স্বপ্নের প্রেয়সী 💖 পর্ব- ২১

0
1944

💖 স্বপ্নের প্রেয়সী 💖
Part – 21
_________________________

গানের আসর শেষ করে সবাই আমাকে বিদায় জানিয়ে বাসায় চলে গেল।
রিফাত ভাইয়া থাকতে চেয়েছিল কিন্তু ফারহান ভাইয়া বলল
– হসপিটালে থাকলে তুই ও অসুস্থ হয়ে যাবি ।
তোকে নিয়ে আর দৌড়াতে পারব না।
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল
– একটা কে নিয়ে ই যে অবস্থা।

আমি চুপসে গেলাম, এই লোকটা এখন আমায় খোটা দিচ্ছে।
কেন রে ভাই তোকে কি আমি থাকতে বলেছি ।
যত্তসব নিজেই ক্রেডিট নেওয়ার জন্য থাকবে ।
আবার আমাকে দোষ ও দিবে।

রিফাত ভাইয়া হাসতে হাসতে বলল
– আচ্ছা, আচ্ছা।
এর জন্য তো তোকে আবার ধন্যবাদ ও জানানো যাবে না।
না হলে এক গাদা কথা শুনাবি।
আমি কি তোদের আপনজন নই ব্লা, ব্লা, ব্লা

ফারহান ভাইয়া ও হালকা হাসলেন।
তারপর একে অপরকে জড়িয়ে ধরে পিঠ চাপরে দিলেন।
রিফাত ভাইয়া আমাদের বিদায় জানিয়ে চলে গেলো।

ফারহান ভাইয়া আমার পাশে এসে বসলেন।
আমি গোমড়া মুখ করে আছি, ওনি আমাকে খোঁটা দিল।

ফারহান ভাইয়া খানিকক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করলো কি হয়েছে।
তারপর ই জিঙাসা করল
– ফারাবি কি হয়েছে?

আমি ও এক গাদা কথা শুনাবো বলে তৈরি হলাম।
কিন্তু মুখ দিয়ে একটা শব্দ ও বের হচ্ছে না।
অনেক চেষ্টা করে ও কিছু বলতে পারলাম না আমি।
ফারহান ভাইয়া ধমক দিয়ে বললেন
– কি হয়েছে কি ?
এবার আমি একটু চমকে গেলাম।
তারপর নিজেকে সামলিয়ে কোনো মতে সাহস জুগিয়ে বললাম
– কিছু না তো।

ফারহান ভাইয়া সন্দিহান চোখে তাকালেন তারপর আবার বললেন
– সত্যি টা জানতে চাই ।
ইউ হেব অনলি 5 সেকেন্ড

নিজেকে শক্ত করে নিচের দিকে তাকিয়ে বললাম
– আপনি চলে যান।
আমার কোনো সমস্যা হবে না, আর আপনাকে ও কষ্ট করতে হবে না।

আমার কথায় ফারহান ভাইয়া রেগে গেলেন।
আমার দুই বাহু শক্ত করে চেপে ধরে আমার কাছে মুখ নিয়ে বলল
– আমি তোকে বলেছি।
আমার এই টুকু কষ্ট হচ্ছে?
তোকে কথা বলতে কে বলেছে?

ওনার রাগে চোখ যেন রক্ত বর্ন ধারন করেছে।
আমি ভয়ে আর হাত চেপে ধরায় ব্যথা পাচ্ছিলাম।
চোখ থেকে না চাইতে ও পানি গড়িয়ে পড়ল।
কয়েক মুহূর্ত পর ফারহান ভাইয়া আমার চোখে পানি দেখতে পেলেন।
ওনি আমার থেকে ছিটকে সরে গেলেন।
তারপর পাশে থাকা ফ্লাওয়ার ওয়াচ টা ছুঁড়ে মারলেন।
সজ্ঞে সজ্ঞে ফ্লাওয়ার ওয়াচ ভেঙে গুড়িয়ে গেল।
আমি আর ও চমকে উঠলাম।
চোখ দিয়ে অনড়গল পানি ঝড়তে লাগল।
ফারহান ভাইয়া আমার কাছে এসে হাঁটু গেড়ে বসে
আমার হাত নিজের হাতে আবদ্ধ করলেন।
বেশ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে চুমু খেলেন।

ওনার উষ্ণ ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে আমার শরীরের প্রতি টা নিউরন কেঁপে উঠলো।

ফারহান ভাইয়া আমার কাছে আসতেই আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেললাম।
উনি আমার চোখের পাতা তে চুমু দিলেন।
আমার সমস্ত শরীর কেঁপে উঠলো।
ফারহান ভাইয়া আমার কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে বললেন
– ফারাবি , এই ফারাবি , কষ্ট পেয়েছিস ?
খুব কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তাই না ?
একটি বার তাকা না , বিশ্বাস কর আর কখনো কষ্ট দিবো না।
তোকে কষ্ট দিয়ে আমি ভালো নেই রে।
আমার ও যে খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে।
প্লিজ ফারাবি ।

ওনার প্রতিটা কথা আমার কানে বার বার বেজে চলছে।

উনি আবার বললেন
– একটি বার তাকা , প্লিজ?

