স্মৃতির দেয়াল🍁
#পর্ব_১৭
Writer -Afnan Lara
.
লাস্ট বার বলতেছি আসবা??
.
আসবো না,আপনার মায়ের ও জানা উচিত তার ছেলে প্রাক্তনের প্রেমে পাগল হয়ে গেছে,শপিংমলে না গিয়ে পাবনা মেন্টাল হসপিটালে যাওয়া উচিত এখন
.
মা আর বাবা সবেমাত্র ফিরেছেন বাসায়,গেট দিয়ে ঢুকেই দেখলেন নীল আর মুন দুজন মিলে কথা বলছে,একজন জিপের কাছে আরেকজন বারান্দায় থেকে
.
কিরে?তোরা এখনও শপিংয়ে যাস নাই?
.
না আসলে…
.
কি করে যাব আন্টি,হিয়া এসেছিলো তার বরকে নিয়ে
.
মা চোখটা বড় করলেন তারপর বললেন”এখন কি চলে গেছে?”
.
হুমম
.
মা মুনের দিকে তাকাতেই দেখলেন মুন গালটা ফুলিয়ে রেখেছে
হিয়াকে উনি ভালোই জানেন,তবে এভাবে নীলের বিয়ের পরেই হুট করে দেখতে আসাটাকে তিনি স্বাভাবিক নেননি
তিনি নীলের দিকে এক নজর চেয়ে ভেতরে চলে গেলেন
.
নীলের রাগ হলো মুনের এমন ঘাউড়ামি দেখে,তাই সে চলে গেলো অফিসে
মুন মুখটা ভার করে বসে আছে বিছানায়,আজকের দিনটাই খারাপ করে দিলো
একটু পর আবারও গাড়ীর আওয়াজ পেয়েও মুন উঁকি দিলো না,তার মনটা বড্ড খারাপ,কোনো কিছুতে মুড নেই
হই হই রই রই শুনে তার কেমন জানি ঘটকা লাগলো,উঠবে বিছানা থেকে ঠিক ঐসময়ে তার রুমটা মূহুর্তেই ভর্তি হয়ে গেলো মানুষে
তিনজন মহিলা,সবগুলো ফকফকা ফর্সা,একজনের পরনে সেলোয়ার কামিজ,আর দুজনের পরনে শাড়ী
তিনজনেই মুখে হাসি ফুটিয়ে মুনের দিকে চেয়ে আছেন
মুনের মাথায় আসলো এরা হয়ত নীলের ভাবী
হকচকিয়ে উঠে গিয়ে সালাম দিলো সে
একজন এগিয়ে এসে মুনের থুতনি ধরে বললেন”মাশাল্লাহ”
.
আরেকজন কাছে এসে বললেন”সবেমাত্র কার থেকে নেমেছি,বাসায় ঢুকে সবার আগে তোমাকে দেখতে চলে এলাম”
.
বাকি যিনি ছিলেন তিনি বললেন”তা আমাদের দেবর কই??”
.
মুনের একটুও লজ্জা লাগছে না,তাও লজ্জা লজ্জা একটিং করে সে বললো”উনি তো অফিসে”
.
এ কদিন ছুটি নিলে কি হয়,যাই হোক,আমাকে চিনেছো?আমি হলাম তোমার বড় জা,,ঊর্মি
.
মুন মুচকি হেসে বাকিদের দিকেও তাকালো
সেলোয়ার পরা জন বললেন তিনি মেজো,,তার নাম মিশু,আর বাকিজন সেজো তার নাম পপি
সবার সাথে পরিচয় অধ্যায় শেষ করে মুন সবে হাঁপ ছাড়তে গেলো তার আগেই কাড়ি কাড়ি বাচ্চাকাচ্চায় নীলের রুম ভর্তি হয়ে গেলো,মানুষ কি কম ছিল নাকি,এত বাচ্চা দেখে মুনের মাথা চক্কর দিচ্ছে
মোট মিলিয়ে ৫/৬টা বাচ্চা,সবগুলো ছোট,শুধু একটা আছে চশমা পরা,মনে হয় ক্লাস সিক্স সেভেনের হবে
মা বুয়াকে নিয়ে নাস্তা আনতে আনতে সবাইকে ডাকলেন ডাইনিংয়ে
সবাই এক এক করে চলে যাচ্ছে,উর্মি ভাবী আমাকে বললেন”নতুন বউ মুখটা ওমন ছোট করে রেখেছো কেন?তুমি ছোট বউ তার মানে এই না যে মুখ ও এমন ছোট করে রাখবা”
.
