স্বপ্নের প্রেয়সী 💖 পর্ব- ২৭

0
1989

💖 স্বপ্নের প্রেয়সী 💖
Part – 27
__________________________

ভোর বেলা ঘুম ভাঙলো মনিকা আপুর ডাকে।
মনিকা আপু আমাকে টেনে তুলে দিলো।
মনিকা আপুর মুখ দেখেই বুঝতে পারলাম রেগে আছে।
কিন্তু কার উপর , আর কেন ই বা রেগে আছে।
মনিকা আপু আমাকে ফ্রেস হতে বলে গট গট করে বের হয়ে গেল ।
মনিকা আপু যেতেই দেখলাম রিফাত ভাইয়া দরজার কাছে দাড়িয়ে ছিলো।
মনিকা আপু রিফাত ভাইয়ার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে হন হনিয়ে চলে গেল।
রিফাত ভাইয়া ও মনিকা আপুর রাগ ভাঙাতে পেছন পেছন দৌড়।
কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে রইলাম।
পরক্ষণেই মাথা খেলিয়ে বুঝে গেলাম বিষয় টা।

সব হলো ঐ বেটা বজ্জাত হনুমান ফারহানের কারবার।
নিশ্চয়ই রিফাত ভাইয়া কে দিয়ে মনিকা আপু কে এই ভোর বেলা উঠিয়ে আমার এখানে পাঠিয়েছেন।
কেন রে ভাই তুই আসলে কি হয়।
যত্তসব

সব চিন্তা ঠেলে আরমোরা ভেঙে উঠে দাঁড়ালাম।
ব্যালকনির দিকে তাকাতেই দেখলাম হালকা আলো ফুটছে।
তাই তাড়াতাড়ি ব্যালকনিতে চলে গেলাম।
দীর্ঘ একটা নিশ্বাস নিলাম , মহান আল্লাহর সৃষ্টি এ সুন্দর প্রকৃতির ঠান্ডা ফ্রেস বাতাস অনুভব করলাম।
কিছুক্ষণ পর গোলাপ গাছটা কে একটু স্প্রে করে নিলাম।
বাহহহ ছয়টা ফুল ফুটেছে।
বেশ লাগছে তো দেখতে , গোলাপ গাছটার সাথে কিছু কথা বলে সোজা রুমে এসে বাথরুমে চলে গেলাম।

ফ্রেস হয়ে এসে বই নিয়ে বসে পড়লাম।
বেশ কিছু পড়া বাকি তাই তাড়াতাড়ি কমপ্লিট করার চেষ্টা করলাম।
এর মাঝে মিনু কে দিয়ে আম্মু কফি পাঠিয়ে দিয়েছে।
কফি টা ও প্রায় শেষ আর আমার পড়া ও ।
আহহহ বেশ লাগছে এখন , ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখলাম 8’40 বাজে।
বড় মা এসে বলে গেল নাস্তা করতে।

আমি ও বই গুছিয়ে নাস্তা করার জন্য চলে গেলাম।
আপন মনে খেয়ে চলছি , তখনি আব্বু বললো
– তো আমরা কাল ই ঢাকা যাই।
ফারাবি তো অলমোস্ট সুস্থ আর ভাইয়ার কাজ ও শেষ হবে আজকে।
দেরি করে লাভ কি।

আমি ঢাকা যাওয়ার কথা শুনে লাফ দিয়ে উঠলাম।

আমাকে এভাবে লাফাতে দেখে ফারহান ভাইয়া রাগি চোখে তাকিয়ে রইলো।
আর রিফাত ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বোকা বনে গেল।
কারন আমি তো অসুস্থ ।

বড় মা খাবার দিতে দিতে বলল
– আহা ফারাবি ।
এখনো তোর বাচ্চা মো গেল না।

আমি বড় মার কথায় চুপসে গেলাম।
এরা আমাকে কেন বাচ্চা বলে।
আমি কি কখনোই বড় হবো না।
ধ্যাত

শেষ মেষ ঠিক হলো , কাল কেই যাবো আমরা।

আব্বু আজকেই কালকের সন্ধ্যার এয়ার টিকেট কাটবেন।

আহা কতো দিন পর ঢাকা যাবো ।

সমস্ত স্মৃতি ডানা মেলে উড়ছে।

খাওয়া শেষ করে সবার সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে রুমে চলে আসলাম।
কারন 10 টা বেজে গেছে।
এখন আমার প্রান প্রিয় স্যার ফারহান আমাকে পড়াবেন।
এই বেটার জ্বালা আর ভালো লাগে না।
ফারহান ভাইয়া বেশ কিছুক্ষন আমাকে পড়ালেন।
মাঝে কয়েকবার বকা ও দিয়েছেন।
কেন রে ভাই পড়া পারলে ও কেন বকা দিস।
লজ্জা করে না এই ছোট্ট অবলা মেয়েটাকে কষ্ট দিতে।
ফাজিল পোলা ,

