#স্মৃতিতে_তোমার_বন্দনা
#পর্ব_৩১
#Saji_Afroz
.
.
সকাল দশটা হয়ে গেল ।
শফিউল আহম্মেদ বিছানার উপরে বসে বই পড়ছেন ।
রুমের ভেতরে এসে সাফিনা আহম্মেদ বললেন-
কি ব্যাপার বলো তো? আজ আমাদের বিবাহ বার্ষিকী কিন্তু পরশ আমাদের একটা উইশও করলো না ।
-তোমার বড় ছেলেও করেনি ।
-তার কাছে এটা আমি আশাও করিনা । এটা তুমি জানো ।
-হুম ।
-আজ ছোঁয়াকে সে মনের কথা জানাবে । তাই হয়তো ভুলে গিয়েছে । তাইনা?
-জেলাস?
-আমি?
-হু ।
-কেনো?
-এই যে তোমার ছেলে ছোঁয়ার জন্য আমাদের বিবাহ বার্ষিকীর কথা ভুলে গিয়েছে ।
-মোটেও জেলাস নই আমি । আজ ওর জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন । ওদিকেই মন থাকা স্বাভাবিক ।
-তোমার ছেলে আমাদের সারপ্রাইজ দিবে বলে উইশ করেনি ।
-কি বলছো?
-সত্যি বলছি । সকালেই তাকে ফোনে কেক অর্ডার করতে শুনেছি ।
-ছোঁয়ার জন্য হতে পারে ।
-না, এটা আমাদের জন্যই। আমাদের নাম লিখতে বলেছে ।
.
মুখে বিশ্বজয়ের হাসি ফুটালেন সাফিনা আহম্মেদ । শফিউল আহম্মেদ বললেন-
পরশ মোটেও আমাদের বড় ছেলের মত নয় সাফিনা । তার কাছে ভালোবাসার সব মানুষের গুরুত্ব আছে ।
.
.
নয়নতারা কে রান্নার সব দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে বাড়ির বাইরে এলো ছোঁয়া । পরশ এসে বলল-
রেডি তুমি?
-হ্যাঁ । কলেজের নাম করে চলে যাচ্ছি ।
-আমার জন্য মিথ্যে বলেছো তোমার বান্ধবীর কাছে?
-উহু! তার জন্যই বলেছি । তাকেই তো সারপ্রাইজ দিব । নিজের বিয়ে বার্ষিকীতে ছেলের হবু বউ কেও দেখবে । আজ অনেক খুশি হবেন আন্টি ।
-হুম ।
-কি হুম! চলুন এবার ।
.
প্রথমেই একটা কেক এর দোকানে এলো তারা । পরশ বলল-
তার জন্য একটা কেক অর্ডার করো । তোমার পছন্দ মত । না মানে আমি তো এসব বুঝিনা তাই ।
-কার জন্য?
-যাকে আজ প্রপোজ করব ।
-আন্টি আঙ্কেলের টা আপনি করবেন?
-করে ফেলেছি সেটা আগেই ।
.
ছোঁয়া লাভ শেইপের একটি কেক পছন্দ করলো । পরশকে দেখিয়ে বলল-
এটা ঠিক আছে?
-তুমি বললে আছে ।
-এখানে আই লাভ ইউ লিখে দিলে একদম পারফেক্ট ।
.
ছোঁয়ার মুখে ‘আই লাভ ইউ’ শুনে পরশের অজানা এক ভালোলাগা কাজ করছে । ইশ! কখন যে তার মুখ থেকে কথাটি নিজের জন্য শুনতে পাবে সে…
কেকটি অর্ডার করে দুজনে এলো শপিংমলে । পরশ বলল-
আজ আমরা সবাই একই রঙের জামা পরবো ।
-বেশ তো! ভালো লাগবে তিন জনকেই ।
-তিন না, ছজন বলো ।
-মানে?
-মানে তোমরাও ।
-আমরা কেনো?
-তোমরাও আমাদের ফ্যামিলি মেম্বার এখন ।
-কিন্তু…
-কোনো কিন্তু নয় । সবার জন্য ড্রেস চয়েস করবা তুমি । এসব আমার কর্ম নয় ।
-ঠিক আছে । আমাদের টাকা আমি দিব ।
-মোটেও না । আমার পক্ষ থেকে সবার জন্য আজ এসব উপহার থাকবে । প্লিজ এমন করোনা ছোঁয়া ।
.
খানিকক্ষণ ভেবে ছোঁয়া বলল-
ঠিক আছে ।
-এমন একটা কালার ঠিক করো, যেটায় সবাইকে মানাবে ।
-উম্ম… সাদা? আমার মতে সাদা সবাইকে মানায় । কি বলেন?
-হ্যাঁ খারাপ না ।
-তাছাড়া আরো আছে পেস্ট, ক্রিম, ব্ল্যাক কালার সব বয়সীদের মানায় ।
-ঠিক আছে । তোমার যা ভালো লাগে নাও ।
-হ্যাঁ চলুন । যেটা ভালো লাগে সেটা নেওয়া যাবে ।
.
