স্বপ্নের প্রেয়সী 💖 পর্ব- ৯

0
2836

💖 স্বপ্নের প্রেয়সী 💖
Part – 9
__________________

আজকে আবার ফারহান স্যার পড়াতে আসছেন ।
দূর ভালো লাগে না ।
পুরোনো সব স্মৃতি তে এতটাই বিভোর ছিলাম যে ফারহান স্যার এর পড়া পড়ি নি ।
এমনিতেই পড়ি না তার মাঝে ওনি রেগে ড্রাবল পড়া দিয়ে চলে গেলেন ।
এই মানুষটির কখন কি মতিভ্রম তা বোঝার উপায় নেই ।
মানুষ না ছাই , পারলে ওনি আমার জীবনের ইতি টেনে দিয়ে চলে যান ।
এতো পড়া আমার মাথা মন্ডু কিছুই বুঝি না ।
আর এই বেটা হনুমান নাকি আমার স্যার।
ঢাকাতে থাকতে তো ফারহান ভাইয়াই বলতাম ইনফেক্ট সিলেটে আসার পর এমনকি ওনি যখন আমাকে প্রথম দিন পড়ালেন সেই দিন ও ফারহান ভাইয়া ই বলতাম । কিন্তু তার পরের দিন এসেই কতো গুলো বুলি ঝেড়ে দিলেন ।
বললেন
– ফারাবি তুই এখন কোন ক্লাস পড়ছিস বল তো ।
আমি বললাম
– ক্লাস টেন ভাইয়া ।
উনি আমার দিকে না তাকিয়ে বললেন
– এখন কি তুই পিচ্ছি বাচ্চা?
আমি বললাম
– তা কেন হতে যাবো ।
আমার তো ষোলো বছর হতে চলল।
আর এক মাস ও নেই।
তাহলে বাচ্চা কেন থাকবো।
( আমি তো ওনার সামনে কথাই বলতে পারি না । আজকে কীভাবে এতো গুলো কথা বললাম কে জানে ।
আসলে এই লোকটার মাথা গেছে । না হলে এমন আজগুবি প্রশ্ন কেউ করে ? আজব প্রানী , যার কথার কোনো আগা মাথাই নেই )
ফারহান ভাইয়ার কথায় ধ্যান ভাঙ্গলো। ওনি আমার কাছে এসে আমার কোমর জড়িয়ে ধরে এক হাতে মাথার চুল ধরে বল
– আজকাল বেশ কথা বলসিছ । সাহস বেড়ে গেছে মনে হয়। আমাকে ভয় পাস না ?
আমি তো ভয়ে শেষ । একে তো এই লোকটি আমার কোমর জড়িয়ে আছে । তার মধ্যে আবার বাজে ভাবে চুল ধরে আছেন ।
যার ফলে হার্ট কাপছে আর মাথায় বেশ ব্যথা ও পাচ্ছি।
কথা বলতে পারছি ই না ।
ফারহান ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিয়ে ক্ষানিকটা দূরে সরে গেলেন ।
– আমি তো এখনো কাঁপছি । এমনিতেই এই লোকটাকে আমি জমির মতো ভয় পাই ।
তার মধ্যে ওনি এতো কাছে চলে এসেছিলেন।
কিছুক্ষণ নিরবতা বিরাজ করলো আমি মাথা নিচু করে আছি ।
ফারহান ভাইয়া বললেন
– আমাকে স্যার বলবি । যখন কেউ থাকবে না ।
সবার সামনে ভাইয়া ই বলবি ।
গট ইট ।
এই বলেই ওনি তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেলেন ।
আমি হা হয়ে আছি ।
কি আক্কেল, স্যার বলার কি আছে ।

