স্মৃতির দেয়াল🍁 পর্ব-১৮

0
1067

স্মৃতির দেয়াল🍁
#পর্ব_১৮
Writer -Afnan Lara
.
দায়িত্ব যে কেউ নিতে পারে তবে স্ত্রীর অধিকার একমাত্র স্বামীই দিতে পারে নীল
.
সেটা মুন কখনও পাবে না
.
কথাটা বলে নীল চলে গেলো তার রুমে
উর্মি ভাবী মন খারাপ করে নিজের রুমে ফিরে এসেছেন,,
নীলকে তিনি তার ছোট ভাইয়ের মতন দেখে,এখন মুন এসেছে তাকেও ছোট বোনের মতনই দেখবেন কিন্তু ওদের এরকম ভাব একটুও ভাল্লাগছে না,কেমন যেন সব থেকেও নেই!
.
মুন মায়ের রুমে এসে বসে আছে,মা আলমারি থেকে কিছু সুতির আর জর্জেটের শাড়ী বের করছেন এক এক করে,লাল নীল,সবুজ হলুদ কোনো রঙই বাদ রাখছেন না তিনি
মুন ভাবছে এসব বের করছেন কেন,সব ওকে দিয়ে দিবে নাকি
এটা ভাবতে ভাবতেই ওর ভাবনাটা সত্যি হয়ে গেলো,মা প্রায়ই নয়টা শাড়ী বের করে বললেন এগুলো মুন যেন রেখে দেয়
মুন চোখ বড় করে বললো”আমি??কেন?”
.
এগুলো আমার অনেক যত্নের শাড়ী,আমার অনেক অনেক শাড়ী আছে,পপি,মিশু আর উর্মিকেও দিয়েছি,তোমাকেও দিলাম,এগুলো রাখো,সময় করে নীলকে সাথে নিয়ে মার্কেটে গিয়ে নতুন শাড়ী কিনে নিও
.
মুন মাথা নাড়িয়ে চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াতেই মা ওর হাত ধরে ওকে আটকালেন
মুন কিছু বলার আগেই তিনি বললেন একটু বসতে
মুন তাই আবারও বসলো,মা ও ওর পাশে বসলেন,তারপর বললেন”শুনো মুনতাহা,নীলের সম্পর্কে হয়ত সবটাই জানো,হয়ত এটাও ভেবে নিয়েছো ও তোমাকে কোনোদিন ভালোবাসবে না
তবে এটা তোমার ভুল ধারনা,নীল একটা ছেলে,প্রেম জীবনে একবার হয় না,দ্বিতীয়বারও হয়,আর নীলের প্রথম প্রেম হলো হিয়া,যে এখন আরেকজনের সাথে সংসার করছে,তারা মোভ অন করেছে
নীলের স্ত্রী তুমি,,হিয়াকে সে ভালোবেসেছিলো
এখনও যেটা বাসে সেটা ধরা ছোঁয়ার বাহিরে,এই ভালোবাসার কেনো পদবি নেই
কিন্তু তোমাকে সে ভালোবাসবে,এবং বাসতে বাধ্য,কারণ পদবিতে সে তোমার স্বামী,,পুরোনো প্রেম মনে দাগ কেটে যায় ঠিক তবে এই দাগ মুছিয়ে দিতে জীবনে আরেকটা মানুষের আবির্ভাব ঘটে,নীলের ও হয়েছে তাই,তার জীবনে এখন তুমি এসেছো
নীলকে জোরজবরদস্তি করানো যায় না কখনও,তবে সে নিজ থেকে চাইলে পুরোটা করে
তাই আমি তোমাকে বলবো ওকে সময় দাও,একদিন ও তোমাকে ভালোবাসবে,সেদিন দূরে নয়
এত এত মেয়ের ভীড়ে সে তোমাকে বিয়ে করেছে তাও জোর করে
তোমাকে ভালোবাসার দিন খুব নিকটে,একটু ধৈর্য ধরো
আর রইলো কথা হিয়ার,,হিয়া আজ কেন এখানে এসেছে তার কারণ আমি জানি না,তবে আমার মনে হলো তার আসা ঠিক হয়নি,এতটাদিন সে একটিবার নীলের মুখ ও দেখতে আসেনি আর হুট করে বিয়ের কথা শুনে সে দেখতে আসলো,হিয়াকে আমি ভালো জানি,তবে আজকে তার এখানে আসার খবর শুনে বিষয়টা আমার ভাল লাগলো না
তবে তার হাতে কিছুই নেই,দললি দস্তাবেজের দরুণ এখন নীল তোমার,হিয়ার নয়
নীলকে তুমি পেয়েছো,ধরে রেখো,আমার নীল অনেক দামি,দামি বলেই হয়ত ওদের দুজনের এত এত প্রেমের মাঝখান দিয়ে ছেদ ঘটে তারা দুজন আলাদা হয়ে গিয়েছিলো কটা বছর আগে,আর এখন তাদের দুজনেরই আরেকজনের সাথে জীবন জোড়া বেঁধেছে,,ভাগ্য ঠিক তার রেখায় চলে
.