.
পেঁয়াজের খোসা ছাড়াতে ব্যস্ত নয়নতারা । এমন সময় রাফসানের ফোন আসলো । স্ক্রিনে তার নামটি দেখে সে তাড়াহুড়ো করে রিসিভ করে বলল-
কেমন আছো তুমি?
-ভালো । তুমি কেমন আছো?
-আছি ভালো ।
-ছোঁয়া কোথায়?
.
সত্যিটা লুকিয়ে নয়নতারা বলল-
কলেজে ।
-ওহ । রাদিব ভাইয়া দেশে ফিরছে কদিন বাদেই ।
.
কথাটি শুনে নয়নতারার বুকটা ধুক করে উঠলো ।
রাফসান বলল-
আন্টিকে বলো প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বিয়ের । ভাইয়া দেশে ফেরার সাথে সাথেই কিন্তু বিয়ের আয়োজন শুরু হয়ে যাবে ।
-হুম ।
-কদিন বাদেই ছোঁয়াকে নিজের করে পাবো ভাবলেই মনে এক ভালোলাগা কাজ করে নয়ন । এত বেশি ভালোবাসি কেন ওকে বলতে পারো?
.
নিশ্চুপ নয়নতারা । রাফসান বলল-
ভাইয়া ফোন করেছে তোমাকে?
-নাহ ।
-স্বাভাবিক । সে আমার মত মিশুক নয় । যাক নিউজটা আমিই দিয়ে দিলাম । এবার ফেসিয়াল টেসিয়াল করাতে চায়লে করাতে পারো, হবু বর ফিরছে এতদিন পর!
.
হাসতে থাকলো রাফসান । নয়নতারা বলল-
আমার চেহারা এতটায় খারাপ যে ফেসিয়াল করতে হবে আমায়?
-আমি কিন্তু অন্য মাইন্ডে বলিনি কথাটি ।
-কখন আসবেন তিনি?
-দুদিন পরে । আমিও চলে আসব । দেখা হবে তাড়াতাড়ি ।
-ঠিক আছে ।
.
কথা বলা শেষে ফোন রাখার পর নিজের কাজে মন দিলো নয়নতারা । কিন্তু চোখ বেয়ে পড়ছে পানি । কষ্ট যে চেপে রাখা যাচ্ছেনা আর!
তার মা এসে বলল-
কে ফোন দিয়েছে?
.
হাতের পিঠে চোখ মুছতে মুছতে বলল-
রাফসান । দুদিন পর রাদিব আসবে জানালো ।
-তাই নাকি!
-হু ।
.
মেয়ের দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন-
তুই কাঁদছিস?
-না তো! পেঁয়াজের জন্য…
-খোসা ছাড়ানোর সময়ও পানি পড়ে তোর চোখ থেকে? জানতাম না তো…
-এই পেঁয়াজ গুলোই এমন ।
-ওহ ।
.
তার মা চলে গেলে ডুকরে কেঁদে উঠলো সে । আর কত মিথ্যে বলতে হবে এভাবে তাকে!
.
.
কেনাকাটা শেষে বাইরে বেরুচ্ছে ছোঁয়া ও পরশ । হঠাৎ ছোঁয়ার একটি ছেলের সাথে ধাক্কা লাগলো । সে পেছনে যেতে যেতে বলল-
সরি সরি! আমি ইচ্ছে করে করিনি ।
.
ছেলেটি ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বলল-
ইচ্ছে করেই করেছো তুমি আমার সাথে এমন ।
.
ছেলেটির চেহারার দিকে না তাকালেও কণ্ঠ শুনে তাকে চিনলো ছোঁয়া । তার দিকে তাকাতে সাহস হচ্ছেনা তার । তবুও নিজের মনকে শান্তনা দেয়ার জন্য তাকালো সে । হ্যাঁ এই ছেলেটি সেই ছেলে, যাকে সে ভালোবাসে । তুষার….
.
পরশ বিরক্তি ভরা কণ্ঠে বলল-
ইচ্ছে করে একটি মেয়ে কোনো ছেলেকে ধাক্কা দিবে বলে মনেহয় আপনার?
.
পরশের কথায় গুরুত্ব দিলো না তুষার ।
ছোঁয়ার চোখের দিকে একবার তাকিয়ে , দ্রুতপায়ে হেঁটে চলে গেলো সে । তার পথের দিকে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে রইল ছোঁয়া ।
পরশ বলল-
আমার কেনো যেন মনেহচ্ছে তুমি ঠিক নেই?
.
নিশ্চুপ ছোঁয়া । পরশ আবারো একই প্রশ্ন করলে সে বলল-
হু নেই ।
-ছেলেটি কে চিনো তুমি?
.
মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো ছোঁয়া । পরশ বলল-
কে?
-যার জন্য রাফসানকে বিয়ে করতে পারছিনা আমি ।
-মানে?
-ও তুষার । ওকে ভালোবাসি আমি ।
.
চলবে