মুন হাসার চেষ্টা করলো কিছুটা,,পপি ভাবী মুনের হাত ধরে বললেন”ঠিক আছে ঠিক আছে,অনেক লজ্জা পাওয়া হয়েছে এবার চলো নাস্তা করবে আমাদের সাথে”
.
সবাই মিলে মুনকে সোফার রুমে নিয়ে আসলেন,সেখানে নীলের তিনভাই বসে টিভি দেখছেন,তাদের দুজনের চেহারা অবিকল নীলের মতন,মুন এক ঝটকা খেয়ে গেলো
উর্মি আপু খিলখিল করে হেসে দিয়ে বললেন”কি?ঝটকা লাগলো??নিজের জামাইর মতন আরও দুজনকে দেখে??”
.
মুন অবাক হয়ে বললো”এটা কি করে হয়”
.
আমরাও জানি না,শুধু সেজো জন বাদে বাকি দুজনের চেহারা একদম আমাদের নীলের মতন,,নতুন কেউ আসলে মাথা গুলিয়ে ফেলে
.
মুন হেসে তাদের কাছে এগিয়ে গিয়ে সালাম করলো এক এক করে
সবাইকে সালাম করতে করতে মুন ওখানে এসে পড়া একজনকেও সালাম করে দিলো
পরে আরেক ঝটকা খেয়ে ব্রু কুঁচকে বললো”আরেকটা জমজ??”
.
সবাই একসাথে হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে মুনের কথা শুনে
কারণ শেষে যাকে মুন সলাম করেছে সে হলো নীল
নীলকে তার বড় ভাইয়া রিয়াদ জোর করে অফিস থেকে আনিয়েছে এখন
.
মুন দূরে সরে দাড়ালো,সে নীলকে বোঝালো যে সে খুব রেগে আছে
নীল মুনের দিকে এক নজর তাকিয়ে ভাইয়ার পাশে গিয়ে বসতেই ভাইয়ারা সব ওকে জড়িয়ে ধরলো এক এক করে
ভাইদের একজনের প্রতি আরেকজনের ভালোবাসা দেখে মুনের খুব ভালো লাগলো,ভাইদের সম্পর্ক এমনই হওয়া উচিত
.
নীল??এটা তুমি কি করলে??
.
পপি ভাবীর কথায় নীল তো ভয় পেয়ে গেলো,ঢোক গিলে বললো”কেন কি করলাম আমি?”
.
কি করলে সেটাই তো জানতে চাইছি,কি এমন করলে যে মুনতাহা মুখটা ছোট করে বসে ছিল রুমে??
.
নীল কিছু বলতে যাবে তার আগেই উর্মি ভাবী বললেন” আরে এসব আবার না জানার কি আছে,নিশ্চয় বিয়ের কদিন পুরোতে না পুরোতাে অফিসে গেছে বলে মুন রাগ করেছে,এই আর কি”
.
মা চায়ের ট্রে এনে বললেন”হুম উর্মি ঠিক বলেছে,তাই না নীল?”
.
নীল মাথা নাড়ালো,মুনের উপর প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে ওর,হিয়ার এখানে আসা নিয়ে কি সিনক্রিয়েট করে যাচ্ছে মুন,একজনে এক প্রশ্ন করছে আমাকে,ওরে এর জবাবদিহি করতে হবে,,এখন আপাতত চুপ থাকাই শ্রেয়
.
মুন ও রেগে আছে নীল ও রেগে আছে,এবার ঠিক কি হবে সেটা দেখার অপেক্ষা,বাচ্চাদের হইচইয়ে নীলের মাথা ব্যাথা হয়ে গেছে কিন্তু মুনের বেশ লাগছে,কারণ সে ছোট থেকেই এমন,বাচ্চাদের তার অনেক ভালো লাগে,নিজের বয়সি কারোর সাথে তার না মিললেও,নিজের চেয়ে ছোট বাবুদের সাথে খেলতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করত মুন,এখনও তাই,এতক্ষণ মুখটা ছোট করে রাখলেও সবাইকে এভাবে ছোটাছুটি করতে দেখে তার বেশ লাগছে
নীল চা খাওয়া শেষ দিয়ে বললো”আচ্ছা আমি আমার রুমে যাই ফ্রেশ হতে??”
