স্মৃতির দেয়াল🍁 পর্ব-১৯

0
858

স্মৃতির দেয়াল🍁
#পর্ব_১৯
Writer -Afnan Lara
.
মুন??ওকে ফাইন,আমার দোষ,আমি তোমাকে নিয়ে পুরো পরিবারের সাথে ট্যুরে যাব,হ্যাপি??কোথায় তুমি??
.
কথা বলতে বলতে নীল বাথরুমের দরজায় নক করতেই দেখলো দরজা খুলে গেছে,মুন সেখানে নেই,তাহলে গেলো কই,বাগান থেকে ফেরার সময় তো দেখলাম না
মনে হয় মায়ের রুমে গেছে,আমার নামে নালিশ করতে নিশ্চয়!!
উফ এই মেয়েটাও না
.
নীল সোজা মায়ের রুমে আসলো,মা ঘুমিয়ে পড়েছেন
নীল এসে আবার চলে যেতে নিতেই তার ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো এবং তিনি ওকে জিজ্ঞেস করলেন কেন এসেছে
নীল বললো”মুনকে দেখেছে কিনা”
.
মা অবাক হয়ে বললেন”সে কিরে??তোকে না বলে গেছে?”
.
গেছে?কোথায় গেছে,ও তো আমাকে কিছু বলেনাই
.
আবারও মিথ্যা বললো,আমি কেন যে ওকে যেতে দিই সবসময়,এমন করে বললো মনে হলো তোকে সত্যি সত্যি যাওয়ার কতা বলেছে,আর তাই আমিও অনুমতি দিয়ে দিলাম
.
কোথায় গেছে ও?
.
ওদের বাসায়,ওর নাকি এখানে ভাল্লাগছিলো না
.
আরেক ঝামেলা করতে গেছে,,মা আমি আর পারবো না
.
সব তোর দোষেই হয়েছে,পৃথিবীর কোন স্ত্রীমমানবে যে তার স্বামী সারাদিন তার অতীতকে নিয়ে পড়ে থাকতে পছন্দ করে??
.
নীলের মনে হলো ওর পরিবারের সবাই ওর বিপক্ষে হয়ে গেছে,,তাও মুনের কারণে
এতটা সিনক্রিয়েট না করলেও পারতো

মুন হেঁটে হেঁটেই তার বাড়ি ফিরেছে,গেটটা খোলা পেয়ে ভেতরে ঢুকলো সে,ঢুকতেই চোখে পড়লো দাদুকে
তিনি বাসার সামনের সিঁড়িতে বসে আছেন,আর রুশা তার মাথায় তেল লাগিয়ে দিচ্ছে,তারা এখনও মুনকে খেয়াল করেনি
বাবা চশমা ঠিক করতে করতে বাসা থেকে বেরিয়ে বললেন”মা আমি যাচ্ছি তুষারের সাথে পুলিশ স্টেশনে,সেলিনাকে ছাড়ানোর শেষ চেষ্টা করবো আজ
.
ঠিক আছে,সাবধানে যাস
.
বাবা মাথা নাড়িয়ে সামনে তাকাতেই মুনকে দেখলেন
দাদি আর রুশাও ততক্ষণে মুনকে দেখেছে
মুন গেটের কাছে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে
বাবা মাথা নিচু করে মুনের পাশ দিয়ে চলে গেলেন
হয়ত চলে না গিয়ে ওকে চড় থাপ্পড় মারলেও মুন খুশি হতো,কিন্তু এতটাদিন পর মেয়েকে দেখেও না দেখার ভান করে তার চলে যাওয়াটা মুন সইতে পারলো না,মূহুর্তেই চোখে পানি চলে আসলো তার
হুট করে দাদি এগিয়ে এসে ওকে জড়িয়ে ধরলেন,সাথে রুশাও
তারা সবাই মিলে কাঁদছে,দাদি চোখ মুছে নিজের কান্না থামিয়ে ফিসফিস করে বললেন মুন যেন এখান থেকে চলে যায়,,তুষার ওকে পেলে বিয়ে করে নেবে
তার উত্তরে মুন জানালা তার বিয়ে হয়ে গেছে
রুশা আর দাদি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন কার সাথে
মুন বললো নীলের সাথে,দাদি নীলের কথা শুনে বেশ খুশি হলেন,রুশাও খুশি
শুধু মুনের মুখে হাসি নেই,সে জিজ্ঞেস করলো মা কোথায়,,কোনো কাজে গেছে নাকি
রুশা মুখটা ফ্যাকাসে করে বললো”নীল মাকে গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়েছিলো সেদিন”
মুনের চোখ কপালে,,হয়ত সে এই কথা শুনেছে,মাথায় নেয়নি,আসলেই তাহলে এটা সত্যি কথা ছিলো
.
