#স্বর্ণাভ_সুখানুভূতি। (পর্ব-৮)
আফিয়া খোন্দকার আপ্পিতা।
আলতো হাতে ফরিদার মাথায় তেল মালিশ করছে মুশরাফা। ফরিদা মেঝে বসে ড্রেসিংটেবিলের আয়নায় মুশরাফাকে পরখ করছে। দু’দিন হয়ে গেল, অথচ মুশরাফার কোন হেলদোল নেই। না সে বিষন্ন, আর না সে আনন্দিত। মুশরাফার চেহারায় কোন পরিবর্তন নেই, সে একবারেই স্বাভাবিক। এদিকে ফরিদার চিন্তার অন্ত নেই। ভাগ্নীর উত্তর কী হবে ভাবতে ভাবতে চোখের নিচে কালি পড়েছে। সকালেই অনিক ফোন দিয়েছে উত্তর জানার জন্য। তিনি রাতে জানাবেন বলেছেন। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নেমেছে সেই ক্ষণে। এখনো উত্তর জানা হয়নি। কিছুক্ষণ পর হয়তো অনিকের ফোন আবারও আসবে, তখন তো ভালোমন্দ একটা জানাতে হবে। উত্তর জানাটা জুরুরি। ফরিদা নড়েচড়ে বসলেন। তারপর বললেন,
‘দু’দিন কিন্তু হয়ে গেছে।’
মুশরাফা তেলের বোতল থেকে হাতের তালুতে তেল নিচ্ছিল। মামীর কথায় থেমে গেল। আয়নার মামীর দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ আমার ভাবনায় ছিল ব্যাপারটা।’
ফরিদা খুশি হলেন। তিনি ভাবেছেন, ব্যাপারটা মুশরাফার মাথা থেকে সরে গেছে। আগ্রহী গলায় প্রশ্ন করলেন,
‘কী সিদ্ধান্ত নিলি? জাওয়াদকে বিয়ে করবি?’
মুশরাফা তৎক্ষনাৎ উত্তর দিল না। ফরিদার থেকে চোখ সরিয়ে তেল মালিশে মন দিল। এক ফাঁকে বলল,
‘বিয়েটা কিন্তু একবারে ঘরোয়াভাবে হবে মামী। বেশি ভিড়ভাট্টা যাতে না হয়। তুমি আগে কথা বলে নিবে। ‘
মুশরাফার পরোক্ষ কথার মাঝে উত্তর খুঁজে পেলেন ফরিদা। তড়িৎ ঘাড় ঘুরিয়ে পিছু ফিরলেন । খুশির ঝিলিক তুলছে তার চেহারায়। জানান দিচ্ছে আনন্দের মাত্রা কতখানি। উৎফুল্লতার সাথে বললেন,
‘তুই সত্যি জাওয়াদকে বিয়ে করবি?’
মুশরাফা এক পলক তাকাল মামীর দিকে। চোখে চোখ পড়তেই একরাশ অস্বস্তি এসে গা ছুঁলো। তৎক্ষনাৎ চোখ ফেরাল। তারপর মৃদু হাসল। তার হাসি যেন কত কী বলে দিল! ফরিদা উঠে দাঁড়ালেন। খুশিতে আত্মহারা হয়ে বললেন,
‘আমি এখনই তোর মামাকে গিয়ে বলছি। ‘
ঝড়ের বেগে নিজের রুমের দিকে ছুটলেন ফরিদা। খানিক আগেই অফিস থেকে ফিরেছেন নাজমুল সাহেব। ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় এলিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন। ফরিদা গিয়ে স্বামীকে সুখবর দিলেন। নাজমুল সাহেবকে ও খুশি দেখাল। অনিককে সুসংবাদ জানালেন। এবার দুই পরিবারের বিয়ে সমন্ধীয় আলাপে বসার আহ্বান করলেন। অনিক পরদিন কোন রেস্টুরেন্টে বিয়ের ফর্দনামা নিয়ে বসার আমন্ত্রণ জানাল।
পরদিন দুই পক্ষের গুরুজন বসার কথা। নাজমুল সাহেব তৈরি হয়ে বেরুনোর সময় মুশরাফাকে ডাকলেন,
‘রাফা, এদিকে আয় তো?’
মুশরাফা রুমে থেকে বেরিয়ে এলো। মামার কাছে দাঁড়িয়ে বলল,
‘ডাকছিলে, মামা?’