না চাইতে ও আমার চোখ জোড়া খুলে গেল।
ওনার চোখের কোনে পানি চিক চিক করছে ।
কিন্তু কেন ?
আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না।
এই লোকটি কে বোঝা বড্ড দায়।

ফারহান ভাইয়া বললেন
– আম সরি।
আমি তোকে কষ্ট দিতে চাই নি ।

আমি কিছু বলতে পারলাম না।

শুধু বোঝার চেষ্টা করলাম কি হয়ে গেল।
কিন্তু আমার এই মস্তিষ্ক আমাকে বোঝাতে সক্ষম হলো না।

ফারহান ভাইয়া আমায় ছেড়ে উঠে পড়লেন।
তারপর আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে ব্যস্ত পায়ে ছুটে চলে গেলেন।

আমি ওনার যাওয়ার দিকে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইলাম।
বড্ড অস্থির লাগছে , মাথা ও প্রচুর পরিমাণে ব্যাথা করছে।

বেশ কিছুক্ষণ পর একজন নার্স এসে দরজায় নক করলেন।
ম্যাম আর ইউ ওকে।
আমি নার্স এর কথা শুনতে পেয়ে চোখের পানি মুছে ফেললাম।
নিজেকে স্বাভাবিক করে বললাম
– হ্যাঁ।
নার্স বলল
– মে আই কাম ইন ?
– হুম আসুন।
নার্স ভেতরে ঢুকে একজন মেড কে ভাঙা ফ্লাওয়ার ওয়াচ টা পরিষ্কার করতে বললেন।
মেড ভাঙা ফ্লাওয়ার ওয়াচ পরিষ্কার করে চলে গেলেন।

নার্স আমার কাছে এসে বসলেন।
একে একে সমস্ত কিছু চেইক করলেন।
থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর টা ও মেপে নিলেন।
নার্স বললেন
– ম্যাম ইটস 101৹ ।
ইটস নট গুড , জ্বর টা আবার বেড়েছে।

আমি কিছু বললাম না।

নার্স বললেন
– ম্যাম ফ্রেস হতে যাবেন ?

আমি শুধু মাথা ঝাকালাম।
নার্স আমাকে নিয়ে বাথরুমে পৌছে দিলেন।
তারপর বেশ কিছুক্ষণ আমি মুখে পানির ছিটে দিলাম।
ফ্রেস হয়ে বের হয়ে আসলাম।
নার্স আমাকে ধরে বেডের কাছে নিয়ে এলেন।
বেডের কাছে নিয়ে গিয়ে সুন্দর করে হাত মুখ মুছে দিলেন।
তারপর মাথায় বিনুনি বেঁধে দিলেন।
নার্স বিনুনি বেঁধে দেওয়ার সময় হঠাৎ বেশ কষ্ট হচ্ছিল।
কারন ফারহান ভাইয়া দুটো দিন বিনুনি বেঁধে দিয়েছেন।

কোনো ভাবে কি আমি ওনাকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছি ?

কিন্তু আমি তো ওভাবে বলতে চাই নি।
উনি কি কষ্ট পেয়েছেন খুব ?

এসব ভাবতে ভাবতে নার্স আমার জন্য হালকা সুপ নিয়ে আসলেন।
আমাকে অনেক জোড়াজোড়ি করে ও সুপ খাওয়াতে পারলেন না।
অগত্যা ওনি ফারহান ভাইয়া কে ইনফর্ম করলেন।
________________

প্রায় দশ মিনিট হয়ে গেল কিন্তু ফারহান ভাইয়া আসলেন না।
ওনি আসতে এতো দেরি করেন না কখনো।
কারন ওনি তো হসপিটালেই থাকেন।

বড্ড কষ্ট হচ্ছে, কেন ওনাকে হার্ড করলাম আমি ?
কেন ?