মায়ের সব কথা মাথায় নিয়ে মুন শাড়ীগুলো হাতে নিয়ে চুপচাপ আবারও রুমে ফেরত চলে এসেছে,সেখানে নীল বিছানায় বসে ফোন টিপছে
মুন ওর দুকে এক নজর তাকিয়ে শাড়ীগুলো নিয়ে আলমারির কাছে আসলো,এক এক করে রাখতে লাগলো সে
কানের কাছে মায়ের কথা গুলো ঘুরপাক খাচ্ছে বারবার,,
বাগান থেকে বাচ্চাদের হইচই শুনা যাচ্ছে
মুন শাড়ীগুলো রেখে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো,তারপর নিচে তাকিয়ে দেখলো সবাই খেলছে সেখানে,মুনের মন চাইলো সেখানে যেতে,, তাই সে ছুটলো সেদিকে
পথেই নীল আটকে দিলো ওকে ডাক দিয়ে
.
কি হয়েছে?পিছু ডাকলেন কেন?
.
ভুলেও যদি গাছে দেখেছি তো তোমার বারোটা তেরোটা বাজিয়ে দেবো
.
মুন ব্রু কুঁচকে বললো”আমার সব অভ্যাস আপনার স্মৃতির দেয়ালের নিচে চাপা পড়ে যাবে সময়ের সাথে”
.
কথাটা বলে মুন চলে গেলো,নীল মুনের কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেছে
.
কি বলে গেলো মেয়েটা??আমার স্মতি আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার সাথে ওর ছেলেমানুষি শেষ হয়ে যাওয়ার কি সম্পর্ক?
.
নীল বারান্দায় এসে তাকালো,মুন বাচ্চাগুলোর সাথে দৌড়াদৌড়ি করছে,খিলখিল করে হাসছে সে,কারন বাচ্চাগুলো ওকে পেয়েই খেলা আরও বাড়ি দিয়েছে
নীল এক দৃষ্টিতে ওদের খেলা দেখছে,হুট করে ফোন বেজে উঠলো নীলের
নীল রুমে এসে ফোন হাতে নিতেই দেখলো হিয়ার নাম্বার থেকে কল,,নাম্বারটা সেভ করা ছিলো,,প্রিয়তমা নামে
দীর্ঘ ৩বছর পর হিয়া কল করেছে ওকে,মেয়েটার ঠিক কি হলো বুঝি না,হঠাৎ আজ আমার বাসায় আসলো,আবার এখন কল?
.
হ্যালো?
.
হিয়া কাঁদছে,ওর কান্নার আওয়াজ শুনতেই নীলের বুকটা কেঁপে উঠলো
.
হিয়া??কি হয়েছে তোমার?
.
নীল আমি আর পারছি না,কেন বিয়ে করলে তুমি?তোমার পাশে,তোমার রুমে অন্য একটা মেয়েকে দেখে আমার খুব কষ্ট লেগেছে নীল,কেন বিয়ে করলে,আমিও তো বিয়ে করতাম না,বাধ্য হয়ে করেছিলাম
কিন্তু তুমি??তুমি তো বাধ্য হয়ে করোনি
.
নীল কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না,হিয়ার কান্নার আওয়াজ তাকে যেন বারবার আঘাত করছে
.
নীল কিছু বলছো না কেন,এতটা বছর আমি সাকিবকে আমার থেকে দূরে দূরে রেখেছি শুধুমাত্র তোমার কথা ভেবে আর তুমি কিনা!
.
আমি মুনকে বলেছি আমি ওকে তোমার জায়গা দেব না কখনও
.
