স্মৃতির দেয়াল🍁
#পর্ব_৩৫
Writer -Afnan Lara
.
যাই হোক,আমার কথা না শুনলে আমি এখন জুস সব আপনার গায়ে ঢেলে দেবো,ভাল্লাগবে??
.
জেলে পুরে দিব ধরে
.
দিয়েন,,জেলে গেলে যাব তাও জুস ঢেলেই ছাড়বো আমি
.
ফাইন,যাচ্ছি চেঞ্জ করতে
.
নীল মুনের হাত থেকে শার্টটা ছোঁ মেরে নিয়ে গেলো
মুন দাঁত কেলিয়ে ওর চলে যাওয়া দেখছে,,এরপর চোখ ফিরিয়ে বাসার গেটের দিকে তাকাতেই মুন দেখলো একটা কার ঢুকছে,কারটা চেনা চেনা লাগলো,
আরেহ এটা তো হিয়া আর সাকিবদের কার
ওরা আসছে কেন?আজকের দিনটায় পানি ঢেলে দিবে,নিশ্চয় নীল ইনবাইট করেছে,অসভ্য একটা!
.
হিয়া কার থেকে নামলো,,পরনে সবুজ রঙের একটা শাড়ী যার আঁচলটা সম্পূর্ণ নীল
.
মুন তো এটা খেয়াল করে চোখ কপালে উঠিয়ে ফেলেছে,,তারমানে নীল আর হিয়া আজ সেম কালারের ড্রেস পরা থাকবে?
না এটা কিছুতেই হতে পারে না!!আমার এখন কি করা উচিত?
ভাবতে ভাবতে মুন নিজের হাতে থাকা জুসের গ্লাসটার দিকে তাকালো
হিয়া আর সাকিব কার থেকে নেমে একজন আরেকজনের সাথে কথা বলছে
মুন এই সুযোগে জুস গায়ে ঢেলে দিয়ে দৌড়ে মায়ের কাছে গেলো,মা নিজের রুমে রেডি হচ্ছেন
.
একি রে!! তোর গায়ে জুস পড়লো কি করে?
.
উনাকে জুস দিতে গিয়ে ভুলে আমার গায়ে পড়ে গেলো,,এখন কি করবো?তোমার কাছে কোনো নীল শাড়ী আছে??একদম গোটা নীল রঙ এমন টাইপের
.
শাড়ী তো আছে,তবে তোর গোটা নীল রঙের লাগবে কেন?
.
দাও না,প্লিস
.
আচ্ছা ঠিক আছে,দিচ্ছি,আমার একটা নীল শাড়ী আছে,,নিপার বিয়ের দিনগুলোতো পরবো বলে দুটো শাড়ীর সাথে ঐ একটাও নিয়েছিলাম,ওটা তুই রেখে দে বরং
.
মুন তো শাড়ী হাতে পেয়ে লাফিয়ে উঠেছে,এক দৌড়ে নীলের রুমে চলে গেলো সে,গিয়ে দরজাও লাগিয়ে ফেললো,,হিয়া আর সাকিব এখনও গেটের কাছে কিসব আলাপ করছে
আল্লাহ!!! ওরা যেন আজ ওখানে দাঁড়িয়ে গল্প করতেই থাকে,বাসার ভেতর আর আসার দরকার নাই
.
মুন গায়ের শাড়ী খুলতে খুলতে হিয়া যেন বাসায় না আসে সেই দোয়া করছে,তখন নীল রেডি হয়ে ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে মুনকে এমন বেশে দেখে একটা চিৎকার করলো
মুন ও চিৎকার করলো,তারপর দুজনে চুপ হয়ে গেলো
মুন আরেকদিকে ফিরে গিয়ে বললো”চিৎকারের কি আছে,ওয়াসরুম তো একটাই,তাই আমি এখানেই চেঞ্জ করছিলাম,আপনার কি সমস্যা?”
.
তুমিও তো চিৎকার করলে,চেঞ্জ করতেছো ক্যান!গোলাপি শাড়ীটা তো ভালো ছিলো
.
অনেক ভালো ছিলো,তবে আমার সেটা ভাল্লাগে না বলে চেঞ্জ করতেছি,আর একটা কথা- আপনার সাহস হলো কি করে হিয়া আর সাকিবকে নিপা আপুর এঙ্গেজমেন্টে দাওয়াত করার?কোন দিকের আত্নীয় হয় আপনার??
