স্মৃতির দেয়াল🍁
#পর্ব_৩
Writer -Afnan Lara
.
আসলে আমি তুষারের সাথে কথা বলেছি,,ও ছোট থেকেই মুনকে পছন্দ করে,,তোমরা তো এটা জানোই
আর এখন ভালোবাসে বটে,,
আমাদের মাঝের এতদিনের যে মনমালিন্য আছে তা দূর করার জন্য হয়ত এর চেয়ে ভালো পন্থা আর পাওয়া যাবে না
আর তুষার তো এখন ভালই বিজন্যাস করছে, আমাদের কোনো চাওয়া পাওয়া নাই,শুধু মুনকে সাজিয়ে দিলেই হবে
তোমরা কি বলো??
–
রাইমা হক হাসলেন,,তারপর মুনের বাবার চেহারার ভাবগতি দেখে ব্রু কুঁচকে বললেন”ভাইজান আমরা বিষয়টা ভেবে দেখে আপনাদের জানাবো”
–
মুন উঁকি দিয়ে সবটা শুনছিল,,
মা এসব কি বলছে,ঐ বেয়াদবটাকে আমি বিয়ে করবো??
–
কথাটা শুনার পর মুন নাস্তা এনে টিপু চাচার সামনে রাখলো,উনি মুচকি হেসে তাকিয়ে আছেন ওর দিকে
.
কাল আমার নামে থানায় মামলা করে আজ ভালো মানুষ সাজতেসেন,ঢং
–
চাচা নাস্তা করে চলে গেছেন,বাবা রাগী চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে বললেন”সেলিনা?তুমি জানো না তুষারকে মুন পছন্দ করে না??”
.
আমার নাম রাইমা,বারবার সেলিনা ডাকবা না,সেলিনা হক রাইমা আমার নাম,রাইমা ডাক নাম,সেটাই ডাকবে তুমি
আর রইলো কথা মুনের পছন্দ অপছন্দ নিয়ে,,লক্ষী নিজে হেঁটে আমাদের বাসায় ঢুকেছে,এখন তোমার মেয়ে কারে লাইক করে আর কারে করে না এসব দেখার সময় নাই,আর এটা যদি বাদ ও দিয়ে দিই,পরে যারা আসবে তারা তো মোটা অঙ্কের যৌতুক চাইবে,তখন??তোমার সেই মুরদ আছে সেই যৌতুক দেওয়ার??এরপর রুশা আছে,ওর কয়েকবছর পর বিয়ে দিতে হবে
যৌতুক ছাড়াও বিয়েতে কত খরচ হয় সেটা জানো তুমি?
আইছে মেয়ের পছন্দ অপছন্দ নিয়ে!!
তোমার মেয়ের পছন্দের তালিকা ভালোমতন জানা আছে আমার!
গাছ,গাছের ঢাল হইছে তার পছন্দ,ওসবের সাথেই বিয়ে দিয়ে দাও,আর আমায় উদ্ধার করো
.
মুন জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে সব কথা শুনছে,মা যে লজিকগুলো উঠিয়েছেন এর পরে মনে হয়না বাবা আর কোনে প্রশ্ন তুলবেন
ছোট থেকেই দেখে এসেছি বাবা মায়ের লজিক যুক্ত কথা শুনে থম হয়ে যায়,আর টু শব্দ ও করে না
হয়ত এবারেও করবে না,বিয়েটা তাহলে হয়েই ছাড়বে মুন!
সেই ছেলেটার সাথে যার কুনজর তোমার দেহে সবসময় থাকত আর এখন সে এসবে হামলা করবে বিয়ের পর থেকে প্রতিদিন
ভাবতেই ঘৃনা হচ্ছে আমার
♣
বিকালে মুন লুকিয়ে চুপিচুপি বাসা থেকে বের হলো
.
আজ অন্য গাছে উঠে বসে থাকবো,একটু একা সময় কাটাতে চাই আমি,বাসায় থেকে বিয়ের কথা শুনতে ভালো লাগে না আমার
গাছের মাঝে থাকলে মনটা ফুরফুরে হয়ে যাবে একেবারে
–
নীল কারে করে বাসায় ফিরছে,,ডিউটি শেষ,এবার বাসায় ফিরে একটু রেস্ট করবে সে
জানালা একটু নামিয়ে বাহিরের দিকে মন দিলো নীল
ঢাকার গ্রাম এরিয়াতে তার বাসা,,
দোহার, নবাবগঞ্জ
তো আজ রোড দিয়ে যাওয়ার সময় একটা মাঠ পড়লো সেখানে
নীলের নজর গেলো মাঠের মাঝখানের একটা গাছের উপর ঘাড়ো নীল রঙের জামা পরা কেউ বসে পা দুলাচ্ছে
সবুজের মাঝে নীলটা চোখে পড়লো সবার আগেই
–
পিয়াস কার থামাও!