এসব মুখের কথা নীল!একদিন না একদিন তো তুমি মুনকে ভালোবেসেই ফেলবে
আফটার অল তুমি তো একটা ছেলে,আর কত দিন আলাদা থাকবে,একই রুমে থেকে
.
তুমি জানো আমি আমার কথায় অটল থাকি,আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি সেটার প্রমাণ নিশ্চয় নতুন করে দিতে হবে না?
যাই হোক,কান্না করা বন্ধ করো,এমনিতেও তোমাকে ছাড়া আমার দিন ভালো যায় না কখনও,আবার নতুন করে কান্না কাটি করে এবার আমার দিন আরও খারাপ করতে চাও??
.
পুলিশ হয়ে ধমক দেওয়া শিখেছো?
.
যারা কথা শুনে না তাদের ধমক দেওয়াই দরকার,মুনকে তো সারাদিন ধমক দেওয়া লাগে,একটা কথা ও আমার শুনে না,সবসময় ট্যারাব্যাকা কথা বলবে ট্যারাব্যাকা কাজ করবে
.
মুনের কথা বলা শেষ?তাহলে আমি কিছু বলি?
.
সরি,,আসলে সবসময় মাথায় আগুন ধরিয়ে রাখে তো এখন শুধু মুখ দিয়ে মুন আসে
.
পরে কথা হবে নীল,ভালো লাগছে না
.
ঠিক আছে
.
নীল ফোন বিছানার উপর রেখে সামনে তাকাতেই দেখলো মুন ব্রু কুঁচকে ভেতরে ঢুকছে,কপালে কাদা লেগে আছে,এক প্রকার জোরে হেঁটেই সো বাঁথরুমে দৌড় দিয়েছে
নীলের বুঝতে বাকি নেই যে মুন আবারও বাঁদরামি করেছে
ওপাশ থেকে হইচই শুনে নীল রুম থেকে বের হলো দেখার জন্য,ওমা যতগুলো বাচ্চা আছে বাসার সবগুলোর গায়ে কাদা,মুনের কাজ এটা,নিশ্চয় ওদের নিয়ে কাদায় নেমেছিলো
উর্মি ভাবী ইয়া বড় হা করে বললেন”একি???এসব কি!তোমরা এমন কেন করলে”
.
সবাই বোবা হয়ে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে
নীল কোমড়ে হাত দিয়ে বললো”তাহার কাজ এটা,,ও এরকম বাঁদরামিতে এক নাম্বার”
.
সেকি!!তাহাকে তো দেখে একদম চুপচাপ মনে হয়
.
মনে হয়,কিন্তু ও এমন না,দেখলে তো তার বহিঃপ্রকাশ
.
তাহলে তো ভালোই,এরকম চটপটা মেয়েরাই পারে সংসারের হাল ভালোমতন ধরতে,সাথে স্বামীকেও ঠিক করতে জানে
.
নীল আড় চোখে তাকালো ভাবীর দিকে,তারপর চলে গেলো আবার রুমে,মুন তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তোয়ালের কোণা দিয়ে কানের দুল মুচছে এখন
.
নীল ভেতরে এসে ওর দিকে একবার তাকালো তারপর বিছানায় বসে ফোন হাতে নিলো
মুন কানের দুলটা মুছে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে
.
এত রাগ??রাগ তো আমার দেখানো উচিত,আর সেখানে কিনা ও নিজে রাগ দেখাচ্ছে,এই মেয়েটার এত এত মুড সুইং হয়!!
.
মিনিট দুয়েক পর মুন আবারও ফেরত আসলো
নীলের অপরপাশে গুটিশুটি দিয়ে শুয়েও পড়লো সে
.
এঅসময়ে শুইছো কেন?
.
আপনার তাতে কি?আপনি কখন কি করেন না করেন আমি কিছু বলি??ফোনে যে কথা বলছিলেন জিজ্ঞেস করছি কার সাথে কথা বলেন?
.
নীল ভূত দেখার মতন মুখ করে মুনের দিকে তাকিয়ে আছে
মনে হচ্ছে মুন এতক্ষণ রেডি ছিল নীলকে কিছু একটা বলার জন্য,তারপর সে সুযোগ পেতেই নিজের পেটে থাকা সব কথা ফরফর করে বের করে দেবে,সেটাই হলো
.
কি?কিছু বলছেন না কেন?
.
কি বলবো,সব তো তুমি বলে দিলে
.