মায়ের কাছে বিচার দেবো আমি আপনার নামে
.
কি বললে?হিয়া এসেছে?
.
হুম,আপনার পিয়া এসেছে,উড়ে যান তার কাছে
.
নীল সেদিকে ছুটতেই মুন শাড়ী হাতে নিয়ে দরজার সাথে লেগে দাঁড়িয়ে বললো”যতক্ষন না আমি শাড়ীটা পরে নিব ততক্ষণ আপনি এখানে থাকবেন,আমার সাথে বের হবেন”
.
তো পরো শাড়ী
.
মুন নীলের দিকে তাকাচ্ছে আর একটা করে কুচি ধরছে
নীল হঠাৎ নিচে বসে কুচি ঠিক করে গুছিয়ে দিতে দিতে বললো”আমার দিকে নজর দিতে হবে না,পালাচ্ছি না,কুচিতে নজর দাও,সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে”
.
এত সুন্দর করে কুচি ধরছেন,এক্সপেরিয়েন্স আছে অনেক?
.
মায়ের শাড়ীর কুচি ঠিক করে দিতাম সবসময়
.
মুন আঁচল কাঁধে উঠিয়ে বড় করে শ্বাস নিয়ে বললো”চলুন যাই”
.
নীল মুনকে নিয়ে সোফার রুমের দিকে আসলো,হিয়া আর সাকিব নিপার সাথে কথা বলছে
নিপা পিছন ফিরপ নীলের দিকে চেয়ে বললো”ভাইয়া জানিস,হিয়া আপুরা নাকি সামিরদের বাসার দোতলায় থাকে,এবং সামিরের অফিসের কলিগ হলো সাকিব ভাইয়া,,সেই সূত্রে আজ আমাদের গেস্ট উনারা”
.
ওহ!
.
মুন মনে মনে ভাবছে তার মানে নীল দাওয়াত দেয়নি
.
হিয়া মুন আর নীলের দিকে তাকিয়ে আছে চুপচাপ,কারণ ওরা দুজন একই রঙের জামা- শাড়ী পরেছে,,মুন দাঁত কেলিয়ে বললো”দাঁড়িয়ে আছো কেন তোমরা,বসো না,এই যে শুনুন,আমার সাথে একটু আসবেন রান্নাঘরে
.
নীল ফিসফিস করে বললো”আমি এসে কি করবো?”
.
যেটা বলছি ওটা করেন
.
মুন চোখ রাঙিয়প চলে গেলো,নীল ও পিছু পিছু আসলো,,
শরবতে চিনি দিতে দিতে মুন বললো”নাস্তা বানাচ্ছি ওগুলো ওদের দিয়ে আসবেন,আমার একা হাতে এত কাজ হবে না”
.
বাকিরা কোথায়?নাহার কোথায়?
.
সবাই রেডি হতে যে যার রুমে গেছে,নাহার বাগানে বাবুর্চিদের কাজে গেছে মশলা বাটতে,উনারা যে মহিলা এনেছেন উনার কাজ নাকি স্লো
.
ওহ,,শরবতে চিনি কম দিও,হিয়া চিনি কম খায়
.
মুন চোখ রাঙিয়ে বললো”দেখি বলুন তো!আমি শরবতে কয় চামচ চিনি খাই??”
.
নীল পকেটে হাত ঢুকিয়ে তাকের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বললো”এক চা চামচ আর তার সাথে এক চিমটি ”
.
মুন ইয়া বড় হা করে বললো”আপনি জানলেন কি করে?
.
কিছু কিছু ওয়াইফ মনে করে তাদের স্বামী সারাদিন অন্যের স্ত্রী নিয়ে ভাবে আসলে এটা কিন্তু ফেক,,সে আসলে নিজের স্ত্রীর কথাই বেশি ভাবে
.
আহারে এসেছে আমার বীরপুরুষ, ধরেন ট্রে,চলুন আমার সাথে,শরবত আর বিসকিট দিয়ে এসে চা পাঠাবো,এই ট্রে দিয়ে এসে আবার ওখানেই আটকে যাইয়েন না
.
