স্মৃতির দেয়াল🍁
#সূচনা_পর্ব
Writer -Afnan Lara
.
সারা বাসা খুঁজেও তোমার মেয়েকে পেলাম না আমি,নাহ আমার দ্বারা আর এসব হবে না,কতদিন ধরে বলছি ওর বিয়ে দিয়ে দাও বিয়ে দিয়ে দাও
কথা শুনো না কেন তুমি??
আর কদিন থাকলে বাঁদর নাম করণে সময় লাগবে না ওর
সবসময় বান্দর/বাদুড়ের মতন টই টই করে গাছে ঝুলে থাকে
মুন নাম না রেখে বাঁদর রাখা উচিত ছিল আমাদের
তোমার মায়ের কথায় মুন রাখছি,মুন মানে চাঁদ,চাঁদ কত শান্ত,চাঁদের আলো কত মিষ্টি,আর তোমার মেয়েকে দেখো,,এখন মনে হচ্ছে মুন না রেখে বাঁদরনি রাখা উচিত ছিল
এই রুশা!!
.
হুম মা বলো
.
তোমার বোন কোথায়??
.
আপু তো গাছে না মানে উঠানে!
.
মা রেগে উঠানের দিকে গেলো সোজা
.
মুননননননননননন!!!!
.
দুম!!
.
ইস কোমড় ভেঙ্গে গেছে আমার,,মা আস্তে ডাকতে পারলে না??
.
আজ তোর একদিন কি আমার যতদিন লাগে!!
.
মুন উঠে এক দৌড়ে পালালো
♣
❤আমার প্রাণের মানুষ আছে প্রানে
তাই হেরি তাই সকল খানে…
আজ সে নয়ন তারায় আলোক ধারায়
তাইনা হারায় ওগো তাই দেখে তাই
যেথায় সেথায় তাকাই আমি যেদিক পানে♥
.
অনুভূতি জিনিসটা বড্ড খারাপ,,তার সাথে যোগ হয়েছে এই ভালোবাসা,,সবাই ভালোবাসার এক নৌকোর মাঝি,
আই মিন বাসতেই হবে?একটা মানুষের হাত ধরে সারাটা জীবন কাটিয়ে দেওয়া এটাই ভালোবাসা?অন্য নাম নেইই?কেন জানি ভালোবাসা শব্দটা সয্য করতে পারি না আমি
ভালোবাসা জিনিসটা খুব রহস্যময় একটা শব্দ,যদি তাকে পাও তখন তুমি পৃথিবীর সব চাইতে সুখী আর যদি না পাও তাহলে আশেপাশে কষ্ট ছাড়া কিছু দেখতে পাবে না,মন থেকে ভালোবাসলেই সবসময় তাকে পাওয়া যায় না,যারা পায় তারা তো ছোট থেকে ভাগ্যবান,আমার আর কি,ফুটা কপাল!
.
নীল!
.
নীল মায়ের ডাক শুনে পিছন ফিরে তাকালো,,বাসার সবাই দাঁড়িয়ে আছে একজোট হয়ে,সবার মুখে হাসি
নীলের মা,বোন,,মেজো ভাই,আর কিছু কাজিন
.
সারপ্রাইজ!!!
.
প্লিস,আবার শুরু করিও না,তোমাদের মানা করেছিলাম কোনো arrangement করবা না,আমার ভালো লাগে না এসব,তোমরা একেবারে এয়ারপোর্টে এসেই শুরু করে দিলে??
–
তাই বলে কি তোর জন্য আমরা এই টুকুও করবো না??
–
মা তুমি শুধু শুধু এত কিছু করেছো
–
আমি করিনি করেছে তোর ভাই বোনেরা,সবাই মিলে করেছে,আজ কতটাদিন পর এসেছিস সেই খবর আছে?
–
আজই বাসায় ফিরলাম আর আজই শুরু করলা তোমরা বাড়াবাড়ি,আসাই উচিত হয়নি আমার
.
নীল গাড়ীডে উঠে একাই চলে গেলো
.
মুখ গোমড়া করে বাসায় ফিরেই নীল নিজের রুমের দিকে চলে এসেছে
♣
তোদের মানা করেছিলাম নীল এসব পছন্দ করে না,নিপা তোর বুদ্ধিতে এটা ঘটসে নাহলে এমনটা হত না,বুঝার চেষ্টা কর!! ও যেটা আগে পছন্দ করত এখন সেটা তার চোখের বিষ
–
কিছু করবো না আর,ভালই ভালই এত কিছু করলাম শুধু ভাইয়ার মন ভালো করার জন্য আর রাগ দেখায় চলে গেলো
–
জানসই তো ওর রাগ সারাদিন মাথায় থাকে সেই ঘটনার পর থেকে,,
♣
আমার রুমকে এত সাজিয়েছে কেন?কেন সাজিয়েছে,,???এসব সাজ আমার লাইফে থাকার কোনো মানে হয় না,আমার জীবনে আর কোনোদিন রঙ আসবে না
.