.
হুম যা রেস্ট নে,তবে বিকালে সবাইকে যেন এক জায়গায় পাই,বাসার সামনের বাগানে টি টাইম হবে,সাথে অনেক গল্প
.
আচ্ছা ভাইয়া!
.
নীল মুনের দিকে তাকিয়ে ইশারা করে চলে গেলো
মুন বুঝতে পারলো যে নীল ওকে রুমে ডেকেছে কিন্তু তাও সে গেলো না
শেষে উর্মি ভাবী ঠেলে ওকে পাঠিয়ে দিলো,হাতে আবার দিয়েছে মিষ্টি পান,এটা নাকি নীলের খুব পছন্দ
মুন পান হাতে নিয়ে করিডোর দিকে যাচ্ছিলো
পান থেকে এত সুন্দর গ্রান আসছিলো দেখে মুন আর নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারলো না,গপ করে মুখে পুরে দিলো গোটা পানটা
আহা কি মিষ্টি,চিবাতে চিবাতে মুন দরজার সামনে এসে টোকা দিলো
নীল দরজা খুলে মুনকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই দেখলো মুন হাসতে হাসতে মাটিতে লুটোপুটি খাচ্ছদ,ফ্লোরে গড়াগড়ি করছে সে
নীল চোখ বড় করে বললো”মদ গাঁজা খেয়েছো নাকি?”
.
আরেহ না,আমি ওসব খাই না,হাহাহা
.
তাহলে এমন পাগলের মতন বিহেভ করছো কেন?
.
ভাবী আপনাকে পান দিতে বলেছিলো
.
আর তুমি সেটা খেয়ে নিছো?
.
হুম হুমম!! একদম ঠিক বলেছেন
.
নীল নিচু হয়ে মুনের হাত ধরে টেনে তুললো ওকে তারপর বাথরুমে নিয়ে গেলো সোজা
.
এখানে কেন?
.
বমি করো
.
কেন?
.
নীল মুনের গলা টিপে ধরে বললো”আমার এখন সেই মুড নেই যে তোমার বাচ্চামো সামলাবো,চুপচাপ বমি করার চেষ্টা করো,কি দরকার ছিলো আমার জন্য দেওয়া পানটা খাওয়ার??”
.
ভালোই তো হলো,আমার জায়গায় আপনি এরকম জর্দা আলা পান খেলে হিয়া হিয়া কইতে কইতে মরেই যেতেন,আর বমি নিজ থেকে কেমনে করে??
.
জানো না?
.
না
.
হা করো
.
না করবো না,আচ্ছা আমি ফাইন,বমি করতে হবে না,এমনিতেই একটু মাথা চক্কর কাটছিল,এবার ঠিক আছি
.
তাহলে বলো তুমি আমার ভাইয়া ভাবীরা আসছে তাদের সামনে মুখটা এমন ছোট করে রেখে কি বুঝাতে চাও??
.
বুঝাতে চাই আমি সুখী নাহ
.
তাহা আমি বুঝতেছি না তুমি হিয়া এসে যাওয়ার পর থেকে এমন বিহেভ কেন করছো??কি চাও তুমি?
.
আমি চাই আপনি সারাদিন আমার কানের কাছে হিয়া হিয়া বলা অফ দেন,আমার ভাল্লাগে না এসব
.
ফাইন,তাও আমার পরিবারের সামনে আমার উপরে থাকা রাগ দেখাবে না
আমি চাই না তারা আমাকে ভুল বুঝুক তোমার এসব বাচ্চামোর কারণে
.
আমি তো যাই করি তাই দোষ হয়ে যায়,আর ঐ হিয়া
.
চুপ!হিয়াকে নিয়ে আর একটা কথাও না
বললাম তো ওকে নিয়ে তোমার সাথে আর কিছু বলবো না তার পরেও ওকে টানছো কেন?
.
কেন টানবো না আমি??ঐ হিয়া আপু আমাকে বলেছে আপনি উনাকে কিস করেছিলেন যেটা কিনা সম্পূর্ণ মিথ্যা
আমার কথা হলো উনি এমনটা কেন বললেন
.
ও চায় আমার থেকে যেন তুমি দূরত্ব বজায় রাখো
.