–
পিয়াস কার থামাতেই নীল কার থেকে নেমে সোজা মাঠের দিকে গেলো
–
মুন গাছে বসে একটা গান গাইতেছিলো মনের সুখে
.
আহারে আহারে পিয়া!!!
কাঁটা লাগা
হাই লাগা
আজা রাজা!!!!
.
হঠাৎ একটু সামনে নীলকে দেখতে পেয়ে ভয়ে পা দুলানো অফ করে ফেললো সে,সাথে গান ও বন্ধ
ঢোক দিলে গাছ ধরে পা উঠিয়ে ফেললো মুন
–
কি?তোমাকে জেলে নিয়ে গেলাম তাও তোমার স্বভাবের কোনো উন্নতি হলো না,,এখনও চুরি করতেছো??
–
না,চুরি করি নাই,এটা তো বট গাছ,এমনিতেই উঠে বসছি,বট গাছে আবার চুরি করে কেমনে??শুধু শুধু দোষারোপ করছেন আপনি
–
নামো বলতেছি
–
মুন চুপচাপ গাছ থেকে নেমে নীলের দিকে চেয়ে রইলো
–
নীল মুনের পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখতেছে,প্রতিদিনকার মতন আজও হাতের কব্জিতে ওড়না গিট্টু দিয়ে রেখেছে মুন
.
এটা তো ঐদিনের সেই মেয়েটা,,হাতে ওড়না গিট্টু দেওয়া! যার জন্য আমার গাড়ী ড্যামেজ হয়ে গেছিলো
–
তুমি সেই মেয়েটা না??
–
ইস রে কিভাবে মনে রাখলো,,আমি পালাই
–
মুন কোনো কথা না বলে পা টিপে টিপে পিছাচ্ছে
–
দাঁড়াও,কই যাচ্ছো,?
.
মুন নীলের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দৌড়াচ্ছে প্রাণপণে
হঠাৎ একটা গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে পাশে থাকা একটা ছোটখাটো পুকুরে পড়ে গেলো সে
.
নীল হাসতে হাসতে এগিয়ে আসলো সেখানে
–
মুন পানির নিচের থেকে মুখ একটু উঠিয়ে চোরের মতন মুখ করে তাকিয়ে আছে নীলের দিকে
–
নীল পুকুরের ঘাটে এসে বসলো,,তারপর দাঁত কেলিয়ে বললো”কি?আমি কি তোমাকে জেলে নিতাম?শুধু শুধু পালালে কেন?”
.
মুন মুখটা পুকুরে ডুবিয়ে নাক টা উপরে রাখলো শুধু,,এখনও কিছু বলছে না
–
যাই হোক,,বাই,,আর কোনোদিন যেনো তোমাকে গাছে না দেখি আমি,তাহলে গাছ সমেত উপুড় করে পুকুরে চুবানি দিব ধরে
.
কথাটা বলে নীল হেঁটে চলে গেলো
.
মুন পুকুর থেকে উঠে নীলের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিলো
–
নীল কিছুদূর যেতেই মুনের হাসির আওয়াজ পেয়ে পিছন ফিরে তাকালো আবার
–
মুন ভিজে বিড়ালের মত চেয়ে আছে ওর দিকে,আর সেদিনের বাচ্চাগুলো ও কোথা থেকে এসে মুনের পিছনে দাঁড়িয়ে ওর সাথে সাথে হাসতেসে
ওদের এমন হাসি দেখে নীল নিজের দিকে তাকালো একবার
.
সব তো ঠিক আছে,তাহলে হাসে কেন ওরা,,
.
কোনো কিছু বুঝতে না পেরে নীল সানগ্লাস ঠিক করে চলে গেলো কারের দিকে
–
মুন বুবু তুমি হাসতেসো কেন?
–
আগে বল তোরা হাসতেছস কেন?
