স্বপ্নের প্রেয়সী 💖 পর্ব- ২৫

0
1848

💖 স্বপ্নের প্রেয়সী 💖
Part – 25
__________________________

বিকেলে ক্যারাম কোর্ড নিয়ে বাগানে যাচ্ছি।
অনেক দিন পর ক্যারাম খেলবো।
মনিকা আপু রিফাত ভাইয়া কে কল করলো ।
রিফাত ভাইয়া বলল 5 মিনিটের মধ্যে আসছি।
মনিকা আপু স্ন্যাকস আনার জন্য কিচেনে চলে গেল।

ক্যারাম কোর্ড বাগানের টেবিলে রেখে চেয়ার টেনে বসার আগেই ফারহান ভাইয়া এসে হাজির।
ওনাকে দেখে ও না দেখার ভান করে আছি।
আমি চেয়ারে বসতে যাচ্ছি আর তখনি ফারহান ভাইয়া আমার চেয়ারে বসে পড়ল।
আর আমি টাল সামলাতে না পেরে সোজা ওনার কোলে বসে পড়েছি।
তাও ওনার গলা জড়িয়ে, ওনি আমার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে।
আর আমি ও ওনার দিকে তাকিয়ে আছি।
কি হলো তা বুঝতে পারলাম না।
বেশ কিছুক্ষণ পর যখন বুঝতে পারলাম বিষয় টা তখন বেশ লজ্জা লাগলো।
কিন্তু আমি উঠার আগেই ওনি আমাকে আর ও লজ্জায় ফেলে দিলেন।
উনি হালকা বাকা হেসে বললেন
– বলতেই পারতি কোলে উঠতে ইচ্ছে করছিলো।
সেই ছোট থেকেই তো কোলে নিচ্ছি।
দুদিন আগে ও নিয়েছি, এভাবে না পড়লে ও পারতি।
আমি এমনিতেই কোলে নিয়ে নিতাম।

ওনার কথায় বিষম খেলাম।
আমি কি ইচ্ছে করে পড়েছি নাকি। আর উনি ই তো আমার চেয়ারটা তে বসে পড়েছে।
এতে আমার কি দোষ , ওনি যে ইচ্ছে করে এমন করেছে সেটি বেশ ভালোই বুঝতে পারছি।
আমি ওনার গলা ছেড়ে কোল থেকে উঠে দাঁড়ালাম।
ওড়না ঠিক করে হালকা বিরক্তি নিয়ে অন্য চেয়ার টা তে বসলাম।
আর উনি আমার দিকে তাকিয়ে মুখ চেপে হাসছেন।
এই লোকটা নিশ্চয়ই আগের জন্মে আমার শত্রু ছিলেন।
আর এই জন্মে এভাবে যখন তখন লজ্জা দিয়ে শোধ নিচ্ছেন।
আজব মানুষ, আরে ভাই আগের জন্মে যদি ও আমি তোর শত্রু হয়ে থাকি তার জন্য কি এই জন্মে ও শোধ নিবি।

মনিকা আপু স্ন্যাকস নিয়ে এসে পড়ল।
ফারহান ভাইয়া কে দেখে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল
– আরের ভাইয়া তুমি ও এসে পড়েছো দেখছি ।
বাহহহ ভালো ই হলো তো

ফারহান ভাইয়া ব্রু কুঁচকে বলল
– কেন আর কারো আসার কথা আছে নাকি ?

মনিকা আপু স্ন্যাকস এর ট্রে টা সাইট টেবিল এ রেখে একটা চেয়ার টেনে বসল।
তারপর বলল
– হুমম আসার কথা ছিলো না অলরেডি এসে পড়েছে।

আমরা সামনের দিকে তাকাতেই দেখলাম রিফাত ভাইয়া আসছে।
ফারহান ভাইয়া কে দেখে রিফাত ভাইয়া হালকা হাসল।
তারপর পিঠ চাপরে বলল
– আরে তুই ও কি খেলছিস নাকি।
এরা তো আমাকে কিছু বলে নি তোর কথা।

ফারহান ভাইয়া কিছু বলার আগেই রিফাত ভাইয়া আবার বলা শুরু করলো
– আররে ফারাবি পেঁচার মতো মুখ করে আছিস কেন।
মনে হচ্ছে বর কে মিস করছিস।
আহারে বোন টি আমার, থাক আর মন খারাপ করিস না।
তোকে খুব তাড়াতাড়ি শশুর বাড়ি পাঠাবো।
এই কথা তে মনিকা আপু আর ফারহান ভাইয়া হালকা হাসলেন।
আর আমি শুধু রাগে ফুসছি।