মুন একটু এগিয়ে গিয়ে বললো”কেন???তার প্রাক্তনের প্রতি তার বিশ্বাস নাই??”
.
নীল আর কিছু বললো না চুপচাপ চলে গেলো রুমে
মুনের মনটা ভালো হতে চেয়েও হচ্ছে না,তার কেমন যেন সব ওলটপালট লাগছে
মন চাচ্ছে নীলের সাথে প্রানখুলে কথা বলতে,একটু হাসতে
এ্যাজ এ ফ্রেন্ড হলেও চলবে
কিন্তু তাদের সেসব কিছুই হচ্ছে না,দুজনে মাঝের দূরত্বটা যেন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে
এ ক্ষেত্রে কি করা উচিত আমার??হিয়ার কথা শুনলে নীল দূর্বল হয়ে পড়ে,হিয়াকে নিয়ে কোনে নেগেটিভ কথা তিনি সয্য করেন না এদিক দিয়ে আমাকেও ছাড়েন না
ছাড়েন না ঠিক আছে বুঝলাম,বউ হিসেবে একটু কেয়ার তো আশা করতেই পারি,বিয়ের এক সপ্তাহ ও হয়নি এখনও!!
.
মুন বাথরুম থেকে বের হয়ে নীলের দিকে তাকালো করুন দৃষ্টিতে
নীল মুখটা ভার করে গায়ে কাঁথা টেনে শুয়ে পড়েছে,বিড়বিড় করে বললো”আমাকে যেন কেউ ডিস্টার্ব না করে”
.
মুন রুম থেকে বের হতেই সামনে পড়লো উর্মি ভাবীর
উনি বললেন”কি গো?ঠোঁট লাল কেন??পান কে খেয়েছে?”
.
মুন মাথা চুলকিয়ে বললো”আমি,খুব ইচ্ছে হয়েছিলো”
.
হাহা,বেশ তো,,তা তোমার কি হয় বলোতো?বারবার মুখটা শুকনো করে রাখো কেন?
.
না তেমন কিছু না
.
আমার দেবর কই?
.
ঘুমায়
.
এখন??উফ!নীলের একটা অভ্যাস ও ঠিক হলো না,সব ট্যারাব্যাকা এখনও
.
মুন হেসে দিয়ে বললো”উনি নিজেই তো!”
.
আমি নিজেই তো????
.
কথাটা শুনে মুন পিছন ফিরে তাকালো,নীল দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
ওকে এসময়ে এখানে দেখে ভয়ে মুন এক দৌড় দিলো
.
নীল মুচকি হেসে চলে যেতে নিতেই উর্মি ভাবী ওকে থামালেন
.
কি ভাবী?
.
মুনের যত্ন নাও,আর কত মাথায় হিয়া ভূত নিয়ে ঘুরবে?এখন হিয়া নয়,মুন তোমার স্ত্রী
কথাটা মাথায় রাখো,এরকম সারাদিন নতুন বউয়ের মুখটা ছোট থাকা ভালো দেখায় না একটুও
.
ও সবটা জানে,আমি বলেছিলাম আমার থেকে এসব আশা না করতে তাও এসব আশা করে পরে না পেয়ে মুখটা এমন বাংলার পাঁচ করে রাখে
.
তো রাখবে না তো কি করবে? ও একটা মেয়ে,তোমার থেকে এসব সে আশা করতেই পারে
.
না পারে না,আমি আজও হিয়াকে ভালোবাসি,হিয়াও আমাকে ভালোবাসে,সাকিবকে এখনও মেনে নিতে পারলো না হিয়া
.
তোমরা যখন ঠিক করেই নিছো দুজন দুজনকে মরা পর্যন্ত ভালোবাসবে তখন বাকি দুটো মানুষের জীবন কেন নষ্ট করলে???
হিয়ার নাহয় হাতে ছিল না বিয়ের ব্যাপারটা,ওর বাবার কথা রাখতে বাধ্য হয়ে করেছিলো পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে
কিন্তু তুমি???তুমি তো শুনেছি মুনকে এক প্রকার জোর করে বিয়ে করেছো,তাহলে এখন এসব কেন?
.
ভাবী আমি আর এত স্ট্রেস নিতে পারবো না,আমি মুনের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য বিয়ে করেছি,দ্যাটস্ ইট!
চলবে♥