নাজমুল সাহেব ইতস্ততবোধ করলেন পরবর্তী কথাটা বলতে গিয়ে,
‘আমি যাচ্ছি পাত্রপক্ষের সাথে বিয়ের পাঁকা কথা বলতে। তোর কোন দাবিদাওয়া আছে? বিয়ে, কাপড়, গহনা, মোহরানা সমন্ধীয় ব্যাপারে?’
মুশরাফা উত্তর দিতে একটু ও ইতস্ততবোধ করল না। নির্দ্বিধায় বলল,
‘ প্রথমত, বিয়েটা একবারে সাদামাটাভাবে হবে। জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান করে টাকা অপচয় করা যাবে না। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যে বিয়েতে খরচ বেশি হয়, সে বিয়েতে সুখ কম হয়। এখানেই সুখটাই মূখ্য। দুই পরিবারের মানুষ থাকবে, সুন্নতি পদ্ধতিতে বিয়ে হবে। আর কাপড়, গহনা, এসবে আমার কোন আক্ষেপ নেই। খুশিমনে তারা যতটুকু দেয়, তাই যথেষ্ট। ‘
‘ তারা যদি বলে গহনা দিবে না, তবে? স্বর্ণ গহনা ছাড়া বিয়ে হয়?’ ফোঁড়ন কাটলেন নাজমুল সাহেব। মুশরাফা হেসে বলল,
‘গহনা কি সুখ আনে? আনে না। ধরো, স্বর্ণ গহনা দেয়ার সামর্থ নেই তাদের। তারপর ও তুমি জোর করলে, তারা রাজিও হলো। কোনমতে ম্যানেজ করে, ভরি ভরি স্বর্ণালংকার দিল। তুমি খুশিমনে মেয়ে বিয়ে দিলে। বিয়ের পরদিন যদি তারা সোনার গহনা বিক্রি করে দেয়, তখন? বিয়েতে পাত্রীপক্ষের চাপে লক্ষ টাকার কাপড় কিনল, কিন্তু বিয়ের পর দেখা গেল, স্বামী স্ত্রীকে হাজার টাকার একটা কাপড় দিতেও হিমসিম খাচ্ছে, এক কাপড়ে বছর চালাতে হচ্ছে। তখন?
স্বর্ণ গহনা এসব শুধু লোক দেখানো মাত্র। যাতে মানুষকে রসিয়ে বলা যায়, আমার মেয়ের বিয়েতে, জামাই এত ভরি গহনা দিয়েছে, লক্ষ টাকার কাপড় দিয়েছে। অনেক ভালো বিয়ে দিয়েছি। এ ছাড়া আর কিছুই নয়। ওই লক্ষ টাকার স্বর্ণালংকার, কাপড় চোপড় কি পরে পরা হয়? হয়না বললেই চলে।
এটা মূলত, একদিনের শো-অফ। একদিনের লোক দেখানোর জন্য পাত্রপক্ষকে এত চাপ দিতে হবে কেন? পাত্রী পক্ষের কাছে যৌতুক চাওয়া যেমন অন্যায়, পাত্রের সামর্থ না থাকার পর ও ভরি ভরি অলংকার, কাপড়চোপড় তারউপর চাপিয়ে দেয়াটাও তেমন অন্যায়। স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব স্বামীর কাধে। তিনি তার সামর্থ্য অনুযায়ী স্ত্রীকে যেভাবে সাজিয়ে নেন সেভাবে খুশি থাকা উচিত। আমি তাতেই খুশি। তুমি এতে কোন প্রকার চাপ দিও না।’
নাজমুল সাহেব অবাক চোখে চেয়ে রইলেন ভাগ্নীর দিকে। আজকালকার যুগে মেয়েরা বিয়ে নিয়ে কত স্বপ্ন বুনে। সেই স্বপ্নের দাম কোটি টাকা। পাত্রীপক্ষের দাবি মানতে গিয়ে পাত্রের জামানো টাকা শেষ হয়ে যায়, তাও পূরণ হয় না। লক্ষ টাকার লেহেঙ্গা, বেনারসি, ব্রান্ডেড কসমেটিকস, ভরি ভরি সোনার গহনা এসব না হলে বিয়েই হয়না যেন। পাত্রী আগেই পাত্রের সাথে কথা বলে সব ঠিক করে নেয়। একটা বিয়ের পিছনে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে যায়। তাও পাত্রীপক্ষ সন্তুষ্ট হয় না। খুঁত ধরে, বিয়ের শাড়ির বাজেট যেন কম হলো, গলার শীতা হারটা আরেকটু লম্বা হলে ভালো হতো, পাত্রপক্ষ দেখি কিপটে একটা চোকার ও দিল না।
কখনো কখনো পাত্রপক্ষকে ঋণগ্রস্ত ও হতে হয়। পাত্রী কিংবা পাত্রী পক্ষ ওসবে চোখ দেয় না। বিয়ে তো একবারেই হয়। একটু জাঁকজমকপূর্ণ না হলে হয়?
