স্মৃতির দেয়াল🍁 পর্ব-৩৬

0
851

স্মৃতির দেয়াল🍁
#পর্ব_৩৬
Writer -Afnan Lara
.
বুঝি তো,,সব বুঝি!
.
কিরে তোরা এখানে কেন?
.
না মা আসলে…..
.
যা সামিরের বাবা মায়ের সাথে কথা বল,মুনতাহা তুমিও যাও
.
নীল আর মুন আবারও ফেরত গেলো সেদিকে,নীল সোফার রুমে পা রাখতেই দেখলো সাকিব হিয়ার চুলগুলো ঠিক করে দিচ্ছে আর হিয়া হাসছে মিটমিট করে
মুন দৃশ্যটা দেখে ইয়া বড় হা করে নীলের মুখের দিকে তাকালো,নীল ওদের দেখে মুখে হাসি ফোটালো তারপর মুনের দিকে চেয়ে বললো”এটা দেখে তোমার খুশি হওয়ার কথা আর খুশি হচ্ছি আমি”
.
আপনি খুশি হোন কিংবা কাঁদেন আমার কি,দেখলেন তো আপনার ভালোবাসার মানুষ সুখী অন্য কারোর সাথে
আপনার কি মন চায় না আমার চুলগুলো ও ঠিক করে দিতে?
.
হিয়া সাকিব যা করবে আমারও তাই করতে হবে নাকি?
.
আপনার যদি অন্যভাবে রোমান্স করতে মন চায় আমার কোনো আপত্তি নাই
.
যাও তো!নিপার কাছে যাও,ওকে রেডি করে আনো বাহিরে
.
এভাবে ধমকাচ্ছেন কেন?যাচ্ছি তো
.
মুন চলে গেলো নিপার রুমের দিকে,হিয়া সাকিবের থেকে চোখ সরিয়ে নীলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো,নীল সেদিকে যেতে নিতেই বড় ভাইয়া এসে ওর কাঁধ ধরে ওকে বাগানের দিকে নিয়ে গেলেন ডেকোরেশন দেখতে
মুন নিপার রুমে এসে বারবার বাহিরের দিকে তাকাচ্ছে,নীল নিশ্চয় হিয়ার সাথে কথা বলছে এখন
.
কিগো মুনতাহা,এরকম বেকুল হচ্ছো কি কারণে?
.
নাহ কিছু না,,তুমি রেডি?চলো যাই
.
হ্যাঁ,,পিঠা খাওয়ায় লিপস্টিক শেষ হয়ে গেছে তাই আবারও লাগালাম,চলো যাই
.
মুন নিপাকে নিয়ে সোফার রুমের উপর দিয়ে বাহিরের দিকে যেতে যেতে হিয়া আর নীলকে খুঁজলো,কেউ নাই
কই গেলো আমার বর!
.
বাহিরে গিয়ে সবাই একজোট হয়েছে,,সামির স্টেজে বসে মুচকি হেসে নিপার দিকে তাকিয়ে আছে,নিপা তো লজ্জায় মরে যাচ্ছে,,মুন নিপাকে মাঝপথে ছেড়ে নীলকে খুঁজতে ছুটলো
তাই উর্মি ভাবী নিপার হাত ধরে সামিরের পাশে এনে বসালেন,,মুন হন্তদন্ত হয়ে তার বরকে আর সতীনকে খুঁজে যাচ্ছে
শেষে পেয়ে গেলো,নীল বাবুর্চির খাবার টেস্ট করে দেখছে সব ঠিক আছে কিনা
মুন নীলের আশেপাশে বাবুর্চির লোকদের ছাড়া হিয়াকে দেখতে না পেয়ে শান্তিতে শ্বাস নিয়ে চলে যেতে নিতেই নীলের চোখে পড়ে গেলো,নীল ওকে দাঁড়াতে বলে ওর সামনে এসে বললো”কি ব্যাপার?এখানে কি?আমাকে দেখে আবার চলে যাচ্ছিলে কেন?”
.
ইয়ে মানে দেখতে এসেছি আমার মধুতে কেউ ভাগ বসালো কিনা
.
নীল মুনের হাতের কব্জি শক্ত করে ধরে বললো”মাথায় ঢোকে না?”
.
কি?
.
আমি হিয়াকে ভোলার চেষ্টা করছি,,ওকে বারবার মনে করিয়ে দিবা না
.
তাহলে কাকে মনে করার চেষ্টা করছেন?
.