এখনও ছাড়া পায়নি?
.
নাহ,তাই তো বাবা আজ আবারও গেছে
.
মুন চুপ করে থেকে সিঁড়ি তে ধপ করে বসে গেলো,রুশা এক গ্লাস পানি এনে দিয়ে বললো”কিছু খেয়েছো?”
.
দাদি ওর পাশে বসে নীলদের বাসায় কে কে আছে,হুট করে বিয়ে করলো কেন এসব জানতে চাইলেন
মুনের মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না
দাদি ওকে ঝাঁকিয়ে আবারও জিজ্ঞেস করলেন
এবার উত্তর দিলো নীল
নীলকে এখানে দেখে দাদি আর রুশা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ওকে কোথায় বসতে দিবে তা নিয়ে
রুশা দৌড়ে গিয়ে চেয়ার নিয়ে আসলো,দাদি ওকে ইশারা করে বললেন শরবত বানাতে
মুন নীলকে দেখে মুখ বাঁকিয়ে তার রুমে চলে গেছে
নীল চেয়ারে বসতেই দাদি মুনকে বিয়ে করার কারণ জিজ্ঞেস করলেন
.
আসলে মুনের দায়িত্ব নেওয়ার খুব দরকার ছিলো,আর মা বাবা ওকে পছন্দ করেছে বলে আমি বিয়ে করে নিয়েছি
.
বেশ করেছো,এবার যদি মেয়েটা একটু সুখের মুখ দেখে,আসলে বাবা, যার বাসায় সৎ মা আছে তার সুখ নেই,সেদিনই মরে যায় সুখ যেদিন সৎ মা ঘরে ঢোকে
কেবল লাখে একটা সৎ মা ভালো হয়
মুনের কপালে কি দূর্দশা তা আর কি বলবো তোমায়
.
বলতে হবে না,,,আমি তো সব নিজের চোখে দেখেছি আর তাই তো আমি ওকে এখন একটা সম্পর্কে আবদ্ধ করেছি,আশা করি ও সুখী হবে
.
মুন কান পেতে শুনছিলো,নীলের কথা শুনে মুখটা বাঁকিয়ে বিড়বিড় করে বললো”কচু সুখী হবো,আগে মাথা থেকে ঐ হিয়াকে নামা তারপর সুখী হবো,হিয়া থাকলে এই জীবনে আর সুখ দেখা হবে না আমার”
.
এই মুন??জামাইয়ের জন্য নুডুলস রান্না করবি আয়,আমি হাঁটুর জন্য নড়তে পারি না,রুশা তো তেমন ভালো করে রাঁধতে জানে না
.
না আমি কিছু খাব না,আমি মুনকে নিতে এসেছি শুধু
.
আরে সেটা কি করে হয়,আজ তো তোমাকে যেতেই দেবো না
.
ওদিকে মুন তার গাল চালকুমড়োর মতন করে রান্নাঘরে গিয়ে নুডুলস বানাচ্ছে,,নীল মুনদের বাসার পাশের খোলা জায়গাটা হেঁটে হেঁটে দেখছে
সব সাজানো গোছানো,,সম্পূর্ন বাড়ির চারপাশ ঘুরে দেখতে দেখতে নীল এখন এমন জায়গায় আসলো যেখানে মুনকে সে দেখতে পেলো,আর সেটা হলো রান্নাঘরের জানালার কাছে
মুন চুপচাপ রান্না করছে
নীল ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো নিরবে
.
ওর রাগ দেখে আমার নিজের রাগই গায়েব হয়ে যায়,একজন পুলিশ অফিসার নীল চৌধুরীর রাগ কিনা এই মেয়েটার রাগের কাছে পানি হয়ে যায়
আমি ওকে এত লাই দিচ্ছি কেন সেটা বুঝি না,কয়েক ধমকি যথেষ্ট ওর এমন উল্টাপাল্টা অভ্যাস বদলাতে
কিন্তু মাঝে মাঝে মাথায় আসে ওর মা নেই,মা হারা মেয়েদের মনে এমনিতেও শান্তি থাকে না,ওকে আমি কষ্ট দিলে আমার আরও দ্বিগুন কষ্ট লাগে
.