_________________

সেইদিনের পর থেকে কেউ আমাকে আর হয়রান করে নি ।
আর আকাশ ভাইয়া রা সব ভালো হয়ে গেছেন ।
ওনাদের এমন পরিবর্তনে সবাই খুশি ।
ইনফেক্ট আকাশ ভাইয়ার আম্মু তো ফারহান ভাইয়ার হাত ধরে কেঁদেই দিলেন।
আকাশ ভাইয়া আগে যথেষ্ট মিষ্টি ভাষী নম্র ছেলে ছিলেন ।
অষ্টম শ্রেণীর গন্ডী পেরিয়ে নবম শ্রেণীতে উঠা মাএই বাজে ছেলেদের পাল্লায় পড়ে হয়ে উঠলেন বখাটেদের লিডার ।
তখন ফারহান ভাইয়া
এস এস সি পরীক্ষার্থী ।
দিন দশেক ফারহান ভাইয়া আকাশ ভাইয়ার এমন পরিবর্তন দেখেছেন ।
যে ছেলাটা ফারহান ভাইয়া কে এতো সম্মান করতো তার মধ্যে এতো বাজে পরিবর্তন ফারহান ভাইয়ার বোধগম্য হয় নি ।
তারপর একদিন ফারহান ভাইয়া আকাশ ভাইয়া কে ডেকে সব কিছু বুঝিয়েছে।
মাস দুয়েক আকাশ ভাইয়া ভালো হয়ে গেছিলো । কিন্তু ফারহান ভাইয়ার পরীক্ষার পর আবার চাটে পড়ে গেল।
ফারহান ভাইয়া ও স্কুল পেরিয়ে কলেজ এ গেলেন আর আকাশ ভাইয়া কে ঠিক করার তেমন সময় সুযোগ কিছু ই পেল না ।
আকাশ ভাইয়া পরবর্তীতে ফারহান ভাইয়া কে এড়িয়ে চলতো ।
তাই লোকমুখে আকাশ ভাইয়ার নামে বাজে কথা শুনলে ও কখনো সেভাবে চোখে পড়ে নি ।
ফারহান ভাইয়ার কোনো ধারনাই ছিল না আকাশ ভাইয়া এতো টা বখে গেছেন ।
কথায় আছে না সজ্ঞ দোষে লোহা ও ভাসে ।
সেই অবস্থাই বিরাজ করছে এখন।

______________

সেইদিন ফারহান ভাইয়া ওদের কে মেরে সকাল বেলা বেস্ট ডক্টর দিয়ে ট্রিটমেন্ট করিয়েছে ।
দুই দিন হসপিটালে এডমিট ছিলো ওরা।
তারপরে ফারহান ভাইয়া ওদের দুজোন কে অনেক বোঝায়।
আর নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ না করতে পেরে ওদের ঐ ভাবে মেরেছে তার জন্য ক্ষমা ও চায় ।
যদি ও ফারহান ভাইয়ার ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই ছিলো না । তবু ও তিনি ক্ষমা চাইতে ইতস্তত বোধ করেনি।
অবশেষে ফারহান ভাইয়া ওদের বোঝাতে সক্ষম হয় আর ওরা ফারহান ভাইয়ার পা ধরে ক্ষমা চায় ।
ফারহান ভাইয়া ওদের ক্ষমা করে দিয়ে বুকে টেনে নেয় ।
আকাশ ভাইয়া নিজের ভুল বুঝতে পেরে সেদিন আমার পা ধরে মাপ চেয়ে ছিলো ।
আকাশ ভাইয়ারা দশম শ্রেণীর গন্ডি টপকিয়ে কলেজে ভর্তি হয় নি আর তাই ফারহান ভাইয়া ওনাদের কলেজ এ ভর্তি করিয়ে দেয় আর ওনাদের পড়াশুনার সমস্ত দায়িত্ব নেয় ।
অবশেষে আকাশ ভাইয়ারা আগের মতো সেই নম্র ছেলে হয়ে উঠেন।
এভাবেই পেরিয়ে যায় বেশ কয়েকটি মাস।
ফারহান ভাইয়ার সাথে আমার প্রায় ই দেখা হয় কিন্তু কথা হয় না ।
এভাবেই কেটে যায় দিন আমি ও সপ্তম শ্রেনির গন্ডি পেরিয়ে অষ্টম শ্রেণিতে নাম লেখাই।
__________________