ফারহান ভাইয়া ঠোঁটের কোনে বাকা হাসি ঝুলিয়ে আমার দিকে ব্রু কুঁচকে তাকালেন।
তারপর বললেন
– ফারাবি আসলেই তো এমন পেঁচা হয়ে আছিস কেন।
কারো উপর পড়ে গেছিলি নাকি ?
যখন তখন যেখানে সেখানে পড়া তো তোর নিত্যসঙ্গী ।

এবার মেজাজ টা গেলো চড়ে।
ইচ্ছে করছে মাথা টা ফাটিয়ে দিই ওনার।
কিন্তু ঐ যে আমার একটাই মাথা তাই নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করলাম।

উফফফ এরা আমাকে পেয়েছে কি।

রিফাত ভাইয়া বলল
– তো খেলা শুরু করা যাক।

আমি এবার বিরক্তি ঝেরে বললাম
– অবশ্যই ।

ফারহান ভাইয়া আমার বরাবর বসলেন আর রিফাত ভাইয়া মনিকা আপুর বরাবর।
সিঙেল খেলবো আমরা , আর আমি ও বেশ ভালো ক্যারাম খেলি।
তাই একটু হলে ও কনফিডেন্স তো আছেই।

একটু ভাব নিয়ে ই বসলাম।
বেশ কয়েক বার খেলার পর রিফাত ভাইয়া আর মনিকা আপু দুজন ই নিল হয়ে গেল।
মানে গোল্লা খেয়ে গেল।
মনিকা আপু রিফাত ভাইয়া কে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে।
কারন মনিকা আপুর সুন্দর দান টা রিফাত ভাইয়া নষ্ট করে দিয়েছে।
আর তার সুযোগ নিয়েছি আমি।
রিফাত ভাইয়া হালকা কান ধরে মৃদু স্বরে বলল
– সরি।

কিন্তু মনিকা আপু রাগে ফুঁসছে।

এবার গেইম হবে আমার আর ফারহান ভাইয়ার মধ্যে ।
এই সুযোগ কিছু তেই হাতছাড়া করা যাবে না।
এই বেডা বজ্জাত হনুমান কে তো হাড়াতেই হবে।
রিফাত ভাইয়া ফারহান ভাইয়ার সাপোর্ট নিচ্ছে আর মনিকা আপু আমার।
গেইম শুরু করার আগে বলা হলো আমাদের মাঝে যে হারবে তাকে, বাকি সবাইকে ট্রিট দিতে হবে।

আমি প্রথমে না না করলে ও পরে রাজি হয়ে গেলাম।
আসলে আমি হেরে গেলে এদের কাঁচকলা দিব ।
ইসসস বয়েই গেছে এদের ট্রিট দিতে।

ফারহান ভাইয়া বলল
– ওকে ডান।
আমি ও বললাম
– ডান।

ফারহান ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে হালকা চোখ মেরে দিয়ে বাঁকা হাসলেন।
আর আমি বরাবরের মতো ই হয়ে গেলাম আহাম্মক।

ফারহান ভাইয়া আমার সামনে হাত দিয়ে শব্দ করে বললেন
– খেলার আগেই কি হার মেনে নিলি নাকি।
ভয় পেয়ে গেছিস মনে হচ্ছে ।

আমি মুখ বাঁকিয়ে বললাম
– আমার বয়েই গেছে।

ফারহান ভাইয়া হালকা হেসে বললেন
– তো গেইম শুরু করা যাক।

আমি ও সম্মতি জানালাম।
টান টান উত্তেজনা নিয়ে খেলে যাচ্ছি।
আর অন্য দিকে রিফাত ভাইয়া ও মনিকা আপুর ঝগড়া তো আছেই।
50 মিনিট খেলা হয়ে গেল কিন্তু কেউ হারছিই না।
আমার অবস্থা দেখার মতো হাত টা ব্যাথা ও করছে।
আর অপর দিকে ফারহান ভাইয়ার কোনো হেল দুল ই নেই।
মনে হচ্ছে এই মাত্র খেলতে বসেছেন।
আর আমি ক্লান্ত হয়ে খেলে যাচ্ছি।

রিফাত ভাইয়া আর মনিকা আপু ও ঝগড়া করতে করতে ক্লান্ত।
একবার বসছে তো উঠছে।
কিন্তু আমাদের খেলা শেষ ই হচ্ছে না।
ফারহান ভাইয়ার দিকে তাকাতেই ওনি বাকা হাসলেন আর তারপর আবার চোখ মেরে দিলেন।
আর আমি চোখ নামিয়ে নিলাম।
বেশ বিরক্ত লাগছে, আরো কিছুক্ষণ খেলার পর ফারহান ভাইয়া কে হাড়িয়ে দিলাম।
আমি বুঝতে পেরেছি যে ওনি ইচ্ছে করেই হেরেছে ।
তাতে আমার কি আমি জিতেছি এটাই আসল কথা।
এই অসুস্থ শরীর নিয়ে ই লাফিয়ে উঠলাম।
মনিকা আপু ও আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
দুজন ই আনন্দে মেতে উঠলাম , ফারহান ভাইয়া আমার দিকে অপলক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছেন।
কিন্তু আমি এতোই ব্যস্ত যে ওনার দিকে তাকাচ্ছি ই না।
আর রিফাত ভাইয়া মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।