নীল মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো,,হিয়া কানের দুলটা ঠিক করে পরছিলো খুলে গিয়েছিলো বলে,,সাকিব সেটা ঠিক করে দিচ্ছে নিজ থেকেই
নীল ওদের দেখে মুচকি হেসে ট্রেটা সেন্টার টেবিলের উপর রাখলো
হিয়া ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে,এখনও নীলকে খেয়াল করেনি সে
সাকিন দুলটা ঠিক করে দিতে দিতে বললো”দুল খুলে গেলে এতটা বিচলিত হওয়ার দরকার নেই,এই দুল হারালে আমি তোমায় বকবো না,বরং তোমার মন ভালো করতে আরেকটা এনে দেবো”
.
সেটা জানি,তবে আমি কোনো কিছু হারিয়ে ফেললে সেটার স্মৃতি সহজে ভুলতে পারি না
.
নীল যখন বুঝলো ওরা দুজন ওকে খেয়াল করেনি ও চুপচাপ কেটে পড়েছে
মুন তাকের উপর উঠে উঁকি মেরে দেখছে সোফার রুমে কি ঘটছে
নীল রান্নাঘরে এসে দেখলো রান্নাঘর ফাঁকা,কিন্তু মুন গেলো কই?
মুন??
.
চুপপপপ,আস্তে,দেখতে দাওও
.
কি দেখতে দিতাম,আরে তুমি উপরে কি করছো?
.
ওহহহ,আপনি এসে পড়েছেন,আসলে এখান থেকে সোফার রুমটা ভালোমতন দেখা যায় না করিডোরের কারণে
.
সোফার রুম দেখে কি করবা তুমি?
.
খই ভাজবো,সরুন,আমি নামবো,,চা বানাচ্ছি,আমাকে কাপ ধুয়ে দেন
.
আমাকে দিয়ে কাজ করাচ্ছো
.
স্ত্রীকে কাজে হেল্প করা সুন্নত
.
আমাকে হাদিস শুনাচ্ছো??আমি হাদিস শুনানো শুরু করলে কোথাও থাকার কূল পাবা না
হাদিয়ে লিখা নাই স্ত্রী সারাদিন স্বামীর কানের কাছে পেনপেন করবে,যেটা তুমি করো,আইছে আবার আমাকে হাদিস শুনাইতে
.
হইছে,আবার শুরু করিয়েন না
.
মুন চা বানিয়ে নিয়ে বললো”ওকে চলুন যাই,,কি ভাগ্য আমার,হাসবেন্ডের প্রাক্তনের জন্য নাস্তা নিয়ে যাই”
.
নীল মুনের কান টেনে ধরলো সাথে সাথে,,দুজনকে এমন অবস্থায় হিয়া দেখলো,তারপর মুচকি হাসলো,কারণ সে বুঝে গেছে সে নীলের হবার আর কোনো চান্স নেই,আর তার ও সাকিবের হয়ে যাওয়া উচিত
বিধাতা দুদিকের নাম দুদিকে লিখে দিয়েছে,মেনে নেওয়া উচিত আমার
.
কি ভাবো হিয়াপু,চা ঠাণ্ডা হচ্ছে খেয়ে নাও,আর সাকিব ভাইয়া আপনিও
.
জি ম্যাডাম!নীল তোমার ওয়াইফ এরকম চটপটে কথা বলে আগে জানতাম না,ঐবার দেখে মনে হয়েছিলো চুপচাপ প্রকৃতির
.
নীল আস্তে করে বললো”ও কি জিনিস কেবল আমি জানি”
.
মা বাবা রেডি হয়ে সোফার রুমে আসতেই নীল আর মুনকে এক সাথে একই রঙে দেখে খুব খুশি হলেন,হিয়া আর সাকিবকে রেখে আগে ওদের দিকেই চোখ গেছে তাদের
এরই মাঝে সামিরদের বাসার সবাই চলে এসেছে,,,নীল সামিরকে জড়িয়ে ধরে বললো”কি খবর,অনেকদিন পর দেখলাম”
.
ভালো,,আপনি কেমন আছন?
.
আপনি বলিও না ভাই,আমরা একই বয়সী
.
সামির ভেতরে ঢুকতেই মুন এসে সালাম দিলো
সামির মুচকি হেসে বললো”নিপার ছোট ভাবী তার মানে আমার ও ভাবী,,আমার বড় হোন সম্পর্কে,সালাম তো আমার দেওয়া উচিত”
.
মুন দাঁত কেলালো,,এক এক করে সবাই ভেতরে ঢুকছে
সামিরের মা বাবা এসেই বললেন”নীলের নতুন বউ কোথায়”
.