এখন ফারহান ভাইয়া অনেক বেশি কঠোর হয়ে গেছেন ।
যদি ও ওনি আগে থেকেই কম কথা বলতেই পছন্দ করেন কিন্তু এখন আমাকে প্রায় বকা দেন ।
আমি ও বড় হচ্ছি আমার মধ্যে ও পরিবর্তন আসে।
কম বেশি অনেক কিছু ই বুঝতে শিখেছি ।
তাই ওনার সাথে আমার তুমুল বিতর্ক বাঁধে ।
কিন্তু সেটা প্রকাশ্যে নয় মনে মনে ।
আমার ঘাড়ে সত্যি ই দুই টা মাথা নেই যে ওনার সাথে সড়াসড়ি ঝগড়া করবো ।
তাই মনে মনে হাজারো গালি দেই প্রতিদিন ।
অষ্টম শ্রেণীতে উঠার পর থেকে এই ফারহান ভাইয়া আমার জীবন টারে নরক করে দিছে ।
বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে গেলে ও দেখি কোথায় থেকে যেন হাজির হয়ে যায়।
বন্ধুদের সঙ্গে হাসাহাসি করার সময় দেখি ওনি আমার পেছনেই দাড়িয়ে কি ঝামেলা রে বাবা ।
এই আপদ টারে মন চায় উগান্ডা তে পাঠিয়ে দেই ।
কিন্তু সে সাহস যে আমার নেই ।
আমি ওনার সামনে গেলেই বুকের ভেতর পানি শূন্যতা
অনুভব করি ।
মনে হয় সারা শরীর অশার হয়ে আছে।
কি করবো ওনি তো আমাকে কথায় কথায় ধমক দেন ।
________________