কিন্তু রাফা এ যুগের মেয়ে হয়েও সব ছেড়ে দিচ্ছে! কী আশ্চর্য! ছাড়ার পেছনে আবার কী সুন্দর যুক্তি দাঁড় করিয়েছে! আসোলেই তো। বিয়েতে পাত্রীক্ষের কষ্টগুলো হাইলাইট করা হয়, কিন্তু একটা বিয়ের পিছনে একটা পাত্রকে কতটা ব্যয় করতে হয়, কয়েকমাস আগ থেকে খেয়ে না খেয়ে কত কষ্ট করে অর্থ আয় করতে হয়, জোগাড় করতে হয় । পাত্রী পক্ষ থেকে তাদের খরচটা হয় দিগুন। কিন্তু এটা কেউ হাইলাইট করেনা। সবাই পাত্রীর, পাত্রীর বাবার ইমোশনকে প্রাধান্য দেয়। কেউ পাত্রের বিয়ের পেছনে বিহাইন্ড দ্যা সিন এ চোখ রাখে না।
সমাজের আর সব মানুষের মতো নাজমুল সাহেবের ভাবনাও এক ছিল। আজ ভাগ্নির কথা তার মস্তিষ্কে ও কিছু কথা আটকাল। ধারণা বদলালো। এভাবে ভাবা হয়নি কখনো। তিনি প্রসন্ন হাসলেন। প্রশ্ন করলেন,
‘আর দেনমোহর? সেটা ও ধরব না?’
মুশরাফা ধীর স্বরে বলল,
“দেনমোহর ধরবে। তবে ফিক্সড না। এখানেও পাত্রপক্ষকে চাপ দেয়া যাবে না। প্রথমে পাত্রের সাথে কথা বলে নিবে একান্তে। তাকে জিজ্ঞেস করবে, ‘তুমি কী পরিমাণ মোহরানা নগদ দেয়ার সামর্থ্য রাখো।’ তিনি তার সামর্থ্য অনুযায়ী যে অংকটা বলবেন, তাই ফর্দনামায় দেনমোহর হিসেবে লিখবে। ‘
নাজমুল সাহেব ভ্রু কুঁচকালেন,
‘ সমাজে দেহমোহরকে বিয়ের খুটি হিসেবে ধরা হয়। তাই পাত্রীপক্ষ জোরগলায় লাখ থেকে কোটি টাকার অংকে গিয়ে দাঁড়ান। তুই কম বললি কেন? ‘
মুশরাফা উত্তরে বলল,
‘এটা আমাদের সমাজের ভুল ধারণা। একটা মেয়ে বিয়ে দেয়ার সময় মেয়ের বাবা ভাবেন, লাখ লাখ টাকা দেনমোহর ধরলে, ছেলে কখনো মেয়েকে ডিভোর্স দেয়ার কথা ভাববে না। দেনমোহরের বলেই বিয়ে টিকে থাকবে। তাই তারা জোরপূর্বক বিশালসংখ্যার মোহর চাপিয়ে দেয় পাত্রপক্ষের উপর। তারপর ফলাফল দেখা যায়, বিয়ের পর স্বামী দেনমোহর তো দেয়ই না, উলটো ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে মাফ চেয়ে নেয়।
ইসলামে, তালাকের সাথে দেনমোহরের কোন সংযোগ দেখা যায়নি। যে বিয়ে টিকে থাকার তা দেনমোহর ব্যতীত টিকে থাকবে, যা ভেঙে যাওয়ার তা দেনমোহর-সমেত ভেঙে যাবে। দেনমোহর কখনো তালাক আটকাতে পারেনা। এটা ভুল ধারনা।
মূলত, আমাদের সমাজ ‘দেনমোহর’ এর মানেটাই বুঝে না। দেনমোহর হলো,বিয়ের একটা অবশ্যম্ভাবী শর্ত। যা বর কতৃক কনেকে নগদে প্রদান করা হয়। এটা স্ত্রীর প্রতি কোন করুণা নয়, এটা স্ত্রীর অধিকার। ইসলাম বলে, বরের সামর্থ্য অনুযায়ী দেনমোহর ধার্য্য করতে, যা সে স্ত্রীকে স্পর্শের আগে নগদে দিয়ে দিতে পারে। এই টাকাতে স্ত্রী ছাড়া কারো কোন হক নেই, স্ত্রীর বাবা মায়ের ও না। স্ত্রী তার ইচ্ছেমাফিক খরচ করতে পারবে। চাইলেই সে তার পরিবারকে দিতে পারবে, না চাইলে কেউ জোর করতে পারবেনা। স্বর্ণ যদি মোহরানায় অন্তর্ভুক্ত হয়, তবে ওই গহনায় কারো কোন প্রকার অধিকার নেই। স্বামী শ্বাশুড়ি কেউ ওই গহনায় হাত দিতে পারবে না। আমাদের সমাজে দেনমোহরে অন্তর্ভুক্ত গহনা স্বামী শ্বাশুড়ি নিয়ে যায়, জোরগলায় বলে, আমাদের জিনিস আমরা নিয়েছে, এতে তোমার কোন অধিকার নেই। মূলত, এটা অন্যায়।