মুন নীলকে দেখতে পেয়ে আরেকদিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে পড়েছে
নীলের চোখ গেলো মুনের কোমড়ের দিকে,শাড়ী সরে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে,হুট করে ওখানে চোখ পড়ায় ও ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি,পরে হুস আসতেই চলে আসলো সে ওখান থেকে
চোখ কেন বেসামাল হয়ে গেলো এই ভেবে নীল নিজেই নিজের মাথায় বাড়ি দিচ্ছে
মুন আড় চোখে জানালার দিকে চেয়ে দেখলো নীল আছে কিনা,নীল চলে গেছে দেখে সে আবার নিজের কাজে মন দিলো
নীল চেয়ারে বসে আছে আর তখনকার তার বেসামাল হয়ে যাওয়ার ঘটনাটা মনের সামনে ছবি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বলে তা নিয়ে ভাবছে অনেক
আজব তো!!!সামান্য কোমড়ের দিকে চোখ পড়েছে ঠিক আছে সেটা মন থেকে যাচ্ছে না কেন বুঝছি না,আর নীল তুই না স্টুপিড,কেন তাকালি ওদিকে??
হিয়ার কোমড়ের দিকেও তো জীবনে তাকাইনি আমি,কখনও চোখ যেতো না ওদিকে,আর আজ কিনা হুট করে মুনের কোমড়ের দিকে চোখ গেলো,ওরে বলবো ভালো করে কোমড় ঢাকতে,এরকম করে থাকলে তো আমার আবারও চোখ যাবে
.
মুন নুডুলস আর বিসকিট এনে নীলের সামনের টেবিলে রাখলো ঠাস করে
.
নিন খান,খেয়ে চলে যান,আপনি যদি ভেবে থাকেন আমি আপনার সাথে আপনার বাড়ি ফিরে যাব তো ভুল ভাবছেন
.
নীল নুডুলসের বাটি হাতে নিয়ে বললো”গেলে তোমাকে নিয়ে যাব,দরকার হলে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাব”
.
মুন কিছু না বলেই চলে গেলো
নীল একা একা নুডুলস খেয়ে পানি এক গ্লাস খেলো,দাদি নাই,রুশাও নাই,বাড়ি ফাঁকা নাহ,,ভেতরের রুমে মুন আছে
নীল সেদিকে যাওয়ার জন্য উঠতেই মায়ের কল আসলো
মা জানতে চাচ্ছেন মুন আসবে কিনা
.
নীল বললো আসবে
.
ফোন রেখে নীল মুনের কাছে আসলো,মুন জানালার ধারে বসে পেয়ারা একটা চিবোচ্ছে আর এক দৃষ্টিতে নীলের মুখের দিকে চেয়ে আছে
নীল হালকা কেশে বললো”চলো যাই,মা ফোন দিয়ে বলেছে জলদি যেতে”
.
মুন ও কড়া করে বললো সে যাবে না
.
নীল পকেট থেকে গান বের করে মুনের কপালে চেপে ধরলো
মুন ভয় পেলো না,সে পেয়ারা খেয়ে যাচ্ছে এখনও
নীল আরও চেপে ধরে বললো”চুপচাপ যাবা নাকি আমার ওয়ে তে নিয়ে যেতাম”
.
কি করবেন কোলে তুলে নিবেন??
অবশ্য আপনি আমায় কেন কোলে নিবেন, আমাকে কোলে নিলে তো আপনার হিয়া কেঁদে কেঁদে বঙ্গোপসাগর বানিয়ে দেবে
.
আবার হিয়া,তোমার কি ক্ষতি করেছিলো ও?
.
আমার স্বামী যাতে আমাকে না ছোঁয় সে জন্য মোক্ষম পন্থা অবলম্বন করেছে
বলেছে আপনি উনাকে কিস করেছেন
.
তোমাকে আমি এমনিতেও ছুঁতাম না,ওমনিতেও না,বুঝলে?
.
সেটা আলাদা ব্যাপার,হিয়ার কথায় না ছোঁয়ার ব্যাপারটা আমার গায়ে লেগেছে
.
মেয়ে মানুষের মন বোঝা সহজ এটা আমি হিয়ার সাথে প্রেম করে বুঝেছিলাম
কিন্তু আই ওয়াজ রং!!তোমাকে বিয়ে করে জানতে পারলাম মেয়েদের মন বোঝা আসলেই কঠিন
.