অষ্টম শ্রেণীর অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার আগে বন্ধুরা মিলে সবাই আড্ডা দিচ্ছিলাম ।
ফুচকার আড্ডা ফুচকা নিয়ে বটতলায় সব বন্ধু বান্ধবীরা হাসি ঠাট্টা করছিলাম আর খাচ্ছিলাম।
পাশে সিনিয়র ভাইয়ারা আর আপুরা ও ছিলো ।
ওমন সময় কেউ একজন আমাকে তার দিকে ঘুড়িয়ে জোরছে একটা থাপ্পড় দিলো ।
আমার চোখের কোনে পানি টলমল করছিলো ।
এত গুলো স্টুডেন্ট এর সামনে এভাবে অপমান ।
আমার দোষ কী এতে ? সবাই তো আড্ডা দিচ্ছে আমি দিলেই দোষ ।
চোখের কোনে টলমলে পানি নিয়ে সোজা বাসার দিকে রওনা দিলাম ।
সবাই আমার যাওয়ার পানে হা হয়ে তাকিয়ে আছেন।
আমি বাসায় গিয়ে সোজা সাওয়ার নেওয়ার জন্য বাথরুমে ঢুকলাম।
ঝড়না ছেড়ে কতোক্ষন কাঁদলাম ওনি আমার সাথে সবসময় কেন এমন করে ।
কেঁদে চোখ লাল করে ফেলেছি সেদিন আর দুপুরে আমার খাওয়া হলো না ।
বিকেলে বারান্দাতে বসে আছি ওমন সময় বড় মা হাতে একটা ইয়া বড় শপিং ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বলল তাড়াতাড়ি রেডি হ ।
শপিং ব্যাগ দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেশ বড় কোনো শপিং কমপ্লেক্স থেকে আনা ।
আমি বড় মা কে কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই বেড়িয়ে গেল ।
এই বাসায় ও কেউ আমাকে ভালোবাসে না ।
সবাই ফারহান বলতে অজ্ঞান।
সেইদিনের কথা আমাদের স্কুল থেকে শিক্ষাসফরে নেওয়া হবে সাভার নন্দন পার্কে ।
ষষ্ঠ আর সপ্তম শ্রেণীর স্টুডেন্ট দের শিক্ষা সফরে নেওয়া হয় না । তাই গত দুবছরে কোনো সুযোগ ই ছিল না ।
এ বছর যেতে পারবো ভেবেই মহা আনন্দে বাসায় চলে আসলাম ।
যেই না বাসার সবাইকে বলব শিক্ষা সফরের কথা দেখি বেটা বজ্জাত হনুমান ফারহান ভাইয়া বসে আছে।
বাসার সবাই ওনাকে জামাই আদর করছে ।
উফফফ ঠং দেখলে আর বাঁচি না ।
যাই হোক আমার তাতে কি।
আমি আমার যাওয়ার দিকে মনোযোগ দিই ।
উফফফ ভাবতেই কেমন ডান্স দিতে ইচ্ছে হচ্ছে ।
বাসার সবাইকে বলার জন্য সোজা হয়ে দাড়িয়ে ছি যখন ফারহান ভাইয়ার উক্তি
– কিরে ফারাবি । দরজার কাছে দাড়িয়ে আছিস
কেন।
আমি মনে মনে কয়েকটা গালি দিয়ে বললাম তাতে তর কি । আমি যেখানে ইচ্ছে সেখানে দাড়াবো ।
কিন্তু তা প্রকাশ করলাম না।
এর সামনে কিছু বলবই না যাহ।
উওর না দিয়ে মাথা নিচু করে চলে যেতে লাগলাম
তখনি ফারহান ভাইয়া নিজের উক্তি ঝেড়ে দিলেন
– কাকি এবার না ফারাবির স্কুল থেকে সাভার নেওয়া হচ্ছে তাও একটা পার্কে ।
আর ঐ পার্কের রাইডস গুলো অনেক রিস্কি বাচ্চারা প্রায় অসুস্থ হয়ে পড়ে ।
বাহ ফারহানের বাচ্চা বাহহ আমার সুখ তোর সহ্য হয় না, তাই না ।
সুন্দর ভাবে আমার যাওয়া কেন্সেল হয়ে গেলো ।
তাহলেই বলুন এই ভিন গ্রহের প্রানী আমার জীবনে কতোটা বাজিয়ে দিচ্ছে ।
ভাবনার ছেদ কেটে বড় মার দেওয়া শপিং ব্যাগ টা খুললাম ।
ও মাই গড এতো সুন্দর গ্রাউন ।
জাম রঙের মধ্যে হালকা ক্রিম কালারের কম্বিনেশনে অসাধারণ একটা গ্রাউন ।
সাথে মেসিং জুয়েলারি আর জুতো ।
উফফফ মনটা পুরো ভরে গেল ।
দুপুরের সমস্ত ঘটনা মন থেকে ঝেড়ে ফেলে রেডি হতে চলে গেলাম ।
________________

[ আসসালামুআলাই রির্ডাস । আশা করি মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে সবাই ভালো আছেন। আমার এই গল্প টা শেষ হলে কয়েকটি অনুগল্প দেওয়ার ইচ্ছে আছে । তার জন্য আপনাদের রেসপন্স ও তো দেখতে হবে ।
রেসপন্স ভালো না হলে একজন রাইটারের গল্প লেখায় আগ্রহ চলে যায় ।
আপনাদের রেসপন্স আশা করছি ।
দয়া করে কমেন্ট করে জানাবেন গল্প টি কেমন হচ্ছে ।
ভুল ত্রুটি হলে ধরিয়ে দিবেন ।
কেউ বাজে মন্তব্য করবেন না প্লিজ ।
আর আমার লেখা গল্প পেতে পেজ এ লাইক আর বন্ধুদের ইনভাইট দিয়ে পাশে থাকবেন ]

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাপ করবেন ।

💜 হ্যাপি রিডিং 💜

চলবে
ফাতেমা তুজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here