নীল মুনের মুখমণ্ডলটা ভাল করে দেখে ওর হাত ছেড়ে দিলো
.
কি হলো বলবেন না?
.
আমার আরও দশটা বউ আছে,ওদের মনে করার চেষ্টা করছি
.
সব কিছুর ত্যাড়া জবাব দিতো হবে আপনার?
.
যাও তুমি
.
মুন এক দৌড়ে চলে গেলো ওখান থেকে,নীল বেশি রেগে গেলে আবার কি না কি করে বসে কে জানে,তার চেয়ে আর রাগানো উচিত না
.
নীল ও একটু পর ওদিকেই আসলো,এসে দেখলো তার বউ হিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে মূর্তির মতন দাঁড়িয়ে
যেন আমার প্রাক্তন হিয়া না,মুনের আত্নীয় হয়,আমার চেয়েও মুন ওকপ দেখে বেশি,এই মেয়েটার স্বভাব আমি ঠিক করতে পারবো না কোনোদিন
.
হিয়া মুনের তাকানো দেখে ব্রু কুঁচকালো,হিয়ার ব্রু কুঁচকানো দেখে মুন চোখ নামিয়ে চোরের মতন পালাতে গিয়ে নীলের গায়ের সাথে এক ধাক্কা খেয়ে গেলো
.
কি হলোতো?
.
কি হবে?
.
এরকম মানুষের দিকে তাকিয়ে থেকে এখন আবার চোরের মতন পালাচ্ছিলে কেন?
.
না আসলে দেখছিলাম আমার আর হিয়াপুর মাঝে কি তফাৎ
.
যাই হোক,আমার স্ত্রী ও না,তুমি নিজে
সো তুলনা করা বন্ধ করো,বেকুব মাইয়া!
.
মুন চোখ দুটো ঘুরিয়ে নীলের পাশে দাঁড়িয়ে পড়লো সোজা হয়ে
.
এটা আবার কি?
.
বুঝাতে চাচ্ছি আমরা কাপল,ক্যামেরাম্যান ছবি তুলবে,চিজ বলেন
.
চিজজজজ

বেশ সুন্দর করেই এঙ্গেজমেন্টটা হয়ে গেছে,,বিকালের দিকে সামিররা সবাই চলেও গেছে
নীল এখন খেতে বসেছে,খাওয়ার সময় পায়নি এতক্ষণ
মুন পপি ভাবীর দিকে তাকিয়ে আছে,পপি ভাবী ভাইয়ার বুকে হাত রেখে হাসাহাসি করছেন বাগানের এক কোণায়
কি সুন্দর লাগছে ওদের,বিয়ের আজ কতটাদিন হলো আর আমি এসব কিছুই করতে পারলাম না
এক রাশ রাগ নিয়ে মুন নীলের দিকে তাকালো,নীল গাপুসগুপুস করে খেয়ে যাচ্ছে যেন গত এক বছর সে খাবার মুখে তোলেনি
.
মুনতাহা মন খারাপ করে রুমে ফেরত চলে ও এসেছে,,হিয়া আর সাকিব সামিরদের সাথে চলে গেছে বাসায়
মুন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে নীল আর হিয়াকে আজ কথা বলা থেকে দূরে দূরে রেখেছিলো,কত কত বাহানা করতে হয়েছিলো তার হিসেব নেই
পাই পাই করে এর হিসাব আমি তুলবো,কিন্তু পরে
নাকি আজ?
.
নীল ঘন্টাখানেক পর রুমে আসলো,দেখে অনেক টায়ার্ড মনে হচ্ছে ওকে,তোয়ালে হাতে নিয়ে সোজা বাথরুমে গেলো সে
মুন বারান্দায় হেলান দিয়ে সবটা দেখছে
শাড়ীর আঁচলটা হাতে নিয়ে এপাশ ওপাশ করে ঘুরাচ্ছিলো,কি যেন মাথায় ঘুরপাক খেতেই সে আঁচলটা কোমড়ে গুজে নিলো
নীল গোসল করে বেরিয়েছে,,মাথার চুলগুলো মুছতে মুছতে পা বাড়াতে গিয়েও পারলো না,,কারণ মুন কোমড়ে হাত দিয়ে ওর সামনে এসে দাঁড়িয়েছে
ওর মুখে কথা ফোটার আগেই মুন নীলের দুপায়ে ভর করে ওর গলা জড়িয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো
মাত্র ১০সেকেন্ডের ভিতরে কিসটা সেরে মুন রুম ছেড়ে চলেও গেছে
নীল রোবটের ন্যায় একই জায়গায় স্তম্ভিত হয়ে আছে
মুন কি থেকে কি করে ফেললো মাথায় ঢুকছে না ওর
শুধু সেই অনুভূতিটা ঠোঁটে লেগে আছে
হাত থেকে তোয়ালে ফেলে হাত দিয়ে ঠোঁট ছুলো নীল,এরকম অনুভূতির সাথে মুন এসময়ে পরিচিত করাবে তা জানা ছিল না আসলে…
.