চোখের কোনে পানি জমে গেল।

পনের মিনিটের মাথায় ফারহান ভাইয়া আসলেন।
হাতে ফ্লয়েম পেপারে মুরানো সুপের বাটি।

ওনি আসলেই নার্স
বলল
– স্যার অনেক জোড়াজোড়ি করে ও খাওয়াতে পারি নি ।

ফারহান ভাইয়া তেমন কিছু বললেন না।
শুধু বললেন
– ওকে।
আপনি যান।

নার্স বলল
– স্যার সুপ তো ঠান্ডা হয়ে গেছে ।
নিয়ে যাবো ?

ফারহান ভাইয়া বললেন
– হুম নিয়ে যান।
দরকার হলে ইনফর্ম করবো।

নার্স বললেন
– ওকে স্যার।
তারপর নার্স চলে গেলেন।
__________________

ফারহান ভাইয়া আমার বেডের পাশে রাখা সাইট টেবিলে সুপের বাটি টা রেখে বললেন
– খাস নি কেন ?

আমি নিচের দিকে তাকিয়ে আছি।
কি বলব আমি ।
বড্ড বেশি কষ্ট দিয়ে দিছি ওনাকে।

চুপ করে আছি দেখে ফারহান ভাইয়া আর কিছু বললেন না।
এতে আমার আর ও খারাপ লাগছে ।

ওনি কষ্ট পেয়েছেন তাই আমায় বকা ও দিচ্ছেন না। না হলে এতোক্ষন না খাওয়ার জন্য অনেক বকা দিতেন।

বুকের ভেতর মোচর দিয়ে উঠলো।

ফারহান ভাইয়া সুপ
টা এগিয়ে দিয়ে বলল
– ফাস্ট খেয়ে নে।

আমি এবার ও কিছু বললাম না।
ওনি রাগ না করলে আমাকে খাইয়ে দিতেন।
জোড় করে খাইয়ে দিতেন ওনি।

মনের ভেতর ক্ষত টা আর ও গভীর হলো ।
চোখের পানি টলমল করছে।

আমি নিচু স্বরে বললাম
– শরীরে শক্তি নেই ।

ফারহান ভাইয়া কিছু বললেন না।
ফারহান ভাইয়া এক চামচ সুপ নিয়ে মুখের সামনে দিলেন।
ওনার দিকে তাকালাম ওনি অন্য দিকে তাকিয়ে আছেন।
চোখ থেকে না চাইতে ও এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো।
মাথা নিচু করে ফেললাম ।
নিচু হতেই ওনার বা হাতে চোখ গেল।
বড় করে ব্যান্ডেজ করা , আমার বুঝতে একটু ও অসুবিধা হলো না কি হয়েছে।
( ফারাবি কে রেখে ফারহান বের হয়ে যায়।
হসপিটালে নিজের রুমে গিয়ে দেয়ালে শক্ত করে ঘুষি মারে।
হাতে প্রচন্ড ব্যথা পায় , কিন্তু মনের ব্যথা যে বড্ড বেশি।
এই হাত দিয়ে ফারাবি কে চেপে ধরে ছিল।
বড্ড রাগ হচ্ছে ওর , আশে পাশে কাঁচের জিনিস গুলো হাত দিয়ে ঘুষি মেরে ভাঙতে থাকে।
বিক্ষিপ্ত ভাবে হাত টা কেটে যায়।
কিন্তু একটু ও কষ্ট হচ্ছে না ওর।
মন টা যে পুরছে , বড্ড বেশি ভালোবাসে যে।
রক্তাক্ত হাত নিয়ে বসে থাকে ফ্লোরে।
রক্ত ঝড়তে থাকে কিন্তু এতে ফারহানের কোনো ধ্যান নেই।
হঠাৎ নার্স এর কল আসে।
আর তখন ই হাত ব্যান্ডেজ করে সুপ নিয়ে আসে যার জন্য এতো দেরি হয় আসতে।)
আমি কিছু না ভেবেই ফারহান ভাইয়ার হাত ধরলাম।
কেঁদে উঠলাম , বড্ড কষ্ট হচ্ছে।
ওনি আমার উপর রাগ থেকে নিজেকে কষ্ট দিয়েছেন।
এই কথা টা মানতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে।
ওনার খুব কষ্ট হচ্ছে না।