যাক গে, সে অন্যকথা। আমার কথা হলো, দেনমোহর ধার্য্যের ক্ষেত্রে কোন উনাকে কোন প্রকার চাপ দিবে না। আমি চাই বিয়ের সকল ধাপে ইসলামি রীতিনীতি মেনে চলা হোক। ‘
নাজমুল সাহেব মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনে গেলেন। বিস্ময়, মুগ্ধতা ঘিরে ধরেছে তাকে। এই মেয়ের চিন্তা ভাবনা এত গভীর কেন? আর এত সুন্দরইবা কী করে! এতগুলো বছর পেরিয়ে এসে ও তিনি তো কখনো এভাবে ভেবে দেখেন নি। তার ভাবনায় এলো না কেন ব্যাপার গুলো? তিনি ও তো বড়োমেয়ে ফাবিহার বিয়েতে মোটা অংকের মোহরানা ধরেছিলেন। ফাবিহার শ্বশুর বারবার কমাতে চেয়েছেন। বলেছেন, আমার ছেলের একক আর্থিক অবস্থা এতটা উঁচু নয়। কিন্তু নাজমুল সাহেব শুনেননি। গো ধরে নিজের কথা মানিয়েই ছেড়েছেন। ফাবিহার স্বামী জিদান কি মোহরানা পরিশোধ করেছে? ফাবিহা তো কিছু বলল না, করেনি নিশ্চয়ই । এতগুলো হাতে পেলে অবশ্যই তাকে বলতো। এই মুহুর্তে এসে তিনি বুঝতে পারলেন, জিদানের প্রতি তিনি অন্যায় করে ফেলেছেন, মেয়ের প্রতিও। মেয়ের হক নষ্ট করেছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে এর জন্য শান্তি দিবেন! অজানা ভয় হলো নাজমুল সাহেবের। সে সাথে ভাগ্নীর জন্য গর্ববোধ ও হলো। ভাগ্নীর মাথায় হাত রাখলেন। মন থেকে দোয়া এলো, তোর জীবনটা সুখে ভরে যাক। হেসে বললেন,
‘তুই যেভাবে চাস সেভাবেই হবে।’
খুশিমনে বাসা থেকে বের হলেন নাজমুল সাহেব। যথারীতি দুই পক্ষের গুরুজন বসলেন রেস্টুরেন্টে। বেশ কয়েকবার ফোন দেয়ার পর ও মুশরাফার বাবা ভাই কেউ এলো না। বাবা তার দুই ভাইকে পাঠালেন। দায়িত্ব দিলেন কোনমতে ম্যানেজ করার। বরপক্ষের মুরুব্বিরা এসেই পাত্রীর বাবাকে খুঁজল। মুশরাফার বড়োচাচা হাফিজুর রহমান অযুহাত দিলেন, মুশরাফার ভাই মিদহাদ দেশের বাইরে আছে। আর বাবা মেয়ের বিয়ের চিন্তায় আসার আগে হুট করেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। শরীর দুর্বলতার কারণে আসতে পারেননি। তিনি চাননি তার জন্য বিয়ের কাজ আটকে থাকুক, তাই তার ভাইদের পাঠিয়েছেন।
। জাওয়াদের বাবা জয়নাল আবেদীন দুঃখী গলায় প্রস্তাব রাখলেন, কদিন বাদে আলাপে বসার। এতে মুশরাফার ছোটো চাচা সাজিদুর রহমান প্রস্তাব গ্রহন না করে আজই ফর্দনামা সেরে ফেলার জোর দেন। অনিচ্ছা সত্ত্বেও সায় জানান জয়নাল আবেদীন। মেয়ের বাবা অনুপস্থিতিতে বিয়ের কথা আগাতে বাধছে তার, তবুও কী করা। পাত্রীপক্ষের মুরুব্বিদের জোরাজুরিতে আগাতে হলো।