মুন নিপার রুমে এসে বিছানার এক কোণায় বসে আছে,সারাশরীর ভয়ে কাঁপছে ওর,,,নীল যদি ওকে ডিভোর্স দিয়ে দেয়???
না কেন দিবে!এটা আমার অধিকার,হয়ত জোর করে করেছি
তো কি হয়েছে,করেছি তো
কাঁপতে কাঁপতে মুন তার চোখের সামনে এক গ্লাস পানি দেখতে পেলো,কে দিলো সেদিকে খেয়াল না করে গ্লাসটা নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেয়ে ফেললো মুন,গ্লাসটা একপাশে রেখে মুখ তুলে দেখলো নীল দাঁড়িয়ে আছে
মুন সাথে সাথে মাথাটা নিচু করে ফেললো তারপর বললো সরি
.
সরি বলার কিছু হয়নি,আমার করা উচিত ছিলো
.
ব্যস আর কিছু না বলে নীল চলে গেছে,মুন বুকে হাত দিয়ে নীলের চলে যাওয়া দেখলো,তার মানে নীল রাগ করেনি?
রাগ করলেও আমার কি,আমার দরকার আমি করে ফেলেছি যা খুশি তাই হোক,করে ফেলেছি মানে করে ফেলেছি,এবার আর ঐ হিয়া এসেও কিছু করতে পারবে না
ওর নীলের ঠোঁট ওর আগে আমি ছুঁয়ে ফেলেছি,কি খুশি লাগছে,মন চাচ্ছে ওরে গিয়ে খবরটা দিয়ে আসি
কিন্তু নাহ!
সুখ কারোর সাথে শেয়ার করতে নেই,নজর লাগে

নীল বিছানায় এসে বসলো চুপচাপ,,ঠিক এই ভাবেই মুনকে মেনে নিতে হবে
বুকে যতই যন্ত্রনা হোক আমার ওকে মেনে নিতে হবে,আস্তে আস্তে হয়ত ওকে ভালোবেসে ফেলবো
তবে আমি চাই…
.
আমি চাই আপনি আমাকে ভালোবেসে ছুঁবেন এর পরেরবার
জোর করে নয় কিংবা বাধ্য হয়েও নয়
.
নীল মাথা তুলে মুনের দিকে তাকালো,মুন তাকালো না,পিছন ফিরে চলে গেলো রুম থেকে বাহিরে,কথা শেষ বলে আর সেখানে থাকা প্রয়োজন মনে করলো না

হিয়া জানালার গ্রিল ধরে বাসার সামনের দিকে চেয়ে আছে,,কতগুলো লোক মিলে গেট সাজাচ্ছে আর কটাদিন বাদেই সামিরের বিয়ে,তাই
সাকিব টিভি অফ করে রুমে এসে দেখলো হিয়া জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আছে,,হিয়া চমকে উঠলো তার পাশে গ্রিলে সাকিবের হাতটা দেখে,তারপর বড় করে শ্বাস নিয়ে আবারও বাহিরের গেটটা দেখায় মন দিলো সে
সাকিব গেটটার দিকে তাকিয়ে বললো”আমি আজ তোমায় জোর করবো না হিয়া,আজীবন তোমার বেস্টফ্রেন্ড হয়ে থাকতে আমার সমস্যা নেই”
.
হিয়া মলিন মুখে বললো”জীবনটা বড়ই অদ্ভুত,,মাঝে মাঝে এমন সিচুয়েশনে পড়ে যাই আর ভাবী আরেকটু সময় পেলে ভালো হতো,কারণ আমরা ভাবী এখন কাজটা করলে ভুল হবে,কিন্তু না,যত দেরি হবে ততই কাজটা করার মনমানসিকতা উঠে যাবে
তাই যেদিন সিচুয়েশনটা ক্রিয়েট হয় সেদিনই করে ফেলা উচিত
.
সাকিব হিয়ার কানের কাছে হাতটা রেখে বললো”আমি তোমায় দোটানায় ফেলতে চাচ্ছি না,ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নাও
কফি খাবে?”