নীল সব কিছু ভেঙ্গে চুরমার করে ফেলে দিলো,নিচে ফ্লোরে বসে চিৎকার দিলো,,
হিয়া!!!!!!!!!!!
আমার আজও মনে হয় তুমি আমার কাছে আছো,,আজও
৩টা বছর ধরে তোমার স্মৃতি আমাকে কষ্ট দিচ্ছে,আমি আর কত সয্য করবো??হিয়া আমি যে পারবো না তোমায় ছাড়া জীবন কাটাতে,আমার যে খুব কষ্ট হয়
–
বাবা মাকে ডেকে বললো নীল কি আমাদের সাথে নাস্তা খেতে আসবে না?
–
না আসবে না,ও কি আমাদের সাথে একসাথে মিলে জীবনে কিছু খেয়েছে?
.
এতটা দিন পরে এসেও খাবে না??
.
নাহ,কিছু বলার নেই আমার,তুমি গিয়ে তোমার ছেলের সাথে কথা বলো
–
নীল ড্রাইভারকে কল দিয়ে বললো মদ আনতে
এটা বলে ফোনটা হাত নিয়ে বসে থাকলো ,এসি বাড়িয়ে দিলো,তাও মাথা ঠাণ্ডা হচ্ছে না,কিছু ভাঙ্গতে পারলে বেশ হতো
এখনও কেন আসছে না!
.
খাটের উপরে থাকা জ্যাকেটটা নিয়ে পরে বেরিয়ে গেলো নীল
–
কোথায় যাস নীল??
–
মায়ের প্রশ্নের জবাব না দিয়েই নীল চলে গেলো,,গাড়ীতে বসে গাড়ী স্টার্ট করে এখন উন্মাদের মত গাড়ী চালাচ্ছে নীল
♣
মা কি তোকে বলেছে আমি কি করি না করি সেটা দেখতে?
–
নাহ বলে নাই,তবে আমি এমনিতেই তোমার পাহারা দিচ্ছি
–
কেন?আমাকে ভূতে নিয়ে যাবে নাকি
–
আপু সন্ধ্যা হয়ে গেছে,বাসায় চলো প্লিস, মা খুব মারবে
–
তুই যা আমি আসতেসি,আজ ১০টার মতন পেয়ারা আম খাওয়া হয়ে গেসে,,ব্যস এবার বাসায় ফিরতে হবে
ইস ইস!!!এর মাঝে বৃষ্টি আসলো কোথা থকে আজব
যাই হোক ৫:৫০বাজে,হাতে এখনও ১০মিনিট আছে,,তো মুন Let’s নাচো!
Barso re megha_megha. Barso re megha_megha. Barso re megha barsöøö..
Mitha hai kosha hai, baris ka bosha hai.. . . . . . . . . . . . .!!
বৃষ্টি হলো একটা ভালোবাসা😍
♣
Thank god মদ এক বোতল পেয়েছি অন্তত,নাহলে আজ সারা রাত ঘুম হতো না আমার
এই এই!!
Damn,,কে এটা?
–
নীল গাড়ী থেকে নামলো দেখার জন্য
–
মুন মুখে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে
–
কারণ নাচতে নাচতে সে নীলের গাড়ীর সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ছিলো
–
আর মুনকে বাঁচাতে গিয়েই নীল গাড়ী ব্রেক করেছিল তখনই গাড়ীর সাথে রোড সাইডের একটা গাছের ধাক্কা লেগে গেলো
–
নীল গাড়ী থেকে নেমে মুনের দিকে একবার তাকিয়ে নিজের গাড়ীর দিকে তাকালো,,কারের সামনের দিকটা পুরা ড্যামেজ হয়ে গেসে গাছের সাথে লেগে
–
নীল চোখ অগ্নি রুপ করে মুনের দিকে তাকালো আবারও
–
মেয়েটার গায়ে ওড়না নাই,আছে তবে হাতে গিট্টু দিয়ে রাখছে,তার হাঁটু বরাবর ছোট ছোট ৩টা বাচ্চা, মেয়েটার পিছনে ওর জামা মুঠো করে ধরে দাঁড়িয়ে অপরাধীর মত চেয়ে আছে নীলের দিকে,শুধু তারাই না মেয়েটাও তাকিয়ে আছে
এবার এক পা এক পা করে পিছাচ্ছে বাচ্চাগুলো আর তার সাথে মেয়েটাও
নিমিষেই ধুমকেতুর মতন দৌড় দিলো মেয়েটা সাথে বাচ্চাগুলো ও দৌড় দিলো
মেয়েটা ধুমকেতুর গতিতে আর বাচ্চাগুলো বাতাসের গতিতে
.
নীল হয়ত কিছু বলতো না,হয়তবা ধমক দিতো,কিন্তু এর আগেই ওরা শেষ সীমানায় চলে গেছে
.
যাক বাবা বাঁচলাম,আমি তো ভেবেছি থানা পুলিশ করবে
–
কিরে বাঁদরনি কয়টা বাজে?বাসায় যাবি না নাকি সং সেজে এখানেই থাকবি সারাদিন?
.