আমার হঠাৎ কান্না দেখে ফারহান ভাইয়া চমকে গেলেন।

আমি চিৎকার করে কেঁদে উঠলাম।
ফারহান ভাইয়া এখনো কিছু বুঝে উঠতে পারছে না।
আমার হাতের কাছে তাকাতেই দেখলো আমি ওনার হাত ধরে কেঁদে চলেছি।
ফারহান ভাইয়ার বুঝতে অসুবিধা হলো না কেন কাঁদছি।
ফারহান ভাইয়া আমাকে বুকের মধ্যে মিশিয়ে নিলেন।
আমি চিৎকার করে কেঁদেই চলেছি।
ফারহান ভাইয়া আমাকে কিছুতেই থামাতে পারছে না।
বার বার বলছেন
– ফারাবি ক্ল্যাম ডাউন।
এভাবে কাঁদে না , ফারাবি।
কিন্তু আমার কান্না থামছেই না ।
বুকের ভেতর বড্ড কষ্ট হচ্ছে ।
কেন কষ্ট হচ্ছে আমার জানা নেই।
কিন্তু খুব কষ্ট হচ্ছে যে।
ফারহান ভাইয়া হাজার বলে ও কান্না থামাতে পারলেন না ।
আমি ওনার হাতটা জড়িয়ে বললাম
– আমি আপনাকে কষ্ট দিয়েছি।
আমি কষ্ট দিয়েছি , আপনার খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না।
খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে ।

ফারহান ভাইয়া কিছুক্ষন অপলক দৃষ্টি তে চেয়ে থাকলেন।
তারপর আমার চুলের ভেতর একহাত দিয়ে আর অন্য হাত দিয়ে কোমর জড়িয়ে ধরলেন।
ওনার হাতে ব্যান্ডেজ থাকা সত্যে ও ঐ দিকে ওনার কোনো খেয়াল নেই।

ফারহান ভাইয়া আমার মুখের কাছে মুখ নিয়ে বলল
– ফারাবি ।
আমি এখনো কেঁদে চলেছি।
উনি বললেন
– হুসসসসসস
তারপর আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আলতো করে ফু দিলেন।
আবেশে চোখ বন্ধ হয়ে গেল আমার।
আমি এক ঘোরের মাঝে চলে গেলাম।
আমি নিজে ও বুঝলাম না কি হলো এটা।
ওনার ঠোট আলতো করে আমার চোখের পাতা তে ছোঁয়ালেন।
উনি অনেকক্ষণ সময় নিয়ে আমার চোখের পাতা তে চুমু খেলেন।
ওনার ঠোঁটের ছোঁয়া আমার শরীরে শিহরন জাগিয়ে দিলো।
ওনার ঠোঁটের প্রতিটা স্পর্শ জানান দিচ্ছে যে ওনি কতোটা যত্নে চুমু খেলেন।
আমার কান্না একদম থেমে গেল।
খানিকটা লজ্জা ও পেলাম যার দরুন ওনার দিকে তাকাতে পারছি না।

ফারহান ভাইয়া মৃদু হাসলেন তারপর বললেন
– এই লজ্জা মুখ টাই ভালো লাগে।
একদম কাঁদবি না বুঝেছিস।
আর নিজেকে কষ্ট দেওয়ার কথা তো ভাববি ও না।

ফারহান ভাইয়া কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল
– আর এভাবে কাঁদলে ঠোঁটের ভারজিনিটি নষ্ট করে দিবো।
ওনার এই কথায় আমি লজ্জায় কুকরে গেলাম।

উনি আলতো হাতে বুকের মধ্যে আমাকে আবদ্ধ করে নিলেন আমায় ।
________________________

( আসসালামুআলাই রির্ডাস । দেরি করে দেওয়ার জন্য দুঃখিত । সকালে গল্প লিখেছিলাম ।
কিন্তু আজকের পার্ট এর শেষ টা অনেকটা পরিবর্তন করলাম এখন।
লেখিকা অনেক বেশি রোমান্টিক হয়ে গিয়েছিল😌 তাই শেষ দিকটা বেশি রোমান্টিক করে ফেলেছিলাম ।😑
কিন্তু আজকে মনে হলো ফারাবি তো বাচ্চা মেয়ে ।
অন্তত ফারহানের কাছে😅 তাই পরিবর্তন করে দিলাম।
আর তাছাড়া ফারহান রে কষ্ট দিতে আমার ভালো লাগে। 😓
তাই সামনে ওরে অনেক কষ্ট দিবো ভাবছি। 😐
আমার লেখা গল্প পেতে পেজ এ লাইক আর বন্ধুদের ইনভাইট দিয়ে পাশে থাকুন।
গল্প টি কেমন হচ্ছে জানাবেন প্লিজ ।)

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাপ করবেন ।

💜 হ্যাপি রিডিং 💜

চলবে
ফাতেমা তুজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here