–
তুমি হাসতেসো তাই
–
আমি হাসতেসি পুলিশ লোকটার কথা শুনে,আমাকে ধমক দিয়া কয় আমি যেনো আর গাছে না উঠি,,আমার মা যে কিনা ২০বছরেও আমাকে ঠিক করতে পারলো না আর ২দিনের এই ছেলে নাকি পারবে
চল বাসায় যাই এখন,এই পুলিশের চক্করে এই বিকালের সময় ভিজে বিড়াল হতে হলো আমাকে
♣
স্যার কি হইছে?কই গেসিলেন
–
একটা চোরের খোঁজখবর নিতে,,চলো বাসায় যাই,দেরি হয়ে গেছে অলরেডি
–
বাসায় ফিরতেই মা এক ব্যাগ মেয়েদের ছবি নীলের সামনে এনে রাখলো,এবার ছবিগুলোকে এক এক করে টেবিলে সাজাচ্ছেন তিনি
মুখে এক চিলতে হাসি
৫০টা মেয়ের ছবি বেছে তিনি ২০জন সিলেক্ট করেছেন,এরা তার কাছে বেশি ভালো লেগেছে,এবার এর থেকে একজনকে নীলের অবশ্যই ভালে লাগবে,এই ব্যাপারে তিনি ষোলআনা নিশ্চিত
–
নে কারে পছন্দ শুধু বল,,বউ করে নিয়ে আসবো
–
নীল মায়ের দিকে না তাকিয়েই ম্যাগাজিনটার পাতা উল্টাতে উল্টাতে বুয়াকে ডাক দিলো
.
বুয়া আমার জন্য চা নিয়ে আসো,,এলাচ দিবে সাথে
রোজ রোজ একই চা খেতে ভালো লাগে না,তাও একি চা বারবার কেন দাও,,??আর কি কাজ কর্ম নাই তোমার??
–
এটা তুই আমাকে উদ্দেশ্য করে বললি,, তোর চাকরির ১বছর পর থেকে আমি তোকে বিয়ের কথা বলতে বলতে মুখে ফ্যানা তুলতেছি তাও রাজি হচ্ছিস না,একটা মেয়ের জন্য কি সারাটা জীবন কুমার থেকে যাবি??
–
নীল ম্যাগাজিনটা টেবিলের উপর ছুঁড়ে মারলো,তারপর উঠে চলে গেলো তার রুমে
–
হ্যাঁ যা যা,মরার আগে আমার এই ইচ্ছাটা পূরন করবি না জানি
–
বুয়া ২মিনিটে চা এনে দাও!!
.
নীল নিজের রুমে গিয়ে বিন ব্যাগে বসলো হাতে গিটার নিয়ে,,
পুলিশের ডিউটি সেরে বাসায় ফিরে নীলের প্রধান দুটি কাজ হলো গলা ছেড়ে গান গাওয়া সাথে চা আর সামনে হিয়ার ছবি
হিয়া নীলের গান খুব পছন্দ করতো,হাতে যত জরুরি কাজই থাকুক না কেন সেটা ফেলে রেখে নীলের গান শুনতো,,মুখে একটুখানি হাসি ফুটিয়ে সে নীলের খালি গলায় গান শুনতেই থাকতো
একদিন নীলের মতন তার ও গান গাইতে খুব মন চেয়েছিলো,তাই সে নীলের গিটারটা কোলে নিয়ে ক্যামপাসে বসে বেসুরে টোন সৃষ্টি করেছিলো,সবার হাসাহাসিতে নীল এগিয়ে এসে দেখলো তার প্রিয়তমা সার্কাস প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছেন গিটার বাজাতে গিয়ে
নীল মুচকি হেসে হিয়ার পাশে বসে হাতটা বাড়িয়ে ওকে সেদিন একটা নতুন টোন শিখিয়ে দিয়েছিলো,অবাক ব্যাপার হলো তার পর থেকে হিয়া খুব সুন্দর করে গিটার বাজানো শিখে গিয়েছিলো,নীলের খুব পছন্দ হিয়ার বাজানো গিটারের ঐ আওয়াজটা,আজ কানের কাছে সেই সুরটা বাজছে ক্রমাগত
নীল আজও ভাবে সেইদিন এখনও শেষ হয়নি,,
এটা ভেবেই গিটারে হাত দিয়ে নীল গান ধরলো
.