ভেরি গুড,, তাহলে বুঝতে পেরেছেন?এবার কেটে পড়ুন
এই মুনতাহা আপনার সাথে আপনার বাড়ি যাবে না,যতদিন না হিয়া পিয়া টিয়ার নাম ছাড়েন ততদিন
.
ব্যস অনেক হয়েছে,বিয়ের আগেও তুমি আমায় চিনতে না,তাহলে বিয়ের কদিনেই তোমার এত অধিকারবোধ আসে কোথা থেকে?
.
কারণ আমি আপনার স্ত্রী এখন
.
নীল বড় করে একটা শ্বাস নিলো তারপর মুনকে টেনে কোলে তুলে নিলো
মুন স্বাভাবিক স্বরে বললো”এখন আপনার হিয়া দেখবে না??জানবে না??”
.
কে জানাবে?
.
আর কেউ না জানাক আমি কল করে জানিয়ে দেবো,বলবো তোমার সো কলড প্রেমিক তার স্ত্রীকে কোলে নিয়েছে
আপনি তো আবার হিয়াকে ছাড়া কাউকে টাচ করেন না,তাহলে এখন আমাকে কোলে তুলে কি প্রুভ করতে চান?
.
নীল চুপচাপ মুনকে নিয়ে হেঁটে চলেছে,বাসা কাছেই,তাই আর অটো কিংবা রিকশার ওয়েট করেনি নীল
আশেপাশের সবাই ড্যাবডেবে চোখে চেয়ে আছে ওদের দিকে
নীল পুলিশ,, তাই ওকে কম বেশি অনেকেই চেনে,তাই ভয়ে সামনা সামনি ফোন বের করে এত সুন্দর মোমেন্ট ক্লিক করেনি ভয়ে
.
কি হলো উত্তর দিচ্ছেন না কেন?
.
তোমাকে বাসায় না নিয়ে গেলে ভাবীরা সবাই আর মা মিলে আমার মাথা কাঁচা চিবিয়ে খাবে
.
তো খাক,তাতে যদি আপনার মগজটা নড়ে চড়ে সুবুদ্ধি হয়
.
মুন তোমাকে অনেক বলেছি এবং এখনও বলছি,যত কিছুই হোক হিয়াকে এর মাঝে আনবা না
হিয়াকে আমি ভালোবাসতাম,আর আজীবন বাসবো
.
কি বললি!!তুই নামা আমাকে
.
নীল হাঁটা থামিয়ে মুনের দিকে ব্রু কুঁচকে তাকালো
.
আমাকে তুই করে বললে?
.
হ কমু তুই,তোর সাহস তো কম না,বউকে কোলে নিয়ে প্রাক্তনকে ভালোবাসি বলস,বেয়াদব কোথাকার
আজ তুই পুলিশ না হলে তোরে এখন জেলে পুরতাম
পুলিশদের নামে কেস করা যায় কিনা সেটা বল আগে
.
হুম যায় তো,,সামনে একটা পুলিশ স্টেশন আছে,ওখানে সকাল নয়টার পর নীল চৌধুরী নামে একজন পুলিশ অফিসার বসেন,উনার কাছে কমপ্লেইন করলে তোমার কাজ হয়ে যাবে ভালোমতন
.
দেখুন আমি মজা করার মুডে নাই,নামান আমাকে
.
সেকি,তুই থেকে আপনিতে চলে এলে??
.
আপনার সাথে কোনো কথা বলাই বেকার,আপনি কেন আমাকে বিয়ে করলেন সেটাই আমি বুঝি না,এখন বলবেন দায়িত্ব নেওয়ার খাতিরে
.
উহু
.
কি উহু?
.
আরেকটা কারণ আছে
.
কি কারণ?
.
তুষারের মতন একটা ছেলের হাত থেকে বাঁচিয়ে নীলের মতন একটা ছেলের স্ত্রী করে দিলাম
.
আপনাকে আমার একটুও সহ্য হচ্ছে না,আপনি প্লিস আমাকে নামাইয়া দেন,আমার ভালো লাগে না আর
.
নীল মুনের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,এখন বাসার গেটের সামনে ওরা
দারোয়ান নীলকে দেখে গেট খুলে দিয়েছে
মুন নীলের এমন চাহনি দেখে নিজের মুখের সব কথা ভুলে গেলো,পরে আবার মাথায় আসলো এই ছেলেকে বিশ্বাস নাই,যে নিজের বউকে কোলে নিয়ে বলে “আই লাভ মাই এক্স ভেরি মাচ স্টিল নাও”
সে যেকোনো কিছু করতে পারে
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here