আসবো?
.
নীল আর মুন দরজার দিকে তাকালো,রাইসা দাঁড়িয়ে আছে,ও হলো নীলের মেজো ভাই আনিসের মেয়ে,সে এসেছে নীল আর মুনকে ডাকতে,বিকালে বাগানে টি টাইমের কথা ছিলো
নীল ঠিক আছে বলে হাত থেকে ফোন রেখে ছুটলো,অনেকদিন একসাথে বসে সবার সাথে গল্প করা হয় না,আজ অনেক অনেক গল্প হবে
.
মুন উঠে বারান্দায় এসে এক নজর বাগানের দিকে তাকালো,সব ভাবীরা সুন্দর করে শাড়ী পরে হাসাহাসি করছেন সেখানে গোলটেবিল করে
মুনের মন চাইলো একটু সাজার,মায়ের দেওয়া শাড়ীগুলো থেকে একটা বেগুনি রঙের শাড়ী নিয়ে তৈরি হয়ে নিলো সে
শাড়ীটা জর্জেটের,তার মধ্যে গোল গোল করে গোল্ডেন ডিজাইন,বেশ দেখতে, আগের জামানার শাড়ী এত মর্ডান হয় জানতাম না
কোনোরকম সেজেগুজে মুন গেলো বাগানের দিকে
নীল তার সেজো ভাইয়ার সাথে কি একটা কথা নিয়ে খুব করে হাসছে
মুনের দিকে তার চোখে পড়েনি,উর্মি ভাবী মুনকে দেখে তাদের কাছে ডাকলেন,মুন গিয়ে উনার পাশে বসলো
উনি নীলের দিকে তাকিয়ে বললেন”তা দেবরজি???কবে যাবেন হানিমুনে?”
.
নীল হাসি থামিয়ে ভাবীর দিকে তাকাতেই চোখ পড়লো পাশে বসে থাকার মুনের উপর
হালকা কেশে সে বললো”ওতো সময় নেই,হানিমুন টানিমুন আমাদের মানায় নাহ”
.
রিয়াদ ভাইয়া নীলের কাঁধে হাত রেখে বললেন”আমরা সবাই মিলে রাঙামাটি যাচ্ছি,সেখানে বউকে নিয়ে যেতে কোনো সমস্যা নেই তো??নাকি ফ্যামিলি ট্যুরেও যাওয়া মানা?”
.
কোনো ট্যুরে যাওয়াই মানা,ছুটি নেওয়া যাবে না
.
যদি আমি তোর ছুটি আনায় দেই??রাঙামাটিতে যে হোটেলে থাকবো আমরা তার বিল তুই দিবি,ডিল??
.
কোথাও ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছা নাই আমার,তোমরা যাও
.
শুনো রিয়াদ,,তোমার ছোট ভাইটা একদমই নাছোড়বান্দা হয়ে গেছে
.
নীল তাদের কথার কোনো তোয়াক্কা না করে বিসকিট খাচ্ছে চুপচাপ
.
মুন রাগ করে উঠে চলে আসলো ওখান থেকে
.
পপি ভাবী বললেন”দেখলে তো??দিলে তো ওর মনটা আবারও খারাপ করে দিয়ে”
.
মুন সোজা নীলের মায়ের রুমে গেলো,ওখানে উনি বসে বসে টিভি দেখছেন,,নাহার তার পায়ে তেল মালিশ করছে
মুন উনার কাছে এসে বললো”মা!”
.
মুন?কি হয়েছে??বাগানে যাওনি?
.
আসলে আমার মা বাবার কথা মনে পড়ছে অনেক,আমি এক দুদিনের জন্য যাই??
.
তোমার ভাসুরেরা সবাই এসেছে,ভাবীরা এসেছে,এরা তো কদিন পর চলে যাবে,অন্তত এরা থাকা পর্যন্ত থাকো
.
না মা,আমার কেমন যেন লাগছে,আমি আজকে যাই?
.
নীলকে জিজ্ঞেস করেছো?
.
হুম
.
যাও তাহলে
.
মুন চলে গেলো,নীল বাগান থেকে চলে এসে ফোনে কথা বলছে আসিফের সাথে,আসিফ বলেছে ওর নাকি হিয়ার সাথে কথা হয়েছিলো,হিয়াকে ও জানিয়েছে নীল আর মুনের বিয়ের কথাটা
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here