলোকিত হয়ে গেছে।
মুহুর্তটা নীলাংশ নিজের ফোনে বন্দী করে নিলো। পায়রা এত সুন্দর দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়ে হয়ে তাকিয়ে থাকলো। নীলাংশ মৃদু হাসি ফুটিয়ে বললো –
‘পিচ্চি,তোমার ভালো লেগেছে! ‘
‘খুব! ছেলেটা অনেক ভালোবাসে মেয়েটাকে তাইনা! ‘
নীলাংশ পায়রাকে নিজের দিকে ফেরালো। পায়রার মুখটা নিজের দুই হাতের মাঝে আবদ্ধ করে নিয়ে বললো-
চোখ বুঁজে দেখে নিও,
ভালোবাসি আমিও!
চন্দ্রিমা রাত জেগে তাঁরা দেখি জানো তো?
আকাশের লালিমাতে ভালোবাসা মাখিও!
চলবে-
কালকের পার্টটা একটু ছোট হয়ে গেছিলো। আজ ফ্রি আছি বলে লিখে ফেললাম।