মুন সেদিকে গেলো দেখতে,,,নীল আর মুনকে একসাথে করে রেখেছে সবাই,আলাদা হতেই দিচ্ছে না,হিয়া এক কোণায় দাঁড়িয়ে নীলের দিকে তাকিয়ে আছে সেই কখন থেকে
এমন একটা দিন আসবে কখনও ভাবিনি আমি,ভালোবাসার মানুষটা অন্য কারোর,,আমার জায়গা অন্যজন নিয়ে হাসছে,এখানে আমার থাকার কথা ছিলো,কিন্তু সেটা হলো না
সাকিব হিয়ার হাতটা ধরলো,,হিয়া মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো”ওদের দেখতে ভাল্লাগছে”
.
হুমম,,যেমনটা আমাদের
.
হিয়া সাকিবের দিকে ফিরে বসে বললো”কি করলে আমি একেবারে নীলকে ভুলে যেতে পারবো?”
.
অনেকদিন হলো,,,এবার বাবা হয়ে গেলে হয়ত এমন একটা দিনে ছেলের এঙ্গেজমেন্ট করাবো
.
হিয়া সাকিবের হাতটা ছেড়ে দিলো,তারপর কিসব ভেবে কপালের ঘাম মুছে বললো”আচ্ছা”
.
হিয়ার মুখে আচ্ছা শুনে সাকিব তব্দা খেয়ে গেছে,,সে হিয়ার হাতটা আবারও ধরে বললো”মজা করছো না তো?নাকি জেদের বশে?আমি কিন্তু সিরিয়াস”
.
আমিও সিরিয়াস,,পারবে না আমাকে বাচ্চার মা বানিয়ে দিতে?ওর মুখের দিকে চেয়ে আমি সব ভুলে যেতে পারবো হয়তবা
.
সাকিব পকেট থেকে একটা সোনালী রঙের ব্রেসলেট বের করে হিয়ার বাম হাতে পরিয়ে দিলো সাথে সাথে
বিয়ের এ কটা বছর হিয়া অনেকবার সাকিবের থেকে গিফট পেয়েছে,তবে আজকের গিফটটা আলাদা স্পেশাল মনে হচ্ছে
হিয়া চোখ তুলে তাকালো সাকিবের দিকে
সাকিব মুচকি হেসে বললো”তিনটা বছর ধরে এই ব্রেসলেট নিয়ে ঘুরছি আমি”
.
কেন??
.
তুমি আমাকে মেনে নিবে সেটা শুনার অপেক্ষায়,ঠিক করে রেখেছিলাম তুমি আমাকে মেনে নিলে আমি এটা তোমাকে পরাবো,আর আজ সেটা সার্থক
.
হিয়ার চোখে পানি এসে গেছে,তবে আজ সেটা নীলের জন্য না
সাকিবের জন্য,সাকিব ওকে সত্যিই ভালোবাসে,আর সে ওকে এতটাদিন দেয়ালের ওপারে রেখেছে
ওর ভালোবাসার কাছে আজ সে নিজেই হেরে গেলো
.
মুন নীলের চোখের দিকে খেয়াল করছে
হিয়ার দিকে তাকালে জোরেশোরে চিমটি কেটে দিবো একদম,আজ এক বিন্দু ও ছাড় দেবো না উনাকে
যে আমার সে শুধু আমার,চোখ তুলে ফেলবো একদম
.
কি গো মেয়ে?বরের দিকে ওমন করে তাকাচ্ছো যেন গিলে খাবে
.
মুন ঢোক গিলে চোখটা সামিরের মায়ের দিকে ফিরিয়ে বললো”ঐ আসলে এতবড় মানুষ তো গলা দিয়ে যাবে না সেটাই ভাবছিলাম”
.
হাহা!!
.
নীল ব্রু কুঁচকে তাকালো ওর দিকে
মুন আমাকে গিলে খেতে চাচ্ছে কেন?আমি কি করলাম আবার,হিয়ার সাথেও তো তেমন কথা হলো না, তাহলে কারণ কি?
এই মেয়েটার মাথা খারাপ,হুদাই আমাকে গিলে খেতে চায়
.
নীল চলে গেলো মায়ের কাছে,মুন ও পিছু নিলো
.
করিডোর দিয়ে দুজন মিলে যাচ্ছে,নীল পিছনে ফিরে বললো”আমাকে ফলো করছো কেন বলোতো?”
.
আমি হলাম মৌমাছি
.
তোহ?
.
আপনি হলেন মধু
চলবে♥