কথাটা বলে মা মুনের কান টেনে ধরলো
–
সরি মা
–
আর এসব কি,,তোরে কতদিন বলছি বৃষ্টিতে ভিজবি না?
–
মা কান ধরে টেনে নিয়ে গেলো মুনকে
♣
এই জন্য এখানে আসতে চাই নাই আমি,এখানের সব কয়টা মানুষ আনকালচারাল
.
হ্যালো, কি সমস্যা??মদ আনতে বলছি সেটা তো করো নাই,আমি নিজে ম্যানেজ করেছি
,তার উপর ৮মিনিট লেট করছো,,এখন তুমি ৭মিনিটের মধ্যে আরেকটা গাড়ী এনে এ.কে রোডে হাজির করো,আমার গাড়ী নষ্ট হয়ে গেছে,আমি এখানেই আছি,তাড়াতাড়ি আসো
.
ফোনটা গাড়ীর জানালা দিয়ে ভিতরে রেখে নীল গাড়ীর সামনে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো
সন্ধ্যা নেমে গেছে,,বৃষ্টি ও বেড়ে গেছে,চোখ বন্ধ করে এই Moment টা ফিল করছে নীল
♣
আপু আজ আবার ভিজলে কেন?
–
তো কি হয়েছে,,বৃষ্টি কি সবসময় হয়,ভিজার কি ফিলিংস তুই বুঝবি না
নে ২টা আম এনেছি তোর জন্য,খা,আর বলবি না যে মুন আপু কখনও আমার জন্য কিছুু নিয়ে আসে না
–
থ্যাংক ইউ আপু
♣
রাত ১২টায় নীল বাসায় ফিরে আসলো
নিজের বিছানার দিকে এক পলক চেয়ে জ্যাকেটটা খুলে শুয়ে পড়লো সে,,হাতের থেকে মদের বোতলটাও রাখেনি
–
**জানো নীল আমি অনেক লাকি
–
আচ্ছা তা কেন জানতে পারি?
–
কারন আমাকে নীলের মত একটা ছেলে পাগলের মত ভালোবাসে
–
তো হিয়া নামের মেয়েটা নীলকে ভালোবাসে না?
–
হুম বাসে তবে নীল একটু বেশিই ভালোবাসে
–
আমার না ভয় হয় যদি তোমাকে না পাই?
–
তুমিও না বোকার মতন কথা বলতেছো,আমাকে পাবা না কেন,বাবা রাজি মা রাজি আর কি লাগে,তোমার ফ্যামিলিও তো রাজি, শুধু তোমার জবে জয়েন করার দিন গুনছি আমি
–
আর ৫টা মাস***
.
নাহহহহহ!
হিয়া তুমি যদি এখন থাকতে আমার পাশে আমার আর কিছু লাগতো না হিয়া,তুমি হলে আমার আর কিছু চাই না,আমার শুধু তোমাকেই দরকার ছিল হিয়া
আমি বারবার কেন এসব মনে আনতেছি,,উফ পাগল হয়ে যাব আমি,,!!!
.
ঘড়িতে ১:৩৪বাজে,,সবাই ঘুমে আর নীল বাগানের দোলনায় বসে আছে হাতে হিয়ার ছবিটা নিয়ে
“কত মায়াবী চেহারা তার,,
আমার পছন্দের তারিফ করতে হয়,সে ছিল এক মায়াবতী ”
.
নীল ছবিটাতে হাত বুলিয়ে নিলো,সেটাকে বুকে ধরে চোখ বুজে দোলনায় শুয়ে পড়লো সে,,হালকা মৃদু হাওয়ায় ঘুম ও এসে গেলো নীলের,,
–
পরেরদিন সকালে বাগানের মালি এসে দেখলো নীল দোলনায় হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে,সে জলদি গিয়ে খবরটা নীলের মাকে জানালো
–
মা এসে নীলকে দেখে মুখটা গুরুগম্ভীর করে রাখলেন কিছুক্ষণ
“হিয়া নামের অধ্যায়টা আমার ছেলেকে সম্পূর্ন বদলে দিলো!”
.
মা এগিয়ে এসে নীলের মাথায় হাত রাখতেই নীল চোখ মেলে উঠে বসে গেলো
.
চোখটা মুছে সে জিজ্ঞেস করলো” কয়টা বাজে মা?”
–
১০:৩২
–
কিহ, আগে বলবা না মা,আমার খুব লেট হয়ে গেছে,,ঢাকার অফিসে আজ আমার প্রথম ডিউটি
–
নীল তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে জিপ নিয়ে বেরিয়ে চলে গেলো
নীল পেশায় একজন পুলিশ অফিসার,, ৩বছর হলো জবে জয়েন করেছে,,একবার এক জায়গায় পোস্টিং হয়,,দেড় বছর ধরে সে রাঙামাটিতে ছিল,এবার ঢাকায়,, এই সুযোগে দেড় বছর পর নীল ওর বাসায় এসেছে,,
–
কাল সারা রাত তার কি অবস্থা ছিল আর আজ সকাল থেকে অবস্থা পুরোটাই পাল্টে গেলো
চলবে♥