যাই হোক পড়া তো পেরেছি এতেই শান্তি।
ফারহান ভাইয়া আর ও কিছু পড়া দিয়ে চলে গেলেন।
ওনি চলে যেতেই কোনো মতে বই গুছিয়ে এক দৌড় দিলাম ।
দৌড়াতে দৌড়াতে সোজা বাগানে চলে আসলাম।
বাগানে বেশ কিছুক্ষণ ঘুরলাম।
ফুল গাছ গুলো কে ছুঁয়ে দিলাম।
প্রতি টা গাছেই কুয়াশার পানি রয়েছে।
আহা কি সুন্দর সে দৃশ্য ।
আর ও কিছু ক্ষন ঘুরে অন্য কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা রুমে ঢোকে শুয়ে পরলাম।
সিলিং এর দিকে তাকিয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ তারপর ই সাওয়ার নিতে চললাম।
গোসল শেষ করে বরাবরের মতোই ভেজা চুল নিয়ে ছাদে চলে আসলাম।
ছাদের দোলনা তে বসে কিছুক্ষণ রোদ পোহালাম আর দোল খেলাম।
বেশ মজা ই লাগছে, দোলনা তে বসে কিছুক্ষণ আর ও রোদ পোহালাম।
তারপর পুরো ছাদ জুড়ে বেশ কয়েকবার চক্কর মারলাম।

চক্কর মারতে মারতে ভাবতে লাগলাম।
আজকের সন্ধ্যা তে কি পড়া যায়।
গ্রাউন বা লেহেংগা তো গরজিয়াজ হয়ে যাবে।
আর থ্রি পিস এ শীত মানবে ও না।
কি করা যায় ভাবতেই হঠাৎ করে একটা শপিং ব্যাগ আমার সামনে চলে আসলো।
আমি অবাক হয়ে আছি, এটা আলাদ্দিন এর চিরাকের কোন জিন এনে দিলো।
ভাবা মাত্র ই একেবারে সামনে চলে আসলো।
কে সে , দেখার জন্য পেছন ফিরতেই দেখি ফারহান সাহেব দাড়িয়ে আছেন।

আমি ওনাকে একপলক দেখে নিচু হয়ে রইলাম।
ফারহান ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে ব্যাগ টা হাতে ধরিয়ে দিলেন।

আমি ওনার দিকে হালকা তাকিয়ে বললাম
– এটা কিহ ?

ফারহান ভাইয়া পকেট থেকে কিছু একটা বের করতে করতে বললেন
– এটা তোর আজকের সন্ধ্যার ড্রেস।
আজকে এটা পরেই যাবি ঠিকআছে।

আমি মাথা ঝাঁকিয়ে বললাম
– আচ্ছা।

ফারহান ভাইয়া পকেট থেকে বের করা ছোট্ট বক্স টা হাতে দিয়ে বললেন
– এটাতে এক জোড়া ইয়ারিং আছে ।
এই ইয়ারিং টাই পরবি।
আর হ্যাঁ চুল খোলা রেখে যাওয়া যাবে না , ভারি মেকআপ তো একদম ই না।
মনে থাকবে তো?

আমি বললাম
– হুমম।

ফারহান ভাইয়া আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমার একদম কাছে এসে বললেন
– গুড গার্ল।

তারপর আমার মুখে ফু দিতেই বরাবরের মতো চোখ জোড়া আপনাআপনি বন্ধ হয়ে গেল।
কিছুক্ষণ পর চোখ মেলে তাকাতেই দেখি ফারহান ভাইয়া নেই ।
আবার লজ্জা পেলাম, ধ্যাত ।

বেশ কিছুক্ষণ ছাদে ঘুরে সোজা নেমে রুমে ঢুকে গেলাম।
ব্যাগটা খোলার জন্য হাত বাড়াতেই মিনু এসে বলল
– বড় মা খেতে ডাকছে ।

ব্যাগটা না খুলেই কাবাডে রেখে সোজা ডাইনিং এ চলে গেলাম।
খাওয়া শেষ হতেই ফারহান ভাইয়া আমাকে অনলাইন ক্লাসের জন্য বসিয়ে দিলেন।

অনলাইন ক্লাস শেষ করে কিছুক্ষণ পড়ালেন ।
পড়তে পড়তে বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেল।

ফারহান ভাইয়া আমাকে ছেড়ে বলল
– হুমম বেশ কিছুক্ষণ পড়েছিস।
পাঁচ মিনিট রেস্ট নিয়ে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আয়।
আর হ্যাঁ যা বলেছি মনে থাকে যেন।