.
হিয়া চুলগুলোতে খোঁপা করতে করতে রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছে চুপচাপ
এরকম বেসামাল হিয়া কখনও হয়নি
সাকিবের মনে হলো হিয়াকে এভাবে থাকতে দেওয়া উচিত
মানুষ নিজেই নিজেকে বোঝে
.
হিয়া কফি বানাতে বানাতে বললো”আমার জন্য এক তোড়া গোলাপ আনতে পারবেন?”
.
সাকিব টিভির রিমোটটা হাতে নিয়ে আবারও রেখে দিয়ে বললো”কেন নয়,কফি বানাও,আমি যাব আর আসবো ”
.
হিয়া আচ্ছা বলে কফি বানাচ্ছে,,২০মিনিটের বেশি হয়ে গেলো সাকিব আসছে না,কফি ঠাণ্ডা হয়ে গেছে
হিয়া ফোনটা খুঁজে বের করে সাকিবকে ফোন করলো
বেজে যাচ্ছে,রিসিভ করছে না সাকিব
হিয়া ভাবলো হয়ত কাজ পড়ে গেছে,ফোন রেখে রাতের রান্না করায় মন দিলো সে
রাতের আটটা বেজে গেছে অথচ সাকিব এখনও আসলো না,হিয়ার রান্নার কাজ শেষ,,আবারও কল লাগাতে যেতেই দেখলো সাকিবের কল
মুখে হাসি ফুটিয়ে হিয়া কল রিসিভ করলো,ওপাশ থেকে একজন মহিলার আওয়াজ পেয়ে হিয়া বেশ অবাক হলো,
মহিলাটি বেশি কিছু বলেনি,শুধু বললেন হেলথ কেয়ার হসপিটালে চলে আসতে,কেবিন নাম্বার ২৩৩
হিয়ার আর বুঝতে বাকি নেই যে সাকিবের কিছু একটা হয়েছে
কোনোরকম দরজায় তালা লাগিয়ে ছুটলো সে সেই হসপিটালের দিকে
হসপিটালে এসে ২৩৩নং কেবিনে এসে দেখলো সাকিব চোখ বন্ধ করে বেডে শুয়ে আছে,মাথায় ব্যান্ডেজ করা
হিয়া ওর কাছে এসে ওর হাত ধরে এদিক ওদিক তাকালো,সাকিবের জ্ঞান নেই তা বুঝা যাচ্ছে
একজন নার্স কেবিনে ঢুকে বললেন”উনি আপনার হাসবেন্ড?”
.
হ্যাঁ,আপনি ফোন করেছিলেন আমায়?
.
হুম
.
কি হয়েছে উনার?
.
উনার কার এক্সিডেন্ট হয়েছে আর আপনি এখন শুনলেন?
.
আমাকে কেউ জানায়নি,আমি জানতাম না,,জ্ঞান আসবে কখন,প্লিজ বলুন,ক্ষতি হয়নি তো তেমন?
.
মাথায় চোট পেয়েছে,এক্সিডেন্ট বলতে তেমন বড়সড়ো না,বেসামাল ব্রেক করায় মাথায় চোট পেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন,আমাদের হসপিটালের সামনে এক্সিডেন্টটা হওয়ায় সাথে সাথে এখানে নিয়ে আনা হয়েছিলো উনাকে
.
হিয়া মুখে হাত দিয়ে সাকিবের পাশে বসলো,,নিজের উপর রাগ হচ্ছে তার
কি দরকার ছিলে ফুলের তোড়ার কথা বলার,আজ ওর কারণে সাকিবের এমন বিপদ আসলো
সাকিবের মাথার রক্ত দেখে হিয়ার মাথা ঘুরছে,মাথা ধরে বসলো সে
নার্স পানি এগিয়ে দিয়ে চলে গেলেন,,
হিয়া পানি খেয়ে ফোন বের করে সামিরের বোনকে ফোন করলো যার বাসা বনানীতে

মুন আজ নিপার সাথে ঘুমাবে বলে ঠিক করেছে,,নীলের সামনে যেতেও লজ্জা লাগছে খুব
নিপা গেছে গোসল করতে
নীল নিপার রুমে আসতেই দেখলো মুন হাঁটু ভাজ করে বিছানায় কাঁপছে এখনও
নীল দরজায় দুবার টোকা দিতেই মুন সেদিকে তাকালো
.
আমার রুমে আসবে না?
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here