জাওয়াদ আসেনি। অনিক এসেছে। নাজমুল সাহেব অনিকের সাথে মোহরানা বিষয়ক আলাপ করলেন। মুশরাফার মতামত জানালেন। সেই সাথে বাকি বিষয় আশয় ও। অনিক জাওয়াদকে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করল, দেহমোহর পরিমাণ কত হবে? সে নগদে দিতে পারবে কি-না। জাওয়াদ খানিক সময় নিয়ে তার বর্তমান একক অবস্থার কথা জানাল। সেই সাথে বন্ধুকে বললো, তার বর্তমান অবস্থা অনুযায়ী নগদে উপর পঞ্চাশ হাজার টাকাই দেয়ার মতো সামর্থ্য আছে তার। বাবার অনেক টাকা থাকলেও তার কাছে খুব বেশি টাকা নেই। দেহমোহর পঞ্চাশ হাজার লিখা হলো। দেহমোহরে কাপড়চোপড়, গহনা, কসমেটিকস যুক্ত করা হলো না। এটা স্বামী বা তার পরিবার থেকে কনের জন্য উপহার স্বরূপ বিধায় এটাকে দেহমোহরের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। নাজমুল সাহেব এসব ব্যাপারে কোন চাপ দিলেন না। জয়নাল আবেদীনের উদ্দেশ্যে বললেন,
‘ স্ত্রীর অন্ন, বস্ত্র,বাসস্থানের ব্যবস্থা করা স্বামীর দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জাওয়াদ তার স্ত্রীর জন্য যে বস্ত্রের ব্যবস্থা করে দিবে, তাতে আমাদের কোন আপত্তি থাকবে না। বিষয়টা জাওয়াদ এবং আপনাদের উপর ছেড়ে দিলাম। আমাদের কোন দাবিদাওয়া নেই।’
জয়নাল আবেদীন হেসে বললেন,
‘আপনার ভাগ্নী আমার মেয়ে হয়ে যাবে। আমি আমার মেয়েকে যেভাবে সাজিয়ে বিয়ে দিয়েছি, পুত্রবধূকে ও সেভাবে সাজিয়ে আনব। ব্যাপারটা যেহেতু আমাদের উপর ছেড়ে দিয়েছেন, তবে আমরা নিজ দায়িত্ব ভালোভাবে সবটা সামলে নিব। আশা করি অভিযোগের সুযোগ হবে না আপনাদের।’
নাজমুল সাহেব ও হেসে সায় জানালেন। বিয়ে বিষয়ক সকল আচার অনুষ্ঠান ঘরোয়াভাবে করার প্রস্তাব রাখলেন। যেহেতু মেয়ের ধার্মিকতা সম্পর্কে জয়নাল আবেদীন সাহেব আগেই শুনেছেন, সেহেতু তিনি খুব একটা অবাক হলেন না। স্বাভাবিকভাবেই প্রস্তাব গ্রহন করলেন। আলাপচারিতা সেরে বিয়ের তারিখ ফেললেন সপ্তাহ খানেক পর, অর্থ্যাৎ আগামী শুক্রবার। সাদামাটা ভাবে মসজিদে বিয়ে সারা হবে।
চলবে….
বিঃদ্রঃ -১ টুকটাক অসুস্থতার কারণে হাসপাতালের চক্কর কাটতে হয়েছে গেলো কদিন ধরে। এসবের মাঝে লেখালিখির সময় হয়ে উঠেনি। এবার নিয়মিত পাবেন গল্প ইনশা আল্লাহ।
বিঃদ্রঃ-২ সেহরির পর দেয়ার কথা ছিল। দিতে পারিনি, লিখতে বসে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
বিঃদ্রঃ -৩ বেশ কদিন গ্যাপ দেয়ার কারণে লেখা খাপছাড়া হয়েছে। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।