আমি মাথা ঝাঁকিয়ে চলে আসলাম।

রুমে ঢুকেই সোজা বেডের উপর শুয়ে পরলাম।
ক্লান্ত লাগছে শরীরটা , হঠাৎ মনে পড়ল ফারহান ভাইয়ার দেওয়া ড্রেস এর কথা।
তাড়াতাড়ি উঠে কাবাড থেকে ব্যাগ নামিয়ে বসে পরলাম।

ব্যাগ খুলেই মনটা ফুরফুরে হয়ে গেল।
বাহহহ কি দারুন জিনিস এনেছেন।
লোকটার মাথায় বুদ্ধি আছে দেখছি।
আমি তো ভেবেছিলাম পুরো টাই গোবর দিয়ে ভরা।

কালো জিন্স পেন্ট এর উপর স্টোন বসানো।
পায়ের নিচের দিকটা তে হালকা ডিজাইন করা।
বেশ সুন্দর , আর সাথে আছে একটা জিন্স এর লং শার্ট টপস।
যার মধ্যে সুন্দর ডিজাইন করা সাথে স্টোন বসানো।
মেচিং করে শর্ট উড়না।
উফফফ সেই পুরো ফরমাল লুক যাকে বলে।
ইয়ারিং এর বক্স টা খুলতেই চোখ জোড়া আটকে গেল।
স্টোন এর রিং এর মধ্যে আবার ছোট্ট পাথর দিয়ে ডিজাইন করা।
উফফফ পুরো ঝাকাস।
লোকটার চয়েজ আছে বলতেই হয়।
এর সাথে যদি ও সু বেশি মানায় কিন্তু আমি সু হিল পরবো।
এরা আমাকে কথায় কথায় বাচ্চা বলে , পরে দেখবো এদের বুকের নিচে পড়ে থাকবো।
তার থেকে ভালো সু হিল ই পরবো।
খারাপ লাগবে না দেখতে।

ফারহান ভাইয়ার কথা মতোই সব করলাম।

হালকা নুড লিপস্টিক , আইলেসে মাশকারা আর আয়লেনার।
সাদা কাজল দিয়ে নিলাম, কারন আমার চোখ বড় বড় না।
কালো কাজল দিলে আমার চোখ দেখাই যাবে না।
উঁচু করে ঝুঁটি বেধে নিলাম , সাথে আমার ছোট্ট পার্স।

বাহহহ আয়না তে নিজেকে দেখে নিজেই বললাম
– আহা কী লাগছে।
একটু কাজলের ফোঁটা দিয়ে যাই ।
নজর না লেগে যায়।

কানের পিঠে কাজলের ফোটা দিয়ে নিলাম।
তারপর কয়েকটা সেলফি তুলে মনিকা আপুর রুমে গেলাম।

মনিকা আপুর রুমে গিয়ে হা হয়ে আছি ।
মনিকা আপু ও প্রায় সেইম কালেকশন এর ড্রেস , যদি ও কালার টা আর ডিজাইন টা ভিন্ন।
যার দরুন বুঝতে পারলাম ফারহান ভাইয়া আর রিফাত ভাইয়া মিলেই করেছে এগুলো।

মনিকা আপুর রেডি প্রায় শেষ।
মনিকা আপু আমাকে দেখে বলল
– হায় রে ফারাবি । আজকে তো তুই গেলি , সাবধানে রাখতে হবে তোকে।
আমি একটা মেকি হাসি দিয়ে বললাম
– মোটে ও না ।
আজকে আমার ভাই তোমাকে নিয়েই উড়াল দিবে ।

আমার কথায় মনিকা আপু লজ্জা পেলো।

লজ্জা মুখেই বলল
– থাম তো এবার।

আমি মুখ চেপে হাসলাম
তারপর বললাম
– আচ্ছা আমার ভাবি জান আপনাকে লজ্জা পেতে হবে না আর।
চলুন এবার যাওয়া যাক।

মনিকা আপু আমার গাল টেনে বলল
– হুমম ননদিনী চলুন যাওয়া যাক।

দুজনেই হেসে দিলাম।
তারপর বেড়িয়ে পড়লাম।
__________________________

( আসসালামুআলাই রির্ডাস । গল্প কেমন হচ্ছে জানাবেন প্লিজ ।আপনাদের জন্য কষ্ট করে 2 পার্ট করে দেই। অথচ আপনাদের কমেন্ট পাই।
বড্ড খারাপ লাগে।
একটি কমেন্ট তো আশা করতেই পারি তাই না।
আমার লেখা গল্প পেতে পেজ এ লাইক আর বন্ধুদের ইনভাইট দিয়ে পাশে থাকুন )

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাপ করবেন ।

💜 হ্যাপি রিডিং 💜

চলবে
ফাতেমা তুজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here