রিফাত ভাইয়া একবার আমাদের দিকে তাকাচ্ছে আর একবার ফারহান ভাইয়ার দিকে।
ফারহান ভাইয়া রিফাত ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে একটা বোকা হাসি দিলেন।

রিফাত ভাইয়া কে পচাতে মিস করলো না মনিকা আপু।
বেচারা রিফাত ভাইয়া, আমি হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছি।

রিফাত ভাইয়া মনিকা আপুর মাথায় হালকা করে গাট্টা দিয়ে দৌড়াতে শুরু করলো।
আর মনিকা আপু রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে রিফাত ভাইয়ার পেছনে দৌড়াতে থাকল।
এদের কান্ড দেখে আমার যায় যায় অবস্থা।
হাসতে হাসতে যখন ফারহান ভাইয়ার দিকে তাকালাম তখন দেখতে পেলাম ওনি আমার দিকে অপলক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছেন।
কি সূক্ষ্ম সে দৃষ্টি , নেই কোনো অপবিত্রতা ।
এতো পবিএ চাউনি খুব কম মানুষের ই আছে।

ওনার দিকে তাকিয়ে আমি অপ্রস্তুত বোধ করলাম।
ওড়নার কোনা মুরাতে থাকলাম।
বেশ লজ্জা লাগছিল, মনে হচ্ছে আমার গাল দুটো কমলা রঙ ধারন করে নিয়েছে।

ফারহান ভাইয়া আমাকে এভাবে দেখে ফিক করে হেসে দিলো।
আমি ওনার অপ্রত্যাশিত হাসিতে ব্রু কুঁচকে তাকালাম।
ফারহান ভাইয়া চেয়ার থেকে উঠে আমার দিকে আগালেন।
তারপর কানের কাছে মুখ নিলেন।
ওনার নিশ্বাস আমার কানে এসে পড়ছে।
কেমন এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে।
তার পর একটু সরে গিয়ে বললেন
– কোলে চড়তে ইচ্ছে হলে বল।
কোলে নিয়ে যাচ্ছি, ঐ ভাবে পড়ে যাস না আর।

আমি ব্রু কুঁচকে বললাম
– আমি ইচ্ছে করে পড়ি নি।

ফারহান ভাইয়া হালকা হাসলেন।

আমি আবার বললাম
– আপনি ইচ্ছে করে হেরেছেন তাই না ?

ফারহান ভাইয়া হালকা হেসে বললেন
– কিছু হারে ও যে সুখ আছে।
যা জিতে গিয়ে ও পাওয়া যায় না।

আমি ওনার কথার মানে উদ্ধার করতে পারলাম না।
বরাবর ই ওনি এমন এমন কথা বলে যার মানে আমার এই ছোট্ট মস্তিষ্ক কোনো ভাবেই বুঝতে পারে না।

আমি জানি হাজার চেষ্টা করে ও কোনো লাভ নেই।
যার দরুন খুব বেশি চেষ্টা করি ও না।
আমার আবার পাগলা গারতে যাওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই।
তার থেকে ভালো চুপ করে থাকাই শ্রেয়।
উনি বলুক ওনার মতো , আমার কি।
আমি জিতেছি এটাই মূল বিষয় ।
ওনি যদি ইচ্ছে করে হেরে যায় তাতে আমার কি করার।
আমি কি ওনাকে হারতে বলেছি।
ফারহান ভাইয়া আমাকে ভাবলীলাস হীন ভাবে ভাবতে দেখে খানিকটা হেসে আমার মুখে ফু দিলেন।
আর আমার চোখ দুটো আপনা আপনি ই বন্ধ হয়ে গেল।

বেশ কিছুক্ষণ পর চোখ মেলে তাকাতেই দেখি ফারহান ভাইয়া নেই।

পরক্ষণেই বেশ লজ্জা পেলাম , ধ্যাত আমি যে কি করি ।
__________________________

( আসসালামুআলাই রির্ডাস । গল্প কেমন হচ্ছে জানাবেন। মন টা ভালো নেই, তাই বেশি কিছু বলব না।
ইসরাইল দের বিরোধী করুন হ্যাসটেক এর মাধ্যমে ।
দোয়া করবেন যাতে সমস্ত অন্যায় বন্ধ হয়ে যায়।
আমার লেখা গল্প পেতে পেজ এ লাইক দিয়ে পাশে থাকুন )

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাপ করবেন ।

💜 হ্যাপি রিডিং 💜

চলবে
ফাতেমা তুজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here