খোলা জানালা দখিনের বাতাসে
ঢেকে যায় পর্দার আড়ালে
তখন তুমি এসে হেসে
বলে দাও, আছি তোমার পাশে
বহুদূর পথ ভীষণ আঁকাবাঁকা
পথ চলতে ভীষণ ভয়
তুমি এসে বলে দাও, আছি আমি পাশে
করোনা কিছুতেই ভয়
♣
সাহেব আপনার চা
–
রেখে যাও
.
নীল চা নিয়ে মুখে দিয়ে হিয়ার ছবির দিকে তাকালো,ও থাকলে হাতে তালি দিতো আর চোখে মুখে হাসতো,,মেয়েটার এই চোখে মুখে হাসার প্রেমেই তো আমি পড়েছিলাম,খুব যত্ন করে হাসতো সে
এতটাই যত্ন হয়ত কেউ তার মনকেও করে না যতটা সে তার হাসিকে কদর দিতো,আমার হিয়া
নীলের নীল হিয়া!
♣
শুন মুন এরকম চোখে মুখে হাসিস না,,এরকম করে হাসার মানুষ বেশিদিন বাঁচে না
–
এটা কি বললা দাদু,,চোখে মুখে হাসলে কি হয় যে মারা যাবে?
–
এরকম হাসার মানুষ মনের দিক দিয়ে সাফ হয়,,আর সাফ দিলের মানুষকে আল্লাহ তার কাছে তাড়াতাড়ি নিয়ে যায়
–
ধুর বাদ দাও এসব,,আর হাসলেই আমার হাসি চোখে মুখে হয়ে যায় আমি কি করবো বলো
–
♣
হিয়া তুমি বলেছিলে তোমাকে না পেলে তোমার মতন কাউকে ঠিকই পাব,কিন্তু আমি যে তোমাকে চেয়েছিলাম,তোমার মতন কাউকে খুঁজার মন মানসিকতা নেই আমার,,কখনও তৈরি হবেও না!
.
নীল চায়ের কাপটা টেবিলের উপর রেখে বারান্দায় চলে গেলো
–
নীলের বারান্দার সামনে একটা লিচু গাছ,,গাছগাছালি নীলের পছন্দ বলে মা এই রুমটাই নীলের জন্য রেডি করেছিল
নীলের মনে পড়লো সেই মেয়েটার কথা,মুনের কথা,,ও থাকলে এখান থেকে লাফ দিয়ে লিচু গাছে উঠে যেতো
এটা ভেবে নীল হাসলো,,তারপর ভাবলো ধুর কি ভাবতেসিলাম আর কি ভাবতেসি এখন
♣
না বাবা এটা তুমি কি বলতেছো??আমি ঐ তুষারকে বিয়ে করবো??যার নজর সবসময় খারাপ ছিল??
এটা আমাকে করতে বলো না বাবা
–
আমি মানা করে দিছিলাম কিন্তু তোর মা যখন শুনছে কোনো যৌতুক ওরা নিবে না তখন থেকে উঠে পড়ে লাগছে
.
মুন সোজা গিয়ে মায়ের পা ধরে বসলো ফ্লোরে
.
মা প্লিস আমার এত বড় সর্বনাশ করিও না,তুমি তো জানো তুষার ভালো ছেলে না তাহলে যৌতুক নিবে না শুনে কেন তুমি আমাকে ওর সাথে বিয়ে দিতে চাচ্ছো
–
আমি তোর খারাপ চাই??
.
অন্য ছেলে হলে হউক,কিন্তু তুষারকে আমি মানতে পারবো না,আর আমি মেজো চাচির থেকে শুনেছিলাম ছোট চাচা নাকি তোমাকে বেয়াইন হিসেবে স্বর্নের হার দেবে বলেছে,সেটার লোভে এমন করছো তাই না??তোমার আলমারি ভর্তি গয়না আর তুমি ঐ হারের লোভে আমার জীবনটাকে বলি দিতে উঠে পড়ে লেগেছো
.
মা রেগেমেগে মুনকে স্বজোরে থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন
.
আমি লোভ করি?তোর সাহস হয় কি করে এই কথা বলার,,হয় তুই তুষারকে বিয়ে করবি নয়তো এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবি,আমার ঠ্যাকা পড়ে নাই পরের মেয়ের এত আবদার পূরন করার
চলবে♥